১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধারা ৩৭০ বিলোপ-উত্তর কাশ্মিরের এক বছর

ধারা ৩৭০ বিলোপ-উত্তর কাশ্মিরের এক বছর - ছবি : সংগৃহীত

গত বছর ৫ আগস্ট ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার জম্মু ও কাশ্মিরের স্বায়ত্তশানের বিশেষ অধিকারসম্পর্কিত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করে এর রাজ্য মর্যাদা হরণ করে। সেই সাথে পুরো জম্মু ও কাশ্মির ও লাদাখ অঞ্চলকে ইউনিয়ন টেরিটরি হিসেবে কেন্দ্রের শাসনাধীনে নিয়ে আসে। একই সাথে জম্মু-কাশ্মিরের স্থায়ী অধিবাসীদের বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত ৩৫ক ধারাও বাতিল করে। নরেন্দ্র মোদির সরকার বারবার বলেছে, এই ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিলের ফলে জম্মু-কাশ্মিরে এক নবযুগের সূচনা ঘটবে। কাশ্মিরে ফিরে আসবে শান্তি ও নিরাপত্তা। বইবে উন্নয়নের জোয়ার।

গত ৫ আগস্ট নরেন্দ্র মোদির কথিত সেই নবযুগের প্রথম এক বছর পেরিয়ে গেল। প্রশ্ন আসে, কেমন কেটেছে কাশ্মিরিদের এই একটি বছর? দেশটির সরকার তো বলে বেড়াচ্ছে কাশ্মিরে এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। কাশ্মিরিদের কথা বাদই দিলাম, ভারতের বিবেকবান মানুষ কি সরকারের এ দাবি মেনে নিচ্ছে? মেনে যে নিচ্ছে না- এটাই জ্বলজ্বলে সত্য।

সম্প্রতি ভারতের কবি, সাহিত্যিক, আইনজীবী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনের বেশ কিছু বিবেকবান মানুষ কাশ্মিরের অধিকারহারা মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ঘোষণা দিয়েছে : ‘উই স্ট্যান্ড উইথ কাশ্মির’। তারা বলেছেন, মোদি সরকারের কথিত নবযুগের বিগত একটি বছরে কাশ্মিরে অবস্থা ‘খারাপ’ থেকে ‘খারাপতর’ হয়েছে।

তাদের অভিমত, ‘গত বছর ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে জম্মু-কাশ্মিরকে কেন্দ্রশাসিত ইউনিয়ন টেরিটরি ঘোষণার পর কাশ্মিরিদের অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। বিগত এক বছরে ৩৪ হাজারের মতো কাশ্মিরিকে নির্মমভাবে কারাগারে পাঠানো হয়েছে অথবা গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিবিদ, গ্রাম-প্রধান, অধিকার সচেতন যুবক, ব্যবসায়ী ও যারা বিগত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এমনকি এখন পর্যন্ত সেখানে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যান চলাচলে আছে সীমাহীন কড়াকড়ি। হাজার হাজার গর্ভবতী মহিলা হাসপাতালে পর্যন্ত অবাধে যেতে পারছেন না। সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে। এনকাউন্টার ছাড়াও গ্রেফতার ও নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন চলছে কাশ্মিরে সাত লাখ সেনাবাহিনী ও আধা-সরকারি বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতির কারণে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে। কাশ্মিরের প্রকৃত পরিস্থিতি নিয়ে খবর প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এগুলোকে ফেইক, পিলফারেজিং ও অ্যান্টি-ন্যাশনাল খবর হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে ‘নিউ মিডিয়া অ্যাক্ট, ২০২০’ প্রয়োগ করে। এভাবে সত্য প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে সেখানে। এর ফলে জাতি আজ পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে কাশ্মির পরিস্থিতি সম্পর্কে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বলে চলেছে : ‘এভরিথিং ইজ নরমাল ইন কাশ্মির’।

কাশ্মিরিদের প্রতি সংহতি প্রকাশকারী এসব বিবেকমান মানুষ আরো বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটেও কাশ্মিরিদের পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। পর্যাপ্ত টেস্ট করা হচ্ছে না। যোগাযোগের ওপর আরোপ করা হয়েছে নানা বিধিনিষেধ। দুঃখজনকভাবে সুপ্রিম কোর্ট অবলম্বন করছে সীমাহীন নীরবতা। এমনকি এ ধরনের মানবিক সঙ্কটকালেও আদালত কোনো দায় নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। অনেক আটক ব্যক্তির পিটিশনের শুনানি অন্যায়ভাবে মুলতবি করে রাখা হয়েছে এক বছর ধরে।’
এ পরিস্থিতিতে তাদের অনেক দাবির মধ্যে কয়েকটি দাবি হচ্ছে : কাশ্মির থেকে সব সেনাসদস্য প্রত্যাহার, সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি, পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা সচল, ইন্টারনেট সার্ভিস চালু এবং সর্বোপরি ৩৭০ ধারা ও ৩৫ক ধারা পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। সেই সাথে ভারতের অন্য সব রাজ্যকেও দিতে হবে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন।

অন্য দিকে ভারতের পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ৩৭০ ধারা বিলোপোত্তর এক বছরের কাশ্মির পরিস্থিতির মূল্যায়ন তুলে ধরেছে। এ মূল্যায়ন শেষে পিইউসিএল সরকারের প্রতি আহ্বান রেখেছে : জরুরি ভিত্তিতে কাশ্মিরি জনগণের সাথে সংলাপ শুরু করে সেখানে বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিবেশের অবসান ঘটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে। সেই সাথে কাশ্মিরে পুলিশি রাষ্ট্রের অবসান ঘটিয়ে সেখানে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে।

পিইউসিএল কাশ্মিরের বিগত এক বছরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে কাশ্মিরে বিরাজ করছে এক অশান্তিকর, অনিরাপদ ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা সুদূরপরাহত হয়ে পড়েছে। সেখানকার মানুষ রয়েছে এক গভীর বিচ্ছিন্ন পরিবেশে। কাশ্মিরিদের ওপর কেন্দ্রীয় সরকার তার নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে যে ধরনের অমর্যাদাকর, অশালীন, দাম্ভিক, উদ্ধত ও নির্মম আচরণ জারি রেখেছে, তাতে সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে চরম জনক্ষোভ। তবে নিরাপত্তার চাদর মুড়ে দেয়া ও রাজ্যজুড়ে করোনার ব্লকেড কার্যকর করার নামে অপপ্রয়াস চলছে জম্মু-কাশ্মিরের মানুষকে চিরতরে নিশ্চুপ করে দেয়ার জন্য।

পিইউসিএল আরো বলছে, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের এই কঠোর জবরদস্তি-নীতির বাস্তবায়নের জন্য ৩৭০ ধারা বাতিলের আগের দিন ৪ আগস্ট পুরোপুরি রণসজ্জায় সজ্জিত ৩৮ হাজার ভারতীয় সেনা পাঠানো হয় কাশ্মিরে। এর পরদিন থেকেই সেখানে কার্যকর করা হয় ভয়াবহ লকডাউন। সেখানে বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও ইন্টারনেট কানেকশন। আটক ও গৃহবন্দী করা হয় হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী- যাদের মধ্যে রয়েছেন জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীরাও, অবশ্য বিজেপি দলীয় সদস্যরা ছাড়া। এমনকি সংবিধান স্বীকৃত অনেক গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকার উদ্ধত আচরণের মাধ্যমে অস্বীকার করা এখনো অব্যাহতভাবে চলছে।’

পিইউসিএলের পর্যবেক্ষণ মতে, করোনার লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেও ভারত সরকারের প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কাশ্মিরিদের জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলছে। ভৌত নানা বাধানিষেধের কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য মৌলিক অপরিহার্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এমনকি মানুষ যেতে পারছে না মসজিদেও। করডোনিং এবং সার্চ ও ডেস্ট্রয় অপারেশন চলে সর্বোচ্চ মাত্রায়। এ ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কয়েক মাস ধরে রাজ্যজুড়ে। চালু রাখা হয় কারফিউ ধরনের লকডাউন, অবাধে হত্যা করা হয় অনেক বেসামরিক লোক।

এলোপাতাড়িভাবে আরোপ করা হচ্ছে ১৪৪ ধরা ও ফৌজদারি দণ্ডবিধি। এর ফলে লঙ্ঘিত হচ্ছে জনগণের সভা-সমাবেশ করা ও মতপ্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার। মানুষ প্রকাশ করতে পারছে না তাদের ক্ষোভ ও বাদ-প্রতিবাদ। জানাতে পারছে না সরকারের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ। সবিশেষ উল্লেখ্য, জম্মু-কাশ্মিরে প্রয়োগ করা হচ্ছে ড্রাকোনিয়ান ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট’। তা ছাড়া ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে ইউএপিএ (আনল’ফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট) ও অন্যান্য আইন। এর ফলে অব্যাহতভাবে আটক করে রাখা হচ্ছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী, সাংবাদিক ও আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের। এর মাধ্যমে সরকার অনেকটা কার্যকরভাবে বিরত রাখতে পারছে বিরোধীদের গণতান্ত্রিক উচ্চারণ থেকে।

বছর ধরে সেখানে অব্যাহত কড়াকড়ি লকডাউন জারি রেখে কার্যত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে সেখানকার অর্থনীতিকে। পর্যটন ও কুটিরশিল্প খাতসহ জম্মু-কাশ্মিরের প্রায় সব প্রধান প্রধান শিল্প খাতে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের অভিঘাত। বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানি ও ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ লোক তাদের চাকরি ও কাজ হারিয়েছে।
দুঃখজনক হলো, বিচার বিভাগ কাশ্মিরে সরকারের যাবতীয় অন্যায়-আচরণ সম্পর্কে টুঁ শব্দ করছে না। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সাংবিধানিক আদালত, জম্মু ও কাশ্মিরের হাইকোর্ট এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টও অস্বীকার করছে হেবিয়াস করপাস পিটিশন ও অবৈধ আটক সম্পর্কিত পিটিশনের শুনানি গ্রহণে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা ও ৩৫ক ধারা, শিশুসম্পর্কিত ও ফোরজি আবার চালু সম্পর্কিত শুনানি মুলতবি করে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে আদালত তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এভাবে পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ ও জাতীয় গণমাধ্যমের প্রতি সৃষ্ট হতাশা স্পষ্ট করে তুলেছে- জম্মু-কাশ্মিরে জনগণের সংবিধানস্বীকৃত সুরক্ষা দেয়ার যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এমনটিই মনে করে পিইউসিএল। এর ফলে জম্মু-কাশ্মিরের জনগণ ভারত নামের রাষ্ট্র ও গোটা জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিকিউরিটি ক্ল্যাম্পডাউন ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের আরেকটি অপপ্রয়াস হচ্ছে কাশ্মিরের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিকে এবং সেই সাথে বিশ্ববাসীকে জানতে না দেয়া।

এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মাঝেও কাশ্মিরের বাস্তব পরিস্থিতিটা এখন মানুষ জানতে পারছে এরই মধ্যে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে। এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে খুবই অভিজ্ঞ, আস্থাযোগ্য স্বাধীন সংগঠন ও ব্যক্তিসমষ্টি। পিইউসিএলের মধ্যে বেশ কিছু প্রতিবেদনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। এসব প্রতিবেদন ভারতের সুশীল সমাজের দৃষ্টি কেড়েছে। এসব প্রতিবেদনের সূত্রে তারা কাশ্মিরে ৩৭০ ও ৩৫ক ধারা বাতিলের চরম নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারছে। জানতে পারছে, কাশ্মিরের চলমান প্রকৃত পরিস্থিতিটা আসলে কেমন।

আগ্রহী পাঠকদের জন্য এসব রিপোর্টের মধ্য থেকে দু’টির নামোল্লেখ করছি : ১. ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির কোয়ালিশন অব সিভিল সোসাইটি’ (জেকেসিসিএস) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ডিজঅ্যাপিয়ার্ড পারসন্সের ‘অ্যানুয়াল হিউম্যান রাইটস রিভিউ ২০১৯’; ২. ‘ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস ইন জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির’-এর ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির : দ্য ইম্প্যাক্ট অব লকডাউন অন হিউম্যান রাইটস, আগস্ট ২০১৯ - জুলাই ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন।

সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ক ধারা বাতিল করেই মোদি সরকার ক্ষান্ত হয়নি। কাশ্মিরিদের জাতিসত্তা বিনাশের লক্ষ্যে জারি করা হচ্ছে আরো নানা আদেশ ও আইন। ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির রি-অর্গানাইজেশন অর্ডার ২০১৯’ জারি করে বিলুপ্ত করা হয় জম্মু ও কাশ্মিরের রাজ্য বিধান সভা। তা ছাড়া জম্মু ও কাশ্মির শাসনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয় একজন লে. গভর্নর। করোনা মহামারীর মধ্যেই কাশ্মিরি জনগণের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই পার্লামেন্টে পাস করা হয় নতুন ডোমিসাইল আইন। নতুন এই আইন অনুসারে যারা জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যে কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে বসবাস করছে অথবা ৭ বছর এ রাজ্যে লেখাপড়া করেছে তাদের ডোমিসাইল স্ট্যাটাস দেয়া হবে। এরা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস ও জমাজমি কিনতে পারবে এবং সরকারি চাকরি করতে পারবে। এর আগে ৩৫ক ধারা মতে, কাশ্মিরের স্থায়ী অধিবাসীদের জন্য এই অধিকার সীমিত ছিল। আসলে সরকার কাশ্মিরের জনসংখ্যাচিত্র পাল্টে ফেলার অপলক্ষ নিয়েই এই ডোমিসাইল আইন প্রণয়ন করেছে। ‘নিউজক্লিক’-এর এক বিশ্লেষণ মতে, নতুন ডোমিসাইল আইন অনুযায়ী বর্তমানে ১৪ লাখ ৪০ হাজার লোক এই ডোমিসাইল মর্যাদা লাভ করবে, যাদের সংখ্যা জম্মু-কাশ্মিরের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ। সময়ের সাথে এদের সংখ্যা আরো বাড়বে।

একই ধরনের দুষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে এরই মধ্যে চালু করা হয়েছে নয়া শিক্ষানীতি। সেখানে বাইরের লোকদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুমতি দেয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের প্রণোদনা দেয়া হবে। আর গোপনে চলবে শিক্ষার্থীদের ভুল ইতিহাস শেখানোর কাজটিও, যাতে কাশ্মিরিদের জাতিসত্তার বিষয়টি তাদের মন থেকে উপড়ে ফেলা যায়।

এত কিছুর পরও ভারত সরকার বাগে আনতে পারছে না কাশ্মিরিদের। জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল সেখানকার মানুষকে সমধিক বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। জনসংখ্যা পাল্টানোর প্রক্রিয়া শুরু হলে সামাজিক অস্থিতিশীলতা নিশ্চিতভাবেই আরো বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে মোদি সরকারের কথিত নবযুগ সৃষ্টি ও উন্নয়ন। সেখানে বইছে না নিরাপত্তা ও শান্তির সুবাতাস, আর কথিত দুধের নহর। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এসব নহরে প্রবাহিত হচ্ছে স্থানীয়দের ঘাম আর রক্তের স্রোত। কেন্দ্রীয় সরকারের নেয়া একের পর এক নানা উদ্দেশ্যমূলক আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ যে কাশ্মিরকে আরো উত্তপ্ত করে তুলছে ও ভবিষ্যতেও তুলবে, সে নিশ্চিত বিশ্বাস ভারতজুড়ে বিবেকবান মানুষের। তাই তাদের উপলব্ধি : অনেক হয়েছে এবার থামলে ভালো। তাদের স্পষ্ট তাগিদ : জম্মু-কাশ্মিরের মানবিক, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার পুনরুদ্ধারের মাঝেই নিহিত সেখানকার মানষের স্থায়ী শান্তি। এর কোনো বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement