নানী-নাতির কেমিস্ট্রিতে জাতীয় দলে মুশফিক

অভাবের সংসারে একটু সুখের আশায় নানীর কাছে মুশফিক ও তার ছোট বোনকে রেখে তার বাবা-মা ঢাকায় পাড়ি দিয়েছিলেন। নানীর কাছে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নটা ছিল বাড়াবাড়ি। কিন্তু নানী-নাতির ক্রিকেটপ্রেম এতটাই ছিল যে, পরিস্থিতি কোনো বাধা হতে পারেনি। পড়াশোনার পাশাপাশি মুশফিক ক্রিকেট খেলতেন। লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সাহেডাঙা গ্রামের ছোট ঘরে নাতি-নানীর যে স্বপ্ন দেখা শুরু। সেটিই যেন প্রতিফলিত হলো গত রোববার। যেদিন তার নাম লেখা হয়েছে তামিম, লিটনদের সাথে। মুশফিক বলেন, ‘আমি ভালো করলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন নানী। তিনি আমার সাহস বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমার ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তারই।’
টেপ টেনিস ক্রিকেট দিয়ে পথ চলা শুরুর পর একদিন হুট করেই লালমনিরহাটে দ্বিতীয় বিভাগ খেলার সুযোগ হয় মুশফিকের। ক্রিকেট বলে প্রথমবার খেলতে নেমে স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলে রীতিমতো আলোড়ন তৈরি করেন। মাঠে থাকা বিভাগীয় কোচ বিপুল ফাতেমী নিকেল তার ফোন নম্বর নিয়ে দুই মাস পর সুযোগ করে দেন অনূর্ধ্ব-১৬ জেলা দলে। টিকে যাওয়ার পর তার অটো প্রমোশন হয় বিভাগীয় অনুর্ধ্ব-১৮ দলে। সেখানে তার দিকে নজর পড়ে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার হাসিবুল হোসেন শান্তর। এরপর শান্তর হাত ধরেই মুশফিক চলে আসেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ট্রায়ালে। সেখানে সবচেয়ে জোরে বল করে মুশফিক অবধারিতভাবে ঢুকে যান দলে। এরপর যুব দল, এইচপি, বাংলাদেশ ‘এ’ দল পেরিয়ে মুশফিক হাসান এখন জাতীয় টেস্ট দলের চৌকাঠে। যেখানে সে সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে তাসকিন, ইবাদত, খালেদ ও শরিফুলকে।
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক সবেমাত্র এক বছর। ২০ বছর বয়সী পেসার ১৩ ম্যাচে ৪৯ উইকেট পেয়েছেন। রয়েছে তিনটি পাঁচ উইকেটও। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে খেলেছেন। সেখানে ভালো করায় জাতীয় দলের দুয়ার খুলেছে। শুধু জোরে বল নয়, মুশফিকের রয়েছে বৈচিত্র্য আর নিয়ন্ত্রণ। এক জায়গায় লাগাতার বল করে ব্যাটসম্যানকে খেলাতে বাধ্য করতে পারেন যা বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে খুব প্রয়োজন।
আশার কথা শোনালেন প্রধান নির্বাচক মিনাহজুল আবেদীন নান্নু, মুশফিক অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের খেলেছে। হাইপারফরম্যান্স বিভাগে ছিল। ‘এ’ দলের খেলায়ও যথেষ্ট ভালো করেছে। সুযোগ পেলে ভালো করবে।
এর আগে, মুশফিককে নেটে দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন জাতীয় দলের বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, আমি মুশফিক হাসানে দারুণ মুগ্ধ হয়েছি। তরুণদের মাঝে সে খুবই শক্ত পোক্ত অ্যাথলেট।