টাকার জন্যই গোলকিপিং ছেড়ে স্ট্রাইকার হয়েছি
রাফায়েল টুডু : বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্সশিপ লিগে প্রথম সাঁওতাল হ্যাটট্রিককারী- রফিকুল হায়দার ফরহাদ
- ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:৪৭
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে স্ট্রাইকিং পজিশন ছেড়ে পরে গোলরক্ষক হওয়ার নজির আছে। সাবেক গোলরক্ষক মিনার আগে ফরোয়ার্ড ছিলেন। কোচ শেখ জাহিদুর রহমান মিলন একসময় স্ট্রাইকার ছিলেন। পরে হয়ে যান গোলরক্ষক। এবার এবিজি বসুন্ধরা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে (বিসিএল) পাওয়া গেল তেমনি এক ফুটবলারকে। যিনি আগে ছিলেন গোলরক্ষক। এখন তিনি সফল স্ট্রাইকার। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগেই-ই তিনি খেলেছিলেন গোলরক্ষক হিসেবে। এরপর সিনিয়ার ডিভিশনেও এই পজিশনে খেলা। সেই রাফায়েল টুডু এবারের বিসিএলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা। ইয়ংমেন্স ক্লাব ফকিরেরপুলকে বিসিএলের চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইটে রেখেছেন এই রাজশাহীর ফরোয়ার্ড। একটি হ্যাটট্রিকসহ ১২ গোল তার।
২০২০-২১ সিজনে তিনি বিসিএলে খেলেন ভিক্টোরিয়ার হয়ে। গোলকিপিং করেছেন। তবে নিয়মিত নন। ছিলেন দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক। এই রিজার্ভ গোল্ডরক্ষক হিসেবেই কয়েক ম্যাচে মাঠে নামা। এরপর ভিক্টোরিয়া সিনিয়র ডিভিশনে নেমে গেলে সেই সিনিয়র ডিভিশনেও তিনি গোলকিপিং করেছেন শতবছরের পুরনো এই ক্লাবের জার্সি গায়ে।
সেই রাফায়েল টুডু এখন স্ট্রাইকার। কিভাবে এই পজিশন বদল করা। রাফায়েল টুডু জানান, আমি যখন দেখলাম গোল কিপিং করে বেশিদূর এগোতে পারব না তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম, আর গোলরক্ষক পজিশনে নয়। খেলব স্ট্রাইকিং পজিশনে। জেলা পর্যায়ে আমি বিভিন্ন টুর্নামেন্টে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতাম এবং গোলও পেতাম। সেটাও আমাকে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে আত্মবিশ্বাসী করে।’ রাফায়েল তথ্য দেন, স্ট্রাইকার হওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে আর্থিক বিষয়কও। খ্যাপে গোলকিপার হিসেবে খেলতে গেলে এক থেকে দেড় হাজার টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু স্ট্রাইকার হিসেবে খেললে ১৫-২০ হাজার টাকা জোটে প্রতি ম্যাচে। তাই সবকিছু ভেবেই আমি স্ট্রাইকার হয়েছি। সে সাথে এবারের লিগে আমি হ্যাটট্রিকও করেছি ইয়ংমেন্সের হয়ে।
এই হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে রাফায়েল টুডু একটি রেকর্ডও করেছেন। তিনি সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সন্তান। আর বিসিএলে প্রথম সাঁতার খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিককারী তিনি। বাফুফে আয়োজিত লিগে অনেক সাঁওতাল খেলোয়াড় আছে। হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস তো জাতীয় দলেও খেলেছেন। সুমন সরেন বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে রাফায়েল টুডুর এখনো সুযোগ হয়নি লাল-সবুজ জার্সি গায়ে তোলার। তবে আশা করছেন এবারের বিসিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি ডাক পাবেন জাতীয় দলে।
ঢাকার ফুটবলের সাবেক খেলোয়াড় ভিক্টোরিয়ার ডিফেন্ডার মমিনুল হক জেটের রাজশাহী কিশোর অ্যাকাডেমি থেকে ফুটবলে হাতে খড়ি রাফায়েলের। রাজশাহীতে অবস্থিত এই অ্যাকাডেমি। এবার ইয়ংমেন্স দলে জেটের অ্যাকাডেমির আরো দু’জন সাঁওতাল খেলোয়াড় খেলছেন। ওই দু’জন খেলেন মিডফিল্ডে আর রাফায়েল স্ট্রাইকার। ঢাকার ফুটবলে এই প্রথম হ্যাটট্রিক রাফায়েলের। জানান, আমি বিসিএলে প্রথম সাঁওতাল হ্যাটট্রিককারী। তাই আমি আমার জাতি গোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধি খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে আরো এগিয়ে নিতে চাই। ইন্টারমিডিয়েট পাশ রাফায়েলকে প্রথমে কোচ মুমিনুল হক জেড কোনোভাবেই তাকে স্ট্রাইকার হতে দিতে চাচ্ছিলেন না। তাকে গোলরক্ষক হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ফলে রাফায়েল যখন কোচের কাছে নিজের সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানান তখন সম্মতি মেলেনি জেট এর কাছ থেকে। তিনি বরং রাফায়েলকে গোলকিপিং করতেই বলেন। কিন্তু রাফায়েল তা মানতে পারেননি। ঘটনাক্রমে রাজশাহীর একটি টুর্নামেন্টে জেটের অ্যাকাডেমির বিপক্ষেই স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন রাফায়েল। সে ম্যাচে একটি গোলও পান তিনি। এতেই কোচ তাকে সম্মতি দেন গোলকিপিং ছেড়ে স্ট্রাইকার হতে। এভাবেই এখন এগিয়ে চলা রাফায়েলের।
রাজশাহীর লিগেও তিনি খেলেছেন স্ট্রাইকার হিসেবে। গোল আছে তার। এক লিগে চার গোল করেন। আবার গোলকিপিংয়ে সাফল্য আছে বিভিন্ন পর্যায়ে। একটি খ্যাপের টুর্নামেন্টে টাইব্রেকার ঠেকিয়ে দলের জয় সুগম করেন তিনি। এরপর তার সতীর্থ গোল করে দলকে শিরোপা পাইয়ে দেন। রাফায়েল জানান সেই সাফল্যের জন্য আমি দেড় হাজার টাকা পেয়েছিলাম। তবে স্ট্রাইকার হওয়ার পর খ্যাপের টাকা বেড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত খ্যাপ খেলে তিন লাখ টাকার মতো আয় করেছেন এই উঠতি স্ট্রাইকার।
রাফায়েলের বয়স এখন ২২। ফলে অনূর্ধ্ব-২৩ ছাড়া অন্য কোনো বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলার কোনো সুযোগ নেই। তাই এখন লক্ষ্য অনূর্ধ্ব ২৩ অথবা সিনিয়র জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া। তিনি জানান, আমি এবার বিসিএল হ্যাটট্রিক করার পর আমার সাঁওতাল জাতি থেকেও অভিনন্দন এসেছে। তারা আমাকে উৎসাহ দিচ্ছে আমি যেন সাঁওতাল জাতির মুখ উজ্জ্বল করতে পারি ফুটবলে প্রতিষ্ঠিত থেকে।
বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রামের ফুটবলারদের মতো রাফায়েলেরও এত সহজ ছিল না ফুটবলে আসা। নিজ বাড়ি থেকে জেটের ফুটবল অ্যাকাডেমিতে যেতে দিনে অটোতে ৯০ টাকা লাগত। অনেকদিনই তার প্র্যাকটিসে যাওয়া হয়নি টাকার অভাবে। পরে অবশ্য খেপের টাকা থেকেই এই অ্যাকাডেমিতে অনুশীলনে যাওয়ার খরচ জোগাড় করতেন রাফায়েল।
আজ বিসিএলে ইয়ংমেন্সের শেষ ম্যাচ পিডব্লিউডি বিপক্ষে। এই ম্যাচে তার দল ড্র করলেই উঠবে প্রিমিয়ারে। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে গোল চান তিনি। যা তার সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার মিশনকে সফল করবে। উল্লেখ্য, আগের ম্যাচে ফরাশগঞ্জের বিপক্ষে তার গোল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় বল পোস্টে লেগে। সেই আফসোস এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
রাফালের দল যদি বিপিএলে ওঠে অথবা তিনি যদি আগামী মৌসুমে বিপিএলের কোন ক্লাবে ডাক পান তখন চ্যালেঞ্জ হবে বিদেশী ফরোয়ার্ডরা। হয়তো বিদেশী স্ট্রাইকারদের ভিড়ে তাকেও পছন্দের পজিশন ছেড়ে অন্যত্র খেলতে হবে। মানে মিডফিল্ড, ডিফেন্ডার অথবা উইংব্যাকে। তবে রাফায়েলের আশাবাদ তিনি বিপিএলের চান্স পেলে স্ট্রাইকিং পজিশনে খেলবেন বিদেশীদের সাথে টক্কর দিয়েই। তার অনুধাবন এখন তো জাতীয় দলে স্ট্রাইকার নেই। ক্লাব ফুটবলেও বিদেশীদের দাপটে দেশী স্ট্রাইকাররা অন্য পজিশনে খেলছেন। তাই বিপিএলে ডাক পেলে আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েই স্ট্রাইকিং পজিশনটা ধরে রাখব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা