১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অবশেষে বসুন্ধরা কিংসের ট্রেবল জয়

বসুন্ধরা কিংস ২-১ মোহামেডান
স্বাধীনতা কাপ, লিগ শিরোপা জয়ের পর গতকাল ফেডারেশন কাপেও চ্যাম্পিয়ন। ফাইনাল শেষে তাই ট্রফি হাতে বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলারদের বাঁধ ভাঙা উল্লাস : বাফুফে -

২০১৮ সাল থেকেই বাংলাদেশের ফুটবলের প্রধান শক্তি বসুন্ধরা কিংস। তাদের আগমনের পর আর কোনো দলই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ঘরে আছে ফেডারেশন কাপ এবং স্বাধীনতা কাপ ট্রফিও। তবে এক মৌসুমের তিন ট্রফি জেতা আর হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত এবার ধরা ছিল ট্রেবল জয়ের সেই অনন্য কৃতিত্ব। গতকাল ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার। ফলে ২০২৩-২৪ সিজনে একই সাথে বিপিএল, স্বাধীনতা কাপ এবং ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন তারা। এর আগে ২০১২-১৩ সিজনে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র এবং ২০০২ সিজনে ট্রেবল জিতেছিল মোহামেডান। উল্লেখ্য, এবার এই মোহামেডানকে হারিয়েই স্বাধীনতা কাপ জয় করে অস্কার ব্রুজনের দল। তাদের লিগ শিরোপাও নিশ্চিত হয়েছিল মোহামেডানকে হারিয়ে। অন্য দিকে ১৪ বছর পর গত সিজনে ফেডারেশন কাপ জিতেছিল মোহামেডান। এবার আর তা ধরে রাখা গেল না আলফাজ আহমেদদের।
২০১৮-১৯ সিজনে বসুন্ধরা কিংস বিপিএল এবং স্বাধীনতা কাপ জিতলেও পারেনি ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হতে। ঘটনাবহুল ফাইনালে তাদের হারতে হয়েছিল ঢাকা আবাহনীর কাছে। ২০১৯-২০ এ বসুন্ধরা কিংস ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হলেও করোনার জন্য লিগ শেষ হয়নি। স্বাধীনতা কাপও ছিল ফাইলবন্দী। ২০২০-২১ এ বসুন্ধরা কিংস লিগ এবং ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়। স্বাধীনতা কাপ হয়নি। ২০২১-২২ এ বসুন্ধরা কিংস শুধুই লিগ জিতেছিল। স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে হারে ঢাকা আবাহনীর কাছে। আর কমলাপুর স্টেডিয়ামের অনুপযুক্ত টার্ফে খেলতে অস্বীকৃতি ফেডারেশন কাপে। গত সিজনে তাদের মোহামেডানের কাছে সেমিতে হার ফেডারেশন কাপে।
কাল ফেডারেশন কাপের ফাইনালে দারুণ লড়াই হয়েছিল বসুন্ধরা কিংস এবং মোহামেডানের কিপারের মধ্যে। বসুন্ধরার গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ এবং তার কাউন্টার পার্ট সুজন হোসেনের এই প্রতিরোধেই ম্যাচ গড়ায় ৯০ মিনিট গড়িয়ে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। তবে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে সুজনের ভুলেই লিড আদায় রবসন রবিনহোদের। এই গোলই ট্রেবল নিশ্চিত করে দেশ সেরা ক্লাবটির। অবশ্য বসুন্ধরার মিগুয়েল ফিগেইরোর কর্নার কিক ধরতে গিয়ে তা হাত ফসকে যায় সুজনের। সেই বলে আলতো শট নিয়ে গোল করেন বদলি জাহিদ হোসেন। তবে এই গোলের প্রতিবাদ করে বেশ কিছুক্ষণ খেলতে অস্বীকৃতি জানায় মোহামেডান। তাদের অভিযোগ সুজন বল ধরার সময় বসুন্ধরার বাবুরবেগ ধাক্কা দেন সোলেমান দিয়াবাতেকে। এতে সোলেমান গিয়ে পড়ে সুজনের গায়ে। ফলে বল হাত থেকে বেরিয়ে যায় সুজনের। এ নিয়ে রেফারিকে ঘিরে ধরে মোহামেডানের খেলোয়াড়রা। একপর্যায়ে বসুন্ধরার কোচ অস্কার ব্রুজনের সাথে তর্কে জড়ান মোহামেডান ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব। পরে তারা মাঠে ফেরে। সাদা কালোদের শেষ সুযোগ ছিল অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে। তবে শাহরিয়ার ইমনের শট পোস্ট ঘেঁষে গেলে হারের মাঠ ছাড়তে হয়।
এই ফাইনালের আকর্ষণীয় সময় গেছে পুরো দ্বিতীয়ার্ধে। মিডফিল্ডার শাহরিয়ার ইমন মাঠে নামার পর মোহামেডানের আক্রমণে গতি আসে। তার পাস থেকেই দুইজনকে পরাস্ত করে বামপায়ের তীব্র শটে শ্রাবণকে পরাস্ত করেন নাইজেরিয়ান ইমানুয়েল সানডে। অবশ্য এর আগে তিনি শাহরিয়ান ইমন, গফুরভ এবং সোলেমান দিয়াবাতের তিনটি প্রচেষ্টা রুখে দেন। ৬৩ মিনিটে এগিয়ে যাওয়া মোহামেডানের সোলেমান ৮১ মিনিটে ব্যবধান দিগুণ করতে পারেননি শ্রাবণের বাধায়। এর আগে ৭৬ মিনিটে ডরিয়েলটন ও ৮০ ও ৮৪ মিনিটে রবিনহোর শট রুখে দেন সুজন। পরের শটটি সুজনের হাতের ছোঁয়া নিয়ে পোস্টে লাগে। এতে মোহামেডান শিরোপা ধরে রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বসী হয়ে ওঠে। তবে ৮৮ মিনিটে মিগুয়েল ফিগেইরোর চারজনকে কাটিয়ে নেয়া শটে কিছুই করতে পারেননি সুজন। এতে সমতা আনা বসুন্ধরা শেষ পর্যন্ত ফের মোহামেডানের উপর দাপট দেখায়। ৯৩ মিনিটে সোলেমানের প্রচেস্টায় বসুন্ধরার শেষ প্রহরী বাধা না হলে চিত্র হতো ভিন্ন। এরপর ১০৪ মিনিটে রবিনহোর শট দুর্দান্ত কায়দায় কর্নার করে সাদাকালোদের ম্যাচেই রাখেন সুজন। কিন্তু ১০৫ মিনিটের ভুলে সব শেষ।
এতে তৃতীয়বারের মতো ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হলো বসুন্ধরা কিংস। আর মোহামেডান পারল না এই আসরের ১২তম ট্রফি জিততে। আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন- বসুন্ধরা কিংসের রবসন রবিনহো। সেরা গোলরক্ষক শ্রাবণ। আর ফাইনালে সেরা মিগুয়েল ফিগেইরো। সর্বোচ্চ গোলদাতা ঢাকা আবাহনীর ওয়াশিংটন। ম্যাচ শেষে ট্রফি প্রদান করেন বাফুফের সহসভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান।


আরো সংবাদ



premium cement