২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আলজেরিয়া : কঠিন পথ চলা

-

আলজেরিয়া সম্পদশালী দেশ, কিন্তু জনগণ দরিদ্র। অনেক কিছুই আছে, দৃশ্যত কিছুই নেই। দেশটি বিশ্বের চতুর্থ গ্যাস রফতানিকারক এবং তেল উৎপাদনে দশম স্থানে। বিশ্ব জিডিপির হিসাবে ৩৬তম। তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় দেশটি অর্থনৈতিক সমস্যয় পড়ে। তেল উৎপাদন ও হাইড্রোকাবর্নের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল আলজেরিয়া। সবকিছু থাকা সত্ত্বেও দেশটি অসহায়, দরিদ্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে আলজেরিয়া মধ্যম আয়ের দেশ।

সংবিধান দিয়েই আলজেরিয়া নিয়ন্ত্রিত। ২ ধারা মতে, ইসলাম আলজেরিয়ার রাষ্ট্রধর্ম। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ৩৬ ধারা মতে, ধর্মীয় বিশ্বাস উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। মুসলমানদের ৯৯ শতাংশ সুন্নি মুসলমান, মালেকি মাজহাবের অনুসারী অনেক। জনসংখ্যর মধ্যে খ্রিষ্টান, ইহুদি, আহমদিয়া, শিয়া ও ইবাদি মুসলমানও রয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেও শরিয়াহ আদালত বলে কিছু নেই। মসজিদের সংখ্যা ১৬ হাজারের মতো। স্বাধীনতার পর বা ১৯৬২ সালের পর ৯০ শতাংশ মসজিদ তৈরি হয়।

বিক্ষোভ চলছে বহুদিন ধরে। জনগণ বিক্ষোভ করে তেমন একটা সুফল পায়নি, দিনে দিনে মানুষের দাবিও বাড়তে থাকে। সামরিক প্রশাসন যেন গণবিক্ষোভকে আর সামাল দিতে পারছে না। যেমন- নির্বাচন, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ। এক্ষণে নতুন করে যোগ হয়েছে বিক্ষোভের কারণে ধৃত নেতাদের ছেড়ে দেয়া, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাধর ভাই সাঈদ বুতাফ্লেকাকে অপসারণ করা; বিক্ষোভকারীরা এর মধ্যে জেনে গেছে, এই ভাই প্রেসিডেন্টের স্ট্রোক হওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে প্রশাসনের কলকাঠি নাড়ছিলেন।

স্বাধীনতার পরপর ন্যাশনাল ইন্ডিপেনডেন্ট ফ্রন্ট, এফএলএন গঠিত হয়েছিল। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক হিসেবে এটিই একমাত্র দল। সবাই দলে আসতে পারত, একটি উন্মুক্ত দল বিধায় কোনো ইজম এখানে কাজ করত না। তিন বছর পর এই দল সামরিক ক্যু প্রত্যক্ষ করল। প্রেসিডেন্ট বেন বাল্লা প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুয়ারি বুমেদিন কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত ও বন্দী হন।

নতুন প্রজন্ম ন্যাশনাল ইন্ডিপেনডেন্ট ফ্রন্ট দেখেই বড় হয়েছে। তাদের মগজে এই রথে চড়ার স্বপ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট থেকে স্থানীয় সব নির্বাচনে এক পার্টির আমেজই কাজ করেছে বহু বছর। ফলে আলজেরিয়ার রাজনীতি ও প্রশাসনে ভয়ঙ্কর দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির খেলা চরমে ওঠে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে রাজনীতির নেতারা ও এলিট শ্রেণী বছরের পর বছর জনমানুষের মনে জমে ওঠা অসন্তোষকে সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারেনি। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম যাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ ও ফরাসিদের দাপটের অভিজ্ঞতা নেই, তারা ক্ষমতাসীনদের দাপট সহ্য করতে পারছে না। ফলে নতুনরা বেশি ফুঁসে উঠতে থাকে। দাবি-দাওয়াতে আরো যোগ হতে থাকে সেনাবাহিনীর ব্যারাকে ফিরে যাওয়া, পুরো রাজনৈতিক কাঠামো ও প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন সিস্টেম চালু করা।

যেভাবেই নিরীক্ষা করা হোক না কেন, জনগণের দাবি-দাওয়ার বিক্ষোভ ব্যর্থ হয়েছে। মূলের কাজ কিছু হয়নি। কোনো নেতৃত্ব এগিয়ে আসতে পারেনি নতুন আলজেরিয়া গঠন করার দিকনির্দেশনা নিয়ে। সুদানের জনগণ এদিকে দিয়ে এগিয়ে, আলজেরিয়া সেখান থেকেও কিছু শিক্ষা নিতে পারল না।

এখন সমস্যা হলো- বর্তমান সরকার কী দিতে চায় ও জনগণ কী পেতে চায়। বুতাফ্লেকা পদত্যাগের আগে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও নামকরা ডিপ্লোম্যাট লাখদার ব্রাহিমিকে নিয়োগ দেন। তার আলাপ-আলোচনা করে সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা চালানোর কথা। তবে এই প্রচেষ্টা শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায়, জনগণ সরকারের পুরো ’গ্যাঙ’কে প্রত্যাখ্যান করে।

সর্বশেষ আবদেল কাদের বেন সালাহ চলতি ১২ ডিসেম্বর নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে কাজ শুরু করবে, সবাই আশা করছে বিক্ষোভ বন্ধ হয়ে যাবে। জুলাইয়ের নির্বাচন তিনি বাতিল করেন উপযুক্ত প্রার্থী না থাকার কারণে। এদিকে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে, প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছে, সেনাবাহিনী কঠোর ও কঠিনতর হচ্ছে। জনগণ আর্মি চিফ অব স্টাফ জেনারেল আহমদ গায়িদ সালাহকে পথ দেখতে বলেছে। ১৯৯০ সালে যখন নির্বাচনে ইসলামপন্থী ‘ফিস’ ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট বিজয়ী হয়, তখন নির্বাচন বাতিল করে সেনাবাহিনী। ফলে দীর্ঘদিন দাঙ্গা চলতে থাকে। ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হলেও বাস্তবে সেক্যুলারিজম কাজ করছে।

অন্তর্বর্তী সরকার এখন গণমানুষের আস্থা অর্জন করার জন্য দুজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জেলে ঢুকিয়েছে, সাথে আছে আরো আট মন্ত্রী, দুই জন ইন্টেলিজেন্স চিফ, বড় বড় ব্যবসায়ী ও পার্টি লিডার। অথচ বিক্ষোভ প্রতিদিনের মতো চলছে।

আলজেরিয়ার গণবিক্ষোভ কোন দিকে মোড় নেয় বলা কঠিন। রাজনৈতিক নেতা ও দল কোনো দিকনির্দেশনা দিয়ে জনগণের বিক্ষোভকে পথপ্রদর্শন করতে পারেনি। জনগণও বাস্তব কিছু অর্জন করতে পারেনি। ২২ ফেব্রুয়ারি জনগণ যখন রাস্তায় নেমে আসে- একটি মাত্র দাবি ছিল নির্বাচন। এরপর ৮২ বছর বয়স্ক প্রেসিডেন্ট আবদুল আজিজ বুতাফ্লিকা পঞ্চম মেয়াদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে বুতাফ্লিকা পদত্যাগ করেন। যতই দিন গড়াচ্ছে আরো দাবি দাওয়া যুক্ত হয়ে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠছে আলজেরিয়া। এখন রাজনৈতিক বিক্ষোভকারীদের সাথে যুক্ত হয়েছে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রার্থীর আবেদন বাতিল করায় ও অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় ৪ জুলাই নির্ধারিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে। অন্তর্র্বর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সাবেক স্পিকার আবদুল কাদের বেন সালাহ। তার ৯ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের কথা।

গণবিক্ষোভের পর প্রেসিডেন্ট বুতাফ্লিকা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেন। গণভোটের জন্য জনগণের কাছে নতুন একটি সংবিধান উপস্থাপন করার কথা। এ ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী আহমদ ওউহিয়া পদত্যাগ করেন। নতুন তারিখ ছাড়া নির্বাচন বাতিল করে সাংবিধানিক আইন লঙ্ঘনে মানুষ আরো অসহিষ্ণু হয়ে গেছে।

এখন সেনাবাহিনী দেশ শাসন করছে। জনগণ বলছে, অর্ধমৃত বুতাফ্লিকাকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী দেশ শাসন করছে। দেশবাসী জনগণের শাসন চায়। আলজেরিয়ার সেনাবাহিনী ১৯৬০ সালে ফরাসি সেনাদের সাথে যুদ্ধ করে ফ্রেঞ্চ কলোনি থেকে দেশকে মুক্ত করেছে, ১৯৭০ সালে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অংশ নিয়েছে। ১৯৮০ সালে সার্বভৌম বিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৯০ সালে সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য যুদ্ধ করেছে। একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর বিভিন্ন সিভিলিয়ান দল ক্ষমতার জন্য মারামারি করলে সেনাবাহিনী বিরোধ মিঠিয়ে দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যায়। কিন্তু ১৯৮৮, ১৯৯২ সালে পুরো ‘ব্লাক দশক’ ধরে কয়েকটি ইসলামী শক্তির সাথে যুদ্ধ বাধলে দেশে সত্যিকারভাবে বিপদ নেমে আসে। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সামাজিক অস্থিরতা চলতে থাকে। ১৯৯৯ সালে বুতাফ্লিকা ক্ষমতায় আসেন, তিনি সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘ইমমিউনিটি’ ঘোষণা দেন, সেনাবাহিনীর সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেন ও প্রচুর বাজেট দেন।

এ বছরের শুরুতে আন্দোলন শুরু হলে সেনাবাহিনী রাজনীতির মঞ্চে উঠে আসে এবং সরাসরি ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। সেনাবাহিনী ১০২ ধারা বলে সাংবিধানিক কাউন্সিলকে প্রেসিডেন্টের পদ শূন্য ঘোষণায় বাধ্য করে এবং বুতাফ্লিকাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। মধ্যবর্তী প্রেসিডেন্টকে দিয়ে ডজন খানেক রাজনীতিবিদ ও ধনকুবের গ্রেফতার করে দুর্নীতির অভিযোগে ফরমায়েশি আদালতে বিচার চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী বলছে তাদের এহেন কাজের জন্য আলজেরীয়দের সেনাবাহিনীকে ‘কৃতজ্ঞতা’ জানানো উচিত। জনতার আন্দোলনে আওয়াজ ওঠে ‘জনতার রাজা চাই। সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে দেখতে চাই।’ কিন্তু সেনাবাহিনী এখন আগের চেয়েও শক্ত এবং গত চার মাস ধরে তাদের কথায় দেশ চলছে।

ক্ষমতার জন্য সেনাবাহিনী দৃঢ়পদে দাঁড়িয়ে। ইতোমধ্যে বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দিয়ে, হাউজিংয়ের ব্যবস্থা করে, সবাইকে অনুগত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সেনা অফিসারদের পরিবারের সদস্যরা এখন হাসিমুখ নিয়ে মলে বাজার করেন ও ঘুরে বেড়ান। যা ছয় মাস আগেও দেখা যায়নি। সেনাবাহিনী বেসামরিক সরকার গঠনে মত দিতে পারে যদি তারা আগের মতো গুলি, গ্রেফতার ইত্যাদি বিষয়ে ইমিউনিটি পায়, কোনো প্রকার মামলা ও চাকরিচ্যুতি না হয় তবে তারা এই পথে চলতে পারে। একই সাথে বাজেট অ্যালোকেশন, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, কেরিয়ার প্লানিং, অবসর, অবসরোত্তর সুযোগ-সুবিধা ও সম্পৃক্ততাকে যুক্ত করার নিশ্চয়তা ইত্যাদি প্রদান করতে হবে। এসব ছাড়াও জেনারেলদের বড় বড় ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করে ধনশালী থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এখন রাজনীতিবিদরা চিন্তা করছেন, কিভাবে একটি কার্যকর ‘সিভিল মিলিটারি’ জোট তৈরি করে রাজনীতির ময়দানে উপস্থাপন করা যায়। এই জোটে উভয়ের আচরণসীমা কেমন হবে তা নির্ধারিত করা দরকার। তবে অনেকে মনে করছেন, পর্দার আড়ালে থেকে বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে পরিচালনার দিন শেষ হয়ে গেছে। আন্দোলনকারীরা এসব সুবিধাবাদীদের নাম-ঠিকানা এরই মধ্যে প্রকাশ করে দিয়েছে। তবে সেনাবাহিনী এখন যা চাচ্ছে তা সম্ভব নয়। তবে পরিপূর্ণ সামরিক শাসন জারি করে আন্দোলন ঠেকানো যেতে পারে। সেনাবাহিনীর চাওয়া পূরণ হলে বেসামরিক পদস্থ কর্তারাও তা চাইবেন, তাহলে দেশে সরকার প্রদত্ত সুবিধাভোগী ও নিঃস্বশ্রেণী সৃষ্টি হলে এই ধারার বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে।

সেনাবাহিনী বিচার বিভাগকে ফরমায়েশি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চায়। বহু বিচারক ও আইনজীবী বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন, সেনাবাহিনীর ক্ষমতায়নের বিরোধিতা করেছেন। দেশ রক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রশাসনের সাথে বিচার বিভাগের ভূমিকা কী হবে তাও খতিয়ে দেখতে চায়। সামরিক শাসন জারি করা না হলেও সামরিক আদালতও সমান্তরালে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে বুতাফ্লিকার ভাই সাইদ ও দুজন শীর্ষ স্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার সামরিক আদালতে বিচার হচ্ছে। এভাবে দেশের বিচারব্যবস্থায় সেনাবাহিনী পিন ঢুকিয়ে দিয়েছে, যে কারণে সবাই ভীতসন্ত্রস্ত। এভাবে জনগণের আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অ্যামনেস্টি বলেছে, এ পর্যন্ত ৪১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে সামরিক আদালতে বিচার করা হচ্ছে, পরিণতি কী তা বোঝা যায়। কয়েকজনকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ, সেদিন নামকরা নেতা করিম তাবৌকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উপযুক্ত এবং মানসম্পন্ন দল না থাকায় সেনাবাহিনী রাজনীতিতে প্রবিষ্ট হতে পারছে না আবার মার্শাল ল’ও দিতে পারছে না।

মাসাধিকাল হলো আলজেরিয়ার জনগণ ‘পলিটিকাল এলিট’ ও ‘সিস্টেমের’ বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। বিক্ষোভের নতুন উপাদান। নতুন নির্বাচনের তারিখ প্রদানকে অনেকেই মনে করছেন এমন একজন প্রেসিডেন্ট আসছেন, যিনি সেনাবাহিনীর ক্রীড়নক হবেন। নির্বাচনের তারিখ দিলেই হচ্ছে না, বুঝতে হবে- আন্দোলন বন্ধ হচ্ছে কি না। নতুবা নির্বাচনের নিরাপত্তা ইস্যু কিভাবে মোকাবেলা করা হবে? তা ছাড়া অনেক মেয়র ও বিচারক নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতে অস্বীকার করেছেন। তাই ‘ফ্রি’ ও ‘ফেয়ার’ নির্বাচন আশা করা যাচ্ছে না। এমন হলে, গণ-আন্দোলন চলতেই থাকবে। নির্বাচনে এমন অনীহা চললে আলজেরিয়ার ভবিষ্যৎ কী? দেশের সেনা নেতৃত্বে আইনগত অনেক বাধা ও সমস্যা রয়ে গেছে। সেনারা তাই চাইছে একটি নির্বাচন দিয়ে গণরোষ বন্ধ করতে। কিন্তু জনগণ দাবার ছকে সাজানো নির্বাচন চায় না।

রাশিয়া নতুন আন্দোলনের পক্ষে নয়, পুরনো ‘রিজিম’ তাদের পছন্দ। রাশিয়ার পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মারিয়া জাখারভের বক্তব্যে এমনই প্রতিভাত হয়েছে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, আলজেরিয়া রাশিয়ার অস্ত্র-গোলাবারুদের ওপর নির্ভরশীল। রাশিয়াও তাই চায়। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আলজেরিয়ার ৬৬ শতাংশ অস্ত্রের জোগান দিয়েছে। আলজেরিয়া আফ্রিকায় রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রেতা। রাশিয়ার জায়েন্ট কোম্পানি Gazprom ও Transneft আলজেরিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হাইড্রোকার্বন Sonatrach কোম্পানির সাথে কাজ করে। তা ছাড়া রাশিয়ার লাডা অটোমোবাইলসও আলজেরিয়ায় কাজ করার কথা। রাশিয়া চায় অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখা এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, কে আলজেরিয়া শাসন করছে সেটা বড় কিছু নয়। ‘সিরিয়া টাইপ’ কিছু হলে রাশিয়া বেশি উপকৃত হবে মনে করে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গণরোষ ফুঁসে ওঠে- যখন বুতাফ্লিকা পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন, তখন রাশিয়ার সমালোচকরা বলেছিলেন, এটা আরববসন্তের অনুরূপ কোনো বিক্ষোভ হচ্ছে না। যেখানে হোসনি মোবারকের মতো শাসকের পতন হয়েছিল ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। রাশিয়া মনে করে- আন্দোলন সফল হলে, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, আলজেরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত হবে, যুক্তরাষ্ট্র গণবিক্ষোভকে সমর্থন দিয়েছে। তবে বিক্ষোভের এই চাপাচাপিতে ইসলামী দল মঞ্চের সম্মুখভাগে এসে যেতে পারে। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমানও আলজেরিয়ার বিক্ষোভ-নিউজ মিডিয়ায় বেশি প্রচার না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিক্ষোভের সফলতা নিয়ে আশাপ্রদ কিছু নেই।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement