২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সিনাই উপদ্বীপে ‘সন্ত্রাস’ দমন

-

এ মাসের শুরুতেই মিসরের সেনাবাহিনী সিনাই উপদ্বীপে বেদুঈনদের ঘরবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ সিনাইয়ের তারাবিন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সরকার বলেছে, এসব ঘরবাড়ি অবৈধভাবে বানানো হয়েছে। আকাবা উপসাগরের উত্তর-পশ্চিম পাড়ে নুবিবায় তারাবিন অবস্থিত। এখানে রয়েছে দেখার মতো পবর্তমালা ও ভগ্নপ্রায় জীর্ণ ঘরবাড়ি। পর্যটকদের ছবি তোলা ও ডকুমেন্টারি তৈরির জন্য এলাকার দুমড়ে থাকা ঘরবাড়িগুলো প্রথম পছন্দ।

সিসির সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেদুঈনদের এই বস্তিগুলোতে শুরু হয় নির্যাতন। সিনাই এলাকায় সম্পত্তির মালিকানাকে মিসরের সেনা সরকার বেশ কড়াকাড়ি নজরদারিতে রেখেছে। মনে হয় সরকার কোনো এক উদ্দেশ্য নিয়ে বাসিন্দাদের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে; জমির মালিকানা যাচাই-বাছাই করে ঠিক করে নেয়ার জন্য, নতুবা বাসিন্দারা সরকারি জমি অবৈধভাবে ভোগদখল করছে, এমন কারণ দেখিয়ে আইনের আওতায় আনবে, এমন সব ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

উত্তর সিনাইতে ৪০ হাজার বসতভিটা রয়েছে যেগুলোকে ওয়াদ আল ইয়াদ সম্পত্তি বলা হয়। অর্থাৎ ঘরবাড়ি, বাগান, খামার, খামারবাড়ি, দোকানপাট যেগুলো বংশপরম্পরায় কোনো সরকারি ডকুমেন্টেশন ছাড়াই সমাজে চলে আসছে। বিষয়টি বেদুঈন সমাজে হাজার বছর ধরে চলে আসছে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই।

মিসরে জন্ম নিয়েছে- এমন মিসরীয় পিতা-মাতার সন্তান শুধু জমির মালিক হওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু প্রপিতামহের পরিচয় স্থির করা সোজা নয়। কেননা, বেদুঈনদের সাধারণত কোনো জন্মসনদ বা আইডি কার্ড নেই। শুধু মিসরেই নয়, পুরো আরব বিশ্বে বেদুঈনরা সব সরকারি খাস জমিকে নিজেদের জমি মনে করে, নিজেদের ‘ভূমিপুত্র’ মনে করে থাকে। বেদুঈনরা যাযাবর জীবনযাপন করে আসছে; তাই তারা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের দলিলপত্রের জন্য কখনো আগ্রহী থাকে না। প্রসঙ্গক্রমে, সৌদি আরবের মক্কায় বেদুঈনদের জন্য বহু বাড়ি বানানো হয়; কিন্তু অল্প কিছু বেদুঈন প্রচুর সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে এসব বাড়িতে ওঠে।

তাই সেই প্রকল্পটি আশাপ্রদভাবে সমাপ্ত হয়নি। মিসরে জায়গা জমির মালিকানা স্বত্ব তৈরি করা বেদুঈনদের জন্য অনেক ঝামেলার। অফিসে যাওয়া-আসা, এর খরচ, দীর্ঘসূত্রতা, উকিল ফি, অফিসের খরচপাতি- এ সবকিছু বেদুঈনদের চারিত্রিক ধারার বিরোধী। যারা এসব আঞ্জাম দিতে পারে না, তারা তারাবিনের বেদুঈনদের ভাগ্য বরণ করে থাকে। দশকের পর দশক যারা বসবাস করছে সেখানে, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় তাদের বাড়িঘর ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ সিসির এই কার্যক্রম ১৯০৬ সালের মিসর-ওসমানী সীমান্ত চুক্তির ৮ ধারা মতে, অন্যায় ও অযৌক্তিক। চুক্তিতে মিসরের সিনাই ওসমানী প্রদেশের হেজাজ ও জেরুসালেমে যারা স্থানীয় ও আরব, তারা উভয় দিকে জমি ও পানির সুবিধা ও মালিকানা ভোগ করবে- এটাই লিপিবদ্ধ আছে। মিসরের সেনা সরকারের ওই আচরণ আদিবাসী ও ট্রাইবাল পপুলেশন কনভেনশনের ১০৭ ধারার সাথেও সাংঘর্ষিক। কিন্তু সেনা সরকারের কাছে এসব কনভেনশন একটা ‘নুইসেন্স’ মাত্র।

ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়ার ঘটনা সিনাইয়ের উত্তরেও আঘাত হেনেছে। সেখানে সাওয়ারকা, রেমিকাত ও তারাবিন যাযাবররা বসবাস করে। তারা সরকারকে বলে আসছে তাদের অধিকার ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য। সাংবাদিক মাসাদ আবু ফজরের বাড়ি উত্তর সিনাইয়ে। তার বাড়িও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর এসব লোক আন্দোলন শুরু করে ‘ওয়াদনা নিস’ নামে। এর অর্থ হলো ‘আমরা বাঁচতে চাই’। সেনারা আন্দোলনের নেতাদের ধরপাকড় করে জেলে পুরে রেখেছে। সরকার বলছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করছি। সরকারি হিসাব মতে, সিনাইতে এক হাজারের মতো ‘সন্ত্রাসী’ আছে; বলা হচ্ছে, ব্রাদারহুডের নেতারাও সেখানে ‘ডিমে তা দিচ্ছে’। সরকার সেখানে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

তথাপি সিনাইতে মাঝে মাঝে সেনাবাহিনীর ওপর বড় রকমেরও মারাত্মক হামলা হয়ে সেনাবাহিনীকে দিশাহারা করে তোলে। স্থানীয়রা মনে করে, এটি আসলে জনগণের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ। সরকার বাধ্য করছে বেদুঈনরা যেন সে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তবে প্রশ্ন, মিসরের এই লোকজন কোথায় যাবে? মিসর পর্যটন থেকে যে আয় করে, তার এক-তৃতীয়াংশ সিনাই থেকেই আসে। এখন সেখানে মৃত্যুর ভয়ে পর্যটকরা যেতে চান না। মিসরের সিনাইয়ে হজরত মূসা আ:-এর পর্বত, হারুন আ:-এর কবর, অনেকের মতে তীহ প্রান্তর যেখানে ইসরাইলিরা ৪০ বছর ঘুরপাক খেয়েছে এবং মান্না সালওয়া দেয়া হয়েছে সেগুলো অবস্থিত।

এসব দেখতে প্রচুর পর্যটক নিয়মিত সিনাই ভ্রমণ করে থাকেন। বেদুঈনরা এসব পর্যটককে উট, ঘোড়া বা নৌকায় চড়িয়ে ঘোরায়, গাইড হিসেবে কাজ করে, কিংবা খাবার সরবরাহ করে ভালো আয় করে আসছে। এখন এসব কিছুই বন্ধ। ফলে সবাই বেকার। বেদুঈনদের সেনাবাহিনী বা পুলিশে যোগ দিতে দেয়া হয় না। সরকারেও তারা ভালো চাকরি পায় না। এদের উন্নয়নের জন্য কোনো সরকার তেমন পদক্ষেপ নেয়নি। বেদুঈনদের অনেকে মাদক ব্যবসা করেও দিন গুজরান করতে বাধ্য হয়। সিসি সরকার এখন পুরো বেদুঈন গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে চায় বলে অনেকে মনে করছেন।

ইসরাইলের সাথে মিসরের ১৯৭৯ যে ‘শান্তিচুক্তি’ সম্পাদিত হয় তাতে সিনাইকে ‘সেনাবাহিনীমুক্ত এলাকা’ হিসেবে পরিগণিত করার বিধান রয়েছে। সেখানে নামমাত্র কিছু সেনাসদস্য থাকার কথা। কিন্তু এখন মিসরের সেনাবাহিনী সিনাইর সবখানে ছড়িয়ে আছে। চার দিকে সেনাদের চেকপয়েন্ট। এ কারণে যাতায়াতে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন পড়ে লোকজনের। সরকার এক ডিক্রির বলে উত্তর সিনাইয়ের কিছু সড়কের উভয় পাশের দুই কিলোমিটার জায়গা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করেছে। এর ফলে আল আরিশ ও শেখ জুবিদের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ বাস্তুভিটাচ্যুত হয়ে রাস্তায় বসতে বাধ্য হবে। গাজার পাশে একটি ‘বাফার জোন’ করার জন্য ‘অপারেশন সিনাই’ চলাকালে তিন হাজার ঘরবাড়ি ধূলিসাৎ করা হয়েছিল। পুরো সিনাই থেকে এ পর্যন্ত এক লাখ মানুষকে জোর করে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে মিসরের একটি বিমানবন্দরও সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। হাতে নেয়া হয়েছে সুপেয় পানির প্লান্ট বসানোর জন্য ৯৬ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প। মনে করা হচ্ছে, জেনারেল সিসি তার ইমেজ ধরে রাখার জন্য এখানে ‘নতুন মিসর’ গড়ার কাজ করছেন।

তবে পানির প্রকল্পের হেড অফিস আরব আমিরাতে। তারা বলেছেন, প্লান্টটি চালু হলে আট লাখ মানুষের জন্য লবণম্ক্তু ও সুপেয় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। উত্তর সিনাইতে মাত্র চার লাখ লোক বসবাস করে। লোকজন বলাবলি করছে, কারা এই পানি পান করবে? অনেকে বলছেন, গাজা দিয়ে এই পানি ইসরাইলে নেয়া হতে পারে।

গত জুলাই মাসে মিসরীয় সেনা কনভয়ের ওপর হামলা বেড়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতের ওপর আরো কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। উত্তর সিনাইয়ের আইডি কার্ডধারীদেরও দক্ষিণে যেতে দেয়া হয় না কোনো জামিনদার ছাড়া। পুলিশ স্টেশনে গিয়ে লিখিতভাবে জামিনদার হতে হয় এ জন্য। পুরো সিনাই এলাকায় যেন চলছে অলিখিত কারফিউ; সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা। সমুদ্রসৈকতে অনেকের কাজ করতে হয়। তাদের পুলিশ স্টেশন থেকে পারমিট নিতে হয়। যারা মৎস্যজীবী, কফিশপে কাজ করে বা সৈকতে কোনো ব্যবসাপাতি আছে তারা সহজে পারমিট পায়। পার্বত্য এলাকায় যারা বসবাস করে, তাদের জীবন বেশি কঠিন। জ্যারিক্যান পূর্ণ করে পেট্রোল বহন করা যায় না। মানে, বাসায় আপনি কোনো জেনারেটর চালাতে পারছেন না।

জীবন যেন এখানে অবরুদ্ধ। সিনাইতে মিসরের অন্যান্য জায়গার মতো মিডিয়াকে রুদ্ধ করা হয়েছে। অনেক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা ও সেনারা যেন নিজেদের আত্মীয়স্বজনকেও বিশ্বাস করছেন না। সিনাইয়ের সাথে ত্বরিত যোগাযোগের জন্য কায়রো থেকে সুয়েজ খালের ভেতর দিয়ে চারটি টানেল বানানো হয়েছে যেন খুব কম সময়ে সেনা কনভয়গুলো সিনাই পৌঁছতে পারে, কোনো ট্রাফিক সমস্যা ছাড়াই। তবে সাধারণ গাড়িও এ পথে যেতে পারছে অনেক ফি দেয়ার পর। এখন একটি প্রাইভেটকারকে ২০ মিসরীয় পাউন্ড, ট্রাককে ৮০ মিসরীয় পাউন্ড দিতে হচ্ছে এ জন্য। এভাবে গাড়ির ধরন মোতাবেক, ২০০ পাউন্ড (১২ ডলার) পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। অনুমতি থাকলেও যেন প্রাইভেট গাড়ি যেতে না চায়, তাই এমন ব্যবস্থা।

সিনাইয়ে কী হতে যাচ্ছে? মিসরের সার্বিক অবস্থার সাথে তা বিবেচনা করা উচিত। আর্থিক দুরবস্থা, মন্দা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকার সুযোগে এক শ্রেণীর লোকের হাতে প্রচুর অর্থ এসেছে। মিসরে গরিবের পাশাপাশি এভাবে অনেকে বিত্তশালীও হয়েছে। অনেক সিসিপন্থী সামরিক অফিসার সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিচ্ছেন। তারা যেন রাজনীতিতে এসে সরকারবিরোধী কোনো ফ্রন্টে যোগদান করে নতুন কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করেন, তাদের জন্য সিনাইতে বিনিয়োগ অপেক্ষা করছে। গরিব পোষার চেয়ে বিত্তশালীদের হাতে রাখা স্বৈরাচারী সিসির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মিসরের রাজনীতিকে তিনি এখন সেরকম অবস্থানে নিয়ে গেছেন। মিসরের মার্শা মাতরো রিসোর্ট এলাকায়ও অকশানের মাধ্যমে ধনিক শ্রেণীকে সরকারি জায়গা দেয়া হয়েছে। গত নির্বাচনে সিসির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এক ব্যবসায়ী, যিনি তার সুবিধাপ্রাপ্ত বন্ধু। এটি উল্লেখযোগ্য এলাকা হলো ওয়াররাখ দ্বীপ, সেখানেও ঘরবাড়ি বুলডোজারের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ দ্বীপে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সরকারি জায়গায় অবৈধ বসবাসের। এতে অনেক চাকচিক্যময় সুন্দর ঘরবাড়ি রয়েছে। সেখান থেকে ৪,৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হলো। সরকার তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে, তবে তা বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

আরো বিপজ্জনক বিষয় হলোÑ ট্রাম্পের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’র পরিকল্পনা থেকে প্রকাশ পেয়েছে যে, সিনাইয়ের একটা বড় অংশ ফিলিস্তিনিদের জন্য মিসরকে ছেড়ে দিতে হবে। সিনাইয়ের লোকজন বলছে, এ জন্য সিনাই এলাকা খালি করা হচ্ছে। অবশ্য সিরিয়ার গোলান হাইটের মতো ইসরাইল মিসরের সিনাই দখল করে নিলেও সিসির কিছু করার নেই। উত্তর সিনাইয়ের অধিবাসীরা নিজেরা কূপ খনন করে জেনারেটরের সাহায্যে পানি তুলে ফসল ফলায়। এই এলাকার শাকসবজি মিসরের ‘সেরা শাকসবজি’ হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে জলপাই এবং জলপাই তেলের জন্য আরব বিশ্বে সিনাইয়ের নাম ডাক। যারা সারা জীবন মরু অঞ্চলকে সবুজ রাখার জন্য পরিশ্রম করেছে, তারা আজ সেখান থেকে বিতাড়িত হচ্ছে এবং তাদের জমিজমা ধ্বংস করা হচ্ছে।

মিসর সরকার ৪৭ রেড সি স্টেটকে সামরিক কৌশলগত কারণে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে দিয়েছে। দ্বীপটি বহুদিন ধরে পর্যটনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এটি এবং গিফতুন দ্বীপ পর্যটনের জন্য নামকরা। ডাইভিংয়ের জন্য এসব দ্বীপ এবং তোবিয়া দ্বীপ, আবু হাশিস দ্বীপের বেশ সুনাম আছে। মিসরের সেনাবাহিনী থেকে আসে জিডিপির ৪০ শতাংশ। সেনাবাহিনী নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, সিমেন্ট প্ল্যান্ট, হোটেল পরিচালনা এবং পর্যটনসহ আরো অনেক খাতে বিনিয়োগ করে থাকে। ১৯৪৯ সাল থেকে মিসর সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তিরান ও সানাফির দ্বীপ সিসি সৌদি আরবকে এর আগে দিয়ে দিয়েছেন। দ্বীপ হস্তান্তর ঘোষণার পরপর সিসি সরকার ২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে সর্ববৃহৎ গণবিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখন শত শত বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিবাদ থামানো হয়েছিল। সরকারের বিরোধিতা করায় সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুম মারজৌককেও গ্রেফতার করা হয়েছিল।

মিসরের আদালত ও সেনা আদালত মিলে ২০১৪ সালের পর থেকে তিন হাজার মানুষকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে বিশ্বে কোনো প্রতিবাদ নেই। কোনো রাজনৈতিক মিছিল ও বিক্ষোভ করা হলেই ‘সন্ত্রাসী কাজ’ বলে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বোমা ফাটানোর কারণে মানুষকে ফাঁসির দড়িতে চড়তে হচ্ছে। সিনাই এলাকার ঘটনা নিয়ে রয়টারের লোকজন জানতে চাইলে তাদেরকেও কোনো তথ্য দেয়া হচ্ছে না। মিসর সরকার বলে আসছে, তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে আর তাদের দৃষ্টিতে, ‘সন্ত্রাস’ মানে মুসলিম ব্রাদারহুড করা। আরব বিশ্বে কেউ নিহত হলে নিহতের পরিবার রক্তের দাম বা বদলা চাইতে পারে। সরকার বলছে, ‘সেটিই তারা আইনের মাধ্যমে করে দিচ্ছে। মৃত্যুর পরিবর্তে মৃত্যু।’ কিন্তু নিছক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে নিরপরাধ মানুষকে অপরাধের দড়ি ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা কি ন্যায়বিচার পাচ্ছে? সিনাই থেকে এরকম হাজারো মানুষ জেলখানায় বন্দী; তাদের অবস্থা কী হবে? মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মিসরীয় বিচারব্যবস্থায় অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement