২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সর্বনাশের গোড়ায় হাত দিন

-

অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ব্যবসা-বাণিজ্য জগতের মানুষ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তার জীবনের পাড়ি দেয়া পথগুলো এবং সফলতাগুলো নিঃসন্দেহে অনেকের জন্য অনুসরণীয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রেরণাদায়ক। একটি অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে মুস্তফা কামাল তার ছাত্রজীবন, কর্মজীবন এবং রাজনীতিতে যে ত্রিমুখী সফলতা দেখিয়েছেন, যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনায় অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন এবং এ যাবৎকাল পর্যন্ত তা ভালোভাবেই সম্পাদন করে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে অতীত অভিজ্ঞতার কারণে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের হৃদস্পন্দন বোঝেন, বোঝেন ব্যবসায়ীদের দুঃখ-কষ্ট-বেদনা। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত ছলচাতুরী-কালোবাজারি, মার্কেট ম্যানিপুলেশন, অর্থপাচার ইত্যাদির মতো দুই নম্বরি কর্ম থেকে শুরু করে চৌদ্দ নম্বরি মহা-কুকর্মের গোমর সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। আর এ কারণে আশা করা যায়, বাণিজ্যদানব, ক্যালোবাজারি, চোরাকারবারি, অর্থপাচারকারী এবং ব্যাংকের টাকা লোপাটকারীদের কালো ছায়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর অতীতের মতো ভর করতে পারবে না।

বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকেরা আশা করেন, অর্থমন্ত্রী দেশের অর্থ-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা, বাজারব্যবস্থা, আমদানি-রফতানি, ভ্যাট, ট্যাক্স, সিআইপি, ভিআইপি ইত্যাদির আড়ালে লুকিয়ে থাকা অনিয়ম-দুর্নীতি খুঁজে খুঁজে বের করার জন্য তার অনন্য মেধাবলে নিত্যনতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তিনি বদমাশদেরকে ধরবেন, শাস্তি দেবেন এবং বদমায়েশি নির্মূল করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থব্যবস্থায় গতি ফিরিয়ে আনবেন। তিনি উন্নত বিশ্বের মতো আর্থিক গোয়েন্দা নিয়োগ দেবেন এবং জনগণের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে অর্থদানবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। অর্থমন্ত্রী যদি চিন্তা ও চেতনায় সৎ হন তবে তার পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি। অর্থমন্ত্রী সম্পর্কে আমার এই ইতিবাচক ধারণার ওপর ভরসা করে আর্থিক খাতের কিছু গুরুতর অনিয়ম সম্পর্কে তাকে অবহিত করতে চাই।

অর্থমন্ত্রীর জন্য এই মুহূর্তের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হলো মন্দ ঋণ, খেলাপি ঋণ এবং ভুয়া জামানত বা মিথ্যা বন্ধকের অনুকূলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে লোপাটে এবং এর মাধ্যমে পুরো আর্থিক খাতে যে বিশৃঙ্খলার ক্যান্সার সৃষ্টি হয়েছে, তা সারিয়ে তোলা। সরকারি-বেরসকারি ব্যাংক-বীমা-লিজিং কোম্পানি থেকে শুরু করে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতি, অর্থ ব্যবস্থাপনা, পুঁজির নিরাপত্তা ইত্যাদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতে গত এক বছর ধরে অর্থনৈতিক মহামন্দা চলছে। ভারতীয় রুপির মান সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। হাজার হাজার সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেছে। অনেক ব্যাংক স্বেচ্ছায় অন্য ব্যাংকগুলোর সাথে মার্জ হয়ে গেছে। বড় বড় ব্যবসায়ী দেনার দায়ে আত্মহত্যা করেছেন। ভারতের শেয়ারবাজারেও দেউলিয়াত্বের আগুন লেগেছে।

আমাদের দেশের অর্থনীতি বর্তমানে অনেকটাই ভারতনির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে ভারতীয় আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারি এবং দায়দেনার কিছু অংশ হলেও খুব তাড়াতাড়ি আমাদের ওপর এসে পড়বে। সুতরাং আমরা যদি সমন্বিতভাবে সতর্ক না হই তবে আমাদের চলমান সমস্যাগুলোর সাথে ভারতীয় সমস্যা যোগ হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। আমাদের অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই এসব ব্যাপার খুব ভালো করে জানেন। তাই আমি এসব ব্যাপারে কথা না বাড়িয়ে বাংলাদেশের ঋণ জালিয়াতির একটি নেপথ্য সিন্ডিকেটের গুপ্ত কথা বলে অর্থমন্ত্রীকে সাহায্য করার মানসে কিছু তথ্য-উপাত্ত এবং ঘটনা বর্ণনা করতে চাই।

অর্থমন্ত্রী হয়তো অবগত রয়েছেন যে, গত প্রায় দেড় যুগ আগে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি কাউকে ঋণ দিতে চায় তবে ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে যে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখা হবে তার বর্তমান বাজারমূল্য এবং সম্পত্তির অবস্থান-মালিকানা ও দায়দেনা সম্পর্কে একটি ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট বাধ্যতামূলকভাবে ঋণ প্রস্তাবনার সাথে জমা দিতে হবে। যেকোনো সার্ভে কোম্পানি দিয়ে ভ্যালুয়েশনের কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির যোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং আইনি ভিত্তি বা অ্যাক্রিডেশন সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়নি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সার্কুলারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার নামধারী অসৎ ব্যক্তিরা, ঋণ গ্রহণকারী জালিয়াত চক্রের হোতা এবং এতদসংক্রান্ত দালাল চক্র মিলে বিশাল এক সিন্ডিকেট গড়ে তোলে, যার মাধ্যমেই আমাদের পুরো ব্যাংক ব্যবস্থা ও আর্থিক খাতের বেশির ভাগ ঋণ জালিয়াতি ঘটানো হয়েছে। এই চক্রটি কিভাবে সর্বনাশ ঘটায় সে ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে সার্ভে তথা ভ্যালুয়েশন সার্ভে সম্পর্কে কিছু বলা আবশ্যক।

বাংলাদেশে বৈধভাবে সার্ভে করার জন্য সরকার নিবন্ধিত বা সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত সার্ভে কোম্পানির সংখ্যা সাকুল্যে দেড় শ’র মতো হলেও মাত্র ত্রিশ-চল্লিশটি কোম্পানি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এই ত্রিশ-চল্লিশটি কোম্পানির মধ্যে মাত্র সাত-আটটি কোম্পানি রয়েছে, যারা গত তিন-চার দশক ধরে অত্যন্ত সুুনামের সাথে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। একসময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স বীমা জরিপসহ অন্যান্য সার্ভে কাজ সম্পাদনের জন্য লাইসেন্স ইস্যু করত। পরে ব্যাংক-বীমা ব্যবসার পরিধি বাড়লে কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স অফিসের মর্যাদা ও ক্ষমতা বাড়িয়ে সেটির নাম করা হয় চিফ কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স। আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯-২০১৪ কার্যমেয়াদে অফিসটির নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয় আইডিআরএ অর্থাৎ ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলারিটি অথরিটি নামে। বাংলায় প্রতিষ্ঠানটিকে বলা হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, যার নেতৃত্বে থাকেন সরকার নিয়োজিত চেয়ারম্যান। আমার জানা মতে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আপনার মন্ত্রণালয়ের অধীন।

বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দেশের সব সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স দাতা-পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং একই সাথে শাস্তিদাতা কর্তৃপক্ষও বটে। এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে দেশের খুব অল্পসংখ্যক লোক জানে। অথচ দেশের বীমা ব্যবস্থার একক কর্তৃত্ব এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার সহায়ক কর্তৃপক্ষ হিসেবে এই প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থবাণিজ্যের প্রাণভোমরা অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড হিসেবে কাজ করে। একই সাথে এই প্রতিষ্ঠানটিই ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দূষিত রক্ত শোধনকারী যকৃৎ বা লিভার হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে আপনি যত বেশি গণমুখী এবং যত বেশি শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক করতে পারবেন ততই আপনি ও আপনার সরকার আর্থিক খাতে নিত্যনতুন সফলতার মাইলস্টোন স্থাপন করতে পারবেন।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যখন বছর পঁচিশেক আগে কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স অর্থাৎ বীমা নিয়ন্ত্রকের অফিস হিসেবে পরিচিত ছিল তখনই বেশির ভাগ সার্ভে লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। সার্ভে বিষয়টি অত্যন্ত টেকনিক্যাল এবং স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে সেই পাকিস্তান আমল থেকে অত্যন্ত কঠোরতা ও সতর্কতার সাথে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং দক্ষতা-অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সুনাম সুখ্যাতি ও শিক্ষাদীক্ষার বিচার বিশ্লেষণ করে সার্ভে লাইসেন্স ইস্যু করা হতো। কর্তৃপক্ষের অতীব কড়াকড়ি, সতর্কতা এবং নানান কঠিন শর্তের কারণে সার্ভে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাকুল্যে দেড় শ’ অতিক্রম করতে পারেনি এবং এই খাতের লাইসেন্সপ্রাপ্ত টাউট সার্ভেয়ারের সংখ্যা খুবই নগণ্য। কারণ, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তার লাইসেন্স যেমন বাদ হয়ে যায় তেমনি সুনামহীন প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যবসা বাণিজ্য পায় না।

বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ব্যাংক খাতের বন্ধকী সম্পত্তি মূল্যায়ন করার জন্য নির্দেশনা জারি করল, তখন তারা সম্ভবত অজ্ঞতাবশত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানির নাম উল্লেখ করেনি। তারা সার্ভে কোম্পানির দক্ষতা-অভিজ্ঞতা সুনাম ও আর্থিক সফলতার ব্যাপারেও কোনো শর্ত দেয়নি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই সার্কুলারের সুযোগ গ্রহণ করার জন্য হাজার হাজার ভূঁইফোড় সার্ভেয়ার। ভুয়া সার্ভে কোম্পানি এবং প্যাড ও সিল-সর্বস্ব সার্ভে প্রতিষ্ঠান পুরো ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে কব্জা করে নেয়। প্রতিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে দেখানোর জন্য নামকাওয়াস্তে ত্রিশ বা চল্লিশটি সার্ভেয়ারের তালিকা করে, যেখানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভালো কোম্পানিগুলোকেও তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু তাদের দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করানো হয় না। অন্য দিকে, ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত করে সেগুলোকে দিয়ে কাজ না করিয়ে শাখাগুলো নিজেদের পছন্দমতো প্যাড-সিল-সর্বস্ব সার্ভেয়ার দিয়ে মর্জিমাফিক সার্ভে রিপোর্ট বানিয়ে ব্যাংকের টাকা লোপাট করে থাকে।

ব্যাংকের বন্ধকী সম্পত্তি মূল্যায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ যখন প্যাড ও সিল-সর্বস্ব দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের হুকুম বা ইচ্ছামাফিক চলে তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা আপনি দেখতে পাবেন যদি গত পনেরো বছরের মন্দ ঋণ, খেলাপি ঋণ এবং ঋণ জালিয়াতির পরিসংখ্যানগুলো দেখেন। ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নিজেরা ইচ্ছেমতো সার্ভে কোম্পানির নামে প্যাড ও সিল বানিয়ে নিজেদের ড্রয়ারের মধ্যে রেখে দেয়। তারপর ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে দুর্নীতিবাজ ঋণ গ্রহীতার যোগসাজশে ব্যাংকের অর্থ লোপার্ট করে নেয়। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টিগোচর হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লোক দেখানো তদন্ত কমিটি করে এবং সংশ্লিষ্ট ভুয়া সার্ভে কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে এবং সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের তোড়জোড় দেখিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শান্ত করার র‌্যাট অ্যান্ড ক্যাট খেলা শুরু করে দেয়। যেহেতু বেশির ভাগ সার্ভে রিপোর্ট, সার্ভে কোম্পানি এবং সার্ভেয়ার ভুয়া থাকে সেহেতু আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোনো আসামিকে আজ অবধি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লিখিত সিল-প্যাড-সর্বস্ব শতভাগ ভুয়া কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও হাজার হাজার সেমি ভুয়া কোম্পানি রয়েছে, যারা একটি ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অর্থের বিনিময়ে ফরমায়েশি সার্ভে কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে দেশ-জাতির বারোটা বাজিয়ে চলেছে। এসব সার্ভে প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়তো গ্রামে থাকেন, কেউ থাকেন মেসে। কেউবা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছোটখাটো চাকরি অথবা পাড়া মহল্লায় মুদি-মনোহারী দোকান চালান। এদের নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে থাকে। যখন কোনো সিন্ডিকেট ঋণ জালিয়াতির ফন্দি আঁটে তখন এসব সার্ভেয়ারকে ডেকে এনে সর্বনাশের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়।
উল্লিখিত ঘটনাগুলোর একটি বা দু’টি কেসকে যদি স্টাডি করে কুকর্মের বিস্তারিত বিবরণ লিখতে শুরু করি তবে একেকটি কাহিনী বিরাট এক দুর্নীতির মহাকাব্যে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। আমি মনে করি, আমাদের মেধাবী অর্থমন্ত্রীকে বোঝানোর জন্য ইঙ্গিত বা ইশারাই যথেষ্ট।

কোনো কাব্য, গীতিনাট্য অথবা উপন্যাস লেখার প্রয়োজন নেই। সুতরাং এতক্ষণ ধরে আমি যা আলোচনা করলাম আশা করা যায় অর্থমন্ত্রী পরিস্থিতি মূল্যায়নপূর্বক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের বিষয়ে মন্ত্রী বরাবর আমি কিছু সুপারিশ রেখে আজকের নিবন্ধের ইতি টানতে চাইÑ আমি মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংক-বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেগুলোর সর্বোচ্চ চার ক্যাটাগরির লাইসেন্স রয়েছে এবং যেসব প্রতিষ্ঠানে বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড সার্ভেয়ার হিসেবে কমপক্ষে চারজন কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন, সেসব প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিগুলোর কর্ম-অভিজ্ঞতা যা কোনো ক্রমেই ১৫ বছরের নিচে হবে না এবং আর্থিক সচ্ছলতার অবস্থা থাকবে কমপক্ষে এক কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি বা নগদ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখার যোগ্যতা। সার্ভে কোম্পানিগুলোর ফি নির্ধারণ সম্মানজনক হারে হলে দুর্নীতির মাত্রা কম হবে।

অন্য দিকে, রিপোর্ট প্রদান, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হেড অফিস কর্তৃক যৌথভাবে তদারকের বিধান থাকলে দুর্নীতি কমবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত সার্ভে কোম্পানিগুলোকে সিরিয়াল অনুসারে সমান ভাগে কাজ বণ্টন করা হলে পুরো সার্ভে প্রক্রিয়াটি কার্যকর হবে এবং দেশ-জাতি উপকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবাদ : নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৩৩ জন গ্রেফতার বিপজ্জনক মাত্রার অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে বাঁচবেন কিভাবে বিয়ের বাজার শেষে বাড়ি ফেরা হলো না চাচা-ভাতিজির প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ভারতীয় ৩ সংস্থার মশলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান সাবেক শিবির নেতা সুমনের পিতার মৃত্যুতে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের শোক গণকবরে লাশ খুঁজছেন শত শত ফিলিস্তিনি মা ভারতের লোকসভা নির্বাচনে আলোচনায় নেতাদের ভাই-বোন ও সন্তান সংখ্যা চীনে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা, ঝুঁকিতে ১৩ কোটি মানুষ ভারতের মাঝারি পাল্লার নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা ৩ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার চেন্নাইকে হারাল লক্ষৌ

সকল