১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কাবরেরার পর্ব কি তাহলে শেষ

-

ফিলিস্তিন যতই শক্তিশালী দল হোক না কেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের ৫-০তে জেতার কথা নয়। তা পরশু কিংস এরিনায় জামাল ভূঁইয়া-তপু বর্মনরা প্রমাণ করেছেন। এর পরও ভাগ্য সহায় না থাকায় ৯৫ মিনিটের সময় গোল হজম করা। ফলে ০-১ গোলে হেরে মার্চ উইন্ডোতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব শেষ করতে হয়েছে লাল-সবুজদের। র‌্যাংকিংয়ে ৯৭তে থাকা একটি দলের বিপক্ষে ১৮৩তে অবস্থান করা দলের তুমুল লড়াই করে হারটা গর্বেরও। এর পরও ম্যাচ শেষে কোচ হাভিয়ার কাবরেরার ওপর চটেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন। এই স্প্যানিশ কোচকে আর রাখারই পক্ষে নন জাতীয় দলের সাবেক এই কোচ ও অধিনায়ক। অথচ সাফের সেমিতে খেলার পর বাংলাদেশ দলের প্রশংসা করেছিলেন সালাহউদ্দিন। পরবর্তী পারফরম্যান্সের জন্য বোনাসও দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এখন ফিলিস্তিনের কাছে টানা দুই হারে কেন এতটা কোচের ওপর ক্ষুব্ধ বাফুফের প্রধান ব্যক্তি।
বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, সাফের পর থেকে কাবরেরার আচরণ ও ভূমিকা মোটেই ভালোভাবে নেননি কাজী সালাহউদ্দিন। সাফে পিছিয়ে পড়েও ভুটান ও মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়, লেবাননের সাথে ভালো খেলেও শেষ ১০ মিনিটে হার এবং সেমিতে কুয়েতের কাছে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হারের পর প্রশংসায় ভাসতে শুরু করেন কোচ কাবরেরা। এই সুযোগেই তিনি চুক্তি নবায়নের সময় বাড়িয়ে নেন বেতন-বোনাস। বেতন এক লাফে ৮ হাজার ডলার থেকে ১৪ হাজার ডলার। বিশ্বস্ত সূত্র মতে, কোচের এই প্রায় দ্বিগুণ বেতন বাড়িয়ে নেয়াটা বিরক্ত করেছে সালাহউদ্দিনকে।
এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচ ও মালদ্বীপের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই প্লে-অফে দল ভালো খেলা, লেবাননের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ড্র করা সবই ইতিবাচক অবস্থানে রেখেছিল কাবরেরাকে। তবে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ০-৭ গোলে হার ও কুয়েতের মাঠে ফিলিস্তিনের কাছে ০-৫ গোলে হার কাবরেরাকে ব্যাকফুটে নিয়ে গেছে।

এই দুই বাজে হারের জন্য কাবরেরার একাদশে খেলোয়াড়দের পজিশন বদল, একাদশে একজনের বদলে অন্যকে পরীক্ষা করতে গিয়ে সর্বনাশ, এই সবই বড় হারের নেপথ্যে। তা ছাড়া ফিলিস্তিনের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচের আগে পূর্বের পাওনা বোনাসের জন্য ফুটবলারদের উসকে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে কাবরেরার বিপক্ষে। টিম হোটেলে খাবারের সময় এই বোনাস চেয়ে বসেন ফুটবলাররা। যদিও অ্যাওয়ে ম্যাচে ফিলিস্তিনের কাছে বড় হারের পর সে অবস্থানে আর ছিলেন না ফুটবলাররা। তাদের এই বকেয়া পাওনার দাবি আরো জোরালো হতো যদি দল হোমে পরশু ন্যূনতম ড্র করতে পারতো। সেটাও হলো না।
পরশু ম্যাচ শেষে সালাহউদ্দিন এবারের দুই ম্যাচে হারের জন্য দলের টিম ম্যানেজমেন্টের টেকনিক্যাল ভুলকে দায়ী করেন। এরপর জানান, ‘আমি থাকলে তাকে আর রাখবোই না।’ কুয়েতের মাঠে ম্যাচের আগে সুদানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে কাবরেরা যাদের একাদশে খেলান, পরের ম্যাচে তাতে পরিবর্তন। ফলে প্রথম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করলেও পরের খেলায় ০-৩ গোলে হার। এই দুই ম্যাচেও কোচ ফিলিস্তিনের বিপক্ষে প্রথম একাদশের ফুটবলারদের পজিশন ঠিক করতে পারেননি। লেফট ব্যাকে খেলা সাদউদ্দিনকে নিয়ে আসা হয় রাইট ব্যাকে। আর রাইট ব্যাকে খেলা বিশ্বনাথকে খেলানো হয় স্টপার ব্যাকে। ঈসা ফয়সাল খেলেন লেফট ব্যাকে। এতে শুরুটা ভালো হলেও বিরতির আগে ও পরে ১০ মিনিটের ঝড়ে সব শেষ। অথচ দলের সাথে ছিলেন স্টপার ব্যাক শাকিল হোসেন। ৭৯ মিনিটে বিশ্বনাথকে তুলে শাকিলকে নামানো হয়। ঢাকায় ঠিকই একাদশে শাকিল। বিশ্বনাথ তার রাইট ব্যাক পজিশনে। সাদ ফিরলেন লেফটে।
পরশু ৮৪ মিনিটে যখন ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন গোলরক্ষক মিতুল মারমা জায়গায় তখন মাঠে নামার কথা অভিজ্ঞ আনিসুর রহমান জিকোর। কিন্তু নামানো হয় শ্রাবণকে। বলের ফ্লাইট মিস করা শ্রাবণ একই ভুল এ ম্যাচেও করেন। কোচ কাবরেরা এখন আর জিকোকে দুই নাম্বার কিপারও মনে করেন না। ম্যাচ শেষে তিনি জানান, জিকো এখন দলের তিন নাম্বার কিপার। দলের সূত্রে জানা গেছে, বাজপাখি খ্যাত জিকোকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করার বদলে বিপর্যস্তই করছেন কোচ। এতে হয়তো জিকোর মতো কিপার হারিয়ে যেতে পারে।
ঢাকায় ফেরার পর শেখ মোরসালিনকে দলে নেয়ার জন্য কোচকে বলা হয়েছিল। অথচ প্র্যাকটিসের বাইরে থাকার কথা বলে টিনএজ সেনসেশন মোরসালিনকে নেয়া হয়নি। যদিও এমন পরিস্থিতিতে থাকা সাদউদ্দিন ঠিকই দলের সাথে মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। মোরসালিনের অভাব স্পষ্প হয়েছিল পরশুর ম্যাচে। স্টপারব্যাক মেহেদী হাসান মিন্টুকেও কোচ বিবেচনায় নেননি।


আরো সংবাদ



premium cement