২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাহিত্যের কিছু কথা

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাহিত্যের কিছু কথা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ইতিহাস পড়ে বুঝলাম, ইতিহাস হলো মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষক। মানুষ কী কী ভালো কাজ করছে এবং সেটি কারা করেছেন, কোন কোন পরিস্থিতিতে সফল হওয়া যায়- ইত্যাদি যেমন ইতিহাস পাঠে জানা যায়, তেমনি মানুষের ব্যর্থতাগুলোও জানা যায়। ব্যক্তির দোষে ইতিহাসের কী কী বিষয় ব্যর্থ হচ্ছে তা যেমন জানা যায়, তেমনি কোন পরিস্থিতির কারণে কারা কারা ব্যর্থ হয়েছে তাও জানা যায়। কাজেই আমরা বলতে পারি, ইতিহাস হলো একটা বড় শিক্ষক।

ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সাহিত্য অবশ্যই পড়তে হবে। কারণ, সাহিত্য হচ্ছে জীবনের দর্পণ। একটি সমাজ ও সংস্কৃতি কেমন ছিল তা সাহিত্য পড়লে সহজে জানা যায়। আমাদের জীবনে ইতিহাস ও সাহিত্য, দুটোই লাগবে। অথচ একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, এ দুটোর চর্চাই দিন দিন কমে যাচ্ছে।

অপর দিকে, ধর্মের বিষয়ে পড়াশোনা নেই। ধর্মকে ‘ফিলোসফি’ই বলা যায়। এটাও মানুষ পড়ছে না। সাহিত্য ও ইতিহাস মানুষ অনেক কম পড়ছে। তারা পড়ছে বিজনেস। আমি বলছি না, বিজনেস কিংবা সায়েন্স পড়া যাবে না। সায়েন্স বা বিজ্ঞানের কল্যাণে টেকনোলজি তৈরি থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রকৃতি জগতের অনেক ব্যাখ্যা ও সূত্র বের করা যায় এবং এর কারণগুলোও জানা যায়। কিন্তু এই সায়েন্স আর বিজনেস পড়ে সত্যিকার অর্থে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায় না। এর দ্বারা হওয়া যায় রোবট। বর্তমান বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ কিন্তু কমবেশি রোবট। হতে পারে, ব্যতিক্রম এখনো আছে এশিয়ার কিছু দেশে। আফ্রিকার কিছু কিছু দেশ এখনো রোবট হয়নি। কিন্তু বাকি বিশ্ব রোবট হয়ে গেছে। আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জার্মানি রোবট হয়ে গেছে। এই হচ্ছে অবস্থা। আমরা তো রোবট হতে চাই না। তাহলে আমাদের ফিলোসফি বা ধর্ম পড়তে হবে। সাহিত্য ও ইতিহাস পড়তে হবে।

মনে হচ্ছে, আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার একটা ব্যর্থতা হলো, এখানে সেকুলারিজম থেকে অনেক কিছু আসছে। মানুষ রোবট হচ্ছে আধুনিক সভ্যতার কারণে। আধুনিক সভ্যতার মূল ভিত্তি সেকুলারিজম। এটা এনলাইটেনমেন্ট মুভমেন্টের ফল। এই মুভমেন্টের দু’টি বিষয় ছিল। একটা ছিল খোদায়ি কোনো ব্যাপারে আমরা জড়িত নই এবং সব কিছু ইহজাগতিক ব্যাপার। আরেকটা ব্যাপার ছিল, তাদের র্যাশনালিজম। অর্থাৎ সব কিছু যুক্তির ওপর নির্ভরশীল। এখানে ঐশ্বরিক কোনো ব্যাপার নেই এবং রাষ্ট্রের সাথে এগুলোর কোনো যোগাযোগ নেই। এ ধারণা থেকেই একসময় ‘সেকুলারিজম’ শব্দটা জনপ্রিয় হয়। এর ফলে ক্রমেই মানুষের শিক্ষা থেকে ধর্ম বাদ পড়ে গেল। বিশেষ করে পাশ্চাত্যে এটা বাদ পড়ে যায় এবং নৈতিকতার গুরুত্ব যায় কমে। ফলে আর ধর্মীয় বিষয় অধ্যয়নের গুরুত্ব রইল না।

যদি এর থেকে ফিরে আসতে হয়, ধর্মেই ফিরে আসতে হবে। এটা বলতে বোঝাচ্ছি না যে, ধর্ম বলতে ইসলাম সবখানেই। অবশ্যই ইসলাম চাই। তারপরও বাস্তববাদী বলেই মনে করি, যেখানে হিন্দু ধর্মই প্রধান, সেখানে হিন্দু ধর্মেই ফিরে আসতে হবে। বৌদ্ধদের বৌদ্ধ ধর্মের দিকেই ফিরে আসতে হবে। খ্রিষ্টানদের ফিরে আসতে হবে খ্রিষ্টান ধর্মের দিকে। কেননা, কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। যদি পরিবর্তন চাই, তাহলে সবখানেই ধর্মের দিকে ফিরে আসতে হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাপী দরকার ধর্মে ফিরে যাওয়ার একটা আন্দোলন। গোটা বিশ্বেই ব্যাক টু রিলিজিয়ন, ব্যাক টু ম্যরালিটি, ব্যাক টু এথিকস-এটা হতে হবে। না হলে মানুষের মুক্তি নেই। মানুষ একেবারেই বর্বর, স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। প্রতারক, বাটপাড়, লোভী হয়ে যাচ্ছে। জাতির ওপর জাতির অত্যাচার, ব্যক্তির ওপর ব্যক্তির অত্যাচার, শ্রেণীর ওপর শ্রেণীর অত্যাচার। সব সম্পদই বিশ্বের কয়েকটি দেশের হাতে- এটা কী করে হলো? এটা তো অত্যাচারেরই অন্য নাম। কাজেই অনেক মৌলিক প্রশ্ন এর সাথে জড়িত। আমার মনে হয়, ইতিহাস আমাদের পড়ানো হচ্ছে না। এসএসসিতেও ইতিহাস খুব ভালোভাবে নেই। এর একটা সীমাবদ্ধতা আছে। কারণ এত বিষয় যে, কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়াবে। তবু বলব, ইতিহাস পড়াতে হবে।

ইসলাম বলে ‘মুনকার গ্রহণ করো না। শিরক আর ফাহেশা গ্রহণ করো না।’ এই তিনটি জিনিসকে বর্জন করে আমরা অন্য কিছু নিতেও পারি সাবধানতার সাথে; যদিও নেয়া কোনো বিজয়ী জাতির পরিচয় নয়। বিজয়ী জাতি নিজে উদ্ভাবন করে। ভারত থেকে যে কালচারটা আসছে, তার অর্ধেক হচ্ছে শিরকভিত্তিক আর অর্ধেকটা হচ্ছে ওয়েস্টার্ন, এটা মুম্বাইতে হয়ে আসছে। এই দুটোই মুসলিমদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। 

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement