১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গর্জনে কতটা প্রস্তুত টাইগাররা

-

টি-২০ বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে অন্যরকম আবহ। চলতি বছরের জুনেই মাঠে গড়াতে যাচ্ছে খেলা। ব্যস্ত সময় পার করছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোরর ক্রিকেট বোর্ডগুলোও। আসন্ন এই বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রস্তুতিস্বরূপ একে-অপরের সাথে সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন অংশগ্রহণকারী দলগুলো। তবে এ দিক থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটটা একটু ভিন্ন। কারণ বাংলাদেশ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে সিরিজ তো খেলছে ঠিকই, তবে যাদের সাথে খেলছে তারা এবার বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি। তাতেই যত প্রশ্ন। নিজেদের যাচাই করতে দরকার আরো ওপরের সারির দল। ধরি মাছ না ছুই পানি নীতিতে চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। একবার বলছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। আবার বলছে এটা এফটিপির সিরিজ। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সিরিজ হবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। আবার এটি নিয়েও দ্বিধা। বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ওটি হবে কন্ডিশনিং সিরিজ। আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতেই যত চেষ্টা।
আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রস্তুতি হিসেবে জিম্বাবুয়ের সাথে পাঁচ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। যেখানে এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচ ইতোমধ্যেই মাঠে গড়িয়েছে। আর সবটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। তবে তারপরেও যেন স্বস্তি নেই টাইগার শিবিরে। কারণ এই সিরিজের ম্যাচগুলোতে টাইগার ব্যাটারদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে এটি বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নয়, বরং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জেতাটাই মূল লক্ষ্য। ফলে যে দলটা উগান্ডার কাছে হেরে এসেছে সেই জিম্বাবুয়েও যেন শান্ত-লিটন-হৃদয়দের কাছে শক্তিশালী একটা প্রতিপক্ষ।
চলতি বছরে শ্রীলঙ্কানদের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক খেলায় মাঠে নেমেছিল টাইগাররা। যেখানে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে ঘরের মাঠে সিরিজ খুইয়েছিল তারা। তাই বিশ্বকাপের আগে দলের মূল ব্যাটারদের ফর্মে ফেরানো জরুরি মনে করেছিল বিসিবি। তবে জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজে সে কথা ভুলে গেছেন কোচ এবং অধিনায়ক।
সাধারণত দেশের মধ্যে খেলা হলে চট্টগ্রামের উইকেটে রানখরা থাকে না। যার ফলে চার-ছক্কার বিশ্বকাপের জন্য ব্যাটিং প্রস্তুতিটা সেখানে ভালোভাবেই সেরে নিতো পারত টাইগাররা। কিন্তু সেখানে টানা দুই ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট কারার সুযোগ পেয়েও ফিল্ডিং নিয়েছিলেন শান্ত। আগে ব্যাট করে যেখানে বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের পাওয়ার প্লেতে দ্রুত রান তোলার অভ্যাস গড়ে নিতেই পারত বাংলাদেশ। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগারদের ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রথম ম্যাচে ১২৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লেতে এক উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৫ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ম্যাচে শুধু তৌহিদ হৃদয় (১৪৮.০০) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১৬২.৫০) টি-২০ মেজাজে ব্যাট করেছেন। অন্য দিকে ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো করলেও ৯২ স্ট্রাইক রেটে ২৫ বলে ২৩ রান করে আউট হন লিটন। ৯৪.৭৩ স্ট্রাইক রেটে ১৯ বলে ১৮ রান করেন তানজিদ তামিম। ১৫ বলে ১৬ করেন শান্ত। তবে চতুর্থ ম্যাচে তানজিদের ব্যাট হেসেছে। এ দিন অফফর্মের কারণে লিটনকে ড্রপ করে সৌম্যকে নেয়া হয়েছিল। আর সৌম্য সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়েছেন। তাদের জুটি দ্রুতই শতকের ঘরে পৌঁছায়। তবে শতকের পরই যেন আবার সেই উইকেট হারানোর মিছিল। ৪২ রানের মধ্যে ১০টি উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগারদের ব্যাটিংয়ে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বিশ্বকাপের জন্য কতটা প্রস্তুত লিটন-শান্ত-তামিমরা? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরছে ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের মনে। চট্টগ্রামের ব্যাটিং উইকেটে আগে ব্যাট করলে চাপ মুক্তভাবে ব্যাট করে রানে ফেরার সুযোগ ছিল লিটনের সামনেও। সুযোগ ছিল মূল ম্যাচে নিজেদের পাওয়ার হিটিংয়ের দক্ষতা পরখ করে দেখে নেয়ার। বিশ্বকাপের আগে কয়েকটা ম্যাচে ২০০ প্লাস স্কোর গড়তে পারলে ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাসটাও বাড়ত। কিন্তু সবকিছুর বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট। বোলিংয়ে তাসকিন-শরিফুলরা সামর্থ্যরে প্রমাণ দিলেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রক্ষণাত্মক ব্যাটিং প্রমাণ করে টাইগারদের ব্যাটিং দুর্বলতা অনেক গভীরে। যা থেকে উত্তরণের উপায় পাচ্ছে না। আদর্শ ব্যাটিং বলতে যা বুঝায় সেটিও অনুপস্থিত। নড়বড়ে মানসিকতা নিয়ে বিশ্বকাপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গর্জনে কতটা প্রস্তুত টাইগাররা।


আরো সংবাদ



premium cement