১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৃষ্টিকর্তার শক্তিমত্তা অনুধাবন করুন

সৃষ্টিকর্তার শক্তিমত্তা অনুধাবন করুন - ছবি : সংগৃহীত

আল্লাহর কী শক্তি তা আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন স্বয়ং আল্লাহই। মানুষ যখন সীমাহীন পাপকর্মে লিপ্ত হয় তখন পৃথিবীতে গজব এবং গুজবের সমারোহ ঘটতে দেখা যায়। মানুষ এসব ভয়ঙ্কর গজব দেখার পরও বলে, এগুলো সব গুজব। জনগণকে নসিহত করে, গুজবে কান দেবেন না। করোনা (কোভিড-১৯) জয় করে বেঁচে থাকতে হবে। কেউ বলেন, মহামারী এবং দুর্যোগকে আমরা থোরাই কেয়ার করি। যখন বর্তমান জাতীয় সংসদের মন্ত্রী, এমপি ছাড়াও সংসদ সচিবালয়ের প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়Ñ তখন একটু নড়েচড়ে বসেন। 

গজব-গুজব থেকে বাঁচার জন্য যখন প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি ইস্তেগফার করা, আমরা এ কাজটিকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বলিÑ এই মাহামারীকেও আমরা জয় করব। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছেন, শয়তানের কাজ হলো মানুষকে তার দলভুক্ত করা। সৎপথ থেকে বাঁকা পথে নিয়ে আসা। কেয়ামত পর্যন্ত সে মানুষকে ধোঁকায় ফেলবে। দল ভারী করার জন্য সে এমন কোনো কাজ বাকি রাখবে না করতে, যা সাধারণ মানুষের ধারণারও অতীত। তার কৌশল অত্যন্ত চতুরতাময়। যারা নাস্তিক, মোনাফেক তারা সবাই শয়তানের দলভুক্ত। এসব মানুষের পেছনে তার সময় ব্যয় করতে হয় না। কারণ তারা এমনিতেই তার চিন্তা-চেতনার সাথে ঐকমত্য পোষণ করে। ইবলিশ শয়তানের সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক কাজ হলো ঈমানদার ব্যক্তিদের পথভ্রষ্ট করা। এ কাজটি করতে শয়তানের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। পৃথিবীতে এখন শয়তানের আধিপত্য চলছে। শয়তানি সব চক্রান্ত ধ্বংস করতে প্রয়োজন হজরত ওমর রা:-এর মতো একজন মানুষের। কিন্তু সে রকম আলামত এখনো দৃশ্যমান নয়।

করোনাভাইরাস বিশ্বের সব পরাশক্তিকে হারিয়ে দিয়েছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ অদ্যাবধি প্রাণ হারিয়েছেন এবং এক কোটির বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। 
পৃথিবীর এক নম্বর পরাশক্তি রাষ্ট্রের নাম আমেরিকা। এই ক্ষুদ্র জীবাণুর দংশনে প্রায় সোয়া লাখ মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে দেশটিতে। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৭৭ লাখ। সৃষ্টিকর্তার সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেছেন কারুন, ফেরাউন, নমরুদ এবং আবু জেহেলের মতো বড় বড় শক্তিধর মানুষ। জিতেছেন হজরত মূসা আ:, হজরত নুহ আ:, হজরত ইবরাহিম আ: এবং হজরত মোহাম্মদ সা:। সৃষ্টিকর্তার অবাধ্য হলে তার শাস্তি ভয়ঙ্কর। মৃত্যুশয্যায় মানুষ যখন পৌঁছে যায় তখন সে বুঝতে পারে আল্লাহর শক্তি সম্পর্কে। তখন আর সংশোধনের পথ খোলা থাকে না। হার মেনে যায় মৃত্যুর কাছে।

আল্লøাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি ‘ইস্তিগফার’কে অর্থাৎ তাওবাকে আবশ্যকীয় করে নেয়, আল্লøাহ তায়ালা প্রত্যেক বিপদ থেকে তার নাজাতের রাস্তা উন্মুক্ত করে দেন। প্রত্যেক চিন্তা থেকে তাকে মুক্তি দেন। আর এমন স্থান থেকে তার রিজিক পৌঁছিয়ে থাকেন যা সম্বন্ধে তার কোনো ধারণাই ছিল না। (সূরা নুহ : আয়াত-১০)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে এই ডিজাস্টার বড়। কিন্তু বিশ্ববেহায়ারা এখনো শক্তির দাপট দেখায়। তাদের অহমিকার কারণে কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত। পাপের শাস্তি থেকে মানুষ দুনিয়া এবং আখিরাতেও রেহাই পাবে না। রাসূলুল্লøাই সা: বলেছেন, ‘আল্লøাহ তায়ালা কোনো জাতিকে যখন টিকিয়ে রাখতে ও উন্নত করতে চান, তখন তার মধ্যে দুটি গুণ সৃষ্টি করে দেন। এক. প্রতিটি কর্মে মমতা ও মধ্যবর্তিতা। দুই. সাধুতা ও পবিত্রতা। পক্ষান্তরে আল্লøাহ তায়ালা যখন কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চান, তাদের জন্য বিশ্বাস ভঙ্গ এবং আত্মসাতের দ্বার উন্মোচন করে দেন।’ রাসূলুল্লøাহ সা: আরো বলেছেন, ‘যখন তোমরা দেখ যে, কোনো ব্যক্তির ওপর নেয়ামত ও ধন-দৌলতের বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে অথচ সে গুনাহ ও অবাধ্যতায় অটল, তখন বুঝে নেবে যে, তাকে ঢিল দেয়া হয়েছে। তার এই ভোগবিলাস কঠোর আজাজে গ্রেফতার হওয়ারই পূর্বাভাস।’ (সূরা আনআম : আয়াত-৪৬), (ইবনে জামির) 

সূর্য যে আলো দেয়, তার ২৩ কোটি ভাগের এক ভাগ পায় পৃথিবী। তাতেই মিটে যায় পৃথিবীর প্রয়োজন। এসব কর্মসাধনে রয়েছে একজন সুদক্ষ কারিগর। বেশির ভাগই আমি’রাই ‘আমি’কে চিনে না বা জানে না এবং এসব নিয়ে চর্চাও নেই। ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোল্ডামায়ার তাই বলেছিলেন, মুসলিমরা মনে করে ইহুদিদের সাথে তাদের একটি চূড়ান্ত লড়াই হবে এবং সেই লড়াইয়ে তারা জিতবেই। কিন্তু বর্তমান মুসলমানদের দ্বারা এই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। ইহুদিদের তখনই মুসলমানরা হারাতে পারবে যখন তাদের ফজরের জামাতে জুমার নামাজের মতো মুসল্লির সমাগম ঘটবে।
একদিন ভারতবর্ষ মুসলিমরাই শাসন করতÑ আজ ভারতবর্ষের বৃহৎ অংশ অমুসলিমরা শাসন করছে। ভারত রক্ষায় মুসলিমদের অবদান সবচেয়ে বেশি ছিল। আজ সেই ভারতে মুসলিমরা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। 

বর্তমানে মানুষই ‘পৃথিবীর’ সবচেয়ে বড় শত্রু। পবিত্র কালামে আল্লাহ মানুষকে যেভাবে চলতে বলেছেন, সেভাবে মানুষ চলছে না। তাই পৃথিবীকে পরিশুদ্ধ করার জন্য করোনার আগমন। এরই মধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে, এই ভাইরাস পরমাণু বোমার চেয়েও ভয়ঙ্কর। মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো এই ভাইরাসের কাছে বড়ই অসহায়। স্রষ্টার আনুগত্য না করলে বিপদ বাড়তেই থাকবে।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ৯ এপ্রিল ২০২০-এ এক প্রতিবেদনে বলেছে, মহামারী শেষ হওয়ার পর বিশ্বের ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করবে। গ্লোবাল রিপোর্ট অন ক্রাইসিস-২০২০ এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বের ৫৫টি দেশের সাড়ে ২৬ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বেÑ যার মধ্যে বাংলাদেশের নামও রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত প্রায় দেশেই নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। কোনো কোনো রাষ্ট্র দুই মাসের বেতন অগ্রিম দিচ্ছে। বাংলাদেশে বেশির ভাগ হাসপাতালে আইসিও ব্যবস্থা নেই। অক্সিজেন নিয়ে রমরমা বাণিজ্য চলছে। বেশির ভাগ হাসপাতালে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নেই। গরিব রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই। এক মন্ত্রী বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন, আরেক সাবেক মন্ত্রীকে সিঙ্গাপুর নেয়ার কথা পত্রিকায় উঠেছে। বাংলাদেশের হাইব্রিড হাসপাতালগুলোতেও সরকারের আস্থা নেই। অথচ রকেট গতিতে বড় বড় উন্নয়নের গল্প বলে। দেশকে ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ। কিন্তু আমরা দেশকে ভালোবাসি মন্ত্রী ও পদ-পদবি পাওয়ার জন্য। প্রতিবেশী কয়েকটি দেশে যাওয়ার সুযাগ হয়েছে। সেখানে দেখেছি, একজন কর্মকর্তা অফিসে আসেন যথাসময়ে এবং এসে তিনি তার টেবিল পরিষ্কার করেন। সহকর্মীরা অফিসে এসেছেন কি না সে ব্যাপারেও খোঁজ নেন। নিজের ভাবনার চেয়ে দেশের ভাবনাটা বেশি করেন। মিথ্যা কথা বলেন না। সে জন্য তারা এগিয়েছেন। নেতা ভালো হলে তার অধীনস্থরা ভালো হতে বাধ্য। আমাদের দেশে যেদিন রাজনীতি থেকে টাকা উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে, সে দিন থেকে ৯০ শতাংশ নেতা রাজনীতি ছেড়ে কাজে মন দেবেন।

দেশে দুর্যোগ এলে দলীয় লোকদের আয় রোজগারের সুযোগ বাড়ে। বিরোধী দলের মিটিং মিছিল বন্ধ থাকে। মোটামুটি সরকারি দল নিজেকে নিরাপদ ভাবে। দুর্যোগ-করোনা তাদের জন্য আশীর্বাদ। দেশে ভালো মানুষ যে নেই তা নয়। তারা কথার ভাইরাসে আক্রান্ত। গুম-খুনের জন্য কথা বলেন না। তবু, সত্য কথা বলতে হবে।
বাংলাদেশে রাজনীতি করা যত কঠিন হয়ে উঠেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার লঙ্ঘনও তত বেড়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানÑ সব কিছুই বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দলীয় লোক নিয়োগ দেয়া হয় না। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও দেখেছি, চাকরিতে মেধা আর যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হতো। সে কারণে ওই সময়ে দুর্নীতি বহুমাত্রিক রূপ ধারণ করেনি। অশ্লীল কর্মকাণ্ড আজকের মতো তখন দেখা যায়নি। তিন বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধাও এখন ধর্ষিত হচ্ছে। এ লজ্জা ঢাকি কিভাবে! 

এবার একটি মানবিক দেশ ও নেতার কথা বলব। যে দেশটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি, সেই দেশটির নাম কিউবা। নেতার নাম ফিদেল ক্যাস্ট্রো, দেশটি ধীরে ধীরে অন্য দেশের সহায়তা ছাড়াই নিজেদের প্রচেষ্টায় এগিয়ে গেছে। একসময় সেই দেশের তরুণ নেতা নিজ জাতিকে একটি শক্ত অবস্থানে রেখে বৃদ্ধ বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।

চিকিৎসাক্ষেত্রে দেশটি এতটাই এগিয়ে গিয়েছিল যে, গোটা ইউরোপজুড়ে ক্যান্সার থেকে শুরু করে বড় বড় রোগের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে তারা। করোনাকালীন একই কাজ করে সেই দেশটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। ফিদেল ক্যাস্ট্রো মৃত্যুর পর নতুন নেতারা দেশের হাল ধরেছেন। কিন্তু নীতির পরিবর্তন হয়নি। তারপর যখন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারী বিশ্বের সবচেয়ে সুপার পাওয়ার আর ধনী দেশগুলো বাঁচার উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছিল, তখন সেই ছোট মানবিক দেশটি সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে ডাক্তার, নার্স ও ওষুধ নিয়ে।

যে ইউরোপ একদিন তাদের দুঃসময়ে সাহায্য তো দূরের কথা, ফিরেও তাকায়নি, সেই ইউরোপ আজ এই ছোট্ট দেশটির ডাক্তার ও ওষুধের আশায় প্রহর গুনছে। এই ছোট্ট দেশটি ইউরোপের ক্রান্তিকালে চিকিৎসাসেবা দিয়েই বিশাল বাণিজ্য করতে পারত, কিন্তু তারা এ কাজটি করেনি। মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা করা অমানবিক কাজ। এটাই তাদের নীতি। করোনার ওষুধ প্রয়োগে তারা এখন সফলতা অর্জন করেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়েই তারা এখন চিকিৎসাসেবায় এতটাই এগিয়ে গেছে, যা ভাবতেও অবাক লাগে।

লেখক : গ্রন্থকার ও গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে কিশোরীর মৃত্যু জামালপুরে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অটোরিকশা চুরির মামলা কেএনএফ সদস্যদের আদালতে উপস্থাপন, ৫২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর ৬ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ, মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা হামলার ব্যাপারে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে : নেতানিয়াহু ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ : রাশিয়া

সকল