১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভেবে দেখার সময় এসেছে

-

দুই যুগের টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অর্জন-বিসর্জন, আনন্দ-বেদনা, উন্নতি-অবনতির হিসাব মেলানোর সময় এসে গেছে। ২৪ বছর বয়সে এসে কেউ যদি নাবালকের মতো আচরণ করে তাহলে সেটা হাস্যকর। মর্যাদায় আঘাত। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের শিশুতোষ ভুল এবং মানিয়ে নিতে না পারার ক্রমাগত ব্যর্থতায় ভুয়া ভুয়া স্লোগানের শামিল বৈকি। ব্যক্তিগত কৃতিত্বের কল্যাণে পেছনের দুই যুগের টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ কখনো হয়তো মর্যাদাপূর্ণ শিরোনাম পেয়েছে। তবে বেশির ভাগ সময় দেখতে হয়েছে উল্টোপিঠ। দিন শেষে সাফল্যের হিসাব হয় ফলাফল দিয়েই। সাফল্য যোগ না হলে সেই পরিশ্রম কেউ মনে রাখে না। টেস্ট ক্রিকেটের সেই অঙ্কে বাংলাদেশ একেবারে শুরুর সময় থেকে পিছিয়ে। ২৪ বছর ধরে টেস্ট খেলে এখনো প্রাইমারির তকমা দিয়ে চলা অন্যায়। দুই যুগে হিসাবটা পরিষ্কার। কিছু কীর্তি আছে। তবে বেশির ভাগ সময় কেটেছে ব্যর্থতায়, বেদনায়।
২৪ বছরে ১৪২ টেস্টে হার ১০৫ টিতে। জয় মোটে ১৯ টেস্টে। ড্র ১৮টি। তাতেও আবার বৃষ্টির কৃপা আছে বেশ! দুই যুগের টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ ব্যর্থ, ভয়াবহভাবে ব্যর্থ! টেস্টে পা রাখার সেই শুরুর দিনগুলোতে বাংলাদেশ ম্যাচ পাঁচ দিনে নিয়ে যেতে পারলেই মনে করা হতো অনেক কৃতিত্ব অর্জিত হয়েছে। ২৪ বছর পরে সেই কৃতিত্বেই অনেক প্রাপ্তি ও সুখ খুঁজে বেড়ায় বাংলাদেশ দল! সাগরিকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ দিনে ম্যাচ নিয়ে যাওয়াও কি সেই কৃতিত্বের অংশীদার।
কেন ভালো করতে পারি না? অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক সবাই আরেকবার বলছেন, আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট ঠিক করতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভালো করার মূল প্রস্তুতির মঞ্চ দেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট। কিন্তু যে পরিবেশ পরিস্থিতি ও উইকেটে দেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট হচ্ছে, সেখানে যে মানের প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
চট্টগ্রামে ১৯২ রানে হারা ম্যাচে মুমিনুল হক প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আপনার কাছে কি মনে হয় ফার্স্ট ক্লাস ও আন্তর্জাতিক ম্যাচের মান সমান? আমি বুঝি কারণ আমি ৬১টা ম্যাচ খেলছি। শুনতে হয়তো খারাপ লাগবে তবে এটাই সত্যি যে আমাদের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যে অনেক তফাত। আকাশ-পাতাল তফাত। এটা আমি আপনি সবাই জানে। এটা অজুহাত না এটাই সত্যি। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি অতটা চ্যালেঞ্জ ফেস করি না, যতটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেস করি।’
প্রস্তুতির মঞ্চটাই তো ঠিক নেই। আর তাই দেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান বা সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পান না। এক মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পেস বোলারের দিকে নির্বাচকরা ফিরেও চান না।
দুর্বল পরিকাঠামো। পরিকল্পনায় দূরদর্শিতার অভাব। পরিচালনায় পেশাদারিত্বের সঙ্কট। নিজস্ব ক্রিকেট সম্পদ, মস্তিষ্ক এবং তাদের শক্তি-সামর্থ্যর ওপর আস্থাহীনতা। দ্রুত ছাঁটাই। অতিরিক্ত বাছাই। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকে অনাদার-অবহেলা। বছরব্যাপী প্রতিভা অন্বেষণের কার্যকর তাগিদের অভাব। সর্বোপরি ঘরোয়া ক্রিকেটে পাতানো ম্যাচের মচ্ছব। ক্লাব কর্তাদের মর্জিতে আম্পায়ারদের বিচরণ। এগুলিই কি ফোকলা করছে না ক্রিকেটের অগ্রগতিকে।


আরো সংবাদ



premium cement