২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব

গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব - ছবি : নয়া দিগন্ত

পৃথিবীর যেকোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ উন্নয়ন অপরিহার্য। যেকোনো দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। প্রতিটি রাষ্ট্রই কৃষি উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কৃষি উন্নয়ন প্রকারান্তরে কৃষকের উন্নয়নের পথ সুগম করে। কৃষিভূমির প্রতিটি ইঞ্চি উন্নত বীজ ও সার ব্যবহারের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যে নিবিড় চাষাবাদ করা হয় এটিকে কৃষি বিপ্লব বলা হয়। গ্রামাঞ্চলের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা শহরাঞ্চল থেকে ভিন্নতর হলেও গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়াসহ প্রতিটি বাড়ির সাথে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা করা গেলে তা উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনের সহায়ক হয়। এর সাথে সাথে যেটি প্রয়োজন তা হলো স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। 

বাংলাদেশের সংবিধানে গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব রাষ্ট্র পরিচালনার একটি মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিককরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তন সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের সামগ্রিক জনসংখ্যার শতকরা ৭০ ভাগ গ্রামে ও ৩০ ভাগ শহরে বসবাস করে। প্রায় আড়াই যুগ পূর্বে এ হারটি ছিল যথাক্রমে গ্রামে ৮০ ভাগ ও শহরে ২০ ভাগ। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভাজনের মধ্য দিয়ে যখন ভারত ও পাকিস্তান নামক দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয় তখন আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানে শিল্প কারখানা বলতে কিছুই ছিল না। গ্রামাঞ্চল দূরের কথা শহরাঞ্চলেও বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না। শহরের প্রধান সড়ক ছাড়া অপরাপর সড়ক ছিল ইট বিছানো অথবা কাঁচা। শহরে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার সংখ্যা ছিল অতিনগণ্য।

পাকিস্তানের শাসনামলের ২৩ বছরে সব শহরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা গেলেও গ্রামীণ জনপদের প্রায় শতভাগই ছিল বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা দু-চার-দশ গ্রামে একটি খুঁজে পাওয়াও দুরূহ ছিল। এক গ্রাম হতে অন্য গ্রামে এবং গ্রাম হতে শহরে আসার রাস্তাও সেভাবে ছিল না। স্কুল বলতে দু-চার-পাঁচ গ্রামের মধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। 

বাংলাদেশ অভ্যুদয় পরবর্তী দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। এখন গ্রামের পথঘাট অনেক উন্নত। এমন অনেক গ্রাম রয়েছে যেগুলো পাকা রাস্তার মাধ্যমে শহরের সাথে সংযুক্ত। বর্তমানে গ্রামের প্রায় শতভাগ বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা আছে। বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। প্রত্যন্ত যেসব গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়া যায়নি সেসব গ্রামের অধিবাসীরা সৌরবিদ্যুতের বদৌলতে বৈদ্যুতিক বাতি, বৈদ্যুতিক পাখা, টিভি, ফিজ প্রভৃতি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে রান্নার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের গৃহভিত্তিক প্রকল্প তিন দশকের অধিক সময় আগে যাত্রা শুরু করলেও এ ব্যাপারে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। অথচ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ছয়-আট সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবারের প্রতিদিন যে গৃহস্থালি বর্জ্য আবর্জনা হিসেবে অন্যত্র ফেলে দেয়া হয় তা একটি গরু ও বাছুরের গোবরের সাথে মিশ্রণ করে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে প্রক্রিয়াজাত করলে যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ পাওয়া যায় এর মাধ্যমে এ ধরনের একটি পরিবারের ন্যূনতম জ্বালানি ও বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এ ধরনের বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং বিভিন্ন এনজিও এগিয়ে এলেও প্ল্যান্ট স্থাপন বিষয়ে গ্রামের মানুষের আগ্রহ আশাপ্রদ নয়। এমনকি প্ল্যান্ট স্থাপন বিষয়ে ভর্তুকি দেয়ার কথা বলা হলেও দেখা গেছে তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে গ্রামের মানুষের মধ্যে তেমন একটা উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারেনি। এ কথাটি অনস্বীকার্য যে, যদিও আমরা গরুর গোবর সার ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি কিন্তু গৃহস্থালি আবর্জনা স্রেফ বর্জ্য বিধায় এর অথনৈতিক মূল্য নিয়ে শুধু গ্রাম কেন শহরাঞ্চলের মানুষও খুব একটা চিন্তাভাবনা করে না। বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মাধ্যমে গৃহস্থালি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গৃহস্থালি বর্জ্য ও গোবর উৎকৃষ্ট উপকরণ।

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে গৃহস্থালির বর্জ্য মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরবর্তী যা অবশিষ্ট থাকে তা কৃষিজমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে শহর ও গ্রামাঞ্চলে যে গৃহস্থালী বর্জ্য আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া হয় তা দিয়ে বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন পরবর্তী অবশিষ্ট যদি আমরা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করি তাতে আমাদের রাসায়নিক সারের ব্যবহারে ব্যাপক হ্রাস ঘটবে। উল্লেখ্য, রাসায়নিক সারের মধ্যে ইউরিয়া আমাদের দেশে উৎপন্ন হলেও তা দিয়ে আমাদের বার্ষিক চাহিদা মিটে না। আমাদের দেশে টিএসপি সারের একটি কারখানা থাকলেও এর কাঁচামাল বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়। এখনো আমাদের দেশের অভ্যন্তরে পটাশ সার উৎপাদনের কোনো কারখানা গড়ে ওঠেনি। এ সারটির ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর।

বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত গৃহস্থালির বর্জ্য কৃষিজমিতে জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা গেলে আমাদের দেশে জৈবসারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। অধুনা বিশ্বে জৈবসারের মাধ্যমে যে ফসল উৎপন্ন হয় এর মূল্য রাসায়নিক সারের মাধ্যমে উৎপন্ন ফসলের ২-৩ গুণ অধিক। আর তাই অতি সহজেই অনুমান করা যায় জৈবসারকে সহজলভ্য করে এটি ব্যবহার বিষয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করা গেলে কৃষকের ভাগ্যের ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি গ্রামেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রতিটি গ্রামের সন্নিকটে হাইস্কুল ও কলেজ রয়েছে। নগরায়নের পরিধি প্রতি বছরই বিস্তৃত হওয়ার কারণে এবং শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চল ভেদে সর্বত্র কলকারখানা স্থাপিত হওয়াসহ আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠায় কৃষিজমি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু যে হারে কৃষিজমির হ্রাস ঘটছে সে হারে ফসল ও শাকসবজির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে না। 

স্বাধীনতার অব্যবহিত পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। তখন দেশে খাদ্য চাহিদা ছিল এক কোটি ২০ থেকে ৪০ লাখ টন। এর বিপরীতে খাদ্য উৎপাদন হতো এক কোটি টন। সে সময় যে পরিমাণ ভূমি খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হতো বর্তমানে এর পরিমাণে প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস ঘটলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়ে সাড়ে তিন কোটি টনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। বাংলাদেশ এখন যেকোনো বছর বন্যা বা খরার সম্মুখীন না হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের মূল খাদ্য ধান উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি গম, ভুট্টা এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদনেও ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিও উল্লেখ করার মতো। আজ থেকে চার যুগ আগে দু’বেলা ভাত জুটত না এমন লোকের সংখ্যা এ দেশে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে প্রচুর ছিল। তখন গ্রামে পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে শহরমুখী হয়েছিল। শহরমুখী হওয়ার সে ধারা অব্যাহত থাকলেও গ্রামাঞ্চলে আগেকার সে খাদ্যাভাব এখন আর নেই।

 

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা কারো মতে ১৬ কোটির কাছাকাছি আবার কারো মতে ১৬ কোটির অধিক। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র একটি দেশ। এ দেশটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। জনসংখ্যার তুলনায় বাংলাদেশের কৃষিভূমির পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু উন্নত বীজ ও সার এবং বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের কারণে কৃষিজ প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। 

বাংলাদেশের কৃষকরা এক বছর যে ফসল উৎপাদন করে লাভবান হয় পরবর্তী বছর একই ফসল উৎপাদনে উদ্যোগী হয়। এভাবে একজনকে লাভবান হতে দেখে অপরাপর অনেক কৃষক একই ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এতে দেখা যায় ফসলের বাড়তি উৎপাদনের কারণে মূল্য পড়ে গিয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেকোনো ফসলের উৎপাদন, বিপণন ও চাহিদা বিষয়ে কৃষকের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে তাদের ক্ষতির সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমন অনেক মসলাজাতীয় ফসল রয়েছে যেগুলোর উৎপাদন আমাদের দেশে কম অথবা আমাদের দেশে একেবারেই উৎপন্ন হয় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় এলাচি, দারচিনি, গোলমরিচ, জিরা, জাফরান, জায়ফল, জয়ত্রি, পেস্তাদানা প্রভৃতি।

এসব মসলাজাতীয় ফসল আমাদের পাশের রাষ্ট্র ভারত এবং সার্কভুক্ত রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় প্রচুর উৎপন্ন হয়। বর্তমানে মাটির পরিচর্যার মাধ্যমে পৃথিবীর এক অঞ্চলের ফসল অন্য অঞ্চলে উৎপন্ন হয়। উপরোক্ত ফসলগুলো অর্থকরী ফসল বিধায় আমাদের কৃষকরা এসব ফসলের গাছ নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায় লাগালে এর মাধ্যমে তাদের যে আয় হবে তা তাদের সচ্ছল জীবনযাপনের সহায়ক হবে। সুতরাং আমাদের সরকার ও কৃষি বিভাগের উচিত কৃষকদের সে লক্ষ্যে উৎসাহী করে তোলা। 

আমাদের দেশে যেসব অঞ্চলে আম, লিচু, কমলা, মাল্টা, বাউকুল, আপেল কুল, আমড়া, বেল, কতবেল, কাজী পেয়ারা, আঙ্গুর প্রভৃতি উৎপন্ন হয় সেসব অঞ্চলের কৃষকরা বাড়ির আঙিনায় পুকুর ও রাস্তার ধারে আবার কৃষি জমিতে এসব গাছ লাগিয়ে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। এ সফলতা তাদের বাড়তি আয়ের পথ করে দিয়েছে। 

আমাদের দেশে এখনো নগর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য বিদ্যমান। যদিও আমাদের সংবিধানে এ বৈষম্য দূর করার জন্য কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের ওপর সমধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে; কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় লক্ষ্য বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে সরকারি বেতনভুক যেসব ব্যক্তি জড়িত তাদের কর্মের প্রতি অনীহা, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, দুর্নীতি, অদক্ষতা, আন্তরিকতা, একাগ্রতা ও বিশ্বস্ততার অভাব প্রভৃতি এতদসংক্রান্ত সরকারের প্রতিটি কার্যক্রমকেই বাধাগ্রস্ত করে চলেছে।

এ কথাটি সত্য যে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সহায়ক প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন উচ্চ ফলনশীল বীজ ও বিভিন্ন সারের আনুপাতিক ব্যবহারের কারণে আমাদের দেশে উৎপন্ন হয়- এমন সব ফসলের উৎপাদন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন অনেক ফসল আছে যেগুলো মৌসুমি কিন্তু বৈজ্ঞানিক পন্থায় চাষের কারণে সেসব ফসলও এখন সারা বছর উৎপন্ন করা সম্ভব। তা ছাড়া অতীতে যে ভূমিতে বার্ষিক একটি ফসল হতো এখন একই ভূমিতে বার্ষিক দু’টি বা ক্ষেত্রবিশেষে তিনটি ফসলের চাষ করা হচ্ছে। আবার একই ভূমিতে একটি ফসলের ফাঁকে ফাঁকে আরেকটি ফসলের চাষ হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ধান ও মাছের চাষ একই ভূমিতে একসাথে করা হচ্ছে। এ ধরনের উদ্ভাবনী পদ্ধতি প্রতিটি ফসল ও মাছ উৎপাদনে বৃদ্ধি ঘটালেও কৃষকপর্যায়ে পাইকারি বিক্রয় মূল্য এবং ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ব্যাপক ফারাক থাকায় বাড়তি উৎপাদন ও বাড়তি মূল্য কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারছে না। বর্তমানে আমাদের বেশ কিছু কৃষি পণ্য বিদেশে রফতানি হয়। এসব পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অপ্রচলিত পণ্য বিধায় রফতানিকারকদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া হয়। যদিও এ প্রণোদনার একটি অংশ কৃষকের পাওয়ার কথা; কিন্তু আজ আমাদের দেশের কৃষক সে প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত। 

বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পরবর্তী গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব বিষয়ে সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি সরকারই সে লক্ষ্যে বার্ষিক রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট প্রণয়নকালে যথাযথ বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে সচেষ্ট থেকেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দেখা গেছে বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বিরাট অংশ জনপ্রতিনিধি ও সরকারি ব্যক্তিদের দিয়ে লুণ্ঠিত হওয়ায় তা কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে সবিশেষ অবদান রাখতে পারেনি। আর এ কারণেই আমাদের গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব দীর্ঘ দিন ধরে একটি আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। 
গ্রামাঞ্চলে কৃষির পাশাপাশি সমভাবে কুটিরশিল্প স্থাপন ও অন্যান্য শিল্পকারখানার বিকাশ সাধন করা গেলে গ্রামের মানুষ জীবিকা ও বাড়তি আয়ের অন্বেষণে শহরমুখী হবে না। এ যাবৎকাল পর্যন্ত এ পথে আমাদের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়। আমাদের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লবকে যে অর্থে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে আমরা প্রকৃত অর্থেই এর চেতনা দিয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ মৌলনীতিটির সার্থক বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে পারলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নসহ কৃষকের জীবনযাপন মানে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। 

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক

E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement