২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ধর্ম নিয়ে কটূক্তির বিকৃত প্রবণতা

-

ভোলার বোরহানউদ্দিনে ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির জের ধরে পুলিশের গুলিতে চারজনের প্রাণ হারানোর ঘটনায় দেশ এখন উত্তপ্ত ও প্রতিবাদমুখর। তদন্ত শুরু হয়েছে; তবে পুলিশের তদন্ত যথেষ্ট নয়। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা গেলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসার কথা। তখন জানা যেত আসলে আইডি হ্যাক হয়েছিল কি না? কারা আর পেছনে সক্রিয়? আন্দোলনরত জনতার প্রতি পুলিশ গুলি না ছুড়ে, কাঁদানে গ্যাস বা ফাঁকা গুলি ছুড়ে বা অন্য কোনো উপায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যেত কি না- এটাও খতিয়ে দেখতে হবে। তদন্ত শেষে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

যেনতেন প্রকারের তদন্ত বা ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার প্রয়াস এহেন ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে উৎসাহ জোগাবে। নিকট অতীতে কক্সবাজারের রামু ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ধর্মীয় সহিংস ঘটনার বিচার হয়নি। দেশে ধর্ম অবমাননার শাস্তির জন্য আইন (অপর্যাপ্ত) আছে ঠিকই তবে, এর বাস্তবায়ন সচরাচর নজরে আসে না। পুলিশি হেফাজত এবং কিছু দিন কারাভোগের খবরই আমরা পাই। আইনের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ থাকলে অপরাধীরা কিছুটা হলেও নিবৃত্ত হতো।

অনলাইনে আল্লাহ, রাসূল সা:, ইসলাম, উম্মাহাতুল মুমিনিন এবং সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কটূক্তি এবং ধর্মানুভূতিতে আঘাতের ঘটনা আবার বেড়ে যাচ্ছে। কিছু দিন পরপর অনলাইনে রাসূল সা:কে অবমাননার ব্যাপারটি বড় কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হয়। দেশকে অস্থিতিশীল এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করা এদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।

আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, হজরত মুহাম্মদ সা:কে ব্যঙ্গ, কটূক্তি ও উপহাস করে বক্তব্য প্রদান, নাটক প্রচার ও ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান পর্দার বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। ইসলাম ও মহানবী সা:, ওলামায়ে কেরাম, মাদরাসা, ইসলামী ঐতিহ্য-সভ্যতা ও নির্দশন নিয়ে যেভাবে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ শুরু হয়েছে তাতে দেশের সাধারণ জনগণ শঙ্কিত। এসব কথা যারা বলে ও বিশ্বাস করে, তারা চরম সাম্প্রদায়িক, আজন্ম অন্ধ ও সাঙ্ঘাতিক কপট। যুগে যুগে ধর্মাশ্রিত মনীষীরা এদের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন। সাম্প্রদায়িকতাদুষ্ট এ অসুস্থ প্রবণতা রোধ করা না গেলে আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সম্প্রীতির পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে সংসদে আইন প্রণয়ন করে ধর্মাবমাননা বন্ধ করা আশু প্রয়োজন। ১৬ কোটি মুসলমানের প্রিয় মাতৃভূমিতে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর শানে যারা বারবার বেয়াদবি করে যাচ্ছে, তাদের যদি আমরা বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে ব্যর্থ হই, তাহলে জাতির ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ব্যাপক গজব ও ভয়াবহ শাস্তি নেমে আসতে পারে। কোনো দুর্ভাগা ব্যক্তি যখন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলের সাথে ঠাট্টা, মশকারা ও উপহাস করে তখন সেই অকৃতজ্ঞ ও বেয়াদবকে শাস্তি দিতে আল্লাহ তায়ালা বিলম্ব করেন না। ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। যে দেশে জনপ্রিয় জাতীয় কোনো রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করলে জেলে যেতে হয়, দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়; সে দেশে মহামানব হজরত মুহাম্মদ সা:কে নিয়ে কটূক্তি করে পার পেয়ে যাবে, সেটা হতে পারে না।

বহুদিন ধরে একশ্রেণীর সংবাদপত্র আলেম-ওলামাদের ব্যঙ্গচিত্রসহ কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে পীর-মাশায়েখকে এবং আহত করা হচ্ছে ধর্মীয় মূল্যবোধকে। কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একজন শিক্ষক, সাম্প্রদায়িক একটি জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে এ দেশের মুসলমানদের দাড়ি-টুপি-মিসওয়াক ও আলেমদের নিয়ে বিদ্রƒপাত্মক কার্টুন এঁকেছেন অনেক দিন। এগুলো এ দেশের মুসলমানদের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সংস্কৃতির বাহন। যেমন ধুতি-টিকি-ত্রিশুল-শঙ্খবালা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এবং ক্রুশ ও ক্রিসমাস ট্রি খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় সংস্কৃতি। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির পথে বড় বাধা। বহু দাড়ি-টুপি-মিসওয়াকধারী মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কোনো মানুষ দাড়ি-টুপি রাখলেই রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী হয় না। একজন শিল্পী ছবি আঁকবেন; কিন্তু কোনো ধর্ম বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে যেন বিদ্রƒপ করা না হয়। ভারতের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হোসেন সরস্বতী দেবীর ছবি এঁকেছিলেন শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।

কট্টর সাম্প্রদায়িক বজরং দল এবং আরএসএস-এর উগ্র সাম্প্রদায়িক কর্মীরা তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল ফিদা হোসেন দেবীকে ‘যৌন অবেদনময়ী’ রূপে চিত্রায়িত করেছেন। বিজ্ঞ আদালত রায় দিলেন, মকবুল ফিদা হোসেনের চিত্রটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত বিবরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারপরও এ গুণী শিল্পীর প্রতি প্রাণনাশের হুমকি আসতে থাকে। অবশেষে তিনি প্রিয় মাতৃভূমি ভারত ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন এবং ওখানেই তার মৃত্যু ঘটে। বিদেশের মাটিতেই তাকে সমাহিত হতে হয়েছে। পাঠক চিন্তা করে দেখুন, বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী কত উদার, সহনশীল ও অসাম্প্রদায়িক।

চিন্তার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিবেকের স্বাধীনতা সুশীলসমাজের ও সভ্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এগুলো ব্যক্তির সহজাত অধিকার। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ কিন্তু অন্য ধর্ম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের প্রতি অসম্মান ও বিষোদগার নয়। পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতাদর্শ এক নয়। নিজ নিজ ধর্মের প্রচার ও যৌক্তিকতা ভিন্ন মতাবলম্বীদের নিকট তুলে ধরা কোনো দোষ হতে পারে না। যৌক্তিক ও বাস্তব মনে না হলে সে মতাদর্শ গ্রহণ না করার অধিকার সবার আছে। তবে অপরের লালিত বিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করার হীনপ্রচেষ্টা অপরাধ নিঃসন্দেহে; আরো বিশেষভাবে বলতে গেলে তা সন্ত্রাস। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে এ ধরনের অপপ্রয়াস মৌলিক মানবীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী। এ দেশেও কিছু লোক মারাত্মক সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষপরায়ণ মনোভাবস¤পন্ন। ইসলাম ও মুসলমানের নাম শুনলে তাদের যেন গায়ে জ্বালা ধরে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিছু দুর্বৃত্তের কারণে এ সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেয়া যায় না।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হিন্দু ধর্ম, ধর্মীয় গুরু বা শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্ম, ধর্মীয় গুরু নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয় না, সমালোচনা করা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম, মহানবী সা: ও ধর্মীয় নেতাদের ব্যঙ্গ ও উপহাস করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বিদেশী কোনো অপশক্তির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কিছু লোক কুশীলবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন কি না, এটাও তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। দুনিয়াজুড়ে মুসলমানদের অব্যাহত আগ্রযাত্রার খবরে ঈমানদাররা যে হারে উৎসাহিত হন, তার শতগুণ বেশি বিক্ষুদ্ধ ও ক্রোধান্বিত হয় সাম্প্রদায়িক, উগ্রবাদী ও বিদ্বেষপরায়ণ ব্যক্তিরা।

এ দেশে প্রতিটি মানুষের ধর্ম অবলম্বন, পালন, প্রচার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সাংবিধানিক স্বাধীনতা ও অধিকার রয়েছে (বাংলাদেশ সংবিধান, ৩য় ভাগ, ৪১(১), (ক খ), পৃ. ১২)। যার কোনোটির যথাযথ প্রতিকার না হওয়ায় এই অশুভ প্রবণতা বিনা বাধায় চলে আসছে। ধর্ম, ধর্মীয় নেতা ও ধর্মগ্রন্থ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য ও মন্তব্য প্রকাশ অব্যাহত থাকলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে; জনগণ বিক্ষুব্ধ হবে। কেবল ইসলাম নয়, সব ধর্মের ব্যাপারে এ কথা সমান প্রযোজ্য। বোরকা ও টুপি পরিধান করে, দাড়ি রেখে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করার সুযোগ স্বাভাবিকভাবেই থাকতে হবে। ‘ড্রেসকোড’ নামে এগুলো বন্ধ করা অন্যায় কোনো কোনো নামাজি শিক্ষার্থীকে বিশেষ কোনো দলের কর্মীর তকমা লাগিয়ে হেনস্তা করার ঘটনা অনভিপ্রেত। প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব কেন? ইসলামের বিধিবিধান অনুসরণের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বাধা এবং উসকানি গ্রহণযোগ্য নয় এবং এসব অপতৎপরতা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি পঞ্চদশ অধ্যায়ের ২৯৫ ও ২৯৫/এ ধারায় ইচ্ছাকৃতভাবে কথা, লেখা ও আচরণের মাধ্যমে ধর্ম ও ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত কিংবা আহত করার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে।

মন্দির, বাড়িঘর, সহায়-স¤পদে হামলা ও অগ্নিসংযোগ ইসলাম কোনো দিন অনুমোদন করে না। অতিরিক্ত আবেগে যে আগুন জ্বলে তা নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে, সে আগুনের তেজ কমে এলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধ্বংসযজ্ঞের উন্মত্ততা। ইসলাম এমন এক সার্বজনীন জীবনাদর্শ যেখানে সব মত, পথ ও ধর্মের সহাবস্থানের বিধান রয়েছে। ইসলাম দেড় হাজার বছর ধরে উদারতা, মানবিকতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার বাণী প্রচার করে আসছে। ফলে আজ বিশ্বব্যাপী ইসলাম জীবন্ত জীবনাদর্শ রূপে বহু জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত সমাজে ভিত মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে।

অন্য ধর্মকে, ধর্মীয় ব্যক্তিকে কটাক্ষ, অপমান ও ব্যঙ্গ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ইসলামে বৈধ নয়। কোনো ঈমানদার ব্যক্তি অমুসলিমদের উপাসনালয়ে হামলা করতে পারে না। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও সদ্ব্যবহার ইসলামের অনুপম শিক্ষা। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানরা এদেশে মুসলিমদের প্রতিবেশী। আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা পবিত্র কুরআনের নির্দেশ। মূর্তি ও প্রতিমা ভাঙচুর করা তো দূরের কথা, তাদের গালি না দেয়া এবং কটাক্ষ না করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম রয়েছে।

ইসলাম তার উষালগ্ন থেকেই বৈরী শক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার। এক শ্রেণীর হীন, মানসিকতাসম্পন্ন লোক সব কালে সব যুগে ইসলাম, কুরআন ও হাদিসের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে আনন্দ পায়। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ সা: ও তাঁর মর্যাদাবান সাহাবায়ে কেরামের প্রতি কটাক্ষ করা ও বিদ্রƒপাত্মক চিত্র অঙ্কন তাদের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। এতে আরো দু’টি উপসর্গ যুক্ত হয়েছে; একটি পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ এবং মহানবী সা:-কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক চলচ্চিত্র তৈরি। এএমন অপরাধের সাথে যারা বিজড়িত, এরা মানবতার দুশমন; মূল্যবোধ বিবর্জিত বর্বর সন্ত্রাসী। এর পেছনে চারটি কারণ স্পষ্ট। প্রথমত, ইসলাম বিকাশমান ধর্ম।

ইসলাম সারা পৃথিবীতে বিস্তৃতি লাভ করছে ক্রমশ; এমন কি ইউরোপ, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন জনপদ এর আলোকধারায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে; মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে বহু দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। ইসলামের অগ্রযাত্রায় হতাশ হয়ে ওরা বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিয়ে সাম্পদায়িকতা উসকে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মিথ্যা, অশালীন ও বিদ্রƒপাত্মক বিষোদগারের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে অমুসলমানদের মনে ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা, যাতে তারা এ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট না হয়। ইসলামের নামে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক (ওংষধসড়ঢ়যড়নরধ) সৃষ্টি করে মু’মিনদের ইবাদত, কৃষ্টি, জীবনাচার ও দাওয়াতি কর্মপ্রয়াসে শৈথিল্য আনা ও উদ্দেশ্য বৈকি।

তৃতীয়ত, মুসলমানেরা গভীর ঘুমে অচেতন, না জাগ্রত তা পরখ করা এবং ঈমানি শক্তির প্রচণ্ডতাকে যাচাই করা। চতুর্থত, ইসলাম ধর্মের অবমাননার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সংক্ষুব্ধ মুসলমানেরা দেশে দেশে বিক্ষোভ ও সহিংস পন্থার যদি আশ্রয় নেয়, তাহলে তাদের দমনের নামে কোনা প্রতিপক্ষ বাহিনী হামলে পড়তে পারে দেশে। তারপর শুরু হবে জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠনের তাণ্ডব। ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু একা নয়; এদের পেছনে আছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশ্বের বহুল পরিচিত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সার্চ ইঞ্জিন।

ধর্ম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নিয়ে উপহাস ও কটাক্ষ করার জন্য ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার’ বুলিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ স্বাধীনতা কিছুতেই অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতারও সুনির্দিষ্ট শর্ত ও নীতিমালা থাকা চাই। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র নামে অন্য ধর্ম ও ধর্ম প্রচারকের প্রতি ঘৃণার আগুন ছড়ানো অব্যাহত থাকলে আন্তঃধর্ম সংলাপ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে এবং অসম্ভব হয়ে উঠবে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্যোগ।

পৃথিবীর ৭৫০ কোটি মানুষের বিশেষ কোনো ধর্মের অনুসারী হবে, এটা অসম্ভব ও অবাস্তব। নানা ধর্মের মানুষের পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই পৃথিবীর বৈচিত্র্য। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সমাজবদ্ধ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি, সহিষ্ণুতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ধর্মাবমাননার সব পথ বন্ধ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, শিখ ও জৈন ধর্মের সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। একে অপরের ধর্মানুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বিশ্বশান্তির পূর্বশর্ত।

নবী সা:-এর অবমাননার ঘটনা যেহেতু কিছু দিন পরপরই ঘটছে তাই দায়িত্বশীল ওলামা-মাশায়েখের উচিত এ ব্যাপারে কার্যকর ও কৌশলী পদক্ষেপ নেয়া। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং তা সঠিক ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে। শান্তিপ্রিয় মানুষ ধর্ম অবমাননার বিকৃত প্রবণতা এবং এটাকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও নৈরাজ্য আর দেখতে চায় না।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ওমর গণি এম ই এস ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম


আরো সংবাদ



premium cement