১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনার হামলা এবং ডিজিটাল মামলা

-

সেই কবে ছড়াকার আবু সালেহ বলেছিলেন, ‘ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা/রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা’। স্বাধীনতা পেয়েছি প্রায় ৫০ বছর, কিন্তু অধীনতা কাটেনি। স্বাধীনতার অর্থ ছিল আমি আমার কথা বলতে পারব। আমি আমার পথে চলতে পারব। আমার যা লেখার আমি তা লিখতে পারব। আমরা সবাই বুঝি স্বাধীনতা মানে ‘লেইসেজ ফেয়ার’ বা অবাধ স্বাধীনতা নয়। সেই যে রুশো বলে দিয়েছেন, ‘মানুষ স্বাধীন হিসেবে জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু সর্বত্রই সে নিয়মকানুন, শৃঙ্খলার অধীন’। নাগরিককে নিয়মের মধ্যে আনার জন্য প্রতিটি দেশে সংবিধান রয়েছে। তাই সংবিধানের অপর নাম ‘নিয়মাতন্ত্র’। সহজ ভাষায় আমরা বলি আইনের শাসন। আইন সবার জন্য সমান। এসব বড় বড় নীতিকথা আমাদের সংবিধান বা নিয়মাতন্ত্রে লেখা আছে। আমরা উদ্ধৃত করে বলতে পারি- সংবিধানের কত ধারা থেকে কত ধারা পর্যন্ত এসব স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু বলব না। কারণ এসব উদ্ধৃতি ও উদাহরণ কেউ গায়ে মাখে না। রাজনীতিকরা নাগরিক অধিকার রক্ষা করার কিরা-কসম করে ক্ষমতায় যায়। ক্ষমতায় গেলে সব ভুলে যায়। এমন কি স্ববিরোধী ও বৈরী আচরণ করে। আওয়ামী লীগ অতি অল্প সময়ে একটা ভালো সংবিধান দেয়। আবার সেই আওয়ামী লীগই ১৯৭৩ সালে সংবিধান লঙ্ঘন করে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ সংযোজন করে। অবশ্য সব সরকারের চরিত্রই এক রকম ‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় হনুমান’। এই হনুমানরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। স্বাধীনতার পরে করেনি। এখনো করে না। শাসক দলের চরিত্র বদলায়নি এতটুকু। স্বাধীনতার পরপরই যারা ক্ষমতায় ছিল, এখন তারাই ক্ষমতায়। কিন্তু খাসলতের পরিবর্তন হয়নি। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত (২০২০) যদি তাদের ক্ষমতার গতি প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে, ‘ম্যালথাসের সেই ক্রম হ্রাসমান বিধি’। ছোট হয়ে আসছে নাগরিকের স্বাধীনতার পৃথিবী। শক্তি প্রয়োগ ও কালাকানুনই তাদের শাসন কৌশল।

দেশ আজ এক ভয়ানক সময় অতিক্রম করছে। এ দেশের কোটি কোটি মানুষ সবাই ভীত ও বিচলিত। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের খবর আসছে। লকডাউন চলছে। যারা লকডাউন অতিক্রম করে বের হচ্ছে তারা বাধ্য হয়েই বের হচ্ছে। মানুষের কাজ নেই। খাবার নেই। সরকার হিমশিম খাচ্ছে। এক ধরনের অসহায়ত্ব বিরাজ করছে সমাজে। প্রতিটি মানুষ নিজের জন্য, আপনজনের জন্য অস্থির ও উদ্বিগ্ন। কম-বেশি সর্বত্র সহমর্মিতা ও সহযোগিতা দৃশ্যমান। সচেতন মানুষরা একে অপরকে সাহায্য করছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে। খাবার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছে। মূলকথা, গোটা জাতি বিপদ-আপদের মধ্যে রয়েছে। সরকারে ও সরকারের বাইরে জরুরি অবস্থা বিরাজ করছে।

অবস্থা আরো খারাপ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মতো পরিস্থিতি হতে পারে। যখন ‘সকলের তরে সকলে আমরা’ সরকারের নীতি হওয়া উচিত, তখন সরকার এ কী করছে? এখন এমন অবস্থা নয় যে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হতে পারে। যার যার চিন্তায় সে সে অস্থির। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি করোনা মহামারীর প্রথম থেকেই সহযোগিতার কথা বলে আসছে। জাতীয় দুর্যোগে সরকারকে সহায়তা করতে চাইছে। বর্তমান অবস্থায় সরকার সব দিক দিয়ে সবচেয়ে নিরাপদ রয়েছে। তার পরও কেন এই অসহিষ্ণুতা? গণমাধ্যম সরকারকে সমর্থন করছে। জাতির এই সঙ্কটময় সময়ে যথার্থ দায়িত্ব পালন করছে। প্রথমত, গণমাধ্যম এবং দ্বিতীয়ত, সচেতন নাগরিক সাধারণ সরকারের আয়নাস্বরূপ। সরকারের ভুলত্রুটি বা ব্যক্তিবিশেষের অন্যায় বা ভুল সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার অধিকার মানুষের রয়েছে। সরকার দাবি করে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। গণতন্ত্রের ফলমূল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে তারা। আর সমালোচনা হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। গণমাধ্যমের কোনো এক কোণায় অথবা ফেসবুকের পাতায় কেউ যদি সরকারের সমালোচনা করে তা হলে নিশ্চয়ই আকাশ ভেঙে পড়বে না। কিন্তু আমরা খুবই উদ্বেগ ও উৎণ্ঠার সাথে লক্ষ করলাম, এই দুর্যোগের সময়ও সরকার সহনশীলতার পরিচয় দিতে পারল না।

করোনা মহামারীর এ সময়ে ‘গুজব ছড়ানো’র অভিযোগে কার্টুনিস্ট সাংবাদিক ও লেখকসহ বেশ কিছু সচেতন নাগরিককে গত সপ্তাহে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এদের সবার বিরুদ্ধে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে’ মামলা করা হয়। এরা সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে একজন হলেন কলাবাগানে জঙ্গি হামলায় নিহত এক ইউএস কর্মকর্তার ভাই। রাজধানীর রমনা থানায় করা এ মামলার বাদি র্যাবের একজন উপসহকারী পরিচালক। অভিযুক্তরা হলেন ‘আই এম বাংলাদেশ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের কয়েকজন সদস্য। আরো রয়েছেন সামাজিক সংগঠন ‘রাষ্ট্রচিন্তা’র কয়েকজন সদস্য। তারা সবাই বিদেশে কর্মরত কয়েক সাংবাদিকের সাথে হোয়াটস অ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং করেছেন। এই চ্যাটিংকে সরকারের লোকেরা রূপ-রস-গন্ধ দিয়ে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ ও দেশদ্রোহমূলক বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। একই সাথে রূপগঞ্জ থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এই যুবকের বিরুদ্ধে বিরাট! অভিযোগ এই যে, তিনি সরকারদলীয় এক এমপির বিরুদ্ধে কাঁচা ধান কাটার ভিডিও শেয়ার করেছিলেন। সর্বশেষ ১১ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় র্যাবের করা মামলায় বলা হয়, র্যাবের একটি সাইবার ইউনিট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, কিছু সংখ্যক লোক বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়ে ‘আই এম বাংলাদেশ’ নামের একটি পেজ শনাক্ত করেছে। ওই পেজ থেকে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারী, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্র্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার প্রয়াস পায়।

র্যাবের অভিযোগে আরো জানা যায়, ওই পেইজটিতে একজন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য ছবি সব প্রচারিত হয়। বক্তব্যটি হলো- ‘মেধাবী মানুষ যদি বিবেকহীন হয়, তবে তারা হয় খুবই বিপজ্জনক’। এ ছাড়া রয়েছে সরকারের ত্রাণ বিতরণের অনিয়ম ও মহামারীর শপিংমল চালু করার সমালোচনা। সম্প্র্রতি ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া এবং পরে যশোর সীমান্ত থেকে গ্রেফতার হওয়া ফটোসাংবাদিক সফিকুল ইসলাম কাজলকে নিয়েও মন্তব্য রয়েছে ওই পেইজে। আরো আছে সমসাময়িক নানা ঘটনার সমালোচনা। এ ছাড়াও ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় সাংবাদিক মাহতাব উদ্দিন তালুকদারকে ডিজিটাল নিরাপত্তায় আওতায় গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গত ১ মে নরসিংদীতে পুলিশের করা মামলায় তিন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, ওই সব অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই আটক করা হয়। র্যাব বিভিন্ন সময়ে তাদের ঘর থেকে তুলে নিলেও আইন মোতাবেক আদালতে হাজির করেনি। গ্রেফতারকৃত একজন দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্ত্রী দিসানআরা অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে ইফতারির ঠিক আগে র্যাব তুলে নেয়। গ্রেফতারকৃত ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ নামক সামাজিক সংগঠনের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইজীবী হাসনাত কাইয়ুম এ ধরনের তুলে নেয়ার ঘটনাকে ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’র ইঙ্গিতবহ বলে মনে করেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতেও দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মার্চ থেকে এ কলাম লেখা পর্যন্ত গত প্রায় তিন মাসে মামলা হয়েছে ৪৫টি। এর আগে ২০১৯ সালে বছরজুড়ে মামলার সংখ্যা ছিল ৬৩টি। দেখা যাচ্ছে, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে মামলার সংক্রমণও বেড়েই চলেছে। আর এ জন্য গ্রেফতার হচ্ছেন সংখ্যায় বেশির ভাগ সাংবাদিক। মামলাগুলো বেশির ভাগই নেতার ইমেজ রক্ষায় কর্মীদের কাজ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং পুলিশ এসব মামলা করেছে। দেশে গত মার্চে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছিল ১১টি। এপ্রিলে তা বেড়ে হয় ১৮। আর এ মাসের প্রথমার্ধে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫। এসব তথ্য তিনটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত। এগুলো হলো- প্রকাশিত সংবাদ, মানবাধিকার সংগঠন ও পুলিশ সদর দফতর। সাম্প্রতিককালে দায়েরকৃত ৪৩টি মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর ১১টি হয়েছে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজবের কারণে। আর ছয়টি মামলা হয়েছে মন্ত্রী, সাংসদ ও স্থানীয় মেয়রকে জড়িয়ে। কথিত ‘মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনা’ বা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে। ত্রাণ চুরি নিয়ে রিপোর্ট করাও যেন অপরাধ। এ ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে পাঁচটি। প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে তিনটি। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করায় মামলা হয়েছে তিনটি। এ দেশে সবচেয়ে সংবেদশীল সংগঠন হচ্ছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করাই যেন ফৌজদারি অপরাধ। তারা মামলা করেছে কয়েকটি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে সমালোচনা করায় দুটো মামলা হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসব মামলার ১৭টি করেছেন আওয়ামী লীগের সাংসদ, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ভৈরবে একটি মামলা করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করায় স্থানীয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ মামলা। দেখা যাচ্ছে, অতি সামান্য কারণে ও ব্যক্তিগত কারণে মামলা হচ্ছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম রহমান। সংবাদমাধ্যম প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেন, ‘প্রণয়নের সময় এই আইনের অপব্যবহার হবে না বলে আশ^াস দেয়া হয়েছিল। এখন তো দেখা যাচ্ছে শুধু অপব্যবহারই না, স্বেচ্ছাচারিতার পর্যায়ে চলে গেছে। মামলাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত করা হচ্ছে’। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হওয়ার পর থেকেই বাকস্বাধীনতা বন্ধ করতে এর যে ধারাগুলো রয়েছে সে ধারাগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। মহামারীর এই সময়ও আইনটির সর্বোচ্চ প্রয়োগ হচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় কেউ যেন সরকারের সমালোচনা না করে, সেই উদ্দেশ্যেই এসব মামলা করা হচ্ছে। একটি দৈনিকের সম্পাদকীয় কলামে মন্তব্য করা হয়, ‘গণতন্ত্রের কার্যকারিতা এবং নাগরিক অধিকারের স্বার্থে এসব মামলা উদ্বেগজনক। সরকারের উচিত এসব সমালোচনাকে ইতিবাচক অর্থে নিজেদের সংশোধনের জন্য সাদরে গ্রহণ করা’। সংবাদপত্রটি সরকারকে আবার মনে করিয়ে দেয় যে, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই আইনটি অপপ্রয়োগ করা হবে না বলে বারবার আশ^স্ত করা হয়েছিল।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর এমন আঘাত ও সাংবাদিকদের গ্রেফতার শুধু ঐক্যের পথে বাধাই সৃষ্টি করবে। মহামারী ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়তে সমগ্র জাতিকে এক হয়ে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে সম্পাদক পরিষদ জানায়, দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে ধরে প্রশাসনের ব্যর্থতা চিহ্নিত করাই গণমাধ্যমের দায়িত্ব। এ দিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা সাতটি দেশ ও জোটের রাষ্ট্রদূতরা করোনাভাইরাসের মতো মহামারীর সময়ে নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য প্রচার নিশ্চিত করার স্বার্থে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সরকারের উচ্চমহল থেকে এ বিবৃতির তীব্র সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, এটি একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের শিষ্টাচারবহির্র্ভূত হস্তক্ষেপ।

দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারের অতীতের রেকর্ড, বর্তমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মোটেই গণমাধ্যম এবং নাগরিক স্বাধীনতার পরিপূরক নয়। গত ৭ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের পরিমার্জিত নির্দেশিকা প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিদের নিয়ে মন্তব্য করলে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এ ছাড়া ওই পরিপত্রে সরকারি চাকরিজীবীদের ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সরকারের এসব বিধিনিষেধ ও ধরপাকড় প্রমাণ করে, তারা এই দুঃসময়েও সংযম ও সহিষ্ণুতা দেখাতে ব্যর্থ। সেই আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত কোনো সময়েই কি তাদের কোনো শুভবুদ্ধির উদয় হবে না? 

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Mal55ju@yahoo.com

 


আরো সংবাদ



premium cement