১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ষাটোর্ধ্ব ২ কোচের বাজিমাত

-

বয়স হয়ে গেলে অনেকেই চলে যান বাতিলের খাতায়। সেটা কোচ, ফুটবলার উভয় ক্ষেত্রেই। বাংলাদেশ ফুটবল কোচিংয়ে এখন তারুণ্যের জয়জয়কার। উঠতি অনেক কোচই এখন বিভিন্ন লেভেলে কোচিং করাচ্ছেন। ফলে বিপিএলে ক্লাব পাননি অনেক নামীদামি কোচ। সাথে ক্লাবগুলোর বিদেশী কোচের প্রতি অতি আগ্রহ তো আছেই। সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগেও আবির্ভাব নতুন নতুন কোচের। উত্তরা এফসির ডাগ আউটে ছিলেন সেনাবাহিনীর সাবেক ফুটবলার আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। পিডব্লিউডির দায়িত্ব বর্তেছিল দুই উঠতি এবং কয়েক বছর আগে খেলা ছাড়া শাহানুর রহমান রনি এবং আনোয়ার হোসেনের ওপর। দু’জনেই নবীন কোচ। এই নবীন এবং অন্য অভিজ্ঞ কোচদের টপকেই এবারে বিসিএলে সাফল্য পেয়েছেন ষাটোর্ধ্ব দুই কোচ। একজন ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের আবু ইউসুফ। অন্য জন ইয়ংমেন্সের ইমতিয়াজ খান লাবু। ইউসুফের বয়স ৬৮। ৬৪ বছর বয়স নিয়ে ডাগ আউটে দাঁড়ান লাবু। লাবুর কোচিংয়ে ইয়াংমেন্স ক্লাব ফকিরেরপুল এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বিসিএলে। আর ওয়ান্ডারার্সের দখলে রানার্সআপের ট্রফি।
দেশ সেরা কোচ হয়েও এবার বিপিএলে কোন ক্লাব পাননি মারুফুল হক, শফিকুল ইসলাম মানিক এবং সাইফুল বারী টিটু। টিটু অবশ্য বর্তমানে বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। এর আগে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অন্তবর্তী কোচ ছিলেন। এতেই তিনি বাংলাদেশ দলকে অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব ১৯ সাফে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। মারুফ আছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর উপদেষ্টা কোচ হিসেবে। শফিকুল ইসলাম মানিক এবার ক্লাবহীন। আবার জুনিয়র ও সিনিয়র ডিভিশনে সাফল্য কোচ আরমান হোসাইন এবারের বিসিএলে কোনো ক্লাবেই কাজ করতে পারেননি। তা পারিশ্রমিক নিয়ে বনিবনা না হওয়ায়।
সেখানে কারো কারো মতে, বাতিলের খাতায় চলে যাওয়া ইউসুফ প্রিমিয়ারে তুলেছেন ওয়ান্ডারার্সকে। ফলে প্রথমবারের মতো পেশাদার লিগের শীর্ষ পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছে শত বছরের পুরনো ক্লাবটি। অন্য দিকে ফের বিসিএলে চ্যাম্পিয়ন ইয়ংমেন্স। এবার এই দলের হেড কোচ ছিলেন লাবু। ২০১৫-১৬ সিজনেও দলটি বিসিএলে শিরোপা জিতেছিল। তখন তারা প্রিমিয়ারে খেলেনি। আর লাবু ছিলেন সেই দলের সহকারী কোচ।
ঢাকার ফুটবলে একসময়ের টানা ৫ শিরোপা জয়ী অর্থাৎ প্রথম হ্যাটট্রিক লিগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স মধ্যে কক্ষচ্যুত হয়। এরপর ২০০৩ সালে ঢাকা প্রিমিয়ারে লিগে উঠলেও ২০০৬ সালে নেমে যায়। এরপর জুনিয়র এবং সিনিয়ার ডিভিশনেই ছিল। কখনো বিপিএলে খেলা যোগ্যতা অর্জন করেনি। এবার বিসিএলে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে প্রিমিয়ার উঠেছে। আর এর নেপথ্যে কোচ আবু ইউসুফ। জাতীয় দলের সাবেক কৃতী তারকা ডিফেন্ডার সাবেক অধিনায়ক ইউসুফ ১৯৯৫ সালে কোচিং এ আসেন। এরপর ১৯৯৮ সালে প্রথম দফা এবং পরে ২০০৮ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ এবং সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। মধ্যে বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় দলেরও হেড কোচ ছিলেন তিনি। ইউসুফ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী, মোহামেডান, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কোচ ছিলেন। এরপর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব এবং ফেনী সকারের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। এক সময় ইউসুফকে বলা হতো চ্যাম্পিয়ন কোচ। অর্থাৎ যখন যে দলকে কোচিং করাতেন, সেই দলই চ্যাম্পিয়ন হতো। আবাহনী, মোহামেডানকে তিনি অবশ্য বিভিন্ন টুর্নামেন্টে শিরোপা পাইয়ে দিয়েছেন। তবে প্রিমিয়ারে কখনই লিগ শিরোপা জেতা হয়নি কোচ হিসেবে। এ নিয়ে আফসোস আছেই।
ইমতিয়াজ খান বাবু অবশ্য কখনোই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে কোন লেভেলে কোচিং করাতে পারেননি। তার দাপট সিনিয়র এবং জুনিয়র ডিভিশনে। এ পর্যন্ত ১৯ থেকে ২০ বার বিভিন্ন দলকে তিনি চ্যাম্পিয়ন অথবা রানার্সআপ করে একটি ডিভিশন থেকে আরেক ডিভিশনে তুলেছেন। বি লাইসেন্সধারী কোচ লাবু কখনো খেলতে পারেননি জাতীয় দলে। দু-একবার জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন সাবেক এই মিটফিল্ডার। তবে ৪০ জনের প্রাথমিক তালিকা পর্যন্তই।
এবার তারা বুড়ো বয়সের ভেলকি দেখালেন বিসিএলে। কোচ আবু ইউসুফ এর মতে আমি যে এখনো শেষ হয়ে যায়নি, ওল্ড ইজ গোল্ড সেটাই প্রমাণ করলাম। আমাকে অনেকে মনে করে বুড়ো হয়ে, গেছি বাতিলের খাতায়, আর চলে না সেটা মিথ্যা প্রমাণ করেছি এবার।
তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘আমার তো এই জায়গায় থাকার কথা না। কিন্তু আমি অনেক অন্যায়ের সাথে আপস করি না বলেই আমাকে অনেকেই শত্রু মনে করে। এর পরও আমি টিকে আছি।’ লাবুর আশাবাদ তিনি আগামীতেও বিপিএলে ইয়ংমেন্সের দায়িত্বে থাকবেন। জানান, আমার তো ইচ্ছে এই দলের সাথে থাকার। বাকিটা ক্লাব কর্তৃপক্ষের ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে।


আরো সংবাদ



premium cement