২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মালদ্বীপে ভারতের ইগো

মালদ্বীপে ভারতের ইগো - ছবি : এএফপি

থিংক ট্যাংক ধারণাটা আমেরিকান, ইউরোপীয় নয়। যে অর্থে আমেরিকা ইউরোপ নয় তবে ইউরোপেরই এক নবপ্রজন্ম যাদের আবার ইউরোপকে আমেরিকার কলোনি শাসক হিসেবে দেখার অভিজ্ঞতা আছে এবং সশস্ত্রভাবে লড়ে ইউরোপকে পরাজিত করে নিজে কলোনিমুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। সেই অর্থে আমেরিকা এক নতুন ধারার পোস্ট-ইউরোপীয়ান প্রজন্ম। বহু নতুন নতুন আইডিয়ার জন্মদাতাও। যার বেশির ভাগটাই ঘটেছে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আমেরিকার নেতৃত্বে দুনিয়া পরিচালিত হওয়ার কালে। থিংক ট্যাংক ধারণাটার আবার আমাদের অঞ্চলে একালে এক নতুন অর্থে হাজির করেছে সেই আমেরিকাই। কিন্তু কপাল খারাপ।

কোকিল কাকের ঘরে ডিম পেড়ে রেখে আসে, নিজের ডিম ফুটিয়ে নেয় কাককে দিয়ে। আমেরিকা সেই পদ্ধতি কপি করে নিজের থিংক ট্যাংকের ইন্ডিয়ান শাখা খুলে ইন্ডিয়ানদের দিয়ে ইন্ডিয়ায় বসে চালায়। এমনকি ছোট-বড় স্কলারশিপ অথবা হায়ার স্টাডি বা পিএইচডি করার সুযোগ অফার করে। আর সার বিচারে এতে এক বিরাটসংখ্যক আমেরিকার নীতি পলিসির বাহক ও চোখ-কান যেন এমন, ভারতীয় অ্যাকাডেমিক পেয়ে যায় আমেরিকা। ঠিক যেমন বাংলাদেশে একটা ‘আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের’ কিংবা হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের শাখা খুললে সেটা আমেরিকান চোখ-কান খোলা এক আমেরিকান থিংক ট্যাংকই থাকে; বাংলাদেশের চোখ-কান হয় না।

যা হোক, প্রো-আমেরিকান থিংক ট্যাংকের এরাই ভারতজুড়ে এবং বাইরে ছড়িয়ে আছে- তারা ভারতীয় কিন্তু আমেরিকান নীতি পলিসির পক্ষে প্রচারক। অর্থাৎ আমেরিকান কাকের ডিম। এভাবে গত তেরো-চোদ্দ বছর ধরে এদের জমানা চলে আসছিল, তাদের জন্য তা খারাপ ছিল না। কিন্তু এখন হঠাৎ বিধি বাম! প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব উলটে দিয়েছেন। গত ষোলো বছর ধরে বুশ আর ওবামা প্রশাসনের আমলে ভারতে যে আমেরিকান থিংক ট্যাংক বিস্তার লাভ করেছিল তা এখন চরম দুর্দিনে। এর মূল কারণ হলো, আমেরিকান চোখ, কান ও মন হিসেবে লোকাল ভারতীয় অ্যাকাডেমিক তৈরি সবই ঠিক ছিল; কিন্তু সমস্যা হলো তাদের ‘প্রডাক্ট শো’ করার সুযোগ আর নেই, বন্ধ হয়ে গেছে। ‘প্রডাক্ট শো’ মানে? থিংক ট্যাংক অ্যাকাডেমিকদের প্রডাক্ট মানে হলো ঘরোয়া সভা সেমিনার ওয়ার্কশপ ইত্যাদি। আমেরিকান নীতি পলিসি চিন্তার পক্ষে প্রচারণা। ভারত সরকার এর আগে আমেরিকান প্রভাবিত এসব থিংক ট্যাংকগুলো খুলতে চলতে অনুমতি দিয়েছিল স্থায়ীভাবেই। কিন্তু প্রত্যেকবার তারা কোনো ‘প্রডাক্ট শো’ করতে গেলে তাদের ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় থেকে আগাম একটা নো অবজেকশন’ লিখিত পত্র পেতে লাগত, যেটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ কোনো এক থিংক ট্যাংক চীনবিরোধী এক কড়া অ্যাকাডেমিক বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়ে গেলে, মিডিয়ায় তা ব্যাপক প্রচার হয়ে যেতে পারে ওই সভার বক্তব্য- অথচ ওই প্রসঙ্গে ভারতের চীননীতি হয়তো এত কড়া হতে চায় না।

এতদিন প্রো-আমেরিকান ভারতীয় থিংক ট্যাংকগুলো আরামে আমেরিকার ‘চীন ঠেকাও’ নীতির অধীনে চলত বলে সভা সেমিনার থেকে যা খুশি চীনবিরোধী বলে চলতে পারত। ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ চীন থেকে শুরু হয়ে এখন ভারত আর ইউরোপের বিরুদ্ধ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। দিনকে দিন চীনের সাথে কোনো রফা হয়ে যাওয়ার বদলে স্থায়ী রূপ নেয়ার দিকে যাচ্ছে। আর ভারতের সাথে আগের রফতানি বাণিজ্য অবস্থায় ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে আমেরিকার যে ‘চীন ঠেকাও’ নীতির পক্ষে খেদমত ভারত করত আর আমেরিকায় রফতানি বাজার ভোগ করত তা ট্রাম্প বন্ধ করে দিয়েছে। আর তা স্থায়ীভাবেই এটা ধরে নিতে হবে। এমনকি আগামী আড়াই বছর পরেই কেবল তখন আমেরিকার কোনো নতুন প্রেসিডেন্ট এলেও পুরান আমেরিকায় ভারতের রফতানি বাণিজ্যের দিন আর ফেরত না আসার সম্ভাবনা খুবই বেশি- সে এক অনিশ্চিত অবস্থা। অতএব মূল কথা আমেরিকার যে ‘চীন ঠেকাও’ নীতির পক্ষে খেদমত করার সুযোগ ভারতের ছিল বলেই সে কারণে, আমেরিকান থিংক ট্যাংক ভারতে বিস্তার লাভ করেছিল। এখন খেদমতের সুযোগ নেই, রফতানি বাণিজ্য নেই ফলে থিংক ট্যাংক তৎপরতা ও এর বিস্তারের সুযোগ নেই।

আমেরিকার থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো চলে প্রায় একচেটিয়াভাবে অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের টাকায়। আমেরিকানরা প্রতিষ্ঠান গড়তে জানে, কদর বোঝেÑ ফলে করপোরেট হাউজগুলোর কাছ থেকে স্থায়ীভাবে নিয়মিত ফান্ড পায়। এভাবে চলা অসংখ্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানও আছে। যদিও অভ্যন্তরে এরা আবার সেটা রিপাবলিকান না ডেমোক্র্যাট প্রতিষ্ঠান এমন সুপ্ত ভাগ রেশারেশিও আছে। কিন্তু এই বিভেদ কোনোভাবেই প্রকট নয়।
ভারত তার মাটিতে থিংক ট্যাংক ধরনের প্রতিষ্ঠান দেখেছিল আমেরিকান ‘চীন ঠেকানো’ খেদমতের প্রোগ্রামে তৎপর প্রো-আমেরিকান থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান হিসেবে। প্রো-আমেরিকান থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানের বাইরে ভারতের ট্রাডিশনাল থিংক ট্যাংক বলতে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো, যেগুলো সরকারি প্রতিরক্ষা ফান্ড শেয়ার করে চলে। ফলে সীমিত ফান্ডের এমন প্রতিষ্ঠানগুলোও ছিল। তবে এসবেরও বাইরে এক বড় ব্যতিক্রম প্রতিষ্ঠান হলো ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ (ওআরএফ)। কারণ এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ভারতীয় করপোরেট ব্যবসায়ী রিলায়েন্স গ্রুপের দাতব্য অর্থে। ওআরএফÑ এটা এখন এক দাতব্য ট্রাস্ট সংগঠন। অর্থাৎ এটা সরকারিও না, আবার প্রো-আমেরিকান থিংক ট্যাংক নয় আবার কোনো রাজনৈতিক দলীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানও না। এসব অর্থে এটা বেশ ব্যতিক্রম। এখনো এর দুই-তৃতীয়াংশ ফান্ডের জোগানদার রিলায়েন্স গ্রুপ। আর বাকিটা অন্যান্য দেশী-বিদেশী সবার কাছ থেকেই নিয়ে থাকে।

এটা স্বাভাবিক যে, কোনো থিংক ট্যাংকের পক্ষে সরকারি পলিসির সরাসরি ও প্রকাশ্য সমালোচনা করা সহজ নয়। এ ছাড়া তা ভালো ফল দেবেই সবসময় তা এমনো নয়। তবে অভ্যন্তরীরণভাবে সরকারি নীত পলিসির সমালোচনা মূল্যায়ন ভিন্নমত সেগুলো তো অবশ্যই চলবে, তবে এগুলো আলাদা বিষয়।
ওআরএফ নামের থিংক ট্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ফেলো হলেন মনোজ যোশী। তিনি মূলত দিল্লির জওহর লাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি এবং ওআরএফে যোগ দেয়ার আগে প্রায় তিন দশক ধরে সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন। ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলোর অনেকগুলোতে রাজনৈতিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।
সম্প্রতি বিএনপির এক প্রতিনিধিদলের ভারতের সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার কথা জানা যায়। তারা এই মনোজ যোশীর সাথেই সাক্ষাৎ করেছিলেন। ভারতের বাংলাদেশ নীতি কী হবে তাতে ভারতের স্বার্থের কী সম্ভাবনা ও বাধা এসব নিয়ে গত ১৮ এপ্রিল মনোজ যোশীর একটা লেখা প্রকাশ হয়েছিল । মনে করা যায় ভারতের আমলা-গোয়েন্দা ও রাজনীতিবিদদের সাথে সরকারের নীতি পলিসি বিষয়ে কথাবার্তায় থিংক ট্যাংক ওআরএফের পক্ষ থেকে মনোজ যোশীই দেখে থাকেন। তাই সম্ভবত তার গুরুত্ব।

দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগের ইস্যু হয়ে উঠেছে মালদ্বীপ। ভারত পড়শি রাষ্ট্রগুলো আপন বাগানবাড়ির অংশ যেন এমনভাব করে চলেছে এতদিন। তবে মনোজ যোশীর ভাষায় পড়শি দেশ যেমন শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল ও এখন মালদ্বীপ আর আগের মতো থাকছে না। ভারতের ছোট পড়শি ম্যানেজ কঠিন হয়ে গেছে।
ব্রিটিশরা এশিয়া ত্যাগ করার পর ভারত সেই নেহরুর সময় থেকে সবসময় পড়শিদের সাথে ভাব করেছে যে, সে যেন এবার নতুন কলোনি মাস্টার, নেহরু যেন ভাইসরয়। সেখান থেকেই এই পড়শিদের নিজ বাগানবাড়ি মনে করা। ফলে এখান থেকে ভারতের পড়শিদের ভারত সম্পর্কে মূল্যায়ন নির্ভুল হতে আর কোনো অসুবিধা হয়নি। তবে সবাই আসলে অপেক্ষায় ছিল সঠিক সময়ের। চীনের অর্থনৈতিক উত্থান, বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে হাজিরা পড়শিদের সবাইকে এনে দিয়েছে দিন ফেরার সুযোগ। এটা স্বাভাবিক পড়শি সবাই তুলনামূলক বেশি স্বাধীন মুক্ত হওয়ার সুযোগ চাইবে। আর সেই সাথে আগের দু®প্রাপ্য বিনিয়োগ যদি সহজলভ্য হয়ে যায় তো সোনায় সোহাগা। বিপরীতে ভারতের ইতিহাস আছে অন্তত দুটো পড়শি রাষ্ট্রে (শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে) নিজ সৈন্য পাঠিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করার।

চীনের উত্থানের আগে পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়া যে ভারতকে দেখেছে তা হলো, সে কোনো নীতি মানে নাই। ভারত কী কী করতে পারে, আর কী কী সে করে না করবে না, কখনো করা উচিত হবে না- সেটা ভারতের তৈরি কোনো নীতিতে পরিচালিত হয়নি। অথচ ভারতের অপর মানে পড়শি; মানে আর একটা রাষ্ট্র। ফলে অন্তত সেখানে এক সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন আছে যা ভারতের সম্মান করে চলা উচিত। কোনো হস্তক্ষেপ করা থেকে সাবধান থাকা উচিত। অথবা সে দেশে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন, সেটাই হতে না দেয়া এবং জনগণকে ভোট না দিতে দেয়াতে ভূমিকা রাখা- এটা ভারতের জন্য কতবড় মারাত্মক সুদূরপ্রসারি নেতি পদক্ষেপ তা ভারতের কেউ বুঝেছে বলে মনে হয় না। আর এই নীতি পলিসিহীন ভারতই দেখে এসেছি, আসছি।
মনোজ যোশী মালদ্বীপ নিয়ে এক রচনা লিখেছেন, ইংরেজি স্ক্রোল ম্যাগাজিনে; যেটা আরো অনেক পত্রিকাও ছেপেছে। এ লেখার বিশেষত্ব হলো, এই প্রথম কড়া শব্দ ব্যবহার করে এখানে ভারতের নীতি পলিসির সমালোচনা করা হয়েছে। তাও একেবারে শিরোনামেই এই সমালোচনা করা হয়েছে। লেখার ওই শিরোনাম বাংলা করলে দাঁড়ায়, মালদ্বীপে তাল হারাচ্ছে ভারত এবং নয়াদিল্লির আত্মগর্বে নির্ধারিত লক্ষ্য (ংবষভ-মড়ধষং) ও ফুলানো ফাঁপানো ইগো (রহভষধঃবফ বমড়) এর জন্য দায়ী। ইংরেজিটাও সাথে উল্লেখ করেছি, এমন শব্দ দুটা বেশ কড়া বললেও কম বলা হয়। সোজা বাংলায় বললে ব্যাপারটা হলো শিরোনামটা বলতে চাইছে, ভারতের মুরোদ নাই কিন্তু ইগো আছে ভরপুর।

মনোজ যোশী এই লেখায় মালদ্বীপের গত এক বছরের সব নতুন ডেভেলপমেন্টের উল্লেখ আছে এবং তা আছে চীনকে দায়ী না করে, নৈর্ব্যক্তিকভাবে। এমনকি তিনি লিখছেন, ‘চীনারা সেখানে যৌথভাবে এই মহাসাগরে পর্যবেক্ষণ স্টেশন তৈরিতে সাহায্য করছে, (The Chinese are also helping build a Joint Ocean Observation Station)’ অর্থাৎ এটা কোনো সামরিক স্থাপনা চীন করছে এমন কোনো অভিযোগ তিনি করছেন না। বরং তিনিই লিখছেন, ‘এখনো পর্যন্ত ভারতের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে চীনা তৎপরতার কোনো সামরিক অভিপ্রায়গগত দিক আছে’ (As of now, India has no reason to believe that the Chinese activities have military implications).। তবে তিনি বলছেন, ‘চীনের অর্থনৈতিক উত্থান এবং এই অঞ্চলে চীনের হাজিরা ভারতের জন্য কাজ কঠিন করে দিয়েছে’ এবং সেটাই কী স্বাভাবিক নয়?
যেকথা উপরে বলা হচ্ছিল, ভারত এতদিন কোনো নীতি মেনে পড়শিদের সাথে চলেনিই। এর মূল্য এখন ভারতকে দিতে তো হবেই। মনোজ লিখছেন, ‘ভারতের নিজ মুরোদে, পড়শিদের কাছে বেচার মতো কোনো অস্ত্র তার নেই। তাই সে চীনের সাথে পারছে না।’ বলা বাহুল্য এটা চীন বা ভারতের পড়শিদের কোনো অপরাধ অবশ্যই নয়।
তাহলে মনোজ কেন এই রচনা লিখলেন? তিনি আসলে ভারতকে চীনের সাথে স্বার্থবিরোধ অনুভব করতে গিয়ে ‘আত্মগরিমায়’, নিজ ক্ষমতাকে ‘ফুলায় ফাঁপায় দেখে’ আগের মতো কোনো সামরিক হস্তক্ষেপের কথা যেন চিন্তা না করে বসে এটাই বলতে চাইছেন।
তিনি লিখছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে খবর বেরিয়েছিল যে চীনা নেভাল কমব্যাট ফোর্স ভারতের সম্ভাব্য মালদ্বীপে সামরিক হস্তক্ষেপ ঠেকাতে ভারত মহাসাগরে হাজির আছে। সে কারণে সে সময় পররাষ্ট্র সচিব গোখলেকে যেচে চীনে গিয়ে জানিয়ে আসতে হয়েছিল যে ভারতের এমন কোনো হস্তক্ষেপ পরিকল্পনা নেই। এক সিনিয়র গভর্মেন্ট অফিসিয়ালের বরাতে ২৮ মার্চ সকালে ‘Stepping back from Maldives, India tells China’- এই শিরোনামে খবরটা এসেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায়।
তাহলে মনোজের শঙ্কাটা কী থেকে? কারণ ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ ও আমলা-গোয়েন্দাদের inflated ego এর ঠেলায় তারা কোনো সামরিক হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করেনি বটে কিন্তু এক কূটনৈতিক লবি করে আমেরিকা দিয়ে একটা বিবৃতি দেয়াইছে যে মালদ্বীপে মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে। সেখানে আমেরিকার দাবি হলো- “মালদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, সাবেক প্রধান বিচারপতি ও অন্য একজন বিচারপতিকে সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে বিচারে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ দেয়া হয়নি। এতে ‘আইনের শাসনের’ ব্যত্যয় ঘটেছে এবং আগামী সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ‘নির্বাচন ফ্রি ও ফেয়ার’ হওয়ার ক্ষেত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।” আর আমেরিকার এই বিবৃতির পরে ভারতও এই একই লাইনে এক বিবৃতি দিয়েছে।

এখানে মজার বিষয়টা হলো এই একই বিবৃতি বাংলাদেশের বেলায় ভারত কেন দেবে না? নির্বাচন প্রশ্নে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ কী একই জায়গায় নয়? কিন্তু ভারত কেন এমন ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তুলবে না, আমরা জানি না। সে যাই হোক আগেই বলেছি, ভারত তার পড়শির বেলায় কোনো নীতি পলিসি মেনে চলা রাষ্ট্র নয়। আর এখানে যোশীর সাবধানবাণীর কারণ সম্ভবত এই যে, ভারত যেন আমেরিকার কথায় না নাচে। কারণ কোনো সম্ভাব্য ও ন্যূনতম সামরিক সঙ্ঘাত পরিস্থিতিতে আমেরিকার ওপর ভারতের ভরসা করার সুযোগ নেই। ওই এক বিবৃতি পাওয়া গেছে এটাই খুব। কারণ ডোকলাম ইস্যুতে আমেরিকা ভারতের পক্ষে একটা বিবৃতিও দেয়নি। এটা তাদের সবার মনে আছে নিশ্চয়। ফলে ভারত যেন মালদ্বীপ ইস্যুতে কেবল কূটনৈতিক এপ্রোচের মধ্যে থাকে এবং আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এটাই মনোজ যোশীর আবেদন।
আগেও বলেছি ভারত সব হারাচ্ছে, আরো হারাবে। কারণ ভারত কোনো নীতিগত জায়গায় দঁািড়য়ে তার পড়শি নীতি পলিসি মেনে চলে না, চলছে না। তবে সারকথাটা হলো, মালদ্বীপ পরিস্থিতি আমাদের আশ্বস্ত করছে যে আগামীতে অন্তত আর কোনো পড়শি দেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ সম্ভাবনা নেই হয়ে গেল। কারণ, চীন সেখানে এক বিরাট বাধা হিসেবে উপস্থিত হয়ে হাজির হয়ে গেছে, এটা প্রায় এক স্থায়ী রূপ নিয়েছে ও নেবে। কারণ মালদ্বীপের মতো ভারতের প্রত্যেক পড়শি রাষ্ট্রে চীনের বিনিয়োগ স্বার্থ বর্তমান। হ

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com


আরো সংবাদ



premium cement