১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে - ছবি সংগৃহীত

ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের বিরুদ্ধে যখন বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের মুসলমানরা প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, তখন মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের একশ্রেণীর লোক ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে ফেসবুকে ইসলাম নিয়ে বিষোদগার করে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিতে থাকে। এগুলো স্বল্প সময়ের ভেতরে ভাইরাল হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে এতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা হলো। কুমিল্লার মুরাদনগর থানার কোরবানপুর গ্রামের শঙ্কর দেবনাথ (৫৪) ও আন্দিকোট গ্রামের অনিল ভৌমিক (২১) নামের দুই ব্যক্তিকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

উত্তেজিত জনতা মুরাদনগরের কোরবানপুর গ্রামের ১০টি হিন্দুবাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। চেয়ারম্যান অধ্যাপক বন কুমার শিবের বাড়িতেও হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারটি মামলায় প্রায় ৩০০ জনের নাম উল্লেখ করা ছাড়াও আরো পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরানোর ঘটনায় জড়িত থাকায় ৯ নভেম্বর পাঁচজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ফেসবুকে স্ট্যাটাসের প্রসঙ্গ একবারে না তুলে উল্টো অভিযোগ করেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা উপায়ে গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।’ এর প্রতিবাদে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ৭ নভেম্বর সারা দেশে গণঅবস্থ’ান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়।

রানা দাশগুপ্ত অভিযোগ করেন, ‘কুমিল্লার মুরাদনগরে এবং দিনাজপুরের পার্বতীপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। মুরাদনগরে বাড়িঘরে হামলা এবং আগুন দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ফেসবুকে এ ধরনের গুজবের শিকার হওয়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়জন সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু ছাত্রছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিথি সরকার নিখোঁজ। অধ্যাপক কুশল চক্রবর্তীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।’

এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কোনো অপপ্রচার বা গুজব ছড়ানো হচ্ছে না। অপপ্রচার করা হচ্ছে আমাদের মহানবী সা:-এর বিরুদ্ধে। হামলার ঘটনা তারা বাড়িয়ে বলছেন। ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে গুজব ও হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো উনারা অন্যায়ভাবে বলছেন। যতগুলো অপপ্রচার হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি সবই নবীজী সা:-এর নামে অপপ্রচার করা হচ্ছে। কোনো হিন্দু ধর্মগুরুর নামে অপপ্রচার আমাদের চোখে পড়েনি (ডয়চে ভেলে ৩ নভেম্বর ২০২০)।

‘ধর্ম অবমাননার’ স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ তুলে মাইকে প্রচারণা চালিয়ে লোকজনকে জড়ো করে কুমিল্লার মুরাদনগরের কোরবানপুর গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। কারা হামলা করেছে, স্পষ্ট নয়। এতে তৃতীয় পক্ষের হাত থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক গ্রুপিংও থাকতে পারে। এই হামলাকে শুধু ‘পরিকল্পিত’ই বলছেন না, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও মনে করছেন চেয়ারম্যান বন কুমার শিব। তিনি সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত হামলা। হামলার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে।’ তবে কারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি। তিনি আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত থাকলেও গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি পরপর দুইবার চেয়ারম্যান হয়েছি। আমার এলাকার মুসলিম ভাইদের ভোটেই আমি নির্বাচিত হয়েছি। ‘আমার বাড়িতে এরকম হামলা হবে, তার কোনো কারণ দেখছি না। তাই এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়েছে।’ ১৯৯৯ সালে বন কুমার শিবের বড় ভাই পূর্ব ধইরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে ঢাকায় নিজের ফোম কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যান তিনি। ভাইয়ের ওই মৃত্যুকেও রহস্যজনক মনে করেন বন কুমার। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন মতে, মুরাদনগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কোরবানপুরের এই তাণ্ডবের পেছনে সাবেক এক সংসদ সদস্যের স্বজনদের ইন্ধন থাকার সন্দেহ করছেন।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে মাঝে মধ্যে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল মিটিং করে থাকেন। অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এ দেশের সংখ্যালঘুদের ‘মিসিং পিপল’ বলে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে ফরিদপুরের হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করছেন- এমন বক্তব্য দেয়ায় ২০১৫ সালে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক রানা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে নোটিশ ইস্যু করেছিলেন। এসব ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে ‘জাগো হিন্দু’ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক মশাল মিছিলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক ও আপত্তিকর স্লোগান দেয়া হয়। ওই ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। ইসলামী আন্দোলনের নেতারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেন। জাগো হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মিলন শর্মা ও চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি রুবেল দের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১০ নভেম্বর চট্টগ্রামে বিশিষ্ট আলেমদের এক বৈঠকে গত ৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে জাগো হিন্দু পরিষদের ব্যানারে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে স্লোগান দেয়ায় দুঃখ প্রকাশ এবং উসকানিদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তারা বলেন, ‘এমন স্লোগানের সাথে আমরা একমত নই। জাগো হিন্দু পরিষদ উগ্রবাদী সংগঠন নয়, অন্য ধর্মকে সম্মান করে নিজেদের অধিকার আদায় নিয়ে কাজ করে।’

তারা বলেন, জাগো হিন্দু পরিষদ অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যারা আপত্তিকর স্লোগান দিয়েছে এ ঘটনায় জাগো হিন্দু পরিষদ তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো উসকানি না দেয়, সে জন্য সবাইকে শান্ত ও সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবার প্রতি অনুরোধ করা হয়। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঝাউতলা কওমি মাদরাসার প্রধান পরিচালক মাওলানা আলী ওসমান, জিরি জামিয়া আরাবিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, লালখানবাজার মাদরাসার সহকারী পরিচালক মুফতি হারুন ইজহার, ফিরোজশাহ কলোনি মাদরাসার সিনিয়র উস্তাদ মাওলানা ছানাউল্লাহ নদভী, মুফতি শামিম ও মাওলানা দিদারুল ইসলাম।

বৈঠকে উভয় ধর্মের প্রতিনিধিদল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। দেশের স্বার্থে ভবিষ্যতেও যেকোনো সঙ্কটে আলোচনার ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা করেছেন। আলেমরা বলেন, বাংলাদেশ বহুত্ববাদী সমাজ। নানা ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর অধিবাস। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাংলাদেশের ঐতিহ্য। প্রতিটি নাগরিকের ধর্মচর্চা, ধর্মশিক্ষা, অনুশীলন ও ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণের অধিকার আছে। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থানে বিশ্বাসী। কোনো ধরনের উগ্রতা ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নস্যাৎ করার যেকোনো অপচেষ্টাকে ওলামা মাশায়েখ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে থাকেন। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার মাধ্যমে যারা নতুন সঙ্কট সৃষ্টি করতে চায় চট্টগ্রামে উগ্র স্লোগানদাতারা মূলত তাদেরই দোসর।

এ কথা দুনিয়াবাসী জানে, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পাদপীঠ। এখানে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই। এই দেশে আরএসএস বা বজরং দলের মতো উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন নেই। বাংলাদেশে গুজরাট, দিল্লি ও আহমেদাবাদের মতো ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। এখানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, পাহাড়ি সমতলবাসী সবাই শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে আসছে। কদাচিৎ কোনো সহিংস ঘটনা ঘটে থাকলে তা বিচ্ছিন্ন ব্যাপার। ধর্মচর্চা, ধর্মানুশীলন, শিক্ষার্জন ও চাকরির ক্ষেত্রে কোনো ভেদ বৈষম্য নেই। রাষ্ট্রের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, বিভাগ, সেনা, পুলিশ, র‌্যাব, বিচার, প্রশাসনের স্তরে স্তরে সংখ্যালঘু কর্মকর্তারা উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সংখ্যালঘু বিভিন্ন সম্প্রদায় আলাদা আলাদাভাবে মোট জনসংখ্যার কত পার্সেন্ট আর চাকরিতে তাদের অবস্থান ও অনুপাত কী? এ প্রসঙ্গটি তোলা অসঙ্গত হবে না। গবেষণা করলে আসল চিত্র বেরিয়ে আসবে। ধর্ম বিবেচনায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কোনো বৈষম্য নেই। থাকলে এত বিপুলসংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে কিভাবে বহাল থাকতে পারেন?

অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, পাকিস্তানের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী’ ’৪৭-এর দেশ ভাগের পর অবিভক্ত পাকিস্তানে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ছিল ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ।’ ’৭১ সালের পর তা কমে ১৯ থেকে ২০ শতাংশে নেমে আসে। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১১ সালের সর্বশেষ জরিপে ওই হার ৯ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনীতিতে একে বলা হয় মিসিং পিপল আর বাংলায় একে নিরুদ্দিষ্ট বা হারিয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করা হয় (প্রথম আলো, ২০ জুলাই ২০১৯)।

’৪৭-এর দেশ ভাগের পর নানা কারণে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিশেষত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভারতে আশ্রয় নিতে থাকেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হিন্দুবিদ্বেষ, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ভাঙা নিয়ে উত্তেজনা, বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ প্রভৃতি এর বিভিন্ন কারণ। ধর্মীয় ও জনসংখ্যাগত কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভারতকে অধিকতর নিরাপদ মনে করেন। ওপারে তাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। তথ্য নিলে স্পষ্ট হবে, বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত অবস্থাসম্পন্ন হিন্দু জনগোষ্ঠীর সন্তানরা ভারতের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। অনেক পরিবারের একাধিক সদস্য পশ্চিমবঙ্গে জমি কিনে বাড়ি করেছেন এবং চাকরি ও ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন। কেবল নিরাপত্তার অভাবে দেশ ছেড়েছেন এই কথা সত্য নয়। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছা উদ্যোগের হার বেশি। এমন নজিরও আছে- সারা জীবন এই দেশে চাকরি করে অবসর নেয়ার পর পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি নিয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন।

সম্প্রদায়, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কোনো নাগরিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন এটা কোনো দিন কাম্য নয়। যে ধর্মেরই হোন কেউ যদি কারো জমি দখল করে, বাস্তুভিটা উচ্ছেদ করে, গৃহে অগ্নিসংযোগ করে, ভীতিসঞ্চার করে, নারীদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে, ধর্মীয় উপাসনালয় অপবিত্র করে এবং দেশত্যাগে বাধ্য করে তাহলে আইন অনুযায়ী অপরাধীর কঠোর বিচার হোক। জনগণ চায় আইনের শাসন সমুন্নত এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা অটুট থাকুক। সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। মুসলমান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, পাহাড়ি নির্বিশেষে প্রত্যেকেই এই দেশের স্বাধীন নাগরিক। সবাই এই দেশকে ভালোবাসেন। বহুত্ববাদী সমাজ (Pluralistic Society) এদেশের বৈশিষ্ট্য। বৈচিত্র্যের মাঝে সংহতি বজায় রাখতে হবে। গুটি কয়েক ব্যক্তির মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণায় বিভ্রান্ত হলে চলবে না। তারা ‘ওপরেরটাও খায়, তলারটাও কুড়ায়’।

ধর্ম, ধর্মীয়গ্রন্থ ও ধর্মীয় শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের নিয়ে কটাক্ষ ও কুৎসা রটনার অসুস্থ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামু, উখিয়া-টেকনাফের ১৩টি বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুর, ২০১৬ সালে কুমিল্লার নাসিরনগরে এবং ২০১৭ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ফেসবুকের স্ট্যাটাসের জের ধরে বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।

ধর্ম অবমাননা, ধর্মীয় নেতাদের প্রতি বিষোদগার ও উসকানিমূলক যারা কথা বলে তারা ছোট লোক, সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষপরায়ণ। এরা যে ধর্মেরই হোক না কেন, সমাজ ও দেশের শত্রু। ব্যক্তির অপরাধের জন্য সম্প্রদায় বা ধর্ম দায়ী নয়। তৃতীয় কোনো শক্তি যাতে সম্প্রীতি, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে ধর্ম ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশের একশ্রেণীর তরুণের মাঝে পরধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা এবং কটাক্ষ করার অসুস্থ মানসিকতা জেগে উঠেছে। এটাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না, কঠোর হাতে দমন করতে হবে। বাংলাদেশের মুসলমানরা নবী সা:-এর অবমাননার কারণে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং করে যাচ্ছেন। ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন। কোনো সম্প্রদায় বিশেষের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন নয়। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের স্বার্থে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীকে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বার্নিং ইস্যু নিয়ে সংলাপেরও আয়োজন করা যেতে পারে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা ও সহনশীলতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভান্ডারিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক

সকল