১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অলিম্পিকে স্বর্ণ জিততে চান সাগর

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মায়ের সাথে আরচার সাগর ইসলাম : নয়া দিগন্ত -

স্বামী মরা সংসারে দুই ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে বহু কষ্টে চলছে সেলিনার জীবন। রাজশাহী শহরে বঙ্গবন্ধু কলেজের পাশে নিজের দেয়া চায়ের দোকান চালিয়ে চার সন্তানকে মানুষ করেছেন। এদের একজন সাগর ইসলাম এখন বাংলাদেশের গর্বিত আরচার। এবারের প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি কোটা প্লেস করা খেলোয়াড় তিনি। গতকাল আরচারি ফেডারেশনের উদ্যোগে সাগরকে দেয়া সংর্ধ্বনা অনুষ্ঠানে চা দোকান আর চার সন্তানকে টেনে নেয়ার কথা বলতেই চোখ ভিজে আসছিল সাগরের মা সেলিনার। পরোক্ষনেই নিজেকে সামলে সেলিনা বলেন, ‘আমি এখন সব কষ্ট ভুলে গিয়েছি। আমার ছেলে অলিম্পিক গেমসে কোয়ালিফাই করে দেশের মুখ উজ্জল করেছেন। এখন চাই সাগর যেন অলিম্পিকেও পদক পায়।’ সাগরের মায়ের এই চাওয়াটাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে আরচারি দলের স্পন্সর তীরের নির্বাহী পরিচালক জাফর উদ্দিন সিদ্দিকী এবং আরচারি ফেডারেশনের সভাপতি লে. জে. (অব:) মইনুল ইসলামের মুখে। আর সেই পদক বলতে সর্বনিম্ন ব্রোঞ্জ নয়। সাগর চান স্বর্ণ জিততে। বেশ দৃঢ়তার সাথে জানালেন বিকেএসপির এই আরচার। কাল এই অনুষ্ঠানে সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেন সাগরের হাতে।
ট্রাক চালক এবং মোটর মেকানিক বাবা শাহ আলম ১৫ বছর আগে মারা যান। সাগর তখন তিন বছর বয়সী। সংসারের হাল ধরতে চায়ের দোকান চালানো শুরু সেলিনার। এরপর তিন সন্তানকে বিয়ে দিয়েছেন। সাগরকে ভর্তি করিয়েছেন বিকেএসপিতে। এখন ইন্টার মিডিয়েটের প্রথম বর্ষে পড়ছেন।
সাগরের আরচারিতে আসার পেছনে বাড়ির কাছে থাকা এস বি আরচারি ক্লাবে চর্চা করেই। মায়ের উৎসাহেই সেই আরচারি ক্লাবে ভর্তি হওয়া। ২০১৯ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে ২০২১ সালে জাতীয় দলে ডাক পান রিকার্ভ ইভেন্টের এই খেলোয়াড়। আর প্রথম পদকের দেখা ২০২২ সালে তুরস্কের কোনিয়াতে অনুষ্ঠিত ইসলামী সলিডারিটি গেমসে রিকার্ভ দলতে ব্রোঞ্জ জয়ের মাধ্যমে। এরপর এশিয়া কাপে সিঙ্গাপুরে ব্রোঞ্জ এবং ইরাকের এশিয়া কাপের স্টেজ ওয়ানে দলগত এবং মিশ্র দলগততে রৌপ্য জয়। স্বভাবতই এবার তুরস্কের আন্তালিয়ায় পাওয়া অলিম্পিক কোটা প্লেসের ম্যাচে রৌপ্য জয়ই সেরা অর্জন। জানালেন সাগর। তবে কস্ট পেয়েছেন এবার দলগততে কোয়ালিফাই করতে না পেরে। সাগর উল্লেখ করলেন আন্তালিয়ায় দলগততে কোয়ার্টার ফাইনালে জিতলেও কোটা প্লেস হতো। তা না হওয়ায় ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।’ এর আগে কোটা প্লেস এর আসরে থাইল্যান্ডে সুযোগ মিস করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সাগরের লাকি গ্রাউন্ড তুরস্কে ধরা দিলো সেই সাফল্য।
এই অর্জনের জন্য জার্মান কোচ মার্টিন ফেডেরিখের অবদানের কথা উল্লেখ করেন সাগর। জানান, কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে কোচ পেছনে থেকে বারবার বলছিলেন ইনশাআল্লাহ তুমি পারবা। এই কথাগুলো বেশ উৎসাহ দিচ্ছিল। সাথে নিজেকে ঠিক রেখে স্বাভাবিকভাবে তীর ছুড়েছি।
টোকিও অলিম্পিক গেমসে রোমান সানা কোয়ালিফাই করার পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় আরচার প্যারিস অলিম্পিকে যাচ্ছেন। রোমানের সাথে দিয়া সিদ্দিকী টোকিও যান। মিশ্র দ্বৈতে রোমান ও দিয়া একটি ম্যাচ জিতে শেষ ১৬তে উঠে। এবার শুধুই সাগর। ফলে একাই তিনি দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চান। সাগর জানান কয়েক বছরের এই ক্যারিয়ারে এ বছর চীনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ১৭তম হয়ে আরো উৎসাহিত হন সামনে এগিয়ে যাওয়ার।


আরো সংবাদ



premium cement