২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অন্তহীন যুদ্ধ ও মার্কিন নির্বাচন

বাইডেন ও ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে ঘটে সন্ত্রাসী হামলায় টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনা, যা ‘নাইন-ইলেভেন’ নামে সমধিক পরিচিত। এর এক মাসেরও কম সময় পর ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের বুশ প্রশাসন ৭ অক্টোবরে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে দখল করে নেয় আফগানিস্তান। অনেকের ধারণা ছিল এ যুদ্ধ হবে স্বল্পস্থায়ী। বাস্তবতা হলো- ৭ অক্টোবর ছিল এ যুদ্ধের ১৯ বছর পূর্তি। এখনো চলমান। এ যেন এক অন্তহীন যুদ্ধ।

করোনা মহামারীকালে জাতিসঙ্ঘ আফগানিস্তানে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও যুক্তরাষ্ট্র মানেনি। আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য ছিল তিনটি : এর দু’টি অর্জনে ব্যর্থ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইতিহাসের দীর্ঘতম এ যুদ্ধ থেকে মুক্ত হতে। তবে সে পথ এখনো তৈরি করতে পারেনি। শুধু একটি লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র সক্ষম হয়েছে। তা হলো ২০১২ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করতে পারা, যিনি কার্যত পাকিস্তানে আত্মগোপনে ছিলেন।

তবে এক লাদেনকে

খতম করতে গিয়ে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার ৫০২ সৈন্য হারাতে হয়েছে। যুদ্ধে এক লাখ আফগান নিহত হয়েছেন। ৪০ লাখ লোক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাস্তুচ্যুতির ঘটনা। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, বিভিন্ন দেশে নিবন্ধিত আফগান শরণার্থী রয়েছেন ২৫ লাখ। ব্রিটেনসহ ইইউ দেশগুলোর সরকারি নীতি হচ্ছে জোর করে আফগান শরণার্থীদের কাবুলে ফেরত পাঠানো। তাদের দৃষ্টিতে আফগানিস্তান হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে কম শান্তিপূর্ণ শ্রেণীভুক্ত দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই জোর করে আফগানদের দেশে ফেরত পাঠানোর তীব্রতা তিন গুণ বেড়েছে ‘জয়েন্ট ওয়ে ফরওয়ার্ড’ নীতির আওতায়। ফাঁস হয়ে যাওয়া গোপন তথ্যমতে, ইইউ দেশগুলো আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপার পূর্ণ সতর্ক। আফগান সরকার তাদের দেশে ফেরত নিতে রাজি হয়েছে এই ভয় থেকে যে, না হলে আফগানিস্তানের প্রতি ইইউ দেশগুলোর সহায়তা কমে যাবে।

এখন পর্যন্ত এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র্রের ব্যয় হয়েছে ৮২২ বিলিয়ন ডলার। সন্দেহভাজন অসংখ্য আফগানকে আটক ও অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে দখলদার বাহিনী। ন্যাটো যুক্তরাষ্ট্র বাহিনী জাতিসঙ্ঘে সনদ ও জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে দেশটিতে দুই দশক ধরে দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে এর দীর্ঘ দিনের অনেক মিত্র দেশকে হারাতে হয়েছে।

বারাক ওবামার আমলে নেয়া কিছু উদ্যোগের ফলে অনেক বন্ধু ও মিত্র দেশকে আমেরিকার পাশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু তার আমলেও আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা ১০ গুণ বাড়ানো হয়। এতে অনেক বেসামরিক নিরপরাধ আফগান নিহত হন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন সম্প্রসারমান যুদ্ধগুলোর বিস্তৃতি রোধে। এর ফলে আমেরিকার প্রতি বিশ্ব জনগোষ্ঠীর আস্থার পারদমাত্রা আরো নিচে নেমে আসতে থাকে। বিশেষ করে ‘গ্লোবাল সাউথে’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থার সর্বাধিক পতন ঘটে।

এরপর যুদ্ধের রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ২০১৬ সালের নির্বাচনটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘মেক-অর-ব্রেক’ তথা ‘সাফল্য বা ধ্বংস’ ধরনের এক নীতিসূচনার একটা ক্ষণ। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে প্রশ্ন ছিল : আমেরিকাকে কি ওবামার রেকর্ডের ওপর গঠনমূলক উপাদান দিয়ে গড়ে তোলা হবে- যেমন ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি মেনে চলা হবে এবং কিউবার সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা হবে, না যেকোনো মূল্যে ভুল-শুদ্ধের তোয়াক্কা না করে ধ্বংসাত্মক নব্য-উপনিবেশবাদী যুদ্ধগুলো মানবিক হস্তক্ষেপ হিসেবে যৌক্তিক বলে প্রতিষ্ঠিত করা হবে?

২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারাভিযানে বলা হতো, যেসব ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ রয়েছে সেগুলোর অবসান ঘটানোর কথা। প্রচারাভিযানে এসব অন্তহীন যুদ্ধ অবসানের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েই ট্রাম্পকে কথা বলতে দেখা গেছে। তার এ নীতি অবলম্বন ছিল প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটনের নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত, যিনি বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে সামরিক শক্তি প্রয়োগের পক্ষপাতী। কর্নেল ইউনিভার্সিটির ডগলাস এল ক্রিনার ও ইউনিভার্সিটি অব মিনিসোটা ল স্কুলের ফ্রান্সিস এক্স শেন পরিচালিত এক বিস্তারিত সমীক্ষার উপসংহারে বলা হয়েছে- যেসব কাউন্টিতে যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি লোকক্ষয় ঘটেছে, সেসব কাউন্টিতে ট্রাম্পের প্রতি ভোটারদের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট হিসেবে পরিচিত মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন রাজ্যে নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতি এ সমর্থন ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচনী প্রচারাভিযানে শান্তির যে প্রতিশ্রুতি ট্রাম্প দিয়েছিলেন, তা থেকে ওবামাার নীতির চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ পেছনে সরে আসেন তিনি। বিশেষ করে তার এ সরে আসা লক্ষ করা যায় তার দেশের কভার্ট ও প্রক্সি যুদ্ধগুলোর ব্যাপারে। লিবিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে তার প্রতিশ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠা থেকে অনেক দূরে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররাই বেশির ভাগ যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এসব যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে ভয়াবহ ধরনের বিমান হামলায়, বিশেষ সামরিক অভিযানে, হত্যা ও আটক করছে প্রতিপক্ষের লোকদের, তাদের অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং প্রক্সিযুদ্ধে জোগান দিচ্ছে অস্ত্রের। যুক্তরাষ্ট্রের এ নীতি-কৌশলে এসব দেশে প্রতিপক্ষের সামরিক ও বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি ঘটছে ব্যাপক। তবে তার আমলে মার্কিন সেনাসদস্যের মৃত্যুহার ইরাক ও আফগানিস্তানে কমে আসে ২০১৫ সালে ৩০ জনে এবং ২০১৬ সালে ৩৩ জনে। ওবামার আমলে এ মৃত্যুহার সর্বোচ্চ পর্যায় উঠেছিল : ২০১০ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬০ সেনাসদস্য নিহত হয়। ২০০৭ সালে ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার ২১ জন সেনাসদস্য মারা যায়।

অন্য দিকে ট্রাম্প প্রশাসন তালেবানের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে আফগানিস্তানে ইউএস সেনাবাহিনীর লোকবল কমিয়ে এনেছে। এর পরও এখনো সেখানে অবস্থান করছে আট হাজার ৬০০ মার্কিন সেনা। ট্রাম্পের ক্ষমতায় বসার সময় এ সংখ্যা এর চেয়ে সামান্য কম ছিল। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আগামী নভেম্বরে মার্কিন বাহিনীর জনবল পাঁচ হাজারে নামিয়ে আনা হবে। ২০০১ সালের পর থেকে এটিই আফগানিস্তানে সবচেয়ে কম মার্কিন সেনা-জনবল। কিন্তু পুরোপুরি মার্কিন সেনা প্রত্যাহার কখন করা হবে, তা কেউ বলতে পারে না। এর অপর অর্থ আবার যেকোনো সময় এ সেনাবল আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে যুদ্ধটা জারি রাখার প্রয়োজনে। ট্রাম্প প্রশাসন আফগান যুদ্ধে মূলত নির্ভর করছে বোমাবাজির ওপর। ট্রাম্প ২০১৭ সালে সেখানে নিক্ষেপ করে ‘মাদার অব অল বম্বস’ নামে অভিহিত সবচেয়ে বড় অপারমাণবিক বোমা। ২০১৯ সালে আফগানিস্তানে রেকর্ড পরিমাণ সাত হাজার ৪২৩টি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বাহিনী। তালেবানের সাথে চুক্তি করার পরও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার অবসান ঘটেনি। সেই সাথে কমেনি দুর্নীতিবাজ আফগান সরকারকে সহায়তা করা। ট্রাম্প তার পুনর্নির্বাচনের প্রচারাভিযানে যে প্রচারপত্র ছাড়ছেন; তাতেও এসব অন্তহীন যুদ্ধ অবসানের কোনো কথা নেই।

আরো চার বছরের জন্য কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে ফিরে আসার প্রয়াসে ট্রাম্প গর্বভরে প্রচার করছেন- কী করে তিনি সিরিয়া ও ইরাকে আইএসআইএসকে ধ্বংস করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খুব কম লোকই উপলব্ধি করেন, তা করতে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের ও পর্যায়ের নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালে ব্যবহার করেছে ৪০ হাজার বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রসহ হাজার হাজার আর্টিলারি শেল। রকেট নিক্ষেপ করেছে মসুল, রাক্কা ও অন্যান্য স্থানের আইএসআইএস ঘাঁটিতে। ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্প আইএসআইএস পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন। তিনি বলেন : ‘যখন তোমরা এসব সন্ত্রাসীকে পাবে, তখন খুঁজে বের করে আনবে এদের পরিবারগুলোকেও।’ ইরাকি বাহিনী ২০১৭ সালে মসুলের ‘ওল্ড সিটি’-তে সর্বশেষ যেসব আইএসআইএস শরণার্থীকে আটক করে, তাদের কাউকে জীবিত রাখেনি : নারী-পুরুষ ও শিশুসহ সবাইকে হত্যা করে। কুর্দিস ইরাকি গোয়েন্দা রিপোর্ট মতে, মসুলের ৪০ হাজারেরও বেশি বেসামরিক লোককে হত্যা করা হয় এ শহর পুনর্দখলের সময়।

ট্রাম্প উল্লেখ করেন সৌদি আরবের সাথে তার অস্ত্রচুক্তির ব্যাপারে। বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প উৎপীড়ক সৌদি স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের কাছে উভয়ই প্রচুর অস্ত্র বিক্রি করেছেন। ফলে গত তিন বছর সৌদি সরকারের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ছাড়া পৃথিবীর বাকি সব দেশকে ছাড়িয়ে যায়। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতও। এ জোট যুদ্ধ অস্ত্র কিনে ইয়েমেনের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের জন্য। এ যুদ্ধ বিশ্বের ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। ইয়েমেনের জনগণের দুর্ভোগের অবসানকল্পে আনা পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় বিলে ট্রাম্প ভেটো দিয়েছেন এ অন্তহীন যুদ্ধকে আরো প্রলম্বিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে। কারণ এ যুদ্ধ অন্তহীনভাবে চলতে দেয়ার অপর অর্থ, তাদের অস্ত্রবাণিজ্যের পথ খোলা রাখা। দু’টি ‘ওয়ার পাওয়ার বিলের’ লক্ষ্য ছিল এ ধরনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমিয়ে আনা এবং সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা।

অন্য দিকে ট্রাম্প অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে চলেছেন গাজায় ইসরাইলের বোমাবর্ষণ এবং ইসরাইলের সাথে ফিলিস্তিন বসতিগুলো একীভূত করার ইসরাইলি পরিকল্পনার প্রতি। ট্রাম্প সমর্থন করেন- ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের সীমিত স্বায়ত্তশাসন। ট্রাম্প ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎকে এখন আরো জটিল করে তুলেছেন ইসরাইল ও আরব আমিরাতের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি সম্পাদনে মদদ দিয়ে। উল্লিখিত অন্তহীন যুদ্ধগুলোর অবসান ঘটানোর ব্যাপারে ট্রাম্প প্রতিশ্রুত ছিলেন। অথচ এ অন্তহীন যুদ্ধগুলোর অবসান না ঘটিয়েই বিপজ্জনকভাবে উত্তর কোরিয়া, ইরান ও ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে ট্রাম্প শুরু করেছেন অন্য এক ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ।

তিনি একপক্ষীয়ভাবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে ৩৯টি দেশের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে জোর প্রচারণা চালান। এ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব পড়ে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানবসমাজের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর অভিযোগ : ইউরোপ ইরানের আয়াতুল্লাহদের পক্ষ নিয়েছে। অন্য দিকে ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করা ও ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করার ট্রাম্পীয় নীতির অর্থ ট্রাম্প প্রশাসন ইরানোর চেয়েও বেশি বিচ্ছিন্ন করছে জাতিসঙ্ঘকে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি ট্রাম্পের এ অবজ্ঞা ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তির সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে এসেছেন প্যারিস ক্লাইমেট অ্যাকর্ড, ইন্টারমেডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি, ওপেন স্কাইজ অ্যাগ্রিমেন্ট ও জাতিসঙ্ঘের তিনিটি সংস্থা : বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো ও হিউম্যান রাইট কাউন্সিল থেকে।

ডেমোক্র্যাটিক যুদ্ধবাজরাও ট্রাম্পের ওপর কলঙ্ক লেপন করতে গিয়ে ‘রাশিয়ার পুতুল’ বলে অভিহিত করেন। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প আমেরিকাকে নিয়ে গেছেন রাশিয়া ও চীনবিরোধী এক স্নায়ুযুদ্ধের দিকে। তার জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতির দলিলপত্রে দ্ব্যর্থহীনভাবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করা হয়েছে রাশিয়া ও চীনকে আমেরিকার ক্ষমতা খর্ব করার ক্ষেত্রে প্রধান দুই শত্রু হিসেবে। সে জন্য আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে রেকর্ড পরিমাণ সামরিক বাজেট নিশ্চিত করার নীতি অবলম্বন করেছেন ট্রাম্প। এটি ছিল ২০১৫ সালের ওবামা প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল থেকে বিস্ময়করভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের সরে আসা। ওবামা প্রশাসন স্বাগত জানিয়েছিল একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ চীনের প্রতি। সেই সাথে ওবামা প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা অভিন্ন স্বার্থে রাশিয়ার সাথে সহযোগিতার দুয়ার সব সময় উন্মুক্ত রাখবে।

২০২০ সালের ডলার মূল্যে ওবামা
প্রশাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর তার আট বছরের শাসনামলে সামরিক ব্যয় রেকর্ড পরিমাণে ৫ দশমিক ৬৭ ট্রিলিয়ন ডলারে সীমিত রাখেন। সেখানে ট্রাম্প তার রাশিয়া ও চীনের সাথে স্নায়ুযুদ্ধকে ব্যবহার করেছেন সামরিক ব্যয় আরো বাড়িয়ে তোলাকে যৌক্তিক প্রতিপন্ন করতে। এ ছাড়া তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকায়নে ওবামার ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনাকেও। এ দিকে বিশ্ব এখন দ্বিগুণ বিপদের মধ্যে আছে পারমাণবিক যুদ্ধ আবহাওয়া সঙ্কটের আশঙ্কায়। গত জানুয়ারিতে আণবিক বিজ্ঞানীদের বুলেটিন মতে, ডোমসডের সময়ও এগিয়ে আসছে খুবই দ্রুত।

একসময় ট্রাম্প ন্যাটোকেও গালমন্দ করে এটিকে ‘অবসলিট’ তথা অচল বলে অভিহিত করেছেন। আসলে এটি ছিল ন্যাটোর প্রতি ট্রাম্পের এক ধরনের চোখ রাঙানি, যাতে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ায়। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল তা না করায় প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ট্রাম্প জার্মানি থেকে হাজার হাজার সৈন্য প্রত্যাহার করে সাড়ে পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েন করেন পোল্যান্ডে; যাতে রাশিয়াবিরোধী প্রতিরোধ আরো জোরদার হয়। এ ছাড়া ট্রাম্প আদেশ দেন দক্ষিণ চীন সাগরে উসকানিমূলক মার্কিন নৌবাহিনীর প্রহরা অব্যাহতভাবে বাড়িয়ে তুলতে। সেই সাথে জাপান, গুয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় মোতায়েন করা হয় ২৩ হাজার মার্কিন সেনা। ২০১৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয় আরো এক হাজার ৪০০ মার্কিন সেনা। সোমালিয়ায় ও পশ্চিম আফ্রিকায় জোরদার করা হয় ড্রোন হামলা।

এর পরও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলেই মনে হয়। ট্রাম্পের যুদ্ধবাদী ভুল সামরিক নীতি আমেরিকা ও তার নিজের জন্য ভালো কিছু বহন করছে না। এ দিকে ৩ নভেম্বরের নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই ট্রাম্প ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওর জন্য হতাশার পাল্লা ভারী হচ্ছে। বিষয়টি নির্বাচনে নিশ্চিতভাবে ভোটারদের বিবেচনার বিষয় হয়ে উঠছে। গণমাধ্যমে খবর হচ্ছে : আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

আমেরিকান ভোটারদের সামনে এখন প্রশ্ন : ট্রাম্পকে নির্বাচিত করে বিশ্বের অন্তহীন যুদ্ধগুলো কি অব্যাহতভাবে চলতে দেবে, বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে আরোপিত মানবতাবিরোধী অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়াকে কি অব্যাহত রাখা হবে, কিংবা আমেরিকার ব্রিঙ্কম্যানশিপ কি চালু রাখা হবে, স্নায়ুযুদ্ধের বিভাজনকে কি ফিরিয়ে আনা হবে, ট্রাম্পের ভুল নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি গর্বিত জাতি করে তোলার পরিবর্তে কি পরিণত করা হবে একটি মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স? না এর পরিবর্তে বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনবে বিদেশে সেনা মোতায়েনের নীতি থেকে এবং অন্তহীন যুদ্ধগুলোর অবসান ঘটানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে এবং সেই সাথে উত্তর কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে জিইয়ে রাখতে?

আমেরিকান ভোটারদের কাছে এটি স্পষ্ট : ট্রাম্পের লেগাছি হচ্ছে অব্যাহত আগ্রাসন ও অন্তহীন যুদ্ধগুলোকে অন্তহীন রাখা। তবে বিবেকবান আমেরিকান ভোটারদের উপলব্ধি হচ্ছে : ট্রাম্পের বিদেশনীতির একটাই দিক হচ্ছে আমেরিকা সাম্রাজ্যকে অস্তমিত হওয়ার দিকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে মৃত হাতি উদ্ধার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলির নিন্দা জামায়াতের রাজধানীতে তৃষ্ণার্তদের মাঝে শিবিরের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ রাজশাহীতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার হেরোইনসহ যুবক গ্রেফতার এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা গাজার বালিতে আটকে পড়েছে ইসরাইলি বাহিনী : হামাস মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন : যা বলছে আওয়ামী লীগ মান্দায় বিদ্যুতের আগুনে পুড়ল ৮ বসতবাড়ি রিজওয়ানকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্র্যাডম্যান বললেন আফ্রিদি

সকল