২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইতিহাস অন্ধ নয়

-

বিশ্বের যে জাতি তার ক্ষণজন্মা সন্তানদের শ্রদ্ধা স্মরণ করে না, তারা শুধু অকৃতজ্ঞই নয়, তার এই পরিণতিই হয় যে, সেসব জাতি-সমাজে গুণীদের লালিত হওয়ার পরিবেশ আর থাকে না। এমন বন্ধ্যা সমাজ কোনো মানবগোষ্ঠীর জন্য অবদান রাখতে সক্ষম হয় না। অথচ একজন গুণীর অবদানের কারণেও জনপদের মুখোজ্জ্বল হতে পারে, তারা বিশ্বে সম্মানিত হতে পারেন। তবে এমন বরণীয় ব্যক্তিদের সব সঙ্কীর্ণ রাজনীতি ও গোষ্ঠীচিন্তার ঊর্ধ্বে রাখা নিয়ে কার্পণ্য করা হলে সেটা কেবল অশোভন নয়, ক্ষমার অযোগ্য এবং মূর্খতা। সব কিছু উপেক্ষা করে তাদের অবদানকে উচ্চকিত এবং সে থেকে জাতি কতটা উপকৃত হলো বা হচ্ছে, সেটা পদে পদে স্মরণ করতে পারলেই নিজেরা ধন্য হওয়া যাবে। এমন বোধ-বিবেচনা ও মাপকাঠি সামনে রেখে আমরা যদি বাংলাদেশীদের নিজেদের অবস্থান কোথায় সেটা নির্ণয়ের চেষ্টা করি, তবে যে চিত্র ভেসে উঠবে তাতে লজ্জার আর কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। সঙ্কীর্ণ গোষ্ঠীচিন্তা এবং রাজনৈতিক বিবেচনা আমাদের এতটা আচ্ছন্ন এবং কূপমণ্ডূক করে রেখেছে, যে বলয় অতিক্রম করে বেরিয়ে আসার কোনো প্রয়াস বা শুভবুদ্ধির উদয়ের লক্ষণ নেই। এভাবে ক্ষুদ্র গণ্ডিতে চিন্তাকে আবদ্ধ রাখার কারণে ন্যূনতম কোনো বিষয়েও জাতীয় ঐক্য রচনা সম্ভব হয়ে উঠছে না। কেবল নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়ে ওঠা সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতাদের পক্ষেও এই সঙ্কীর্ণ ধারণা থেকে উঠে আসা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি হচ্ছে, সব ভেদ বিভেদের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করা। কিন্তু দেশে এখন যে মানসিকতা নিয়ে নেতারা বর্ধিত হচ্ছেন তার সাথে রাষ্ট্রীয় নীতিচেতনার সংঘর্ষ ঘটছে প্রতিনিয়ত। আর এই কারণে রাষ্ট্রীয় চেতনাকে উচ্চকিত করা যাচ্ছে না। ফলে স্থান-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে ওঠা, তথা অনুরাগ-বিরাগের প্রশ্রয় না দেয়ার বিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ কারণে নেতারা সমাজে অনৈক্যের বিষবৃক্ষ বপন করছেন। আর এই একচোখা নীতির কারো পক্ষে হিতাহিত জ্ঞান বজায় রেখে সবার জন্য কল্যাণ চিন্তা করা অসম্ভব। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয়- আজ যেভাবে সমাজের বিন্যাস ঘটছে, তাতে সৎ-নিষ্ঠাবান কোনো ব্যক্তির পক্ষে সে পরিবেশ ভেদ করে সামনে এগিয়ে আসা সম্ভব নয়। বস্তুত এসব কর্তৃত্ববাদিতারই নগ্ন চিত্র।

এ লেখার সূচনায় সন্নিবেশিত হয়েছে জাতির কৃতী সন্তানদের কর্ম-সাধনার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার বিষয়টি। আর এ বছরই পূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশের স্থপতি এবং জাতির অবস্মরণীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। আমাদের অকুণ্ঠচিত্তে এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, তার নেতৃত্বেই এই জনপদের স্বাধীনতা এসেছিল। তারপর তার স্বল্পকালীন শাসনামলেই দেশ গঠনের জন্য যে বিরাট কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার আগেই তিনি নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। তাই তাকে উত্তরসূরিদের কাছে আমানত হিসেবে রেখে যেতে হয়েছে তার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গঠনের এক মহাকর্মসূচি। তার আদর্শের উত্তরসূরিরাই এখন ক্ষমতায়। হিসাব করলে দেখা যাবে, বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা এ দেশে এককভাবে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রপরিচালনা করছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই ‘সোনার বাংলায়’ আজো মানুষের জন্য অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-স্বাস্থ্য-শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য ‘সোনার হরিণ’ হয়েই আছে। কোটি মানুষের সমর্থনধন্য আওয়ামী লীগ তার বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীর জন্য আজো সেই স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন রচনা করতে পারেনি। তবে কিছু চতুর সুযোগ সন্ধানী এর মধ্যে নিজেদের ভাগ্যের তরক্কি ঘটাতে কসুর করেছে, এমনও নয়।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর এই বছরটি ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের জন্য দেশে ও বিদেশে নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা অনুভব করেন, তার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য উদ্যোগ আয়োজনের সাথে এমন একটি পর্ব রাখা যেতে পারে যে, বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া উন্নয়ন চিন্তা ও তার আদর্শের কতটা তার উত্তরসূরিরা অনুসরণ করছেন। এর ফলে দেশের মানুষ জানতে পারবে, তারা কতটা যোগ্যতা ও পারঙ্গমতার সাথে নেতার চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। নিছক রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার নয়, বরং আদর্শের সফল বাস্তবায়ন করা হলেই তার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে। এখানে আরো একটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া উচিত যে, বঙ্গবন্ধুকে যেন কেবল আওয়ামী লীগের সম্পদ হিসেবেই গণ্য করা না হয়। তার অনুসারীদের সেই মহান নেতাকে সর্বজনীন করার জন্য তাদের বোধ-বিবেচনা, আচার-আচরণে অনেক কিছু সংযোজন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিধিবিধান আরোপ করে কারো প্রতি শ্রদ্ধা আদায় করা যায় না। যাকে নিয়ে কথা বলছি তার মহত্ত্বের কোনো শেষ নেই। কিন্তু এখন যারা এটা তুলে ধরবেন, তাদেরও তেমন উদার ও মহৎ হওয়ার দীক্ষা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নীতি হবে ‘দেবে আর নেবে’। অর্থাৎ শুধু নেয়া নয়, কিছু বিনিময় করতে হবে। বলতে দ্বিধা নেই, এমন নীতি অনুসরণের ব্যাপারে বর্তমান আওয়ামী লীগের চিন্তাচেতনা থেকে কিছু অনুধাবন করা যায় না।

বঙ্গবন্ধু সরকারের একটি বড় অবদান ছিল, স্বাধীনতার পর স্বল্পসময়ের মধ্যেই জাতিকে একটি চমৎকার সংবিধান উপহার দেয়া। দেশের সে সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র’, অর্থাৎ গণতন্ত্র এই দেশের সঞ্জীবনী হিসেবে শক্তি সঞ্চারিত হবে। এর সাথে আরো বলা হয়েছে, ‘যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’ বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র তার প্রধান আইন গ্রন্থকে কেবল শ্রদ্ধা করে ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে রাখে না; বরং তা প্রতিদিনের কার্যসম্পাদনে নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটে না। এর ফলে সংবিধান শুধু তার বাস্তবরূপ পায় না, রাষ্ট্রের যে শৃঙ্খলা বিধানের জন্য তা রচিত হয়েছে, সেটা বাস্তবে রূপ লাভ করে। তাই কারো প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা কিংবা কারো প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন ঘটে না। আধুনিক রাষ্ট্রের তিনটি ‘ডানা’, নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ- সংবিধানে বর্ণিত ভারসাম্য রক্ষা করে চালিত হয় বলে সেখানে এক অপূর্ব সমন্বয় ও সামঞ্জস্য বজায় থাকে। অর্থাৎ কেউ কোথাও তার সীমা লঙ্ঘন করে না বা কারো কোনো কর্তৃত্ব ও লক্ষ করা যায় না। এমন সব শৃঙ্খলাবদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর পক্ষেই জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। যেসব দেশ সেভাবে নিজেকে বিন্যস্ত করতে পারেনি, সেখানে দ্বন্দ্ব, বিবাদ, জরা, ক্ষুধা আর দারিদ্র্য তাদের ঘিরে আছে। মানুষের জীবন তাই সেখানে দুর্বিষহ।

এই প্রেক্ষাপটের বিচারে সাব্যস্ত হবে, বাংলাদেশ আসলে সেভাবে নিজেকে বিন্যস্ত করতে পারেনি। তাই বলতে শোনা যায়, দেশের উন্নয়নচিন্তায় জনসাধারণের ভোগান্তির ব্যাপারটি সন্নিবেশিত হয়নি। এর ফলে গুরুত্ব পায়নি সম্পদের সমবণ্টনের বিষয়টি। সেজন্য নানা পরিসংখ্যান থেকে অবহিত হওয়া গেছে যে, এ দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বিপুল; পক্ষান্তরে প্রতি বছর সম্পদশালীদের সংখ্যা এবং সম্পদের পরিমাণ স্ফীত হচ্ছে। কিন্তু দারিদ্র্য সেভাবে মোচন করা হচ্ছে না।

যে গণতন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ এতকাল পরে সেটা অনেকটা পূর্ণতা পাওয়ার কথা ছিল, আশা ছিল গণতন্ত্র প্রতিটি প্রাণে অধিকারপ্রাপ্তির সৌন্দর্যে শোভিত হবে। কিন্তু অনুতাপ নিয়ে বলতে হয়, সে আশা এখন মরীচিকার মতো মিলিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের যে মূলমন্ত্র মানুষের ভয় ভীতিহীনভাবে নিজ মত প্রকাশের অধিকার এবং স্বীয় মত পথ ও পছন্দের বাধাহীন প্রকাশ ও প্রয়োগ- তার সব কিছুই যেন এখন রুদ্ধ হওয়ার পথে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। গণতন্ত্রের যে মুক্ত অনুশীলন, তা এখন শুদ্ধ নয় শত প্রশ্নে বিদ্ধ। শ্রদ্ধা, সহিষ্ণুতা আর সম্বিবেচনা- এসব হচ্ছে গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ক্ষমতাসীনদের এক নেতা স্বীকার করেছেন আমাদের দেশের রাজনীতিতে এখন সৌজন্যের বালাই নেই। এমন বাস্তবতাকে স্বীকার করতে হবে এবং যারা এই ঘাটতির বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন তারা রাজনীতিক হিসেবে এই দায় থেকে মুক্ত হতে পারবেন না। বরং এটিই সঙ্গত হবে যে, নিজে সেটা অনুশীলন করে অন্যের জন্য উদাহরণ হিসেবে পেশ করবেন। সব বিবেচনার ক্ষেত্রে গণমানুষের অভিমতকে প্রাধান্য দেয়াই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি। যেসব প্রক্রিয়া পদ্ধতির মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক অভিমত অনুধাবন করা যাবে এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখালে সরকারের সাথে সাধারণ মানুষের মেলবন্ধন ঘটবে, আজকে সেখানে যোজন যোজন দূরত্ব বিরাজ করছে। ফলে প্রশাসনে এখন আর সবার অংশীদারিত্ব ঘটছে মনে করার কারণ নেই।

বঙ্গবন্ধু মুজিবের শাসনামলে তার সরকারের অন্যতম প্রতিপক্ষ ছিল সর্বজন শ্রদ্ধেয় অশীতিপর নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ (ভাসানী) এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। সে সময় এই দুই দল ছাড়াও অন্য দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে অবাধে। কোনো বাধাবিপত্তির সম্মুখীন তাদের হতে হয়নি। আজো সেই আওয়ামী লীগই ক্ষমতায়। তবে তখন যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল সে সরকারের প্রাথমিক অবস্থায়, আজ আর সেই পরিবেশ নেই। এখন সরকারের প্রতিপক্ষদের কাছ থেকে এ নিয়ে আপত্তি অভিযোগ করা হচ্ছে অহরহ। ১৯৭৩ সালে প্রবর্তিত সংবিধানে যে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছিল, সংবিধানে আজো সেই বিধিবিধান হুবহু বহাল রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগে নানা প্রতিবন্ধকতা; বিশেষ করে জনগণের ভোটাধিকারের যে নিশ্চয়তা ছিল তার অনুশীলন এখন কিভাবে কতটা হচ্ছে তা সবার কাছেই পরিষ্কার। এ নিয়ে শুধু দেশের ভেতর ওজর আপত্তি নেই। একেবারে হালে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অনুশীলন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে। এই লেখা যখন লিখছি তখন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হচ্ছে। সে নির্বাচন কেমন হবে তা আগে থেকে বলা না গেলেও অনিয়মের আশঙ্কা ছিলোই। বিশেষত নির্বাচন পরিচালনার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে জনসাধারণ থেকে সুশীল সমাজ পর্যন্ত গভীর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

সরকার দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের কর্মসূচি তখনই সফল হবে যখন সেখানে গণতন্ত্র বিদ্যমান থাকে। উন্নয়ন আর গণতন্ত্রকে পাশাপাশি থাকতে হয়। কেননা গণতান্ত্রিক সমাজের অন্যতম শর্ত হচ্ছে জবাবদিহিতা। আর উন্নয়নের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয় তাতে দুর্নীতির সম্ভাবনা এ দেশে থাকে শতভাগ। গণতন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আজ দেশে জবাবদিহিতা নেই বলে, দুর্নীতি সর্বত্রই প্লাবনের সৃষ্টি করেছে। জবাবদিহি করার যে প্রতিষ্ঠান তথা জাতীয় সংসদ, অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতির অবয়ব যেন অক্টোপাসে রূপ নিয়েছে। এর শত হাত সমাজ ও রাষ্ট্রে নীতি নৈতিকতা এবং সততাকে গিলে ফেলছে।

বঙ্গবন্ধুসহ এ দেশের স্মরণীয় নেতারা এই জনপদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর ইতিহাসে অন্ধত্বের কোনো স্থান নেই। যত ঘটনার সাথে যার যতটুকু সম্পর্ক, সেটুকু সত্য আর সেটাই ইতিহাসের অংশ। ইতিহাস কাউকে উপেক্ষা করে না। কাউকে নিচে নামানোর অভ্যাস যাদের, তারা মিথ্যাচার করে থাকেন। সেটা শতবার উচ্চারিত হলেও তা কখনো ইতিহাসের অংশ হতে পারে না। ইতিহাসে নেই অনুরাগ বিরাগের স্থান। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অকারণ অনুরাগ হচ্ছে বাহুল্য। আর অকারণ বিরাগ হচ্ছে নির্মমতা। আজ আমরা এমন সঙ্কট নিয়েই চলছি। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কোনো বিষয় নিয়ে বিকৃত ব্যাখ্যা দেয়া হলে তাতে ইতিহাসের কিছু আসে যায় না। কিন্তু বিকৃতির যাতনায় একসময় না একসময় বিকৃতিকারীরা দগ্ধ হবেন। ইতিহাসের এমন ভুল ব্যাখ্যার পরিণতি হচ্ছে দ্বিধাবিভক্তি আর অসহিষ্ণুতা। তা আমাদের জাতিকে এখন বিভক্ত নির্বীর্য হীনবল করে ফেলেছে। শুভেচ্ছা ও সহমর্মিতার অর্থ আমাদের খুঁজে দেখতে হবে। সে চেতনায় আমাদের নিজেদের পরিশুদ্ধ করে তুলতে হবে। এই শুদ্ধি অভিযানে সবাইকে এক সারিতে অংশ নিতে হবে। তবে যাদের হাতে আজ দেশের নেতৃত্ব কর্তৃত্ব, তাদের প্রথম এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া জরুরি। কেননা ‘নিজে আচরি ধর্ম অপরে শিখাও’ এটাই হচ্ছে ন্যায়নীতি। মুজিববর্ষ পালনের এই মুহূর্তে ঐক্যের মন্ত্রে জাতিকে বেঁধে নিতে পারলে আসতে পারে সাফল্য।

ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement