১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অন্তিম শয়ানে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

অন্তিম শয়ানে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া -

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে বহুবার এসেছেন স্ত্রী ও ছেলের হাত ধরে। ৬৪ ঘরের দাবায় চাল দিয়েছেন। জিতেছেন। ট্রফি নিয়েছেন। আড্ডা দিয়েছেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। গতকাল সকালেও এলেন। তবে নিথর দেহে। রঙিন পোশাকের জায়গায় সাদা কাফনে মোড়া। আগের দিন সন্ধ্যায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন দেশের দ্বিতীয় এই গ্র্যান্ডমাস্টার। গতকাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরাতন ভবনের সামনে জিয়ার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের অন্যতম কিংবদন্তি এই দাবাড়–র জানাযায় অংশ নেন শত শত ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক। আর হবেই না কেন- তিনি তো ১৭ কোটি মানুষের মাঝে সেরা পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের একজন।
সব খেলা মিলিয়ে দেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদকে শেষ শ্রদ্ধাতে জানাতে এসেছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই। জিয়ার জানাজায় এসেছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম অভিভাবক বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। জিয়ার পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। শাহেদ রেজার কথায়, ‘জিয়া শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব দাবা অঙ্গনে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। বিওএ আর্থিক ব্যাপারে তার পরিবাররে পাশে থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও জিয়ার পরিবারের জন্য আর্থিক বা অন্য যেকোনো প্রয়োজনে এগিয়ে আসব।’
দাবা ফেডারেশনের অন্যতম সহসভাপতি তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘গত শুক্রবার যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী (পাপন) জিয়ার বাসায় গিয়েছিলেন। এখন আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের আরেকজন অভিভাবক শাহেদ ভাই তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। একটি বড় আর্থিক অঙ্ক স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) করে পরিবারের একটি সাপোর্ট দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দাবা ফডারেশন ও আমরা ব্যক্তিগতভাবে নেবো।’

দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম জিয়ার চলে যাওয়া দাবার অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবেই দেখছেন,থ ‘অনেকেই টুর্নামেন্টের পুরস্কার ও নানা সুযোগ-সুবিধা কম হলে খেলতে চাইতেন না। জিয়া কখনোই এ রকম করেননি। সব টুর্নামেন্টেই তিনি অংশ নিতেন। যেন অন্যরা তার মাধ্যমে শিখতে পারে। আমাদের আলাদা একটি ফ্লোর পাওয়ার কথা ছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মধ্যেই। সেখানে গ্র্যান্ডমাস্টার কর্নারের পরিকল্পনা ছিল। সেটা যতদিন না হয়, আমরা বর্তমান ক্রীড়া কক্ষই জিয়ার নামে করার উদ্যোগ নেবো।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেও উন্নয়ন সেক্টরে চাকরি নেননি জিয়া। দাবা খেলে ও কোচিং করেই পরিবার চালিয়েছেন। তার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য বিসিএস ক্যাডারে যোগ দেননি স্বামীর দাবাপ্রেমের জন্যই। একমাত্র ছেলে তাহসিন তাজওয়ারও ফিদে মাস্টার।
জিয়ার জানাজায় এসেছিলেন দেশের দুই সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার আবদুল্লাহ আল রাকিব ও এনামুল হোসেন রাজীব। রাজীবের সাথে খেলতে খেলতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। রাজীবের মাথায় ঘুরেফিরে সেই স্মৃতি, ‘খেলায় ২৫ চাল পর্যন্ত হয়েছিল। জিয়া ভাইয়ের পজিশন ভালোই ছিল। একবারের জন্যও মনে হয়নি সে অসুস্থ বা একটু অন্য রকম। তার একটি চাল মনে হয়েছিল খুবই সাধারণ কিছুক্ষণ পর বুঝলাম খুবই ভালো চাল ছিল।’

দেশের চতুর্থ গ্র্যান্ডমাস্টার আবদুল্লাহ আল রাকিব মায়ের মৃত্যুর পর দাবা অঙ্গন থেকে দূরেই ছিলেন। প্রায় দুই বছর পর আবার এই আঙিনায় এসেছিলেন অগ্রজ জিয়াকে শেষবারের মতো দেখতে। তার কথায়, ‘বাংলাদেশের সেরা দাবাড়ু জিয়া ভাই। তার শূন্যস্থান পূরণ করার মতো নয়। একজন অতি সুশৃঙ্খল খেলোয়াড় ছিলেন। অলিম্পিয়াডে অনেক খেলেছি একসাথে। প্রতিপক্ষ নিয়ে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ ছিল।’
পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের মধ্যে জিয়া এবং রাজীবই কোচিং করান। খেলোয়াড় জিয়ার মতো কোচ জিয়াও ছিলেন সফল। রাজীবের কথায়, ‘তার বাসায় ভারত থেকে দাবাড়ুরা এসে খেলা শিখত। তার অনেক ছাত্র ভারতে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছে আরো অনেক টাইটেল জিতেছে। কোচ হিসেবেও তিনি অনেক সফল।’
জিয়ার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিওএ, দাবা ফেডারেশন, তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন না করলেও জিয়ার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন হ্যান্ডবল, অ্যাথলেটিক্স, ব্যাডমিন্টন, সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিভিন্ন ফেডারেশনের খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা। এনএসসি ভবনের নিচে জিয়ার লাশ আধঘণ্টার একটু বেশি সময় ছিল। এরপর মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের উদ্দেশে রওনা হয় জিয়ার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স। সেখানেই দাবাড়ু বাবা পয়গমের পাশে চিরশায়িত হন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান।

 


আরো সংবাদ



premium cement