২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতির কল্যাণে সাহসী সাংবাদিকতা

জাতির কল্যাণে সাহসী সাংবাদিকতা - ছবি : নয়া দিগন্ত

দাম্ভিক ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা কি কিছুই করতে পারেন না? হিটলার ও মুসোলিনির বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সম্ভবত কিছুই করার ছিল না। কিংবা ওই সময় সাংবাদিকতা অতটা শক্তি অর্জন করেনি। তবে এই মানবতাবিরোধী যুদ্ধবাজ শাসকদের করুণ পরিণতি হয়েছিল। তারা যেমন মানুষের ওপর বর্বরতা চালিয়েছে, তাদের ওপরও প্রাকৃতিক নিয়মে একই পরিণতি নেমে এসেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হিটলার বা মুসোলিনির মতো হতে পারেননি। তবে তিনি যে মিথ্যুক বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িক তাতে প্রায় কারো দ্বিমত থাকবে না।

ট্রাম্পের অসৌজন্যমূলক উন্মাতাল আচার আচরণের মধ্যে তার ক্ষমতার সময়ে আমেরিকার সাম্র্রাজ্যবাদী মনোভাবের কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনও দেখা গেছে। তার চার বছর শাসনে বিশ্বের কোথাও নতুন করে মার্কিনিরা যুদ্ধের আগুন জ্বালায়নি। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ও আফগানিস্তান কোথাও কামানগোলার আঘাতে প্রকম্পিত হয়ে উঠেনি। ইরাক থেকে সেনা সরিয়ে আনা, আফগানিস্তান থেকে নীরবে গুটিয়ে আসা ছাড়াও সিরিয়ায় রাশিয়া ও তুরস্কের সাথে প্রতিযোগিতা করে সামরিক সঙ্ঘাতকে ট্রাম্প আরো বাড়াননি। সারা বিশ্বে ওয়্যার অন টেররের নামে পূর্বতন প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলেও মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এ সময়ে দেখা যায়নি। ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প বাড়তি কঠোরতা দেখিয়েছেন, চীনের সাথে বাণিজ্যবিরোধে জড়িয়ে হম্বিতম্বি করেছেন। ব্যক্তিগত আচরণে উন্নাসিকতা ও অসততা থাকলেও ট্রাম্পকে সমসাময়িক আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে একজন যুদ্ধবিরোধী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। মিষ্টি ও মার্জিত কথার আড়ালে সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ হত্যা করার বিষয়টি মূল্যায়ন করতে হবে; তার আগের প্রেসিডেন্টরা যেমনটি করেছিলেন।

দেশের ভেতরে বিভাজনের যে রাজনীতি ট্রাম্প করেছিলেন সেটা আমেরিকার শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য ছিল অসহ্য। আমেরিকার বিশাল সংবাদমাধ্যমকে তিনি শুধু অগ্রাহ্য করে ছাড়েননি; তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন নিয়মিত। ক্রমাগত তিনি সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের গালাগাল, বকাবকি করে গেছেন। এককভাবে প্রপাগান্ডা চালিয়ে তিনি পুরো মিডিয়া সাম্রাজ্যকে কোণঠাসা করে রাখার কৌশল অবলম্বন করছিলেন। তবে তিনি কোনো সাংবাদিককে হোয়াইট হাউজে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার মতো হীন কাজ করেননি। কোনো মিডিয়া গোষ্ঠীকে নিজ থেকে নিষিদ্ধ করে দেননি। আমেরিকান সমাজে দীর্ঘসময়ে যে মূল্যবোধ গড়ে উঠেছে এক ঝটকায় তিনি তা উড়িয়ে দিতে পারেননি।

সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিষোদ্গার চালানোর পাশাপাশি ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বিকল্প মাধ্যমকে ব্যবহার করেছেন। হোয়াইট হাউজ ও প্রেসিডেন্টের জরুরি খবর তিনি ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করার কৌশল নিয়েছেন। এমনকি তিনি উত্তর কোরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে এককভাবে প্রপাগান্ডা ওয়্যার চালিয়েছেন ব্যক্তিগত টুইটার থেকে। অভ্যন্তরীণ বিতর্কগুলোর জবাবও তিনি এখান থেকে দিতেন। এর বাইরে তিনি ‘মিডিয়া মোগল’ রুপার্ট মারডকের মালিকানাধীন ফক্স নিউজের ওপরই নির্ভর করতেন। ফক্স নিউজও তাকে কিছুটা কাভার দিয়েছে। তারা অনেকটাই তার সাথি ছিল। অন্যায় অসংযত আচরণের পরও ফক্সের কাছে তিনি প্রশ্রয় পেয়েছেন। আমেরিকার বিশাল মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি ট্রাম্পের এমন আগ্রাসী আচরণের কাছে দমে যায়নি, তার উদ্ধত স্বৈরাচারী আচরণকে রুখে দেয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখায়নি। মেয়াদের একেবারে শেষের দিকে এসে ট্রাম্পকে তারা অনেকটাই থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। আমেরিকার মিডিয়ার স্বাধীনচেতা আচরণ বাকি বিশ্বের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। স্বৈরাচারকে মোকাবেলা করার জন্য বিশ্বের সাংবাদিকরা আমেরিকান সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রেরণা নিতে পারেন।

ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে হোয়াইট হাউজে বসে ডাহা মিথ্যাচার করতে চাইছিলেন। সাংবাদিকরা এবার তার এমন মিথ্যাচারকে রুখে দিয়েছেন। তার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের সরাসরি সম্প্রচার মাঝখান থেকে বন্ধ করে দেয় টিভি চ্যানেলগুলো। সরাসরি বক্তব্য দেয়ার সময় এমন সম্প্রচার বন্ধের কারণ যে ট্রাম্পের অবলীলায় মিথ্যা বলা সেটা টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে আবার ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে। তারা বলেন, কারচুপির যে অভিযোগ ট্রাম্প তুলেছেন তার সমর্থনে কোনো প্রমাণ তিনি হাজির করেননি। আমেরিকান সংবাদমাধ্যম ট্রাম্পের তথ্যসন্ত্রাসকে রুখতে আরো আগেই সজাগ হয়েছে। তিনি যখন করোনা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন এবং তার সরকারের সফলতা দাবি করছেন তখন থেকেই আমেরিকার জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলগুলো তার বক্তব্যের সরাসরি সম্প্রচার চলার মাঝখানে বন্ধ করে দিয়ে সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুসরণের এক অনন্য নজির স্থাপন করে।

এবার ফক্স নিউজও আর ট্রাম্পের সাথে থাকেনি। সবাই একসাথে প্রেসিডেন্টের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। এমনকি বিকল্প মাধ্যম টুইটার-ইউটিউবও এগিয়ে এসেছে। নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের করা টুইটের নিচে টুইটার কর্তৃপক্ষ সেঁটে দিয়েছে নিজেদের সংশোধনী। ট্রাম্পের টুইটের নিচে কর্তৃপক্ষ লিখে দিয়েছেÑ খবরটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।

মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন স্লোগানের আড়ালে ট্রাম্প সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে আমেরিকার বহুত্ববাদী সমাজের যে বারোটা বাজাতে চেয়েছিলেন সেটা কারা সাহসিকতার সাথে রুখে দিলেন, ইতিহাস একসময় তা স্মরণ করবে। দেশটির সিভিল সোসাইটি ও মানবাধিকার গ্রুপগুলোর সাথে সামনে থেকে সাংবাদিকরাই এর নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ জন্য আমেরিকার বিকশিত সংবাদমাধ্যম ধন্যবাদ পেতে পারে। পৃথিবীর স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী আধাগণতান্ত্রিক দেশগুলোর নতজানু মিডিয়া ও সাংবাদিকরা অমেরিকার সাংবাদিকদের সাহসিকতা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। তবে শিক্ষা গ্রহণ করা সহজ ব্যাপার নয়। একবার মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গেলে বা ভেঙে গেলে সেটা জোড়া লাগিয়ে শক্ত করে দাঁড় করানো প্রায় অসম্ভব। পরাধীন ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে উত্তরণ ঘটাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেগে যেতে পারে। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশকে তাই একটি স্বাধীন মেরুদণ্ডসম্পন্ন মিডিয়া পাওয়ার জন্য বহুদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

নিজেদের রক্ষা করতে পারছেন না বাংলাদেশের সাংবাদিকরা
চাল ৫৫ টাকা, আলু ৫০ টাকা-একজন সীমিত আয়ের মানুষ কিভাবে দিন গুজরান করবেন? এক কেজি চাল আর এক কেজি আলু কিনতে তাদের চলে যায় ১০০ টাকারও বেশি। সাধারণ তরিতরকারির দাম আরো বেশি। মাছ গোশতের উচ্চ দামের বাজারে একটু শাকসবজি খেয়ে বাঁচবে তার সুযোগও সীমিত। বেগুনের কেজি ১০০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা। এক আঁটি শাকের দামও এখন ৫০ টাকা। পেঁয়াজ ঘষে কাঁচামরিচ দিয়ে ভাত খাবেন তাও এখন অগ্নিমূল্য। কাঁচামরিচের দাম ২০০ টাকার উপরে। পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকা। শিম, কপি এগুলোকে শীতের মওসুমে ‘অভিজাত’ তরকারি হিসেবে বাজারে গণ্য করা হচ্ছে। একজোড়া কফি ১০০ টাকার বেশি, শিমের দামও কেজি ১০০ টাকার বেশি।

ভোগ্যপণ্যের এমন অগ্নিমূল্যের বিপরীতে সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত ও গরিব নির্বিশেষে সবার আয় কমে গেছে। নিত্যপণ্যের দ্বিগুণ-তিনগুণ করে মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবন যাত্রার ওপর প্রবলভাবে আঘাত হেনেছে। আয় কমে যাওয়া ও মূল্যস্ফীতির অভিঘাতে মানুষের প্রকৃত আয় কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। প্রতিদিনের খাদ্যের জোগান দিতে মানুষ যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন খবর হচ্ছে- আমাদের অর্থনীতি বিশাল ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এসব খবরের মানে একজন নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে কিই-বা হতে পারে?

বাজারের গতি প্রকৃতি দেখে এটা অন্তত বোঝা যাচ্ছে, একটা শ্রেণীর আয়-উপার্জন কমেনি যারা পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে। তরিতরকারিসহ নিত্য ভোগপণ্য এসবের উৎপাদক কৃষক যদি এই উচ্চমূল্যের ভাগিদার হতেন তাহলেও কিছুটা হলেও বাংলাদেশ উপকৃত হতো। তারা পেঁয়াজ ও আলুর মতো জরুরি পণ্যগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারে এসবের জোগান স্বাভাবিক রাখতেন। বাস্তবে দেখা যায়, উচ্চমূল্যের কোনো সুফল কৃষকরা পান না। মূল্য বৃদ্ধি আসলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘটে। ক্ষমতার ছাতার নিচে থাকা এক মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণী এই নিয়ন্ত্রণহীন বাজারের সুযোগ নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। অন্যদিকে নিম্নবিত্ত মানুষ ফতুর হয়ে যাচ্ছে, কৃষকরা হচ্ছেন প্রতারিত। ফটকাবাজারি ও টাউটদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই। অন্যভাবে বললে বলতে হয়, মূলত এই শ্রেণী নিজেই সব দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। বাজার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের মিডিয়ার জোরালো সংবাদ উপস্থাপনা নেই। কিছু সংবাদমাধ্যম বাজারের পণ্যমূল্য কখনো কখনো প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করছে। এ ধরনের প্রতিবেদন সাদামাটা। এগুলোতে কোন পণ্যের দাম কত সেটাই উল্লেøখ থাকছে। কিন্তু এর পেছনের খবরটা কোথাও নেই। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। সরকারের দায়বদ্ধতা নিয়েও কোনো প্রতিবেদন নেই। এ ধরনের একটা ‘ধরি মাছ না ছুই পানি’ টাইপের খবর আমরা মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি।

বাংলাদেশে অবাধ সাংবাদিকতার চর্চা বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। অবাধ স্বাধীনতার দায়িত্বপূর্ণ চর্চা করতে হয়। কোনো কিছুর ‘অতিশায়ন’ ভালো হয় না। বিএনপি সরকারের আমলে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের জন্য সরকারপ্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে সাংবাদিকরা প্রশ্নের মুখোমুখি করেছিলেন। এসবের জন্য সরাসরি হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারের তুফান আমরা দেখেছি। তবে ওই সময় সিন্ডিকেটের এমন ভয়াবহ দৌরাত্ম্য দেখা যায়নি। আজকের অনিয়মের মচ্ছবের সিকিভাগও তখন ছিল না। এখন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিডিয়া খোলাসা করে বলার সততা দেখাতে পারছে না। তখন যদি একটি হাওয়া ভবন দুর্নীতির আখড়া হয়, এখন এমন আখড়ার সংখ্যা অগুনতি হওয়ার কথা। উচ্চ দামের কারণে পণ্যের গায়ে যদি আগুনও ধরে যায় তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের জোরালো মন্তব্য করার সুযোগ সীমিত। এক সময় হয়তো এই সীমিত সুযোগও অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।

বর্তমান সময়ে সাংবাদিকরা নিজেরাই দুস্থ ও প্রান্তিক হয়ে গেছেন। তারা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে যেন দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক সাংবাদিককে গুম করা হয়েছিল। প্রকাশ্যে মুখে চেতনানাশক গুঁজে দিয়ে অচেতন করে তাকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর আস্তানায় নিয়ে অনেকটা বিবস্ত্র করে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। দুর্বৃত্তরা তাকে একটা কথাই বলছিল, ‘আর নিউজ করবি কি না বল।’ সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ নির্যাতনের কথা জানান।

উপর্যুপরি নির্যাতন চালিয়ে চারদিনের মাথায় তাকে রাস্তায় ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে তাকে সাধারণ মানুষ উদ্ধার করে। চেতনা ফিরতেই তিনি মূর্ছা গিয়ে বারবার বলছিলেন, ‘আমি আর নিউজ করব না’। অত্যাচারের চোটে তিনি এ কথাটি বলে সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ছাড়া পেতে চেয়েছিলেন। সে কথাটিই রাস্তায় মানুষের কাছে উদ্ধার হওয়ার পরও ঘোরের মধ্যে আওড়িয়ে যাচ্ছিলেন।

ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অন্য অসংখ্য ঘটনার মতো এর কোনো প্রতিকার মেলেনি। সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতা গোষ্ঠী কারো বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। এর দ্বারা কী বোঝা যায়? এতে করে কি এটাই প্রমাণিত হয় না, দুর্নীতি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ে কেউ কিছু লিখতে পারবে না। এটাই তো উচ্চস্বরে সম্ভবত বলা হচ্ছে। সরকার মুখে কথাটি উচ্চারণ না করলেও তাদের কর্মকাণ্ডে তা-ই প্রমাণিত হচ্ছে। সরকার নিজেও সরসারি সাংবাদিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে।

নির্যাতিত সাংবাদিক কাজলের ঘটনাটি নতুন করে উল্লেøখ করার কিছু নেই। আর ডিজিটাল মামলা ও ৫৪ ধারার প্রয়োগ তো খড়গ হিসেবে রয়েছে। সমাজসেবা অফিসারের দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহের করতে গিয়ে মারধরের শিকার ও লাঞ্ছিত হয়েছেন ‘৭১ টিভি’র এক সাংবাদিক। তার ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে আটক করে রাখেন। সাংবাদিকদের এমন অপমান, নির্যাতন লাঞ্ছনা প্রতিনিয়ত দেশে ঘটে চলেছে। এর সাথে এমনকি যুক্ত হচ্ছে হত্যার ঘটনাও।

বাংলাদেশে আজকের দিনে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কোন পর্যায়ে রয়েছে এসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে তা প্রতিফলিত হয়। অন্যদিকে, সাংবাদিকরা নিজেরা এখন এতটাই বিভক্ত আর হীনবল যে, নিজেদের বাঁচাতে জোরালো প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এমন দুর্বলতা নিয়ে তারা কিভাবে জাতির সেবা করবেন? নাগরিকরাও তাই সাংবাদকিদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু আশা করতে পারেন না।

jjshim146@yahoo.com

 


আরো সংবাদ



premium cement