১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারী ফুটবলে অশনি সঙ্কেত

এবার ক্যাম্প ছাড়লেন আঁখি
কোচ ছোটনের হাত ধরেই নারী ফুটবল দলের এমন সাফল্য। হঠাৎই দলটি গুটি গুটি পায়ে ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে। ভাঙনরোধে বাফুফেকে নজর দিতে হবে এখনই : ফাইল ছবি -

ফুটবলার সিরাত জাহান স্বপ্নার অবসর ঘোষণা এবং জাতীয় নারী দলের কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের দায়িত্ব ছাড়ায় গত ক’দিন ধরেই সরগরম ফুটবলাঙ্গন। গত শুক্রবারের নাটকীয় এই দুই খবর নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে। এবার সাফজয়ী বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অন্যতম সেরা ফুটবলার আঁখি খাতুন চীনের একটি ক্রীড়া ইনস্টিটিউটে যোগ দেয়ার লক্ষ্যে বাফুফের ক্যাম্প ছেড়েছেন। ১৯ বছর বয়সী এই সেন্টার-ব্যাক বয়সভিত্তিক ধাপগুলো পেরিয়ে সিনিয়র নারী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন। দু’দিন আগেই তিনি বাফুফের ক্যাম্প ছেড়েছেন।
গতকাল রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এক অনুষ্ঠানে আঁখি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে ক্যাম্প ছেড়েছি। বাফুফে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর স্মলি স্যারের সাথে কথা বলেছি এবং আশা করছি, চীন যেতে আমাকে অনুমতি দেয়া হবে। যদি না দেয়া হয়, তাহলে আমি কী করব সেটি জানি না। তবে আমি সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
চীনে গিয়ে আঁখি পড়াশোনা ও খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। তার এই সিদ্ধান্তে জাতীয় ফুটবল দলের ভবিষ্যৎ পড়েছে শঙ্কায়। তবে তিনি জানালেন, ‘আমি চিরতরে ফুটবলকে বিদায় বলছি না। বাফুফেকেও বিদায় জানাচ্ছি না। হয়তো ভবিষ্যতে ফিরব।’

বেতনে অনিয়মে অবসাদে সাবিনারা
জানা গেছে, মে মাস শেষ হতে চললেও এপ্রিলের বেতন এখনো পাননি ফুটবলাররা। মেয়ে ফুটবলারদের বেতনের অঙ্কটাও যৎসামান্য। অধিনায়ক সাবিনা পান সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। অন্যদের অধিকাংশ পাচ্ছেন আগের মতোই ১০ হাজার টাকা করে। যদিও সাফ জয়ের পর এই সম্মানী বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেননি বাফুফে কর্তারা। সাফে জেতার পর মাত্র ১০-১৫ হাজার টাকা বেতনে অনেকেরই অসম্মতি।

খেলতে না পারার ক্ষোভ
বেতন স্বল্পতা নিয়ে ক্ষোভ তো রয়েছেই, এর চেয়েও বড় ক্ষোভ খেলতে না পারার। সূত্রমতে, মিয়ানমারে সাবিনাদের অলিম্পিক বাছাই সফর বাতিল করেছে বাফুফে। প্রীতিম্যাচও বাতিল হয়েছে। অনেকের দেশের বাইরে খেলার প্রস্তাব ছিল, যেতে দেয়া হয়নি দেশে ফ্রাঞ্চাইজ লিগ হবে বলে। অথচ সেই ফ্রাঞ্চাইজি লিগ নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েও বাংলাদেশ আট মাস খেলার বাইরে। অন্য দিকে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল একাধিক প্রীতিম্যাচ এবং টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। অথচ বসে সময় কাটছে সাবিনাদের। তাই অবসাদে ভুগছেন দেশের নারী ফুটবলাররা।

দেশী কোচিং স্টাফে চাপা কষ্ট
এ দিকে টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলি সাম্প্রতিক সময়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছেন কোচ গোলাম রব্বানী ও মাহবুবুর রহমান লিটুদের কোচিংয়ে। মেয়েদের সামনেই নাকি অনেক সময় পল কোচদের সমালোচনা করেন। যা তাদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পল ছুটি কাটিয়ে ১৪ মের পর দেশে এলেও অনুশীলন করাচ্ছেন না। তার হয়ে ট্রেনার ইভান রাজলভ খবরদারি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইভানের আচার-আচরণে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে দেশী কোচিং স্টাফে। পল শুধু নারী দলের কোচিংয়ে নয়, জাতীয় দলের কোচ নিয়োগেও ভূমিকা রাখেন। হাভিয়ের কাবরেরা, ফিটনেস কোচ ইভান রাজলভও পলের মাধ্যমেই বাফুফেতে এসেছেন।

ক্ষিপ্ত বাফুফে
ছোটনের সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন দেশের ফুটবল ভক্তরা। তবে এই কোচকে দলে রাখার কথা বলেছেন মাহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, ‘অবশ্যই আমরা কোচকে রাখতে চাই। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে মেয়ে ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করছেন। উনাকে আমরা রাখব না কেন? অবশ্যই রাখব।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছোটন ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি এবং তিনি মূলত ক্লান্তির কথা বলেছেন। আমি বিষয়টা বাফুফে সভাপতিকে জানিয়েছি। এখন এ ব্যাপারে ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র দেননি।’
ছোটনকে রাখার কথা কিরণ বললেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাফুফের একটি সূত্র জানাচ্ছে ভিন্ন কথা, ‘বাফুফে সভাপতি ছোটনকে রাখতে চাইছেন না। কাউকে না জানিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমে পদত্যাগের কথা বলায় এই কোচকে আর রাখতে চান না।’

আরো অনেকে খেলা ছেড়ে দেবে
সাফজয়ী দলের ভাঙনের কারণ ও নিজের অবসর নিয়ে স্বপ্না কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও কিছুদিন আগে ফুটবল ছেড়ে দেয়া জাতীয় দলের আরেক নারী ফুটবলার সাজেদা খাতুন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে ফুটবলে মেয়েদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই বলে দাবি করেছেন সাজেদা। তার কথায়, ‘একটু অপেক্ষা করেন। আরো অনেক মেয়ে খেলা ছেড়ে দেবে। আমাদের দেশে নারী ফুটবলের কিছু আছে? এখানে কোনো আশা নাই।’
তিনি যোগ করেন, ‘সারা জীবন কী শুধু ক্যাম্পই করব? সাফ জেতার পর ফুটবলারদের জন্য কিছুই আয়োজন করা হয়নি। আমরা আছি ফুটবলের জন্য, সেই ফুটবল খেলাই তো হয় না। অলিম্পিক বাছাইপর্বে খেলার সুযোগ ছিল। ফেডারেশনের অবহেলায় সেটিও হয়নি। তাদের জিজ্ঞেস করে দেখেন, খালি এই সমস্যা, ওই সমস্যা বলবে। তাহলে কেন মেয়েরা আগামীতে ফুটবল খেলবে?’

 

 


আরো সংবাদ



premium cement