১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দলের জন্য খেললে পরিসংখ্যান এমনিতেই সমৃদ্ধ হবে : মুমিনুল

-

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজে আলোচনায় সবার আগে টাইগারদের ব্যাটিং ধস। ব্যাটারদের টেস্টসুলভ ব্যাটিং না করা, থিতু হয়েও আউট হওয়ার দৃষ্টিকটু ছবিগুলোই চোখে ভাসতে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন মুমিনুল হক। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েও সিলেট ও চট্টগ্রাম টেস্টে বুক চেতিয়ে লড়াই করে গেছেন। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে অন্ধকার ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন আলোর রেখা। দুই টেস্টে দুই অর্ধশতকে ১৭৫ রান করা মুমিনুলই সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তার অপরাজিত ৮৭ রানের ইনিংসটি তো স্রোতের বিপরীতে লড়াই করার দারুণ এক উদাহরণ।
শ্রীলঙ্কা সিরিজে মুমিনুল একটা মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে পূর্ণ করেছেন টেস্ট ক্রিকেটে চার হাজার রান (৪০৫৮)। এই বাঁহাতির আগে চার হাজারি ক্লাবে নাম উঠিয়েছেন মুশফিকুর রহিম (৫৬৭৬), তামিম ইকবাল (৫১৩৪) ও সাকিব আল হাসান (৪৫০৫)। এই তিন ব্যাটারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে বেশি মুমিনুলেরই। ৩২ বছর বয়সী মুমিনুলের ব্যাটিংয়ের মূল শক্তি টাইমিং। অবশ্য মুমিনুল ভবিষ্যতের সম্ভাব্য অর্জন নিয়ে আলোচনায় খুব একটা আগ্রহী নন। ২২ গজে ব্যাট হাতে যেমন, মাঠের বাইরেও তেমনই সহজ সরল। সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল এলে সাংবাদিকরা একটু নাখোশই হন। কারণ তাকে দিয়ে বেশি কথা বলাতে পারেন না। প্রশ্নের কাটছাঁট জবাবই মুমিনুলের পছন্দ।
৪ হাজার টেস্ট রান নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা বা আগ্রহ উদ্দীপনা কিছুই নেই। ‘ও রকম কিছু মাথায় ছিল না। খেলার মধ্যে থাকলে পরিসংখ্যানে ধ্যান থাকে না। আমার ৪ হাজার রান হয়েছে, এটা জেনেছি মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে লেখা ওঠার পর।’
৪ হাজারের পরের গন্তব্য নিয়েও তাই চিন্তা নেই তার মনে। টেস্ট ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যখন পরিসংখ্যান নিয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করবেন, তখন এসব মাথায় কাজ করতে পারে। আমি সে রকম নই। এভাবে খেলাও যায় না। দলের জন্য খেলে গেলে পরিসংখ্যান এমনিতেই সমৃদ্ধ হবে।’
মুমিনুল এই একটি সংস্করণেই খেলে থাকেন। তাই তার মনোযোগও কখনো সরে যায় না। লাল বল, সাদা বল দুই ক্রিকেটেই খেলা অন্য ক্রিকেটারদের মতো বারবার মানিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জও নেই। সাদা বলের ক্রিকেট বলতে প্রিমিয়ার লিগটাই খেলেন বেশি। খেলা না থাকলে তাই নিয়মিত লাল বলের অনুশীলন চালিয়ে যান। মুমিনুলের টেস্টের ভবিষ্যতের আলোচনায় দেশের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলার প্রসঙ্গ আসাটাই স্বাভাবিক। ৬১ টেস্ট খেলা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের কাছে তিন অঙ্কের ওই সংখ্যাও দূরের কল্পনাই মনে হয়। ‘বাংলাদেশ খুব বেশি টেস্ট খেলে না। এই বছর আর ৮টি টেস্ট আছে, পরের বছর ৫টি। তার পরের বছর কয়টি টেস্ট হবে, কে জানে। ১০০ টেস্ট খেলতে পারব কি না জানি না, আল্লাহই ভালো জানেন।’
বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান টেস্ট ক্রিকেটে, ‘আমার একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশে টেস্ট ক্রিকেটটাকে ওপরে নিয়ে যাওয়া। যে জায়গায় এখন আছে, সেখান থেকে পরের ধাপে নিয়ে যেতে চাই। এটা ব্যক্তিগত কিছু নয়। আমি যখন বৃহৎ পরিসরে চিন্তা করবেন, তখন কঠিন চ্যালেঞ্জও কিছুটা সহজ হয়ে যায়। দলের জন্য খেলে গেলে পরিসংখ্যান এমনিতেই সমৃদ্ধ হবে’।
টেস্টে বাংলাদেশের জন্য সামনে আক্ষরিক অর্থেই কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এ বছর বাংলাদেশ টেস্ট খেলবে পাকিস্তান, ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় দলের বিপক্ষে ছয় মাসের মধ্যে খেলতে হবে ৮টি টেস্ট। মুমিনুল তবু ইতিবাচক, ‘সব টেস্টই চ্যালেঞ্জিং। বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলার সুবিধাও আছে। যখন জানবেন প্রতিপক্ষ অনেক শক্তিশালী, তখন সব দিক থেকে সতর্ক থাকবেন।’


আরো সংবাদ



premium cement