২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভুলে যাওয়া সেই সাচার কমিটির রিপোর্ট

- নয়া দিগন্ত

দুই বছর আগে এপ্রিলে ভারত হারিয়েছিল তার অন্যতম বিবেকবান এক সন্তানকে। গত ২০ এপ্রিল ২০২০ ছিল তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি তার ছিল গভীর শ্রদ্ধা। তিনি বিচারপতি রাজিন্দর সাচার। তার জীবদ্দশায় তিনি গভীর উদ্বিগ্ন ছিলেন ভারতীয় সমাজে মুসলিম সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে রাখার রাষ্ট্রীয় অপচেষ্টার ব্যাপারে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ভারতের প্রতিটি সরকার ভারতীয় মুসলিম ও সেইসাথে দলিতদের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার সমস্যাকে ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর করে তুলেছে এবং এই প্রবণতা এখনো চলমান। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারের এই আমলে তা চলছে অধিকতর প্রাবল্য নিয়ে। বিচারপতি সাচার আধুনিক এক ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এ সমস্যাকে ভারতকে এগিয়ে নেয়ার পথে এক বড় বাধা হিসেবে বিবেচনা করতেন। তাই তিনি সংখ্যালঘুদের প্রতি এ বঞ্চনার অবসান ঘটানোর তাগিদই দিয়ে গেছেন ভারতবাসীকে। তবে তিনি বরাবর আশাবাদী ছিলেন, ভারতের শাসনক্ষমতায় একসময় এমন একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও মানবতাবাদী সরকার আসবে, যারা এ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে মুসলমান ও দলিতদের প্রাপ্য যাবতীয় গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন করে তাদের বঞ্চনার অবসান ঘটাবে। এ ব্যাপারে তার জাতিকে একটা যথার্থ পথনির্দেশ দেয়ার সুযাগও তিনি পেয়েছিলেন। তার নেতৃত্বাধীন সাচার কমিটির একটি ব্যাপকধর্মী রিপোর্ট প্রণয়নের মাধ্যমে সে কাজটিই তিনি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

পাঠক সাধারণের হয়তো মনে আছেÑ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার ২০০৫ সালে ভারতীয় মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষাগত অবস্থান তুলে ধরে একটি রিপোর্ট প্রণয়নের জন্য ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। তিনি এই কমিটির প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি রাজিন্দর সাচারকে। এই কমিটি সাচার কমিটি নামে সমধিক পরিচিত। এর এক বছর পর ২০০৬ সালে এই কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। ৪০৩ পৃষ্ঠার এই সুদীর্ঘ রিপোর্ট সরকারি ডোমেনে প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর। ভারতীয় পার্লামেন্টে তা তোলা হয় ৩০ ডিসেম্বর। রিপোর্ট কিছু মূল্যবান ও যৌক্তিক সুপারিশসহ তা বাস্তবায়নের জন্য ভারত সরকারের কাছেও পেশ করা হয়। এই রিপোর্টে দেখা যায়, দশকের পর দশক ধরে মুসলমানদের অবস্থা অন্য সংখ্যালঘুদের চেয়ে ক্রমেই খারাপের দিকে গেছে। নয়া দিগন্ত-এর নিয়মিত পাঠকদের হয়তো মনে আছে, তখন আমি সাচার কমিটি রিপোর্টের ওপর আলাকপাত করে একটি কলাম লিখেছিলাম, যার মাধ্যমে ঐতিহাসিকভাবে বঞ্চনা ও ভারতীয় মুসলমানদের ওপর ভারতের ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার একটা বাস্তবচিত্র সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও পাঠক-সাধারণের জানার সুযোগ হয়েছিল।

সাচার কমিটির রিপোর্টে ভারতে প্রথমবারের মতো তথ্যপ্রমাণসহ মুসলমানদের ‘ব্যাকওয়ার্ডনেস’র বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এই ‘ব্যাকওয়ার্ডনেস’ শব্দটি ভারতের শিক্ষাবিদরা ও অর্থনীতিবিদরা সে দেশের ঐতিহাসিকভাবে বঞ্চনার শিকার ও অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার বিষয়টি বুঝাতে প্রায়ই উল্লেখ করে থাকেন। সাচার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়Ñ যেসব এলাকায় মুসলমানদের বসবাস বেশি, সেসব এলাকায় শিক্ষার সুযোগ তুলনামূলক কম। তা ছাড়া ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের যে উদ্যোগ রয়েছে, তাতে মুসলমানদের ব্যাপকভাবে এড়িয়ে চলা হয়। সরকারের আমলাতন্ত্রে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব জনসংখ্যার হারের তুলনায় কম, বিশেষ করে আমলা-ব্যবস্থার উচ্চস্তরে এই হার আরো বেশি কম। ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশই মুসলমান হলেও ভারতীয় আমলা ব্যবস্থায় তাদের প্রতিনিধিত্বের হার মাত্র আড়াই শতাংশ। বঞ্চনা আছে অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রেও। তবে কারাগারে মুসলমনদের হার বেশি। রিপোর্টে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়Ñ ভারতীয় মুসলমানদের অবস্থা তফসিলি সম্প্রদায় ও তফসিলি উপজাতীয়দের চেয়েও খারাপ অবস্থায় রয়েছে। দলিতরাও মুসলমানদের চেয়ে ভালো আছে। এই রিপোর্ট ভারতীয় মুসলমানদের ওপর পরিচালিত বৈষম্যের বিষয়টি জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কমিটির একটি সুপারিশ ছিল বৈষম্যের অভিযোগগুলো আইনিভাবে সমাধান করার জন্য একটি কৌশল উদ্ভাবন করার লক্ষ্যে একটি ‘ইকুয়াল অপরচ্যুনিটি কমিশন’ (ইওসি) গঠন করতে হবে। কিন্তু এক যুগের বেশি সময় পরেও এ ধরনের কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি. চিদাম্বরাম ‘ন্যাশনাল মাইনোরিটজ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন’র বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এই রিপোর্টের মাধ্যমে এই প্রথমবারের মতো কোনো সরকারি সংস্থা স্বীকার করল মুসলমানেরা বঞ্চনার শিকার হয়ে ভারত ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। ভারতে প্রতি ১০ বছর পরপর আদমশুমারি করা হয়। তবে এতে ধর্মভিত্তিক কোনো পরিসংখ্যান দেয়া হয় না। ফলে কোনো সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায় সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এই আদমশুমারি রিপোর্টে থাকে না। চাকরির ক্ষেত্রে, শিক্ষার ক্ষেত্রে ভারতীয় মুসলমানেরা যে চরম বৈষম্যের শিকার, সাচার কমিটির রিপোর্টে তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয় সুনির্দিষ্ট সরকারি তথ্য-পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে।

সাচার কমিটির রিপোর্টে নানা সুপারিশ তুলে ধরে পথ বাতলে দেয়া হয়েছিল, যা অবলম্বন করে সরকার বিদ্যমান বঞ্চনা-পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারে। কিন্তু এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন অনুসরণ করা হয়নি। বরং সাচার কমিটির রিপোর্টের ফলাফলগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য। এরা সহানুভূতির বদলে আজ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার। ভারতে আজ মুসলমানদের পরিস্থিতি উন্নয়নের প্রয়াসের বদলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উসকে দেয়া হচ্ছে। নানা আইন প্রণয়ন করে মুসলমানদের বঞ্চনার তীব্রতা আরো বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। পথ পরিষ্কার করা হচ্ছে মুুসলমানদের ভারত-ছাড়া করার। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী সালমান খুরশিদ মুসলমানদের উদ্দেশে বলেন, ‘সাচার কমিটির রিপোর্ট ইজ নট কুরআন’। এর মাধ্যমে কার্যত তিনি বলতে চেয়েছেন, সাচার কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক নয়। সালমান খুরশিদ একজন মুসলিম। তিনি কংগ্রেস ঘরানার লোক। ধরে নেয়া হয়, তাকে কংগ্রেস সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছিল সংখ্যালঘুদের সুখ-দুঃখ দেখার জন্য। কিন্তু এ ব্যাপারে তার অর্জন খুবই দুঃখজনক।

২০০৬ সালের এই রিপোর্ট প্রকাশের পর এর বাস্তবায়নের পথ চেয়ে রাজিন্দর সাচার বেঁচেছিলেন আরো একযুগ। এরপর তিনি চলে গেলেন। গত ২০ এপ্রিল পালিত হলো তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। এ প্রেক্ষাপটে ভারতের অনেকেই আজ বলছেন, সংখ্যালঘু মুসলমানদের বঞ্চনার বিষয়ে রাজিন্দর সাচারের রেখে যাওয়া উদ্বেগ উপলব্ধি করা অতি প্রয়োজন। কারণ, মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত বঞ্চনা আর বৈষম্য পরিস্থিতি এখন আরো জটিল আকার ধারণ করছে। সাচার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এখনো এই সমস্যাটির সমাধান উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
একজন সমাজবাদী বিচারপতি হিসেবে রাজিন্দর সাচার ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ‘নিউ ইকোনমিক পলিসি’র প্রবল বিরোধী। এর পরও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কেনো যে বিচারপতি সাচারকে এই কমিটির প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, এটি রয়ে গেছে একটি প্রশ্ন হিসেবেই। হতে পারেÑ হয়তো মনমোহন সিং চেয়েছিলেন ভারতীয় মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষাগত মর্যাদার বাস্তব চিত্রটা জাতিকে জানানো দরকার। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, শুধু তখনই ভারতীয় মুসলমানদের ‘ব্যাকওয়ার্ডনেস’ দূর করে তার নিউ ইকোনমিক পলিসির আওতায় উন্নয়নের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। আর তা সম্ভব হবে শুধু তাদের বঞ্চনার অবসান ঘটানোর মাধ্যমেই। কিন্তু সাচার কমিটির রিপোর্টে মুসলমানদের ভয়ানক বঞ্চনার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা সত্ত্বেও, কংগ্রেস রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নেয়নি। বরং মনমোহন সিং তখন এমন এক বিবৃতি দিলেন, যা স্ববিরোধী মনে হলেও সত্যবর্জিত ছিল না। তিনি বললেন : ‘the first right over the resources of the country is that of the minorities’। এই বক্তব্য বিজেপিকে সুযোগ করে দিলো অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টির। মনমোহন সিংয়ের এ বক্তব্য ছিল স্পষ্টতই স্ববিরোধী। কারণ, তিনি ভারতে ‘নিউ ইকোনমিক পলিসি’র অগ্রনায়ক হিসেবে নিশ্চিত করেছিলেন : the first right of corporate houses and multinational companies on the resources of the country। তথাকথিত সেকুলার পার্টিগুলোও এগিয়ে আসেনি এই সাচার কমিটির রিপোর্টের সুপারিশমালা বাস্তবায়নে। যদি এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হতো, তবে আজকের দিনে ভারতীয় মুসলমানরা এতটা ভয়ঙ্করভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থার মধ্যে থাকত না। তারাও পেত ভারতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মূলধারার এক অন্যতম অংশীদার হওয়ার সুযোগ।

এই রিপোর্টের কোনো কিছুই কারো পক্ষে অস্বীকার করার উপায় ছিল না। কারণ, পুরো রিপোর্টটিতে ব্যবহার করা হয় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উৎস থেকে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই রিপোর্টে নিছক পরিসংখ্যানই তুলে ধরা হয়নি, সেখানে আধুনিক দুনিয়ার উপযোগী একটি ভারতীয় সমাজ গড়ার নীতি-নির্দেশও তুলে ধরা হয়। যেই মাত্র, এই রিপোর্টের তথ্য-পরিসংখ্যান, উপসংহার ও সুপারিশগুলো আলোর মুখ দেখল, বিচারপতি সাচারের নাম ছড়িয়ে পড়ল ভারতজুড়ে, এমনকি দেশের বাইরেও। ভারতীয় মুসলমানদের ঘরে ঘরে উচ্চারিত হতে থাকে তার নাম। কিন্তু তিনি বরাবর এই রিপোর্ট তৈরির অবদানের ব্যাপারে পুরো কমিটির ভূমিকাকেই সামনে তুলে ধরেছেন। আত্মপ্রচার-বিমুখ এই মানুষটি তার জীবদ্দশায় এই রিপোর্ট সম্পর্কিত যাবতীয় সেমিনার ও আলোচনা সভায় যোগদান থেকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই রিপোর্টের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের কোনো আলোর রেখা না দেখেই এ দুনিয়া থেকে তাকে বিদায় নিতে হলো।

এটি সুবিদিত যে, বিচারপতি সাচার সক্রিয় ভূমিকা পালন করে গেছেন দেশটিতে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার উন্নয়নের ব্যাপারে। তার কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছিল ‘পিপল’স ইউনিয়ন অব সিভিল লিভার্টিজ’ (পিইউসিএল)-এর কর্মকাণ্ডে। এটি প্রতিষ্ঠা করেন সমাজবাদের বলিষ্ঠ সমর্থক জয়প্রকাশ নারায়ণ। তাকে বিবেচনা করা হয়, সাচ্চা সমাজবাদী। নির্যাতিত জনগণের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচারপতি সাচারের লড়াই সুবিদিত। তার বাবা ছিলেন কংগ্রেসের একজন সিনিয়র নেতা, ছিলেন পাঞ্জাবের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু একজন সমাজবাদী হিসেবে তিন কখনোই কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট হননি। তিনি তার নিজের মতো করে অনেকটা নীরবে কাজ করে গেছেন মানুষের আর গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে।

সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পর মুসলিম কমিউনিটির অনেকের সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ দিতেন। তিনি একটি কথা সবসময় মুসলিম যুবকদের উদ্দেশে বলতেন। তিনি বলতেন, সাচার কমিটির কাজ ছিল একটি রিপোর্ট তৈরি করা। কমিটি যথাসময়ে যথার্থ আন্তরিকতার সাথে তা সম্পন্ন করে সরকারের কাছে পেশ করেছে। এখন এই রিপোর্টের বাস্তবায়নের কাজ সরকারের। তিনি মুসলমানদের বলতেন, এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে তাকে সেমিনারে বা আলোচনা সভায় না ডেকে সেজন্য তাদের উচিত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সাথে কাজ করা। তিনি তাদের আরো উপদেশ দিতেন তোমাদের ছেলেমেয়ে ও নারী-পুরুষকে সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে এরা এই সুপারিশমালার সত্যিকারের উপকারভোগী হতে পারে। আর তা করতে হবে পরিকল্পিত উপায়ে। 
বিচারপতি সাচার বিশ্বাস করতেন, মুসলমানদের বিদ্যমান বিচ্ছিন্নতা সবচেয়ে কার্যকরভাবে অবসান ঘটানো সম্ভব হবে শিক্ষায়, প্রশাসনে, ব্যবসায়ে ও রাজনীতিতে অর্থাৎ জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে। তাদের অন্যান্য নাগরিকের মতো অবাধ নাগরিক অধিকার দিতে হবে। কিন্তু তার উপর্যুপরি পরামর্শ সত্ত্বেও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী কংগ্রেস তা আমলে নেয়নি। আর উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার তো রাতদিন লেগে আছে, কী করে মুসলমানদের ভারত-ছাড়া করা যায়। তাদের কাছে সাচার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন কামনা করা অরণ্যরোদন ছাড়া কী হতে পারে!

সাচার কমিটির রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয় ২০০৬ সালে। এরপর এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সাচার কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়নে বিন্দুমাত্র অগ্রগতি নেই। দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে এই রিপোর্ট নিয়ে নেই কোনো আলোচনা-সমালোচনা। বিগত জাতীয় নির্বাচনে দেশটির একটি রাজনৈতিক দলের ইশতেহারেও এই রিপোর্ট বাস্তবায়নের কোনো প্রতিশ্রুতি বা উল্লেখ ছিল না। অনেক রাজনৈতি দল আত্মসমর্পণ করে বসে আছে উগ্রবাদী ও ফ্যাসিবাদী বিজেপির কাছে। অতএব এই মুহূর্তে সাচার কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়নের কোনো আশার আলোই দৃশ্যমান নয়। তবে যেসব রাজ্যে সেকুলার পার্টির সরকার রয়েছে, সেগুলোও যদি তাদের নিজ নিজ রাজ্যে অন্তত ‘ইকুয়াল অপরচ্যুনিটি কমিশন’ গঠন করে এই রিপোর্ট বাস্তবায়নে এগিয়ে আসত, তবে মুসলমানরা তাদের বঞ্চনার ব্যাপারে কিছুটা হলেও আশাবাদী হয়ে উঠতে পারত। হ


আরো সংবাদ



premium cement