২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তারা কি লজ্জা-শরমের মাথা খেয়েছে?

-

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বা ক্ষমতার স্বাতন্ত্র্য নিয়ে আলোচনা নিরর্থক। তার কারণ ক্ষমতাসীনরা এর তোয়াক্কা করেন না। বাংলাদেশের সংবিধানে ‘বিচারক বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন’ বলে যে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, তা-ও অর্থহীন। কার্যত বিচারকরা সরকারের অধীন। অতি সম্প্রতি বিচার বিভাগে যে দু’তিনটি ঘটনা ঘটেছে তাতে নাগরিক সাধারণের মনে এই প্রত্যয় জন্মেছে যে, এত দিন ধরে যে লোক দেখানো সৌজন্য, সভ্যতা, ভব্যতা দৃশ্যমান ছিল তা-ও যেন উবে গেছে। বিচার বিভাগের ওপর সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের নমুনা সম্ভবত কাউকে বলে বুঝিয়ে দিতে হবে না। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তা প্রমাণ করে গেছেন। বিশ্বস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিআইবি যখন হাতে কলমে নিম্ন আদালতের অধীনতা বুঝিয়ে দেয় তখনও তারা দাবি করে ‘সবই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। বাংলাদেশে এত দিন একটা প্রবাদ ছিল, ‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না’। এবার তারা প্রমাণ করেছে ‘হুকুম নড়ে হাকিমও নড়ে’। তারা তারস্বরে ‘আইনের শাসনের’ কথা বলে। সে আইনের প্রয়োগে দেখা যায় সকালে এক রকম, বিকেলে আরেক রকম। আইনের প্রয়োগ ব্যক্তি, দল ও আনুগত্যভেদে বিভিন্ন রকম। সরকারি দলের জন্য এক ব্যবস্থা, বিরোধী হলে আরেক ব্যবস্থা। এমনকি একজন জননন্দিত শীর্ষ নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীও তাদের ‘সকাল-বিকাল’ রদবদলের নগ্ন উদাহরণের শিকার হন। এসব দেখে একজন শীর্ষস্থানীয় মন্তব্য করেন, ‘দেশের রাজনীতিতে শালীনতাবোধ এভাবেই বিলুপ্তির পথে। এখন রাজনীতির অর্থই দাঁড়িয়েছে ক্ষমতার বাহাদুরি দেখানো।’ এসব দেখেশুনে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, দেশ থেকে সব সামাজিক, রাজনৈতিক ও বিচারিক ন্যায়বোধ কি বিলুপ্ত হয়েছে! যারা এসব করছে, তারা কি লজ্জা-শরমের মাথা খেয়েছে?

সর্বশেষ ঘটনাটি আগে দেখি। গত ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে বেগম খালেদা জিয়ার মানহানির মামলার শুনানি ছিল। তাকে সকালে স্থায়ী জামিন দেয়ার পর দুপুরে তা প্রত্যাহার করা হয়। আদালত অবকাশের এক সপ্তাহ পর এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে এ মামলা হয়েছিল। এ মামলায় তার জামিন আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি করে বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি এস এম মুবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে জারি করা রুল মঞ্জুর করে আদেশ দেন। পরে দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থায়ী জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এ বিষয়ে আবারো শুনানির জন্য আদালতের অবকাশের এক সপ্তাহ পর দিন ধার্য করা হয়। উল্লেখ্য, ১৩ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকবে। হাইকোর্ট ২০০৮ সালের ১৩ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এ মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এ ছাড়া কেন তাকে স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেন। গত ১২ মার্চ এ রুলের ওপর শুনানি নিয়ে আদেশ দেন আদালত। জানা গেছে, এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা ছিলেন না। দুপুরের পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া তাদের বক্তব্য শোনার পর আদেশ দেয়ার জন্য জামিন আদেশটি প্রত্যাহারের আর্জি জানান। এরপর স্থায়ী জামিন আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও এইচ এম কামরুজ্জামান মামুন। পরে কায়সার কামাল জানান, সকালে হাইকোর্ট এ মামলায় রুল এবসল্যুউট মঞ্জুর করে তাকে স্থায়ী জামিন দেন। দুপুরের পর আদালতে স্বাক্ষর না পাওয়া আদেশটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। ওই সমাবেশে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তিনি স্বাধীনতা চাননি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি।’ এ বক্তব্যের জের ধরে নড়াইলের নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান ফারুকি ইমাম ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইল সদরের আমলী আদালতে মামলা করেন। এ ঘটনা থেকে দুটো বিষয় স্পষ্ট। প্রথমত, এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সকালে জামিন দেয়া ও বিকেলে তা প্রত্যাহারের ঘটনা আবারো প্রমাণ করল যে, কোর্ট কতটা স্বাধীন। সবাই জানে এবং বোঝে যে, সরকারের অ্যাটর্নিরা কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন করেন। সকালে যখন তাদের অনুপস্থিতি ছিল বিচারকরা হয়তো বুঝেছিলেন যে এ ক্ষেত্রে সরকারের বিরোধিতা করার কিছু নেই। কিন্তু যখন বিরোধিতার প্রমাণ পাওয়া গেল, ঠিক তখনই স্থায়ী জামিন বাতিল করা হলো। দ্বিতীয়ত, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা যদি মামলার বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দিই তাহলে সহজেই বোঝা যাবে যে, এটি কোনো মামলার বিষয় হতে পারে না। যেকোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। তা সব সময়ই আপেক্ষিক। সামান্য বক্তব্যকে অসামান্য করে দেখা রাজনৈতিক অপকৌশল বৈ কিছু নয়। আরো একটা দৃষ্টিকটু বিষয় আছে; আর তা হচ্ছে আওয়ামী নেতাকর্মীদের মামলাবাজ হতে হাওয়া দেয়া। একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের উপজেলাপর্যায়ের কোনো নেতা বা কর্মী যখন মামলা দেয়, যত তুচ্ছই হোক কেন্দ্র থেকে সেই মামলা নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা হয়। এ দেশের একজন নাবালকও বোঝে যে, চিহ্নিত অপরাধীরা জামিন পায় বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ফাঁসির আদেশও মওকুফ হয়ে যায়। অথচ খালেদা জিয়ার সামান্য কৌশলগত ত্রুটির জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে।

এর পরের ঘটনাটি আরো নগ্ন। একেবারেই প্রকাশ্য। পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি সাবেক এমপি আবদুল আউয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন বিবিধ মামলা করেছে। মামলার হাজিরা দিতে জজকোর্টে এলে জামিন না দিয়ে জেলা জজ তাকে জেলে পাঠান। এতে ক্ষুব্ধ হন জেলার আওয়ামী আইনজীবীরা। তারা জেলা জজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বদলির দাবি জানান। আইনমন্ত্রী আইন ও বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে আওয়ামী আইনজীবীদের দাবি মোতাবেক জেলা জজকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকায় বদলি করেন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, অতিরিক্ত জেলা জজকে জেলা জজের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। অস্থায়ী বা ভারপ্রাপ্ত জেলা জজকে দিয়ে সকালের অস্বীকৃত জামিন নিয়ে বিকেলে স্বীকৃত করা হয়। আউয়ালকে জামিন দেয়া হয়। এ ঘটনা আইন ও বিচার অঙ্গনে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের নজির। আইনমন্ত্রী এভাবে বেআইনি কাজ করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি প্রকাশ্যে তার আইন লঙ্ঘনের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। সেটি হলো, জামিন নিয়ে ঘটনাস্থলে আইন ও শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা। মজার বিষয় হলো, সেটি তার দলীয় লোকদের স্বার্থে, দলীয় লোকদের দ্বারা সংঘটিত হতে যাচ্ছিল। তাহলে বোঝা যায়, নিজ দলীয় লোকদের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আরো বিস্ময়ের ব্যাপার যে, ঘটনাটি তাদের নিজ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলাফল। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, পিরোজপুরের এই ঘটনায় মন্ত্রীদের ঠাণ্ডা লড়াই প্রকাশ্য রূপ নেয়। ওখানকার স্থানীয় এমপি যিনি এখন মন্ত্রীও বটে, তিনি আউয়ালকে জেলে পাঠাতে চেয়েছিলেন। মানুষজন অনুমান করছে যে, হয়তোবা জেলা জজের কাছে উল্টো তদবির হয়েছিল। আইনমন্ত্রী আউয়ালের পক্ষ নেয়ায় বিষয়টি জটিল হয়ে ওঠে। দেখা যাচ্ছে, বাঘে- মহিষে লড়াইয়ে বেচারা জেলা জজ উলুখাগড়ায় পরিণত হন। এটা আরো প্রমাণ করে যে, স্থানীয় পর্যায়ে ডিসি বা জেলা জজের মতো পদাধিকারীরা সরকারি দলের ক্রীড়নকে পরিণত হচ্ছেন। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না।

আরেকটি অপ্রিয় ঘটনা হচ্ছে, গত বছরের চাঞ্চল্যকর ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির নায়ক জি কে শামীমের গোপনে জামিন লাভ। শামীমকে ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, অর্থপাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে র‌্যাব। অস্ত্র মামলাটি ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়, জি কে শামীম একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক এবং জুয়ার ব্যবসায়ী। তার সহযোগীরা উচ্চ বেতনভোগী এবং দুষ্কর্মের সহযোগী। তারা অস্ত্র-লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে এসব অস্ত্রশস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করেছেন। অস্ত্র ও মাদক আইনে দায়ের করা পৃথক দু’টি মামলায় হাইকোর্ট থেকে গত ৪ ও ৬ ফেব্রুয়ারি জামিন পান জি কে শামীম। অভিযোগ রয়েছে, এ ধরনের গুরুতর অপরাধীর জামিনের বিরোধিতা না করে সরকার পক্ষ কৌশলে সহযোগিতা করে। প্রায় এক মাস পরে যখন বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় তখন বিপাকে পড়ে সরকার পক্ষ। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, তিনি জামিনের বিষয়টি জানতেন না। এটি বলে তিনি পার পেতে পারেন না। তার কারণ জানাটাই তার কর্তব্য। নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে যখন জামিনের দরখাস্ত করানো হয়, তখন তার কপি বাধ্যতামূলকভাবে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে জমা দিতে হয়। পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, এর মধ্যে না জানার ভান করে অপরাধীকে ছাড় দেয়ার কারসাজি থাকতে পারে। অস্ত্র মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেছেন, ‘অস্ত্র মামলায় জামিন আবেদনকারীর নাম লেখা আছে এস এস গোলাম কিবরিয়া। কিন্তু আদালতের ঐদিনের কার্য তালিকায় নাম ছিল এস এম গোলাম।’ অন্য দিকে জি কে শামীমের আইনজীবী আদালতে বলেছেন, ‘জামিন আদেশের দিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে ছিলেন না। তথ্য গোপন ও নামের ত্রুটির কারণে জামিন হওয়াকে তথ্যাভিজ্ঞ মহল রহস্যপূর্ণ মনে করে।

এই উদাহরণগুলো অতি সাম্প্রতিক। এর অর্থ এই নয় যে, অতীতে এ উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিগত এক যুগ ধরে তারা আদালতকে ‘জী হুজুর’-এর পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন। যতই দিন যাচ্ছে ততই সরকার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে- ‘দুর্নীতিবিরোধী যে অভিযান চলছে। তাতে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’ অথচ মানুষ দেখল, সরকারের দেয়া দুর্নীতির মামলায় জামিন না দেয়ায় জেলা জজকে শাস্তি পেতে হয়। আমরা এ-ও দেখলাম, একজন বড় ধরনের অপরাধী গোপনে জামিন পেয়ে যায়। আর অতি সামান্য ভুলে, অন্তরীণ আছেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা খুন, জখম, গুম, জেল, জুলুম ভোগ করে আসছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে একটি বড় কারাগার। মানবাধিকারের ন্যূনতম চিহ্ন বা নমুনা নেই এখানে। প্রতি বছর বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানবাধিকার সংগঠন এ নিয়ে মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন পেশ করছে দেশে এবং আন্তর্জাতিক মহলে। এসব বিষয়ে অন্যান্য দেশ ও রাষ্ট্রও সোচ্চার। গত ৯ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনেও গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। প্রতি বছর রাষ্ট্রভিত্তিক এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ‘২০১৯ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিভিন্ন অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায়ই রাজনৈতিক সমাবেশ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভিত্তিতে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে স্বেচ্ছাচারী গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। সরকার আটক হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই আটকে রাখে। কখনো সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহের অভিপ্রায় তাদের আটক রাখা হয়। পুলিশ মিথ্যা মামলা করে বিরোধী নেতা-কর্তাদের বিরুদ্ধে। বিচার বিভাগ সম্পর্কে মার্কিন প্রতিবেদন অতি সাম্প্রতিক ঘটনাবলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে : ‘বাংলাদেশের আইন স্বাধীন বিচারব্যবস্থার কথা বলে। কিন্তু দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এই স্বাধীনতা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট, অ্যাটর্নি ও আদালতের কর্মকর্তারা আসামির কাছ থেকে ঘুষ দাবি করেন। আবার রাজনৈতিক প্রভাবে রায় পরিবর্তিত হয়ে যায়।

শাসনব্যবস্থায় বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ করা হয়েছে নাগরিক সাধারণকে শাসন বিভাগের অবৈধ হস্তক্ষেপ ও দলীয় প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাংলাদেশের সংবিধানে বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও দীর্ঘকাল তা প্রায়োগিক মর্যাদা অর্জন করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের চেষ্টায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের প্রয়াস নেয়া হয়। যদিও সে সময়ে বিষয়টি সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, পদক্ষেপগুলো ইতিবাচক ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নেতিবাচক প্রয়োগ ঘটেছে তত্ত্ব ও বাস্তবতায়। মাঝে মধ্যেই সিভিল সোসাইটি ওই সব নেতিবাচক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার সংরক্ষণের পক্ষে পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামগ্রিক ও সমন্বিত আন্দোলন অপরিহার্য।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement