২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আর নয় হিরোশিমা নাগাসাকি

জি. মুনীর - ছবি : নয়া দিগন্ত

গত ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় জাপানিরা ও অনেক বিদেশী সমবেত হয়েছিল পিস মেমোরিয়ালে তথা ‘অ্যাটমিক বম্ব ডোমে’। দিনটি ছিল সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর আণবিক বোমা নিক্ষেপের ৭৫তম বার্ষিকীর দিন। এই করোনা মহামারীর মধ্যে এই দিনটি জাপানিদের ও বিশ্বের বিবেকবান মানুষের জন্য এক ভয়ঙ্কর স্মৃতি জাগানিয়া দিন। সেখানে যারা জড়ো হয়েছিলেন, তাদের সবার মুখে এক কথা : ‘নেভার অ্যাগেইন’- অনেক হয়েছে, এ ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনা আর কখনোই নয়। ‘অ্যাটমিক বম্ব ডোমের’ স্কেলেটন হিরোশিমা কালের সাক্ষী হয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালের নিউক্লিয়ার হলোকাস্টের। সেই সাথে সাক্ষী হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার ক্রিমিনালিটির।

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকাল সোয়া ৮টায় যে ইউরেনিয়াম বোমাটি হিরোশিমায় মার্কিন বাহিনী নিক্ষেপ করেছিল, ‘লিটল বয়’ নামের সেই বোমাটির ওজন ছিল ৯,৭০০ পাউন্ড। কেজির হিসাবে ৪৪০০ কেজি। এই বোমায় জাপানের সপ্তম বৃহত্তম শহর হিরোশিমার ৬০ শতাংশ ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেদিন সকালেই মারা যায় এই শহরের সাড়ে তিন লাখ বেসামরিক লোকের মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার জন। এই বোমা ফেলার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ এড়াতে জাপানিদের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। জাপানিরা আত্মসমর্পণের এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে।

এখানেই শেষ নয়, এর দু’দিন পর মার্কিন বাহিনী ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের আরেকটি আণবিক বোমা হিরোশিমা থেকে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণে নাগাসাকিতে ফেলে ৯ আগস্ট। এই বোমাবর্ষণ কার্যত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটায়। নাগাসাকিতেও এ বোমার ধ্বংসযজ্ঞ ছিল হিরোশিমার মতোই ভয়াবহ। নাগাসাকিতে মারা যায় ৭৫ হাজারের মতো লোক। বোমা দু’টি ভয়াবহভাবে আহত করে আরো অসংখ্য মানুষকে। এখনো অনেকে জীবিত রয়েছেন, এর তেজষ্ক্রিয় প্রভাবের দুর্ভোগ নিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বোমার প্রথম পরীক্ষা চালায় ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে। আর একই বছরের আগস্টে আণবিক বোমা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষেপ করে আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা করে পারমাণবিক বোমার যুগের। যেসব মার্কিন বিজ্ঞানী এই বোমা তৈরির মানহাট্টান প্রজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তারা সবাই এই বোমার ভয়াবহতা সম্পর্কে ট্রুম্যানকে সতর্ক করেছিলেন। তারা এর নৈতিক দিকটির কথা উল্লেখ করেও এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে তাকে সতর্ক করে এ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু ট্রুম্যানের নীতিকথা শোনার ধৈর্য ছিল না। তার একমাত্র অ্যাজেন্ডা ছিল জাপানকে আত্মসমর্পণ করাতেই হবে। তাতে যত লোকই প্রাণ হারাক। আর তা নিশ্চিত করতেই মার্কিন বাহিনী ৬ আগস্ট হিরোশিমায় ‘লিটল বয়’ নামের আণবিক বোমাটি ফেলে। আর এ বোমার ধ্বংসযজ্ঞ দেখে যুক্তরাষ্ট্রের এই বোমারু বিমানের কো-পাইলট বলেছিলেন : ‘মাই গড হোয়াট উই হ্যাভ ডান’। তার এই অনুশোচনা বাক্যটি এই পঁচাত্তর বছর পরও শুধু হিরোশিমারই নয় পুরো বিশ্বের আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হয়।

কিন্তু আমেরিকার পারমাণবিক উন্মত্ততা তথা ম্যাডনেসের আজো অবসান ঘটেনি। আমেরিকার কাই বার্ড ও আরো রিভিশনিস্ট হিস্টোরিয়ান হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমাবর্ষণের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, এখনো যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে প্রতি বছর পারমাণবিক বোমার পেছনে খরচ করছে ৬০০ কোটি ডলার। ১৯৬১ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি জাতিসঙ্ঘে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি নারী-পুরুষ ও শিশু বসবাস করছে নিউক্লিয়ার ‘সোর্ড অব ড্যামোক্লিস’-এর নিচে। পারমাণবিক উন্মত্ততায় এরা এই নিউক্লিয়ার সোর্ডের শিকার হতে পারে যেকোনো সময়। অপর দিকে সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের বিশ্বাস : ‘বিশ্বের সর্বোত্তম করণীয় হচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্রের অবসান ঘটানো’।
রিগ্যান প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে বিশ্বে ৭০ হাজার ‘অপারেশনাল’ পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। ফেডারেশন অব অ্যামেরিকান সায়েন্টিস্টস বলছে, বর্তমানে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডের সংখ্যা ১৭ হাজার। এই সংখ্যা ‘অপারেশন’ শ্রেণীভুক্ত পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যার মোটামুটি চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু ছায়ার আড়ালে আশঙ্কা হচ্ছে, এসব পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে এই বিশ্বকে যথেষ্ট ভীতি প্রদর্শন সম্ভব, যে পৃথিবীতে রয়েছে বেশির ভাগ ছোট ছোট জাতি রাষ্ট্র। এসব অস্ত্রের ধ্বংস ক্ষমতা অতি বাস্তব। এগুলোর অপব্যবহারের সম্ভাবনাও প্রবল। আর তা বাকি দুনিয়াকে অস্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট।

আণবিক বোমা নিক্ষেপের ৭৫ বছর পেরিয়ে আজো আমরা মুক্ত হতে পারিনি হিরোশিমা ও নাগাসাকির ঘটনার মতো কিংবা তার চেয়েও ভয়ঙ্কর কোনো পারমাণবিক হলোকাস্টের আশঙ্কা থেকে। নিরস্ত্রীকরণের বহু বছরের প্রচেষ্টার পরও এখনো আমরা দেখছি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও আরো অনেক দেশের হাতে হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্র। আমরা এখন কার্যত দাঁড়িয়ে আছি পারমাণবিক খাদের কিনারে, অভাবনীয় ধ্বংসযজ্ঞের অপেক্ষায়। এরই নাম নিউক্লিয়ার টেরোরিজম, নিউক্লিয়ার ক্রিমিনালিটি।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমবর্ষণ স্পষ্টতই ১৯৪৫ সালে নুরেমবার্গ চার্টারের সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ। তা ছাড়া এই বোমাবর্ষণের মাধ্যমে লঙ্ঘিত হয়েছে ৪ নম্বর হেগ কনভেশনে সংযোজিত বেশ কিছু প্রবিধান। এর মাধ্যমে লঙ্ঘন করা হয়েছে ১৯০৭ সালের ল’জ অ্যান্ড কাস্টমস অব ওয়ার অন ল্যান্ড, ১৯২৩ সালের ড্রাফট হেগ রুলস অব এয়ার ওয়ারফেয়ার, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার ডিপার্টমেন্টের ফিল্ড ম্যানুয়াল, ১৯৪০ সালে রুলস অব ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার। ফিল্ড ম্যানুয়াল ও নুরেমবার্গ প্রিন্সিপলস মতেÑ সব বেসরকারি কর্মকর্তা ও সামরিক কর্মকর্তা যারা আণবিক বোমার আদেশ দিয়েছিল অথবা জেনেশুনেই হিরোশিমা ও নাগাসাকির বোমাবর্ষণে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের আইনিভাবে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শাস্তির আওতায় আনার সুয়োগ ছিল এবং এখনো আছে। মানবজাতির জন্য পারমাণবিক দুর্দশার অবসানের প্রক্রিয়ার শুরুটা আসতে পারে এ উপলব্ধি থেকে যে, রাষ্ট্রীয় নীতিতে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র বৈধ হতে পারে না। বরং পারমাণবিক অস্ত্র বরাবরই ছিল একটি অবৈধ উপায় এবং আন্তর্জাতিক আইনহীনতা ও অপরাধমূলক আচরণ।

যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার যেকোনো পরিস্থিতিতে সব সময়ই ছিল এবং এখনো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধÑ কনভেনশনাল ও কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল’-এর আওতায়। যেমন তা নিষিদ্ধ নুরেমবার্গ প্রিন্সিপলস, ১৯০৭ সালের হেগ রেগুলেশনস, ১৯৪৮ সালের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব জেনোসাইড, ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন ইত্যাদিতেও। তাছাড়া, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার সুনির্দিষ্টভাবে লঙ্ঘন করে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের বেশ কিছু মৌলিক প্রস্তাব। এসব প্রস্তাবে বার বার নিন্দা জানানো হয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের। এটিকে অভিহিত করা হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে।

নুরেমবার্গ জাজমেন্ট অনুসারে, সৈনিকেরা বাধ্য থাকবে অবৈধ পারমাণবিক যুদ্ধ সূচনা ও পরিচালনার খারাপ আদেশ অমান্য করতে। দ্বিতীয়ত, সব সরকারি কর্মকর্তা ও
সামরিক কর্মকর্তা যারা পারমাণবিক যুদ্ধ সূচনা
ও পরিচালনা করবে, তারা ব্যক্তিগতভাবে
শান্তির বিরুদ্ধে নুরেমবার্গ অপরাধে

অপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী, যুদ্ধাপরাধী, জেনেভা কনভেনশন ও প্রটোকল-১ লঙ্ঘনকারী, গণহত্যাকারী ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধে অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবেন। তৃতীয়ত, এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ নিজেদের বাঁচানোর জন্য এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতনের আদেশ বা রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের অজুহাত দিতে পারবে না এবং চতুর্থত, এ ধরনের ব্যক্তিদের পুরোপুরি বৈধভাবে ও চরমভাবে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শাস্তি দেয়া যাবে। কোনো রকম তামাদি ছাড়াই যেকোনো সময় তাদের বিচারের আওতায় এনে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেয়া যাবে।

১৯৪৫ সালের জাতিসঙ্ঘ সনদের ২(৪) নম্বর অনুচ্ছেদে পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যদি না কোনো দেশ ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বৈধ আত্মরক্ষার পরিস্থিতিতে পড়ে। কিন্তু, যদিও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারকে বৈধ আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত হিসেবে আরোপ করা হয়েছে, নিশ্চিতভাবেই এই শর্ত পর্যাপ্ত নয়। কোনো পারমাণবিক হুমকি ও অস্ত্র ব্যবহার বৈধ করে তুলতে হলে কাস্টমারি ও কনভেনশনাল ইন্টারন্যাশনাল ল অব হিউম্যানিটারিয়ান মতে অস্ত্র দ্বন্দ্বকেও বিবেচনায় আনতে হবে।

পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি, অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ডিটারেন্স/টেরোরিজম (ভীতি প্রদর্শন করে নিরোধ করা/সন্ত্রাস) জন্ম দিচ্ছে নানা আন্তর্জাতিক অপরাধের। যেমন শান্তিবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, প্রস্তুতিকরণ, অপরাধকর্মে আহ্বান, সহযোগিতা ও অপরাধের ষড়যন্ত্র, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, ১৯৪৯ সালের ফোর জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন, ১৯৭৭ সালের অতিরিক্ত প্রটোকল-১ লঙ্ঘন, ১৯০৭ সালের হেগ প্রস্তাব লঙ্ঘন, ১৯৪৮ সালের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব ক্রাইম অব জেনোসাইড লঙ্ঘন ইত্যাদি।

সার কথা হচ্ছে, পারমাণবিক অস্ত্রের ডিজাইন, গবেষণা, উৎপাদন, নির্মাণ, পরিবহন, মোতায়ন, ব্যবস্থাপনা, মজুদকরণ, মজুদ সম্প্রসারণ, কেনা-বেচা এবং সেই সাথে পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি সব কিছুই আন্তর্জাতিক আইনের সুস্বীকৃত নীতিমালার আওতায় এক-একটি অপরাধ। অতএব পারমাণবিক অস্ত্রধারী সব রাষ্ট্রের সরকারি নীতি-নির্ধারকেরা এই অপরাধের দায়ে দায়ী। নুরেমবার্গ নীতিমালার অধীনে এগুলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। আসলে এসব পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলো আন্তর্জাতিক সমাজকে প্রতিনিয়ত হুমকি প্রদর্শন করে চলেছে, যা পারমাণবিক সন্ত্রাসেরই নামান্তর।
এটুকু বললে ভুল হবে না, আজকের পারমাণবিক অস্ত্রের স্থাপনাগুলো এবং সেই সাথে পারমাণবিক ভয়ভীতি প্রদর্শন বা পারমাণবিক সন্ত্রাসের যে অনুশীলন পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রগুলো এখন জারি রেখেছে, সেগুলো নিশ্চিত অপরাধ। এগুলো শুধু অবৈধ নয়, শুধু অনৈতিক নয়, বরং সুপ্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইনের নীতি লঙ্ঘনের অপরাধ।

পারমাণবিক অস্ত্র মানবজাতিকে ধ্বংস করার আগেই মানবজাতির উচিত পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করা। তা সত্ত্বেও সামান্য সংখ্যক দেশের সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের বিধিবিধান অমান্য করে পারমাণবিক অস্ত্র-ব্যবস্থা জারি রেখেছে। এদের সমর্থক কিছু সংখ্যক আন্তর্জাতিক আইনজীবী বিভিন্নভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ও কপটতার সাথে বলছেন, যেহেতু বিশ্ব সমাজে কিছু পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশ রয়েছে, সে কারণে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, ধারণ, কেনাবেচা কোনো না কোনোভাবে বিশ্বসমাজে অপরাধ নয়। তা না হলে এসব দেশে কোনো পারমাণবিক ব্যবস্থা থাকত না। কোনো সভ্য জাতিরাষ্ট্র এ ধরনের যুক্তি মেনে নিতে পারে না। কারণ, পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রগুলোর নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পুরো মানবজাতিকে ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত করা হয়েছে। তাদের এই ষড়যন্ত্রের ডকট্রিনের নাম ‘নিউক্লিয়ার ডিটারেন্স’ তথা পারমাণবিক ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিবৃত্ত করা। আর এই ‘নিউক্লিয়ার ডিটারেন্স’ হচ্ছে ‘নিউক্লিয়ার টেরোরিজমে’র একটি ইউফেমিজম, অর্থাৎ মন্দ শব্দের পরিবর্তে সুশব্দ ব্যবহার। পারমাণবিক অস্ত্র শক্তিধর দেশগুলো এখন অনুশীলন করছে এই নিউক্লিয়ার ডিটারেন্স নামের কনস্পিরেসি ডকট্রিন। আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি এই আন্তর্জাতিক অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটানো।

সত্যের আলোকেই এই পারমাণবিক অস্ত্র-ব্যবস্থা যেকোনো অবস্থাতেই অবৈধ এবং মানবতাবিরোধী এক ক্ষমাহীন অপরাধ। তাই বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার রয়েছে নিউক্লিয়ার ডিটারেন্স/টেরোরিজম থেকে মুক্ত থাকার। বিশ্বের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব হচ্ছে পারমাণবিক-ব্যবস্থার অস্তিত্বের বিরোধিতা করা। নইলে মানবজাতিকে হয়তো সেই ভাগ্য বরণ করে নিতে হবে, যেমনটি ঘটেছিল ডাইনোসরের বিলুপ্তিতে। আর তখন আমাদের এই পৃথিবী হবে তেজষ্ক্রিয় পদার্থের এক বর্জ্যভূমি। এর বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর এক সারিতে দাঁড়াবার চূড়ান্ত সময় এখনই।


আরো সংবাদ



premium cement