২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গৃহকর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা

-

আমার পরিচিত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকতার বাসায় এক মহিলা কাজ করেন। তিনি সম্মানিত কৃষক পরিবারের মেয়ে। অল্প বয়সে তার পিতা মারা গেছেন। পরে আর্থিক দৈন্যের কারণে অন্যের বাসায় কাজ নিয়েছেন। তার বয়স প্রায় চল্লিশ বছর। কিন্তু বাসার মালিকের ছেলেমেয়েরা তাকে ‘তুমি’ বলে, ‘বুয়া’ বলে। যতটা জানি, বুয়া শব্দটি তুচ্ছার্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বাসায় যারা কাজ করেন, তাদের বেশির ভাগই কিশোরী বা মোটামুটি বয়স্ক নারী। তাদের বেশির ভাগই গ্রামের কৃষক পরিবার থেকে এসেছেন। কৃষকসমাজ আমাদের দেশে সবচেয়ে সৎ সমাজ। আমার মনে হয়, তাদের মধ্যে দুর্নীতি কম। কৃষক পরিবার থেকে আগত এসব মহিলা বা গার্হস্থ্য কর্মচারীর নাম ‘বুয়া’ হবে কেন?

এটিও একটি কাজ বা জব যা ঘরে করা হয়। এটি বাইরের সার্ভিসের মতোই একটি সার্ভিস বা পরিষেবা। কেন তাদের নাম গৃহ ম্যানেজার বা ম্যানেজার বা সহকারী ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপক হতে পারে না? রাসূল সা:-এর এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল, তা আমাদের জানা উচিত। তিনি গৃহকর্মীকে আমার কন্যা বা আমার পুত্র বলতেন। আমরা যদি রাসূল সা:-এর কাজের আলোকে দেখি, তাহলে আজকে যাদের আমরা গৃহভৃত্য বা চাকর মনে করি, তাদের পদবির অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া দরকার। যারা বাসায় সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করেন তাদের বেতন কিন্তু অনেক কম। তাদের বেতন কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা হওয়া উচিত। অথচ তাদের বেতন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাঁচ হাজারেরও কম। আমি নিজের কাজের লোকের বেতন বাড়িয়ে দিলে অন্যরা আপত্তি জানিয়ে বলে, আমি মার্কেট খারাপ করে দিচ্ছি। এতে তাদের অসুবিধা হবে। যেসব গৃহকর্মী সার্বক্ষণিকভাবে নয় বরং তিন-চার ঘণ্টা কাজ করেন, তাদের বেতন পাঁচ হাজার টাকা হওয়া উচিত।

বাসায় যারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করেন, তাদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক ভাগে রয়েছেন সার্বক্ষণিক কর্মী। তারা সারা দিন কাজ করেন এবং সাধারণত ওই বাসায় থাকেন। দি¦তীয় একদল গৃহকর্মী যারা তিন-চার ঘণ্টা কাজ করেন এবং বাসায় থাকেন না বরং নিজেদের বাসায় থাকেন।

প্রথম দলের সম্পর্কে বলতে চাই, তারা অল্প বয়স্ক হতে পারে অথবা মধ্য বয়সের হতে পারেন অথবা বৃদ্ধাও হতে পারেন। বর্তমানে তাদের সারা দিন কাজ করতে হয়। কাজের সময় হতে পারে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত (১৬ ঘণ্টা)। অথচ তাদের বিশ্রামের কোনো ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, তাদের দুপুরে বা বিকেলে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ দেয়া হয় না। অথচ মালিকেরা ইচ্ছামতো ঘুমাতে পারেন। এই কর্মীদের কোনো ছুটি নেই। না সাপ্তাহিক না বার্ষিক, না অন্য ধরনের। তাদের যে খাবার দেয়া হয়, এর মান অনেকসময় মালিকদের খাবারের মান থেকে নিচু হয়। এমনকি তাদের অনেক ক্ষেত্রে বাসি পান্তা খেতে হয়।

তাদের ওপর অনেক সময় নানা নির্যাতন করা হয়, যা পত্রিকায় প্রায় সময়েই দেখা যায়। এসব কারণে অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং অনেকে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন।

অন্য দিকে, যারা তিন-চার ঘণ্টা কাজ করেন তাদের বিশ্রামের দরকার পড়ে না। কিন্তু তাদের জন্যও একবেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকা উচিত। গৃহকর্মী ও শ্রমিকদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়া দরকার। কারখানা শ্রমিকদের চলার মতো বেতন দিতে হবে। শ্রমিক অধিকার না মুনাফা, কোনটা বড়? আমার মতে, শ্রমিক অধিকার। আমি মনে করি, এসব দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। অসম্ভব কিছু নয়; বাস্তবসম্মত পদক্ষেপই নিতে হবে।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার

সকল