১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসলামে মানবাধিকার ও পাশ্চাত্য আধুনিকতা

-

প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত ‘আধুনিকতার পথে ইসলাম’ তথা ইসলাম’স পাথ টু মডার্নিটি’ শীর্ষক লেখাটি পড়লাম। এর লেখক মোহাম্মদ ফজল হাশেমি বিখ্যাত ইরানি চিন্তাবিদ।

এ প্রবন্ধের মূল কথাগুলোর ওপর এখানে মন্তব্য করছি। লেখক বলেছেন, ইসলামপন্থীরা জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সনদের শুরু থেকে সমালোচনা করে আসছেন যে, এর মাধ্যমে পাশ্চাত্য তার ধ্যানধারণা মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। তাদের একটি অংশ বলছে, কোনো বিধানই শরিয়াহকে বাতিল করতে পারে না। তিনি আরো বলেছেন, নতুন ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন, কুরআনের বিষয়বস্তু পাঠের সময়ের পরিবর্তনের ফলে নতুন ব্যাখ্যা হতে পারে। কুরআন দৃঢ়ভাবে স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা, সুবিচার ও মানুষের মর্যাদা ঘোষণা করেছে।

হাশেমি আয়াতুল্লøাহ তাকি ফাজেলকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, কুরআনের শাস্তির বিধানগুলো তাওরাত থেকে নেয়া হয়েছে। তিনি ইরানি পণ্ডিত মোজাহেদ সাবেসতারিকে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, সুবিচার এবং মানবাধিকারের ধারণাগুলো আজকাল যেভাবে দেখা হচ্ছে, এসব ধারণা আগে ছিল না। কিন্তু এসব উপেক্ষা করা যাবে না। সাবেসতারি আরো মনে করেন, কুরআনের বাণী হচ্ছে, ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই’- তা প্রতিষ্ঠিত হবে।

লেখক আবদুুল করিম কোবাবারোসকে উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, ইসলামের প্রাথমিক পণ্ডিতরা মানবাধিকারের ব্যাপারটি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার মতে, মানবাধিকারকে অস্বীকার করা অপরাধ। জুরগেন হাবেরমাস বলেছেন, কুরআনের নতুন অনুবাদে পরিবর্তনশীল চিন্তাগুলোকে যাতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। লেখক আয়াতুল্লাহ মুন্তাজেরিকে উল্লেখ করে বলেছেন, কাউকে স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য ধর্ম ত্যাগের বা ধর্ম অবমাননার অভিযুক্ত করা যায় না।

আমাদের মতে, তার লেখার অনেক কিছুই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু সব কিছু নয়। জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার সনদ একটি ভালো দলিল। লক্ষণীয়, এ দলিলের বেশির ভাগ ধারা প্রায় দেশেই অনুসরণ করা হচ্ছে না।

জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার এ দলিলের মূল ত্রুটি হচ্ছে, ধর্মের মতো ব্যাপক বিষয়কে, যার অনুসারী বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ, যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এ জন্যই মুসলিম দেশগুলোর জন্য ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসি নতুন মানবাধিকার দলিল তৈরি করেছে ১৯৯০ সালে, যা জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার দলিল থেকে উন্নততর। ওআইসির মানবাধিকার দলিল কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে রচিত। এতে স্পষ্ট হয়েছে, ইসলামে মানবাধিকার পুরোপুরি স্বীকৃত। ইসলামে পুরুষ-নারী, অমুসলিমের মানবাধিকারের পার্থক্য নেই। ছোটখাটো পার্থক্য আছে অন্যান্য বিষয়ে।
কুরআন ও সুন্নাহ যে কয়টি হক শাস্তির কথা বলেছে, যেমন- বেত্রাঘাত, হাতকাটা, সেগুলো নিঃসন্দেহে কঠোর। কিন্তু এ কয়টি হচ্ছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, যার উদ্দেশ্য সমাজের সংশোধন করা।

মানবাধিকার প্রশ্নে প্রথম দিকের পণ্ডিত ব্যক্তিরাও কথা বলেছেন, তবে হয়তো আজকের মতো নয়। বিচারব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল মানবাধিকার রক্ষা করা। কুরআনের অনুবাদে তেমন কোনো পরির্বতন করা হয়নি, তবে অন্য ভাষায় অনুবাদের সময় বিভিন্ন অনুবাদক কিছুটা ভিন্নভাবে ভাষান্তরে করতে পারেন।

কুরআনের শিক্ষা ব্যাপক আঙ্গিকে দেয়া হয়েছে। তাকে পরবর্তীকালে বিস্তৃত করা প্রত্যেক যুগের পণ্ডিতদের কাজ এবং এটা তারা করছেন। কুরআনের টেক্সট বা বিষয়বস্তু লঙ্ঘন না করলে সব নতুনকে ভালোমতোই মেনে নেয়া যায়।
আল্লাহ ও রাসূল সা:কে গালিগালাজ করার বিষয়টি যদি প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত (ইসলামে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মোহাম্মদ হাশিম কামালী, বিআইআইটি প্রকাশিত, হাউজ # ৪, রোড # ২, সেক্টর # ৯, উত্তরা, ঢাকা)।

সবশেষে বলব, ইসলামকে আধুনিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রয়োজন নেই। বরং পাশ্চাত্য আধুনিকতার সেকুলারিজম, ভোগবাদ, যৌন লিবারেলিজম ইত্যাদি ত্যাগ করা উচিত।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

 


আরো সংবাদ



premium cement