২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আস্তিক্যবাদ, নাস্তিক্যবাদ ও করোনা

আস্তিক্যবাদ, নাস্তিক্যবাদ ও করোনা - সংগৃহীত

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে সভ্যতা সঙ্ঘাতপূর্ণ। বিষয়টি বহুমাত্রিক হলেও আস্তিক্যবাদ ও নাস্তিক্যবাদ-বস্তুবাদের মধ্যে সঙ্ঘাতটা বেশ জোরালো। আস্তিক্যবাদ (Theism) হলো এমন বিশ্বাস যা অন্তত একজন স্রষ্টা বা উপাস্যের অস্তিত্বকে স্বীকার করে। বহুত্ববাদ হলো বহুসংখ্যক স্রষ্টায় বিশ্বাস। বস্তুত ইসলাম ও খ্রিষ্টবাদ একেশ্বরবাদী। যদিও খ্রিষ্টধর্মের বিকৃতরূপ হচ্ছে ত্রিত্ববাদ। আস্তিক্যবাদের বিপরীত অবস্থানই হলো নাস্তিক্যবাদ। নাস্তিক্যবাদে একক বা একাধিক কোনো রকম স্রষ্টাকেই স্বীকার করা হয় না। তাদের বিবেচনায়, যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় তার কোনো অস্তিত্ব নেই।

বস্তুবাদ (Materialism) হলো দর্শনের প্রাথমিক মতবাদগুলোর একটি। বস্তুবাদে সবই বস্তু দিয়ে গঠিত। বস্তুবাদ কথাটি সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্যবহৃত হয়েছিল প্রধানত বস্তু সম্পর্কে পদার্থবিদ্যাগত ধারণাগুলোর অর্থে এবং ১৮শ’ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে তা ব্যবহৃত হয়েছে দার্শনিক অর্থে, ভাববাদের বিপরীতে।
আস্তিক্যবাদীদের দাবি হচ্ছে, নাস্তিক্যবাদীরা চিরন্তন সত্যকে অস্বীকার এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সেতুবন্ধন রচনার পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টি করে; যা এক ধরনের উন্নাসিকতা ও আত্মপ্রবঞ্চনা বৈ কিছু নয়। পক্ষান্তরে, নাস্তিক্যবাদীদের দাবি, আস্তিক্যবাদীরা বাস্তবতাবিবর্জিত ও আবেগনির্ভর। তাদের দাবি বিজ্ঞান ও দর্শনের সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আর যা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক তা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে একশ্রেণীর বিজ্ঞানী এ বিতর্কের একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এত দিন মনে করা হতো যে, ধর্ম ও আধুনিক বিজ্ঞান পরস্পরবিরোধী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কিছু গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক মতবাদ সে কথার সাথে একাত্ম হতে পারেনি, বরং এসব গবেষণাপত্রে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অবলীলায় স্বীকার করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে অনুষ্ঠিত ‘সায়েন্স অ্যান্ড দি স্পিরিচুয়েল কোয়েস্ট’ কনফারেন্সের রিপোর্ট প্রকাশ করতে গিয়ে নিউজ উইক ২০ জুলাই সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে একেবারে ঘোষণা দিয়েই বলেছে ‘বিজ্ঞান ঈশ্বর তথা স্রষ্টা খুঁজে পেয়েছে’।

কনফারেন্সে উপস্থিত কয়েক শ’ বিজ্ঞানী ও থিওলজিয়ান সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছেন যে, বিজ্ঞান ও ধর্ম ক্রমেই একেকার হয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানী জর্জ এলিস তার বিশ্বাসের কথা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বিপুল পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব সমর্থন করছে।’

নিউজ উইকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আধুনিক বিজ্ঞানের ক্রমেই অগ্রগতির ফলে মনে হতে পারে যে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ বাড়ছে এবং ধর্মের প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমে যাচ্ছে।’ কিন্তু বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই বিশ্বাস ক্রমেই প্রসার লাভ করছে যে, এসব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত শক্ত করছে এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘পদার্থবিজ্ঞানীরা এখন বুঝতে পারছেন যে, প্রাণ ও চেতনার বিকাশ সাধনের জন্য মহাবিশ্ব একজন স্রষ্টার হাতেই বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে।’ প্রতিবেদনে বিগ ব্যাঙ, জ্যোতির্বিদ্যা, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, ক্যায়স থিওরি সব কিছুকেই বলা হচ্ছে ‘ঈশ্বরের একেকটি প্রবেশ পথ, যা দিয়ে প্রবেশ করে ঈশ্বর এ পৃথিবীতে কাজ করেন।

একশ্রেণীর বিজ্ঞানী স্রষ্টার অস্তিত্ব ও শক্তিমত্তাকে স্বীকার করে নিলেও বিষয়টি নিয়ে উন্মুক্ত চিন্তাচেতনার দাবিদার নাস্তিক্যবাদীদের তা পছন্দ হয়নি। যদিও বিশ্বাসী মানুষরা এ বিশ্বকে আস্তিক্যবাদী বিশ্বে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তারা নানা ধরনের বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্য দিকে নাস্তিক্যবাদীরা এই পৃথিবীকে বানাতে চায় নাস্তিক্যবাদের অভয়ারণ্য হিসেবে। আর এই পথে তেমন বাধা-প্রতিবন্ধকতা নেই, বরং নির্বিঘœ ও বিরামহীন। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে আস্তিক্যবাদী তৎপরতাকে কোণঠাসা করার জন্যই নাস্তিক্যবাদীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। আর এভাবে উভয়পক্ষের দ্বন্দ্বেই পৃথিবী নতুন করে হয়ে উঠেছে অশান্ত ও সঙ্ঘাতপূর্ণ। আর এ জন্য নাস্তিক্যবাদীদের অসহিষ্ণু ও কর্তৃত্ববাদী মানসিকতাই অনেকাংশে দায়ী। আর নাস্তিক্যবাদীদের তৎপরতা ও অভিজ্ঞান ভালোভাবে উপলব্ধি করার জন্য একজন নাস্তিক্যবাদীর সাথে আমার কথোপকথন কিছুটা হলেও সহায়ক হবে বলে মনে করছি।

এক যুগেরও বেশি আগের কথা। আমার অফিসে এক অচেনা ভদ্রলোক এসে জানালেন তিনি নওগাঁ থেকে এসেছেন আমার সাথে কথা বলার জন্য। তিনি তার রাজনৈতিক পরিচয়ও জানালেন। একটি বাম রাজনৈতিক দলের নওগাঁ জেলার সেক্রেটারি। যতদূর মনে পড়ে নাম ‘মুকুল’। তাকে স্বাগত জানিয়ে স্বপ্রতিভভাবেই বললাম, ‘কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান?’ তিনি কোনো রাখঢাক না করেই বললেন, ‘স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে।’ আমি এ বিষয়ে আমার দুর্বলতা প্রকাশ করে বললাম, ‘আপনি বরং এ বিষয়ে কোনো স্পেশালিস্টের সাথে কথা বলুন।’ তিনি মৃদু হেসে জবাব দিলেন, ‘আমি তো আপনার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি।’

কিছুটা বিব্রত হলাম। যেহেতু তিনি অনেক দূর থেকে এসেছেন, তাই এ বিষয়ে তার প্রস্তুতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। আর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমি কোনো বিশেষজ্ঞ বা স্পেশালিস্ট নই যে, আমি তার জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে তাকে তুষ্ট করতে পারব। সঙ্গত কারণেই তার কাছে নিজের অযোগ্যতার কথা বিনীতভাবে প্রকাশ করেই আলোচনা সূচনা করলাম।
তিনি শুরুতেই বললেন, ‘যা দেখা যায় না বা যা অনুভব করা যায় না তার কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই আমরা যেহেতু স্রষ্টাকে দেখি না বা অনুভব করি না তাই স্রষ্টা বলে কোনো অস্তিত্ব স্বীকার মূর্খতার নামান্তর।’ তার কথার সারমর্ম এই যে, যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় তার কোনো অস্তিত্ব নেই। ইসলামে ‘অদৃশ্যের ওপর বিশ্বাস’ তথা ‘ঈমান বিল গায়িব’-এর কথা বলা হয়েছে, সে কথা তিনি মানতে রাজি নন।
এ ধরনের প্রশ্ন অনেক পুরনো হলেও আমি কখনো এমন অবস্থার মুখোমুখি হইনি। তাই বিচলিত হলাম কিছুটা। যেহেতু আমি বিশ্বাসী মানুষ, তাই তার এই দাবির একটা উপযুক্ত জবাব দেয়াও জরুরি মনে করলাম। কিছুটা নীরবতাও আমাকে পেয়ে বসল। শেষ পর্যন্ত তার কথার প্রত্যুত্তরে বললাম, ‘আপনার কথার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। তবে সবাই সব কিছুই দেখেন না আর সব কিছু অনুভব করেন না। সবার ইন্দ্রিয় সমভাবে সংবেদনশীল নয়। তাই মানুষে মানুষে দৃষ্টি ও অনুভূতির বৈপরীত্য রয়েছে।’
ভদ্রলোক আমার কথার তীব্র বিরোধিতা করে বললেন, ‘আপনার কথার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আপনার চোখ যা দেখে আমার চোখও তা দেখতে পারে। আপনার ইন্দ্রিয় যা গ্রাহ্য করে আমার ইন্দ্রিয়তে তা গ্রাহ্য হবে।’

আমি বিনীত উত্তর দিয়ে বললাম, ‘আমার কথা নয় বরং আপনার কথাই পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক।’ বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ যুক্তি-পাল্টাযুক্তি চলল। শেষ পর্যন্ত আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, ‘আপনার রক্তের গ্রুপ কী’? অবলীলায় জানালেন, ‘বি-পজিটিভ’। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি নিজের চোখে দেখেছেন?’ জবাব এলো পুরোপুরি নেতিবাচক। বললাম, ‘আপনি কিসের ভিত্তিতে বলছেন আপনার রক্তের গ্রুপের বিষয়ে নিশ্চিত হলেন? তিনি সাবলীলভাবে জবাব দিয়ে বললেন, ‘প্যাথলজিস্ট ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেছেন’।

আমার জড়তা অনেকটাই কেটে গেল। বললাম, “আপনার শরীরের রক্তের ‘গ্রুপ’ দেখার মতো দৃষ্টিশক্তি আপনার নেই। কিন্তু সে দৃষ্টিশক্তি প্যাথলজিস্টের আছে। তা হলে আপনার ইন্দ্রিয়ানুভূতি আর প্যাথলজিস্টের ইন্দ্রিয়ানুভূতি এক ও অভিন্ন নয়’। তিনি আমার কথার বিরোধিতা করে বললেন, ‘তিনি তো সর্বাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে এ কাজ করেছেন।’ আমি বললাম, ‘আপনার হাতে যন্ত্র থাকলেই কি সে কাজ করতে পারবেন বা হাতে একতারা থাকলেই বাউল হয়ে যাবেন; আর শাড়ি পরলেই কি আপনার মধ্যে নারীত্বের প্রকাশ ঘটবে’? ভদ্রলোক থমকে গেলেন কিছুটা!

আমি বিরামহীন। বললাম, “আপনার রক্তের গ্রুপ নির্ধারণের জন্য যেমন এমন বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হতে হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে হলেও আপনাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হতে হবে, যারা তাদের নিজ কর্ম, অধ্যবসায়, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞানে স্রষ্টাকে দেখেন বা অনুভব করেন। আর আপনি যে একজন প্যাথলজিস্টের কথায় নিজের রক্তের গ্রুপ সম্পর্ক নিশ্চিত হলেন এটাই তো ‘অদৃশ্যের ওপর বিশ্বাস’ বা ‘ঈমান বিল গায়িব’। এটি কি আপনার স্ববিরোধিতা নয়?”
তিনি মাঝে মধ্যেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু যেহেতু অফিসটা আমার। তাই আমি তাকে সে সুযোগ দিইনি। আমার বক্তব্য নিয়ে দীর্ঘক্ষণ চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন শুরু হলো। কিন্তু ভদ্রলোক যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারলেন না। খানিকটা পর্যুদস্তই হলেন বলা যায়। শেষ পর্যন্ত বললাম, ‘বিশ্বাসের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার শর্ত শুধু অবৈজ্ঞানিকই নয়, বরং শিষ্টাচার ও শালীনতাবিবর্জিত উন্মত্ততা।’ তিনি আমার কথায় একমত হতে পারলেন না। আমি বিভিন্নভাবে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত বললাম, ‘আপনি যাকে বাবা ডাকেন তার অনুকূলে প্রত্যক্ষ করার কী কী তথ্য-উপাত্ত আছে? কিসের ভিত্তিতে একজনকে বাবা সম্বোধন করেন? তিনি নিম্নস্বরেই জবাব দিয়ে বললেন, ‘মা বলেছেন!’ ‘আপনি তো শুরুতেই দাবি করেছেন যে নিজের চোখে না দেখলে আপনি কোনো কিছুর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবেন না। বিষয়টি স্ববিরোধিতা নয় কী?’ জবাব দিলাম শক্ত ভাষায়। আমি তাকে এ কথাও বোঝানার চেষ্টা করলাম যে, কোনো মা স্বৈরিণী বা মিথ্যাবাদিনীও হতে পারেন। শেষ পর্যন্ত বললাম, আপনি যাকে ‘মা’ ডাকেন তার কী দলিল-প্রমাণ আপনার কাছে আছে? ভদ্রলোক একেবারে নিরুত্তর হয়ে গেলেন। শেষে বললেন, ‘এভাবে তো কখনো ভাবিনি।’ বললাম, ‘ভাবতে শিখুন। চিন্তার পরিধিকে সঙ্কীর্ণ বৃত্তে আবদ্ধ রাখবেন না।’

সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারায় একসময় মানুষ যুদ্ধ করত বন্যপ্রাণীর বিরুদ্ধে। তার পর শুরু হলো মানুষ মানুষে যুদ্ধ। প্রথমে নিজেদের সাথে। তারপর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে। এই যুদ্ধগুলো ছিল বিশ্বাস-অবিশ্বাস ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব, অহঙ্কার আর মতবিরোধের যুদ্ধ। কে কার ওপর শক্তিমত্তার মাধ্যমে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে সেই যুদ্ধ। আর তা চলেছে সৃষ্টির আদিকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। কিন্তু সেই শক্তিমান মানুষই এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রায় অস্তিত্ব ও অবস্থানহীন করোনাভাইরাসের কাছে। প্রাধান্য বিস্তার করেছে বিশ্বের সর্বাধুনিক মারণাস্ত্রের ওপর। সভ্যতার সঙ্ঘাতকেও নিয়ে এসেছে এক কেন্দ্রে। বিশ্ববাসী এখন এই অশরীরী ও অনুভূতিহীন ভাইরাসের কাছেই জিম্মি। তাই কাউকে কাউকে মন্তব্য করতে শোনা গেছে, আমরা এক অদৃশ্য শক্তির সাথে যুদ্ধ করছি।
এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসটি ইতোমধ্যেই গোটা বিশ্বেই এক প্রকার মহাপ্রলয়ই সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২০৫টি দেশের মোট ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৩৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণহানির সংখ্যা ৮২ হাজার ৭৩ জন (সূত্র : প্রথম আলো অনলাইন-৮ এপ্রিল ২০)। কিন্তু সর্বাধুনিক কোনো প্রযুক্তিই এ ক্ষেত্রে তেমন সফলতা দেখাতে পারছে না। সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র বলে দাবিদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন ও চীন এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেছে। কারণ এসব দেশে আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা সর্বাধিক।

সভ্যতার স্বর্ণযুগেও যখন নাস্তিক্যবাদ ও আস্তিক্যবাদ প্রশ্নে সমাধান করা সম্ভব হয়নি, সেখানে করোনাভাইরাস এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের সফলতা পেয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। মূলত এই প্রাণঘাতী ভাইরাস মানুষের মধ্যে আস্তিক্যবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। মানুষ এই যুদ্ধে পর্যুদস্ত হয়ে সেই মহান সত্তার দিকেই ফিরে আসতে শুরু করেছে। এত দিন যারা নাস্তিক্যবাদী চেতনার ধারণ ও লালন করতেন তাদের অনেকের মুখেই এখন স্রষ্টার প্রশস্তি শোনা যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গতিবিধিও এখন স্রষ্টামুখী। এমনকি ইতালির প্রধানমন্ত্রীও নাকি আকাশের মালিকের ওপরই এখন নির্ভর করতে শুরু করেছেন। কথায় আছে, ‘সব কিছুই তার মূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে।’ করোনাভাইরাস কি সভ্যতাকে মূলের দিকেই ফেরাচ্ছে?

smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement