১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিচারবহির্ভূত হত্যা নরহত্যা নয় কি?

বিচারবহির্ভূত হত্যা নরহত্যা নয় কি? - ছবি : নয়া দিগন্ত

একজন মানুষের বিভিন্নভাবে মৃত্যু হতে পারে। অনেকে জন্ম পরবর্তী, শিশুকালে, কিশোর বয়সে, কারো যুবক বা প্রৌঢ় অবস্থায়, অনেকে আবার বার্ধক্যে পদার্পণ পরবর্তী মারা যায়। বার্ধক্যে কিংবা পরিণত বয়সের মৃত্যু সবার দৃষ্টিতে স্বাভাবিক মৃত্যু। অন্য দিকে অপর সব মৃত্যু অপরিণত বয়সের। পরিণত বা অপরিণত বয়সে রোগ-ব্যাধিতে মারা গেলেও সে মৃত্যু স্বাভাবিক, বিপরীতে পরিণত বা অপরিণত বয়সে দুর্ঘটনায় মারা গেলে সেটি অস্বাভাবিক মৃত্যু। দুর্ঘটনায় বিভিন্ন ধরনের মৃত্যু হতে পারে যেমন- সড়ক, রেল, নৌ বা বিমান দুর্ঘটনায়, পানিতে ডুবে, বাড়ির ছাদ বা গাছপালা থেকে পড়ে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে, বজ্রপাতে, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বা বন্যায়, বোমা বা গুলির আঘাতে, সাপের ছোবলে, বন্য পশুর আক্রমণে, ছুরিকাঘাতে প্রভৃতি।

এমন অনেক মানুষ আছেন যারা স্বেচ্ছায় আত্মহননের পথ বেছে নেন। আত্মহননের কাজটি করতে গিয়ে কেউ যদি ব্যর্থ হয়; সে ক্ষেত্রে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারণ কোনো দেশের প্রচলিত আইন বা কোনো ধর্ম কোনো ব্যক্তিকে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণের অধিকার দেয়নি। তবে একজন মানুষ স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করলে সে ক্ষেত্রে অপরাধটি শাস্তিযোগ্য নয় এ কারণে যে, মৃত্যুর পর কোনো মানুষের বিচার করার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের দেশসহ যেকোনো দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো অপরাধী বিচারকার্য চলাকালীন মৃত্যুমুখে পতিত হলে তার নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও একই যুক্তি- মৃত ব্যক্তির বিচারের অধিকার মানুষের নেই এবং এ বিষয়ে যে বিধান মেনে চলা হয় তা হলো একজন অপরাধীর মৃত্যুর সাথে সাথে তার অপরাধেরও মৃত্যু ঘটে।

একজন অপরাধীকে অপরাধের বিবেচনায় বিচার পরবর্তী যদি মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে তা কার্যকর করা হয়, সে ক্ষেত্রে এটিকে বিচারিক হত্যাকাণ্ড বলা হয়। বিচারিক হত্যাকাণ্ড যেকোনো দেশের প্রচলিত আইন ও ধর্মীয় অনুশাসনে স্বীকৃত ও সমর্থিত, যদিও বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে মৃত্যুদণ্ডের সাজা রহিত করা হয়েছে।

আমাদের দেশের লোকজন প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে ‘ক্রসফায়ারে মৃত্যু’ শব্দটির সাথে পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ক্রসফায়ারে মৃত্যু পরবর্তী আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে একই ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়। বক্তব্যটি হলো- আটক পরবর্তী পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলির কারণে মৃত্যু ঘটেছে অথবা আটক ব্যক্তিকে নিয়ে তার দেখানো মতে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে তার অনুগত বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হওয়া পরবর্তী আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়লে মৃত্যু হয়েছে। এ ধরনের মৃত্যুকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলা হয় এবং যেকোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চালানো অবমাননাকর।
নরহত্যা গুরুতর ও নিকৃষ্ট ধরনের অপরাধ। দেশভেদে নরহত্যার সাজা মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায়ে কোনো কার্য দ্বারা মৃত্যু ঘটানোকে দণ্ডার্হ (Culpable homicide) নরহত্যা বলা হয়। দণ্ডার্হ নরহত্যাকে খুন (Murder) গণ্য করা হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আইনে স্বীকৃত নয় বিধায় এটি দণ্ডার্হ নরহত্যা অথবা খুন। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস জন্মানো না যাবে যে, মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায়ে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়নি; ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস করার সঙ্গত কারণ থাকে যে, প্রকৃতই হত্যাকাণ্ডটি মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায়ে সংঘটিত হয়েছে।

আমাদের দেশে কমিউনিস্ট নেতা সিরাজ শিকদার গ্রেফতার হলে পরবর্তী দিন পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আটকাবস্থা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করা হলে তার মৃত্যু ঘটে। সে সময়কার পুলিশের বক্তব্যটি দেশবাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। সিরাজ শিকদার বা তার বাহিনী কর্তৃক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়ে থাকলেও এ জন্য বিচারবহির্ভূতভাবে তাকে হত্যা করা হবে এটি কি আইনের শাসনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতসীন হলে এক অজানা কারণে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং কথিত সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত এমন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়। এ হত্যা পরবর্তী অপারেশন ক্লিনহার্ট কার্যক্রমকে দায়মোচন দেয়া হয়; সেই থেকে যে ক্রসফায়ার নাটকের যাত্রা শুরু তা অদ্যাবধি অব্যাহত আছে।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অধ্যাদেশ, ১৯৭৯ সালে সংশোধনীর মাধ্যমে ২০০৩ সালে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠন করা হয়। র‌্যাবে পুলিশ, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী প্রভৃতির সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। র‌্যাবকে অপরাধ তদন্তের ক্ষমতা দেয়া হলেও মামলা রুজু ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দ্বারস্থ হতে হয়। তা ছাড়া সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইনে যে বিধান রয়েছে, সে বিধান অনুযায়ী র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতারের পর কোনোরূপ কালক্ষেপণ না করে অপরাধীকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলেই সংবিধান ও প্রচলিত আইন প্রতিপালনে কোনো ব্যত্যয় ঘটে না; কিন্তু কয়টি ক্ষেত্রে হস্তান্তর করা হয় সে বিষয়ে দেশবাসী সন্দিহান। ক্রসফায়ারে মৃত্যু ঘটানোর ব্যাপারে র‌্যাবের বিরুদ্ধে যে রূপ অভিযোগ, অনুরূপ অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধেও রয়েছে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৩৩(২) এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা নং ৬১-তে সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ রয়েছে, গ্রেফতারকৃত কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রার সময় ব্যতিরেকে ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে হাজির করতে হবে; কিন্তু র‌্যাব বা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার পরবর্তী যে সব ক্রসফায়ারের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে সে বিষয়ে নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৩৩(২) এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা নং ৬১-এর বাধ্যবাধকতা অনুসরণ না করেই অপরাধীদের এ দু’টি বাহিনী গ্রেফতারের সঠিক দিন-তারিখ গোপন রেখে ক্রসফায়ারে মৃত্যুর ঘটনা সংগঠনের প্রয়াস নিয়ে থাকে।

পুলিশ, র‌্যাব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেকোনো সদস্য কোনো অপরাধী বা তার অনুগত বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে কতটুকু শক্তি বা বল প্রয়োগ করতে পারবে তা আইনে নির্ধারিত। এ বিষয়ে দণ্ডবিধির ধারা নং ৯৭-এ মনুষ্যদেহ ক্ষুণ্নকারী যেকোনো অপরাধের বিরুদ্ধে তার স্বীয় দেহ ও অন্য যেকোনো ব্যক্তির দেহের প্রতিরক্ষার অধিকার দেয়া থাকলেও সে অধিকারের ব্যাপ্তি এতটুকু বিস্তৃত নয় যে, এ যাবৎকাল ক্রসফায়ারের নামে যে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে তাতে একই কাহিনীর পুনরাবৃত্তিতে ক্রসফায়ারের যৌক্তিকতার গ্রহণযোগ্যতার অবকাশ সৃষ্টি হয়।

আমাদের সংবিধান অনুযায়ী সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত এবং এ তিন বাহিনী ব্যতীত অন্য কোনো বাহিনীকে আইন দিয়ে ঘোষণার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হলে সে বাহিনীটিও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হবে। অন্য দিকে বিভিন্ন আইনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলতে পুলিশ বাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, আনসার বাহিনী, ব্যাটালিয়ন আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্টগার্ড বাহিনী ও শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে বুঝানো হয়েছে। উপরোক্ত ব্যাখ্যা থেকে দেখা যায়, শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অন্তর্ভুক্ত হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে অপরাপর বাহিনী যতক্ষণ পর্যন্ত আইনে শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে ঘোষিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ সব বাহিনী বা এর কোনো একটি শৃঙ্খলা বাহিনী নয়।

বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে দেশের সচেতন নাগরিকসহ সুশীল সমাজ দীর্ঘদিন যাবৎ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজ বক্তব্য তুলে ধরছে। এ বিষয়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অবস্থানও সমরূপ। বিগত বছরগুলোর ক্রসফায়ারের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, একই ধরনের ঘটনা বিএনপি, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় সংঘটিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দু’টি দল বিরোধী দলে থাকাবস্থায় একে অপরের শাসনামলে সংঘটিত ক্রসফায়ারে মৃত্যুর ব্যাপারে সোচ্চার থাকলেও ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় এরা কেউ এ ধরনের ঘটনা সংঘটন হতে নিজেদের নিবৃত্ত রাখতে পারেনি।

দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুলিশের ওপর ন্যস্ত। পুলিশ ব্যর্থ হলে অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা নেয়ার বিধান থাকলেও তা কখনো পুলিশের মামলা রুজু ও অভিযোগপত্র দায়েরের ক্ষমতাকে খর্ব করে না। পুলিশ বাহিনীর সদস্যের মতো শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বাহিনীগুলোর প্রতিটি সদস্যের নিজ সম্পাদিত যেকোনো কর্মের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি রয়েছে। সরকারের প্রশ্রয়ে জবাবদিহিতে শিথিলতার কারণে একই ব্যাখ্যার পুনরাবৃত্তিতে ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটে চলছে। এতে করে সরকারে থাকাকালীন বিরোধীদের অবদমিত করার প্রয়াস নেয়া হলেও তাতে কি পূর্ণ সফলতা পাওয়া যায়? পূর্ণ সফলতা পাওয়া গেল কি গেল না, সে প্রশ্নে না গিয়ে প্রশ্ন হতে পারে কেন এ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড? তা ছাড়া এখনকার সরকারি দল ও দলের নেতাকর্মী ক্ষমতা থেকে বিদায় পরবর্তী একই ঘটনার শিকার যে হবেন না সে নিশ্চয়তা কোথায়?

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের সাথে তুল্য। ইসলামসহ পৃথিবীর কোনো ধর্ম বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড অনুমোদন করে না।

পোশাকধারী বা পোশাকবিহীন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য কর্তৃক বাড়ি অথবা যেকোনো স্থান থেকে তুলে নিয়ে হত্যাপূর্বক লাশ গুমের ঘটনা সাম্প্রতিককালে ক্রসফায়ারের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। ক্রসফায়ারের সাথে এ হত্যাকাণ্ডের পার্থক্য হলো- ক্রসফায়ারের ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন লাশটি ফিরে পেয়ে ধর্মীয়ভাবে সৎকারের ব্যবস্থা করতে পারে যেটি শেষোক্তটির ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। এমনকি তুলে নেয়া পরবর্তী লাশ ফেরত না পাওয়া গেলে নিহত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের দীর্ঘকাল এ ধারণা বদ্ধমূল থাকে যে, হয়তো বা তুলে নেয়া ব্যক্তি জীবিত রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যে কতটুকু মর্মবেদনাদায়ক তা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ব্যতীত অপর কেউ অনুধাবন করতে পারবে না।

একজন ব্যক্তি অপরাধী গণ্যে পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বা যেকোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকাকালীন ক্রসফায়ারসহ যেকোনো কারণে মৃত্যুবরণ করলে ওই বাহিনীকে মৃত্যুসংক্রান্ত সন্তোষজনক কারণ দেখাতে না পারলে অবশ্যই এর দায় বহন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত যার সিদ্ধান্তে ক্রসফায়ার কার্যকর হয়েছে অধিক দায় অবশ্যই তার। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও এ দায় থেকে আদেশ পালনকারী ও আদেশ প্রদানকারী উভয়ের কেউই অবমুক্ত নন।

স্বৈরশাসনের কবলে পড়েছে পৃথিবীর এমন দেশ যেমন- চিলি, আর্জেন্টিনা, লিবিয়া, মিসর, ইরাক, ইরান প্রভৃতির জনসাধারণের ক্রসফায়ার ও তুলে নেয়া পরবর্তী লাশ গুমের ঘটনার সাথে পরিচয় ঘটে থাকলেও সেসব স্বৈরশাসকদের পরিণতি কী হয়েছিল তা আজ ইতিহাসের পাতায়।

একজন ব্যক্তি যেকোনো অপরাধ সংঘটন করলে তাকে বিচারের মাধ্যমে আইনে স্বীকৃত সাজা প্রদান পৃথিবীর সর্বত্র অনুসৃত হয়ে আসছে। এর ব্যত্যয়ে বিচারবহির্ভূত প্রক্রিয়ায় সাজা প্রদান বা ক্রসফায়ারের নামে মৃত্যু ঘটানো কোনোভাবেই আইনের অনুসরণে হয়েছে এমনটি দাবি করার সুযোগ নেই। তাই যে হত্যাকাণ্ড আইনসিদ্ধ নয় তা নরহত্যা বিধায় এ থেকে নিবৃত্ত থাকা উচিত নয় কি?

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com

 


আরো সংবাদ



premium cement