২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাশ্মির এখন কোন পথে?

জি. মুনীর - ছবি : সংগৃহীত

কাশ্মিরিদের অধিকার যেভাবে একের পর এক ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে এবং কাশ্মিরকে পুরোপুরি ভারতের অঙ্গীভূত করার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা একদিন এই এলাকাকে উত্তপ্ত করে তুলবে। সাত দশকেরও বেশি ধরে কাশ্মিরিরা চরম আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করে আসছে। কারণ ভারতশাসিত কাশ্মিরের মর্যাদা ও জনচিত্র ক্রমেই পাল্টে দিচ্ছে দখলদার ভারত। এই নিকটাতীতেও ভারতশাসিত কাশ্মির ছিল একটি রাজ্য, যার নাম ছিল জম্মু ও কাশ্মির। এখন এটি কেন্দ্র শাসিত দু’টি অঞ্চল। জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা ও রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ এ রাজ্যটিকে এ বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। এর মাধ্যমে সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদ এই রাজ্যে প্রয়োগের বাইরে রাখা হয়েছিল। গত বছর ৫ আগস্ট ভারত সরকার সংবিধানের এই ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে দেয়। অন্য দিকে ভারতীয় সংবিধানের ৩৫এ অনুচ্ছেদে কাশ্মিরে বসবাসের যে অধিকার কাশ্মিরিদের মধ্যেই সীমিত ছিল এবং স্থানীয়দের যে সংরক্ষণাধিকার দেয়া ছিল তাও বাতিল করা হয়। 

ভারতীয় সংবিধানের এই দু’টি অনুচ্ছেদ এই গ্যারান্টি দিয়েছিল যে, কাশ্মিরে জমি কেনাবেচা ও সেখানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের আবেদন শুধু কাশ্মিরের স্থায়ী অধিবাসী ও তাদের উত্তরাধিকারীদের জন্য সংরক্ষিত। কাশ্মিরের বাইরের লোকদের ক্ষেত্রে বাধা ছিল রাজ্যটির ভূমি ও অর্থনীতির ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও কোনো কোম্পানির ব্যবসায়িক বিনিয়োগের ওপর। কাশ্মিরিদের এই সংরক্ষিত অধিকার তাদের এক ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিল। ২০১৯ সালের অক্টোবরে জম্মু-কাশ্মিরের রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করা হয়। এই পরিবর্তনের আগে জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যটি ছিল ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য। সেখানকার জনসংখ্যা পাল্টে দেয়ার জন্য নেয়া হচ্ছে নানা কূটকৌশল। এটি হচ্ছে কাশ্মিরিদের ক্ষমতার ছিনতাই। কাশ্মিরিদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তার ওপর এক চরম আঘাত। কাশ্মিরিদের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি শিগগিরই বাস্তবে প্রতিফলিত হতে দেখা যাবে। তারা তাদের স্থানীয় আইডেনটিটি বা পরিচয়সূত্রই শুধু হারাবে না, এর সাথে হারাবে আরো অনেক কিছু। 

যদি ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিলের উদ্দেশ্য হয় জম্মু-কাশ্মিরে ভারত সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের ভিত রচনা, তবে পরবর্তী কর্মকাণ্ডগুলোও হিসাব-নিকাশ করেই করা হচ্ছে। তাই গত ৩১ মার্চের মধ্য রাতে ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মিরে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে একটি নতুন ডোমিসাইল রুল। এর মাধ্যমে প্রয়াস চলছে কাশ্মিরের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার পরিবর্তনের, যা ছিল কাশ্মিরিদের একান্ত। ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির রিঅরগ্যানাইজেশন (অ্যাডাপটেশন অব স্টেট ল’জ) অর্ডার ২০২০’ শীর্ষক এই নোটিশ অনুসারে, কেউ যদি জম্মু ও কাশ্মিরে ১৫ বছর বসবাস করে থাকে এবং এই ভূখণ্ডে সাত বছর লেখাপড়া করে থাকে এবং দশম শ্রেণী ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে, তবে তারা সেখানে রেসিডেন্সি রাইট পারে। আর তারা সেখানে সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারবে।

করোনাভাইরাস দমনের লক্ষ্যে সারা ভারতে লকডাউন ঘোষণার এক সপ্তাহ পর এই নোটিশ জারি করা হয়। যখন সারা দেশে এই লকডাউনের উদ্দেশ্য ছিল করোনাভাইরাস দমন, তবে জম্মু ও কাশ্মিরে এই লকডাইনের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্নতর। কাশ্মিরে এটি ছিল লকডাউনের ভেতর আরেক লকডাউন। আসলে কাশ্মিরে এই লকডাউন চলছিল গত বছরের ৫ আগস্ট থেকেই। সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে কঠোরভাবে কড়াকড়ির এই লকডাউনের ভেতরে চলছিল এক বড় ধরনের কমিউনিকেশন ব্লকেড। এই ব্লকেড ভারত সরকার কাশ্মিরে বিশেষ মর্যাদা হরণের পর সৃষ্ট বিক্ষোভ দমনে কাজে লাগায়। এই অভূতপর্ব ব্লকেড কাশ্মিরে তখন কী ঘটেছিল বা এখনো ঘটে চলেছে, তা বাইরের দুনিয়া জানতে পারেনি। 

নতুন ডোমিসাইল রুল এবং এর জারি করার সময়টিতে রাজনৈতিক ও সম্প্রদায়গত বিভেদ নির্বিশেষে বিশেষত জম্মু-কাশ্মিরের যুবসমাজে প্রবল অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে। কারণ এই ডোমিসাইল রুলের অর্থ হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মিরের যুবসমাজের চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে পড়া। এর আগে কাশ্মিরিরা একচেটিয়াভাবে এ সুযোগ পেয়ে আসছিল। নতুন গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি দেয়ার ব্যাপারে সরকারই হচ্ছে সবচেয়ে বড় নিয়োগদাতা। এ দিকে চলতি মৌসুমে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগপ্রক্রিয়া পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে সন্দেহ প্রকাশ হচ্ছে, বিশেষ উদ্দেশ্যেই এসব নিয়োগপ্রক্রিয়া পেছানো হয়েছে, যাতে আউটসাইডারদের চাকরির সুযোগ করে দেয়া যায়, যারা নতুন ডোমিসাইল রুলের আওতায় জম্মু-কাশ্মিরে চাকরির সুযোগ পাবে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষ জম্মু ও কাশ্মির ব্যাংকের ১,৪৫০টি পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। এসব পদের নিয়োগ চলছিল সেই ২০১৮ সাল থেকে। এর মাধ্যমে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর কর্মজীবনের সম্ভাবনা ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে, যারা প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্র্ণ হয়েছিল। এ দিকে গত ২ জুন জম্মু ও কাশ্মির ব্যাংক ডোমিসাইলদের জন্য ১,৮৫০টি পদের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করেছে। 

করোনাভাইরাসের মধ্যে কাশ্মিরের হাসপাতালগুলোতে অভাব রয়েছে অবকাঠামো ও স্টাফের। সরকার স্বাস্থ্যকর্মীদের দরজা দেখিয়ে দিয়েছে শ্রীনগর ও হিন্দু-প্রধান অঞ্চল জম্মুর কাঠুয়া জেলার দিকে, অস্থায়ী চুক্তির ভিত্তিতে। মেডিক্যাল স্টাফের অভাব থাকা সত্ত্বেও সেখানে চলছে অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে স্থায়ীভাবে কাজ করানো। জম্মু ও কাশ্মির পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অকার্যকর করার পর থেকে প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের বিভিন্ন সিভিল সার্ভিস পদে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিও স্থগিত করে রাখা হয়েছে। এই পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর আগে সিভিল সার্ভিসের পদগুলোতে নিয়োগ দিত। ইউনিয়ন টেরিটরি হিসেবে নতুন মর্যাদা অনুযায়ী নতুন কমিশন গঠনের ব্যাপারটিও বিলম্বিত করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গত মে মাসে এই কমিশনের একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, বাইরের রাজ্যগুলোর লোকেরা তাদের চাকরিহারা করবে। সেই সাথে আছে চাকরিসংক্রান্ত বেতনভাতা ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টির শঙ্কাও। এ ধরনের ৩০ হাজার ঘটনা এখন বিচারাধীন।

রাজ্যের মর্যাদা হারানোর অজুহাতে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ টাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৮৫’ কার্যকর করা হয়েছে জম্মু এবং কাশ্মির ও লাদাখে। গত জুনে ঘোষণা করা হয়েছে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের জম্মু বেঞ্চ। এ বেঞ্চের আওতায় আসবে ইউনিয়ন টেরিটরি জম্মু কাশ্মির এবং লাদাখ। কিন্তু এ অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্তের একটি একক বেঞ্চ এ বিরাট অঞ্চলের জন্য যথেষ্ট নয়। এক দিকে এ অঞ্চলে রয়েছে এক বিরাট জনগোষ্ঠী, অন্য দিকে আছে এ অঞ্চলের পবর্তশঙ্কুল কষ্টকর যাতায়াত ব্যবস্থা। 

চাকরির ক্ষেত্রে জম্মু ও কাশ্মিরে এই পরিবর্তনের সূচনা কয়েক দশক আগে থেকেই। প্রশাসনের স্থানীয় আমলাদের এক পাশে ঠেলে দেয়া হয়েছে অথবা ডেপুটেশনে বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া আরো জোরদার করা হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিলের পর শীর্ষস্থানীয় প্রশাসনিক পদের বেশির ভাগই দখল করে বসে আছে বাইরের রাজ্যের লোকেরা। নতুন ডোমিসাইল আইনের তাৎক্ষণিক সুবিধাভোগীরা হতে যাচ্ছে সেসব হিন্দু ও শিখ শরণার্থী, যারা দেশ ভাগের পর পাকিস্তান থেকে এসে জম্মু শহরতলিতে বসতি গড়ে তুলেছিল। 

গত ৭০ বছর সময়ে বাইরের রাজ্যের হাজার হাজার আমলা ও বেসরকারি খাতে কর্মরতরা প্রয়োজনীয় ১৫ বছরের চেয়ে বেশি সময় কাজ করে কাটিয়েছে জম্মু ও কাশ্মিরে। সেনাবাহিনীর বহু সদস্যও কেন্দ্রীভূত এ অঞ্চলে। মোটকথা এই ডোমিসাইল রুল বাইরের রাজ্যের লোকদের জম্মু ও কাশ্মিরে দল দলে ঢুকে পড়ার সহজ সুযোগ করে দেবে। আর তাদের এ সুযোগ শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এরা সুযোগ পাবে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, বড় ধরনের বিনিয়োগ, ভূমির মালিকানা অর্জন ও স্থায়ীভাবে বসবাসের।
গত বছরের অক্টোবরে কার্যকর হওয়া ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির রিঅরগ্যানাইজেশন অ্যাক্ট’-এর আওতায় কাশ্মিরের স্থায়ী অধিবাসীদের বেসরকারি সম্পদের মালিকানার বৈধ বিধানটি বাতিল করা হয়। অতীতে লোকাল ল্যান্ড রিফর্ম লেজিসলেশন সামাজিকভাবে নিপীড়িতরাসহ কৃষকদের এক ধরনের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। যার ফলে যে ক’টি রাজ্যে মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি, জম্মু ও কাশ্মির ছিল সেগুলোর মধ্যে একটি। ভূমিসংক্রান্ত সংশোধিত আইনের ফলে স্থানীয় লোকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তারা তাদের সেই একান্ত সুবিধাটি হারায় কি না। কিংবা সম্ভাব্য মনোপলিভিত্তিক ইকোনমিক হেজিমনির শিকারে পরিণত হয় কি না। 

এই রাজ্যটিতে আগে কার্যকর ছিল রিজারভেশন আইন। এই আইনের আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও চাকরির ক্ষেত্রে দলিত ও বিভিন্ন উপজাতির সদস্য ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য নির্ধারিত কোটা চালু ছিল। প্রফেশনাল কলেজগুলোতে নারীদের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল। ১৯৫০-এর দশক থেকে জম্মু ও কাশ্মিরে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষায় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ কার্যকর হয়ে আসছে। এখন সব কিছুই মনে হয় পাল্টে যাবে। 

বর্তমানে করোনা মহামারীকে একটি অজুহাত হিসেবে খাড়া করে সরকার দেড় শ’ বছর ধরে চলে আসা গ্রীষ্মকালীন রাজধানী জম্মু থেকে শ্রীনগরে স্থানান্তরের রীতি কার্যকর করা হচ্ছে না। ১৯৪৭ সালে কাশ্মিরকে ভারতভুক্তির পর শ্রীনগর হয়ে ওঠে রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। এ দিকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নতুন করে নির্ধারণের। আশঙ্কা করা হচ্ছে, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মুর আসনসংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। এর ফলে পাল্টে যাবে স্থানীয় রাজনীতির আকার-প্রকার। বিজেপি নেতারা দু’টি ধারণা পোষণ করছেন। যার ভিত্তি হবে এলাকার আয়তন বিবেচনা, জনসংখ্যা নয়। সেই সাথে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মির ও চীন নিয়ন্ত্রিত আকসাই চীনকে ভাগ করা হবে ২৪টি আসনে। এসব আসন গত ৭০ বছর ধরে খালি রাখা হয়েছে পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু ও শিখ শরণার্থীদের জন্য। 

গত ৬ মার্চ এ কাজের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে ডিলিমিটেশন কমিশন। এই কমিশন এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছে। করোনা লকডাউন এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আস্তে আস্তে ক্ষমতা-কাঠামো পাল্টে দেয়ার কাজ চলছে, যাতে জম্মু হয়ে ওঠে তাদের বিজয়ের প্রতীক : যদিও জনগণকে রাখা হয়েছে ক্ষমতাহীন করেই। ইতোমধ্যেই জম্মু ও কাশ্মিরের রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। অনেক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাকে আটক করা হয়েছে। অনেকে নীরব থাকার শর্তে রয়েছেন গৃহবন্দী। বিভিন্ন দল থেকে চলে আসাদের একটি লবি সম্প্রতি ‘আপনি পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। তবে তা খুব একটা সাড়া জাগাতে পারেনি। নতুন ব্যবস্থায় হয়তো একসময় জম্মু ও কাশ্মিরে একটি বিধান সভা কার্যকর করা হবে, তবে তা চলবে সীমিত ক্ষমতা নিয়ে, যা কার্যত হবে দিল্লির দূরবর্তী দু’টি পৌরসভাসম। তবে এর মাধ্যমে সাবেক জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যটিকে নিয়ন্ত্রণ কতটুকু সম্ভব হবেÑ সেটির একটি বড় প্রশ্ন। এ অঞ্চলে রয়েছে রাজনৈতিক ও সম্প্রদায়গত বৈচিত্র্য। আছে নানা জটিলতা, আছে কাশ্মিরিদের স্বাধীনতা আন্দোলনও। দিল্লি কর্তৃপক্ষ তা কিভাবে সামাল দেবে, সে প্রশ্নও আছে।

বিজেপি সরকারের এসব পরিবর্তনের পর কাশ্মিরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনে সেখানে কঠোর দমনপীড়ন জারি রেখেছে। যেমনটি ফিলিস্তিনিদের ওপর নানা ধরনের অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়ন জারি রেখে ফিলিস্তিনকে গিলে খাওয়ার নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ইসরাইল। ভারতে বিজেপি সরকারও একই মডেল বাস্তবায়ন করে চলেছে কাশ্মিরকে গিলে খাওয়ার জন্য। ভারতে ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল ও ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অ্যানেক্সশন প্ল্যান একই মডেলের দু’টি রূপ। একটির লক্ষ্য কাশ্মিরের স্বাধীন সত্তাকে চিরদিনের জন্য মুছে দেয়া। অপরটির লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জাতি নিধন। কিন্তু ভারত ও ইসরাইলের জানা উচিতÑ এ হওয়ার নয়। একদিন ভারতে কাশ্মিরিরা ও ফিলিস্তিনে ফিলিস্তিনিরা ঠিকই জেগে উঠবে এবং আদায় করে নেবে তাদের স্বাধিকার আর স্বাধীনতা।


আরো সংবাদ



premium cement