২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভয়ঙ্কর ফেসবুক প্রেম

ভয়ঙ্কর ফেসবুক প্রেম - ছবি : সংগৃহীত

আমি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এ আমি কী দেখলাম!
তানিয়া !
হুম, তানিয়াই তো ! ওই তো ডান ফর্সা গালে একটা কালো তিল। আয়ত চোখ। বাঁশির মতো নাক। কিন্তু সে এখানে কেন?

তানিয়া ছিল আমার সহপাঠী। আমরা একসাথে হাইস্কুলে পড়েছি। তুখোড় মেধাবী ছাত্রী ছিল সে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এসএসসি মডেল টেস্ট পর্যন্ত দাপটের সাথে এক রোল ধরে রেখেছিল। এসএসসি রেজাল্ট ভালো করলে বাবা তাকে শহরে সরকারি কলেজে ভর্তি করে দিলেন। শহরের এক মেয়েমেসে রেখে দিলেন। যোগাযোগ করার জন্য একটা এনড্রয়েড ফোন কিনে দিলেন। আমি ভর্তি হলাম বাড়ির পাশে এক মফস্বল বেসরকারি কলেজে। ফলে তানিয়ার সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল।
আমি এখন ঢাকায় থাকি। প্রতিষ্ঠিত এক কোম্পানিতে জব করি। মাহমুদ আমার কলিগ। বহুদিন থেকে সে আমাকে তার বাসায় যেতে বলে। সময়ের অভাবে যেতে পারিনি। আজ শুক্রবার। হাতে কাজ নেই। ভাবলাম মাহমুদের বাসা থেকে ঘুরে আসি।
বাসায় ঢুকেই চমকে উঠলাম।
তানিয়া!
মাহমুদকে বললাম, দোস্ত, এই মেয়েটি কে?
মাহমুদ বলল, আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, কাজের মেয়ে!
হুমম, কাজের মেয়ে।
বাড়ি কোথায়?
জানি না।
আমি অবাক। মানে?

অনেক দিন আগের কথা। একদিন বাবা অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল। বাবা দেখলেন ডাস্টবিনের পাশে একটি মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। বাবা তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করলেন। জ্ঞান ফিরলে সে জানাল, সে কে তার কিছুই মনে নেই। বাবা- মা কে, বাড়ি ঘর কোথায়Ñ কিছুই মনে পড়ছে না। বাবা তাকে বাসায় নিয়ে এলেন। তখন থেকে সে আমাদের বাসায় থাকে। ঝিয়ের কাজ করে।

এ কী করে সম্ভব? মনটাই খারাপ হয়ে গেল আমার। আমি কিছু বলতে যাবÑ এমন সময় মাহমুদের ফোনে কল এলো। মাহমুদ বলল, দোস্ত, এক মিনিট...। বলেই সে ফোনে কথা বলতে বলতে পাশের রুমে চলে গেল।
তানিয়া যে কোথায় ছিল, জানি না। মাহমুদ পাশের রুমে চলে যাওয়ার পর দৌড়ে এসে খপ করে আমার হাত দুটি চেপে ধরল। বলল, দোহাই রব্বানি, আমার কথা কিছুই ওকে বলো না।
কেন?

বললে আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে।
আমি অবাক হয়ে বললাম, বলো কী? কেন?
আমার আর এই বাড়িতে থাকা হবে না।
তার মানে ওদেরকে তুমি মিথ্যা বলেছ। তোমার সবকিছুই মনে আছে।
হুম। মিথ্যা বলা ছাড়া আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কী হয়েছে একটু খুলে বলো তো?

তানিয়া বলল, জানো রব্বানি, বাবা আমাকে এনড্রয়েড ফোন কিনে দিলে আমি একটা ফেসবুক আইডি ওপেন করি। নতুন জগত। রঙিন জগত। ফেসবুককে খুব ইনজয় করতে লাগলাম। প্রতিদিন নিত্যনতুন ফেসবুক বন্ধু হতে লাগল। বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করতে লাগলাম। এদের মধ্যে একজনকে আমার খুব ভালো লাগল। নাম নিলয়। মডেল। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা ঢাকা শহরের বড় ব্যবসায়ী। একদিন নিলয় বলল, তানিয়া, আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আর তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। তুমি ঢাকায় চলে এসো। আমরা বিয়ে করব।

আমিও তখন নিলয়কে ভালোবেসে ফেলেছি। এতটাই ভালোবেসে ফেলেছি যে তাকে আর না বলতে পারলাম না। ঢাকায় আসার জন্য রাজি হয়ে গেলাম। একদিন বাবা-মা, লেখাপড়া সব ছেড়ে চলে এলাম ঢাকায়। নিলয়ের কাছে। কিন্তু আমি তখনো বুঝতে পারিনি ফেসবুক একটা ভারচুয়াল জগত। এখানে না জেনে, না বুঝে কাউকে বিশ্বাস করাটা বোকামি।
কাছে এসে দেখি নিলয় কিসের মডেল! কিসের বড় লোক বাবা-মায়ের সন্তান! সে বখাটে এক ছেলে। নেশা করে। ঘুরে বেড়ায়। আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাইলে সে আমাকে অত্যাচার করত। মারপিট করত। তারপর একদিন মেরে মেরে অজ্ঞান করে রাস্তার ডাস্টবিনের পাশে ফেলে রেখে চলে গেল। তারপরের কাহিনী তো তুমি নিজ কানেই শুনলে। বলে তানিয়া আবার আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। আমার হাত দুটি চেপে ধরে বলল, প্লিজ রব্বানি, তুমি আমার কথা মাহমুদ ভাইয়াকে কিছুই বলো না। তাহলে আমার বড্ড ক্ষতি হয়ে যাবে। মাথার উপরের ছাদটুকুও খসে পড়বে।

তানিয়ার কথা শুনে আমার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবলাম, হায়রে ফেসবুক!
মাহমুদ ফোনে কথা বলা শেষ করে এসে বলল, কী দোস্ত, সোনিয়ার সাথে এতক্ষণ কী কথা হচ্ছিল?
আমি অবাক হয়ে বললাম, সোনিয়া ! কোন সোনিয়া?
ওর নামই তো সোনিয়া। আমরা রেখেছি এই নাম।
ও, আচ্ছা।
কী কথা হচ্ছিল, শুনি?
চেষ্টা করছিলাম।
কী?
তার পূর্বের স্মৃতি মনে পড়ে কিনা?
কিছু বুঝতে পারলে?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, নাহ।
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর


আরো সংবাদ



premium cement