২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দারিদ্র্যমুক্তিতে ক্যাশ ওয়াক্ফ ব্যবস্থা

দারিদ্র্যমুক্তিতে ক্যাশ ওয়াক্ফ ব্যবস্থা - ছবি : সংগৃহীত

বৈশ্বিক মহামারীকালেও ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম থেকে শুরু করে ভাইরাস পরীক্ষার নকল সার্টিফিকেট বিক্রির মত ঘটনা থেকে বোঝা যায় দেশে দুর্নীতির শেকড় কতটা গভীরে। দুর্নীতির একটি বড় অংশজুড়ে আছে আর্থিক খাত। আমাদের অর্থব্যবস্থার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে অর্থনীতি ভালো বোঝেন এমন খুব কম ব্যক্তিকেই অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে। গাণিতিক হিসাব নিকাশে পারদর্শিতা এক জিনিস আর অর্থনীতির দর্শন বোঝা ভিন্ন বিষয়। আমাদের দেশে যারা বাজেট তৈরি করছেন তারা হলেন প্রশাসক। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ইতিহাস যদি দেখি তাহলে দেখব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯০ শতাংশ গভর্নর হলেন আমলা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যেখানে রাজস্ব নীতিনির্ধারণ করা হয় সেটি চালাচ্ছেন একজন প্রশাসক, যার কোনো দর্শন নেই। তারা কিন্তু সমাজে স্বনামধন্য লোক, নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ ব্যক্তি। আমাকে যদি নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের হেড অব ডিপার্টমেন্ট করা হয় তাহলে পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ব। গবেষণার অন্তর্নিহিত বিষয়গুলোর ধারেকাছেও যেতে পারব না। কারণ এটা তো টেকনিক্যাল বিষয়। এটা সড়ক নির্মাণের বিষয় নয় যে, কমনসেন্স অনুযায়ী কাজ করে যাবো। এর জন্য অনেক লেখাপড়া এবং বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রয়োজন। হাতেগোনা দুই-একজন স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন ছাড়া কোনো অর্থনীতিবিদের হাতে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেয়ার ভার দেয়া হয়নি। মূলত রাজনৈতিক চাপের কারণে এটা হয়েছে।

অর্থনীতি বোঝেন এমন কাউকে অর্থমন্ত্রী করা হলে তিনি অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দেবেন। কিন্তু একজন রাজনীতিবিদের অগ্রাধিকার হলো নির্বাচন, অর্থনীতি নয়। অর্থনীতিবিদ জেনেশুনে অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর কিছু করবেন না। রাজনীতিবিদের বিবেচনায় এটা কমই থাকবে। ফলে আমাদের অর্থনীতিতে আমূল কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আমরাও দারিদ্র্যকে সাথে নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছি। আর দুর্নীতির শেকড় দিনে দিনে সমাজের গভীরে প্রবেশ করছে। দুর্নীতি এখন আর সমাজের উচ্চপর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এটা হয়েছে জনবান্ধব অর্থনীতি সৃষ্টি করতে না পারার কারণে।

আমাদের কর ব্যবস্থার কথাই ধরা যাক। এটি কোনো কালেই দরিদ্রবান্ধব ছিল না। এটা সবসময় ধনীদের সহায়তা করেছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। এটা ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার। বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির পরও সরকার এই কর কাঠামো সংস্কারের পথে হাঁটেনি। আসলে রাজনীতির পাকচক্রে ওই সংস্কার আটকে আছে। অর্থনীতি সাজানোই হয়ছে ধনীকে সহায়তা করার জন্য।

বাজেটে কর মওকুফ করা হয় কার জন্য? কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয় কাকে? রফতানিতে ভর্তুকির সুফল কারা ভোগ করেন? কার খেলাপি ঋণ মওকুফ করা হয়? পরোক্ষ কর কাকে কাকে সহায়তা করার জন্য? সব কিছু ধনিক গোষ্ঠীকে লাভবান করার জন্য। কিন্তু যে মোটা কাপড় পরে, মোটা চালের ভাত খায় তার কর কিন্তু কমে না। ভ্যাট বসিয়ে নাকি অর্থনীতির অনেক উন্নতি করে ফেলা হয়েছে। এটাও যে একটি পরোক্ষ কর সেটা এখন সবাই জানে। আর এই পরোক্ষ করের বোঝা বহন করে গরিব জনগোষ্ঠী। এই বিশাল অরাজকতার পাশাপাশি রয়েছে প্রশাসনিক হয়রানি। আমার ক্ষেত্রে ঘটেছে এমন দুটি উদাহরণ এখানে তুলে ধরছি। একবার আমার স্টাফ এসে বলল, আপনাকে ট্রাস্টের জন্য ৩০ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট অফিসারের কাছে লোক পাঠাই। তখন সে বলল, ঠিক আছে ওনাকে ২০ হাজার টাকা দিতে বলেন, আমি ফাইল ঠিক করে দিচ্ছি। তখন আমি আমার লোককে বললাম, দেখ, ওর তো ট্যাক্স মাফ করার ক্ষমতা নেই। আমার ৩০ হাজার টাকা ট্যাক্স হলে আমি সেটাই দেবো। ও কেন কম চাচ্ছে? নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে। আমি লোক দিয়ে বলে পাঠালাম যে আমি কোনো টাকা দেব না। আমি ট্রাস্ট করেছি জনগণের কল্যাণ করার জন্য। আমি সরকারকে টাকা না দিয়ে সেই টাকা দান করব, এটা কিভাবে হয়? আমি তখন ফাইলটি দেখি। সেখানে এরপর ওই কর্মকর্তাকে লিখে পাঠাই যে এই খাতের কোনো কর হয় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে দেখা করে যখন ঊর্ধ্বতন অফিসারকে বিষয়টি বললাম তখন এর সুরাহা হয় এবং আমি এর সার্টিফিকেট নিয়ে আসি।

দ্বিতীয় ঘটনাটি যখন ঘটে তখন আমি হাসপাতালে ভর্তি। ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে আমার সহধর্মিণী বৃহৎ করদাতাদের দলে। কর কর্মকর্তাদের নজর সাধারণত এদের ওপরই বেশি থাকে। মনে করা হয় এরা বেশি আয় করে। তাই বেশি কর ফাঁকি দেয়। এদেরই ধরতে হবে। আমার স্ত্রীর নামে একটি চিঠি আসে। তাতে লেখা, আপনার অনেক ট্যাক্স বাকি পড়েছে, প্রায় এক কোটি টাকা। বিষয়টি আমি যখন জানি তখন আমার শরীরের অবস্থা এতই খারাপ যে চিঠিটিও ঠিকমতো পড়তে পারছিলাম না। আমি ফাইলটি রেখে দিতে বললাম, পরে দেখব বলে। কয়েক দিন পর কিছুটা সুস্থ হয়ে আমি চিঠিটি পড়লাম। দেখি, আমি ১৯৯৬ সালে দেশে আসার পর থেকে ওইসব বছরে ট্যাক্স বাকি পড়েছে বলে চিঠিতে দেখানো হয়েছে। পড়ার পর আমি ভাবি এ তো সর্বনাশ। যিনি চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি হয়তো ভেবেছেন মহিলা মানুষ হয়তো ভয়ে কিছু টাকা দিয়ে দেবেন। তখন আমি চিঠির জবাবে লিখলাম যে, ওই চিঠিটিই অবৈধ। কারণ আমাদের দেশে আইন আছে পাঁচ বছরের আগের কোনো সময়ের আয়কর দাবি করা যাবে না। একটি মাত্র তথ্য। আমার যদি এই তথ্যটি জানা না থাকত তাহলে কত বড় হয়রানি ও ক্ষতির মধ্যে পড়তে হতো তা কল্পনা করা যায়? এই আইনটির জন্য সরকারের ধন্যবাদ প্রাপ্য। আমি আইনটি কথা উল্লেখ করে লিখলাম যে, তুমি তো ট্যাক্সই দাবি করতে পারো না। আমার চিঠির জবাব আর পাওয়া যায়নি। আসলে আমার স্ত্রীর যত আয় ও সম্পদ ছিল তা ‘পিস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে দান করে দেয়া হয়েছিল। আর এটি এনবিআর অনুমোদিত একটি সংস্থা। ফলে তার আয় তখনই শূন্য হয়ে গেছে।

এভাবে আরো কত শত লোক যে হয়রানির শিকার হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। তবে এ ধরনের কিছু হয়রানি থেকে মানুষকে মুক্তিদানের চেষ্টা করার জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ধন্যবাদ দিই। তার সময়ে ২০১০ সালে দেশে প্রথম আয়কর মেলা চালু হয়। এটা সাধারণ মানুষকে কত বড় হয়রানি থেকে মুক্তি দিয়েছে তা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝি। মেলায় কেউ ৫-১০ মিনিটের মধ্যে তার আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারেন। অথচ এর আগে আমি দিনের পর দিন ঘুরেও এই রিটার্ন জমা দিতে পারিনি। কর্মকর্তাদের কাছে নানাভাবে হেনস্থা হতে হয়। এই সার্টিফিকেট দরকার, ওটা নাই কেন, সেটা না হলে চলবে না। এসব বলে বারবার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ তার কাজ ছিল শুধু রিটার্ন জমা নেয়া, কাগজপত্র পরীক্ষা নয়।

তাই আমি বলছি, আমাদের অর্থনীতিকে দরিদ্রবান্ধব করা দরকার। পাবলিক ফাইন্যান্সের ছাত্র হিসাবে আমার যতটুকু জ্ঞান তাতে বুঝেছি, দেশে এযাবতকাল যত বাজেট হয়েছে সবগুলোই দরিদ্রবিরোধী। আমি এ কথা সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও বলেছিলাম। এটি দেশের একমাত্র ব্যাংক যার উদ্বোধন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট। ওআইসির সাবেক মহাসচিব হামিদ আল গাবিদও সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন। আমি বলেছি, দরিদ্রদের জন্য কিছু কাজ করতেই এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের কথা বাদই দিলাম, পৃথিবীর কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক এই টার্গেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে বলে আমার জানা নেই। বিশ্বে অনেক ইসলামিক ব্যাংকও হয়েছে কিন্তু সেগুলো এই লক্ষ্য নির্ধারণ করে যাত্রা শুরু করেনি। এরই প্রেক্ষাপটে আমি দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার হিসেবে ক্যাশ ওয়াক্ফ ধারণার বাস্তব রূপায়ণ শুরু করি। ক্যাশ ওয়াক্ফ সার্টিফিকেট প্রবর্তন করি। আজ দেশের সব ইসলামিক ব্যাংকেই এই সার্টিফিকেট প্রবর্তন করা হয়েছে। এই ক্যাশ ওয়াকফ্রে উদ্দেশ্যই হলো দারিদ্র্যের মূলোৎপাটন ও ধনীদের মধ্যে ইহকালীন ও পরকালীন জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টি করে কল্যাণমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করা। এতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সমাজ থেকে দুর্নীতি বিদায় নেবে। গরিব অর্থকষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে অসৎ পন্থা অবলম্বনের দিকে ধাবিত হবে না। অন্য দিকে, ধনীদের মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে।

এর জন্য আমরা করমুক্ত এলাকা করার কথা ভাবতে পারি। সমাজের মাত্র ১০-১২ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ করদাতা। আগেই বলেছি, কর আদায় প্রক্রিয়ায় হয়রানির কারণে কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। করমুক্ত এলাকার উদাহরণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ধরা যাক। এটি পরিচালনার জন্য সরকারকে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ দিতে হয়। সরকার এই টাকা রাজস্ব বিভাগের মাধ্যমে কিছু সংখ্যক ধনী লোকের কাছ থেকে আদায় করছে। কিন্তু সরকার নিজে আদায় ও বরাদ্দের কাজটি না করে কিছু সংখ্যক প্রত্যক্ষ করদাতার সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি ওয়াক্ফ (ক্যাশ ওয়াক্ফ) ট্রাস্ট গঠন করে দিতে পারে। ট্রাস্টের সদস্যদের বলা হবে, সরকার তাদের কাছ থেকে কোনো আয়কর নেবে না, শুধু প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত করের টাকা তাদের মাধ্যমেই ওই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কাজে ব্যয় হবে। তারাই আয়-ব্যয় পরিচালনার বিষয়টি দেখভাল করবে। সরকার বাইরে থেকে শুধু পর্যবেক্ষণ করবে প্রত্যেক সদস্য ট্রাস্টের তহবিলে ঠিকমতো অর্থ জোগান দিচ্ছে কিনা। তখন এসব ব্যক্তির মধ্যে নিজস্বতার অনুভূতি (sense of belonging) তৈরি হবে। এতে কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা লোপ পেয়ে বরং আরো বেশি করে দানের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে।

এটি একটি মাত্র উদাহরণ। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক পরিশুদ্ধকরণে ক্যাশ ওয়াক্ফের ভূমিকা কতটা বিস্তৃত তা বলে শেষ করা যাবে না। একসময় ধনীকরা ভূসম্পত্তি ওয়াক্ফ করতেন। ফলে এই খাতে তাদের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। ক্যাশ ওয়াক্ফ সেই ধারণা থেকে মুক্তি দিয়ে সমাজের একেবারে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত সবার কাছে ওয়াক্ফের কল্যাণ পৌঁছে দিয়েছে। ইহকাল ও পরকাল দুই জীবনের জন্যই এটা কল্যাণকর। এই কল্যাণ শুধু ধর্মীয় গণ্ডিতে সীমিত নয়। কারণ এটা ইসলামের জাকাতের বিধানের মতো নয় যে নির্ধারিত খাতের বাইরে এর অর্থ খরচ করা যাবে না। ওয়াক্ফের অর্থ সব ধর্মের মানুষের কল্যাণে খরচ করা যায়। এটাই ওয়াক্ফের সৌন্দর্য।

আমাদের সভ্যতার প্যারাডক্স হলো এখানে একজন মানুষ বেঁচে থাকতে চায় আরেকজনকে মারার জন্য। শুনতে খুব রূঢ় মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। আমরা কোন খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করছি? অস্ত্র উন্নয়নের খাতে, অস্ত্র কেনার পেছনে। মানুষকে মারার জন্যই তো অস্ত্র? আরেকজনকে মেরে আমি বেঁচে থাকব। যখন বাজেট করা হচ্ছে তখনো মানুষ মারার ব্যবস্থা। গরিব মারার ব্যবস্থা। আমাদের জন্মই কি হয়েছে গরিবকে মারার জন্য? এই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে ক্যাশ ওয়াক্ফ। এর পেছনের কারণ জবাবদিহির অনুভূতি। ক্যাশ ওয়াক্ফ মানুষের মধ্যে একই সাথে দুনিয়া ও আখিরাতে জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টি করে। আমাদের নেতারা যত দ্রুত বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন তত দ্রুত জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড; সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দা

hmct2004@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement