২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেশের প্রথম মহিলা ম্যাচ কমিশনার

নাহিদা আহমেদ ইতু -

কপালটা খারাপ মনিরুল ইসলাম এবং নাহিদা আহমেদ ইতু দু’জনেরই। তার স্ত্রীও এখন ফুটবলের ম্যাচ কমিশনার। এটা দেখে যাওয়া হলো না মনিরুল ইসলামের। আর স্ত্রী ও স্বামীকে পাশে রেখে গর্বের সাথে বলতে পারছেন না ‘আমরা দু’জনই এখন ম্যাচ কমিশনার।’ সাবেক রেফারি মনিরুল ২০১৬ সালের নভেম্বরে দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। এর পরও স্বামীর স্মৃতি টেনে নিয়েই ইতু এখন ম্যাচ কমিশনারের ভূমিকায়। ২০১৭ সালে এ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে রেকর্ড বুকেও চলে গেছেন সাবেক এই কারাতে খেলোয়াড়। ইতুই বাংলাদেশের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র মহিলা ম্যাচ কমিশনার। একই সাথে স্বামীর পর স্ত্রীর ম্যাচ কমিশনারও হওয়াও একটা অনন্য নজির।
২০০৪ সালে বাংলাদেশে মহিলা ফুটবলের যাত্রা শুরু। তখন মহিলা খেলায় রেফারি থাকতেন পুরুষরা। ২০০৫ সালে দেশে আটজন মহিলা পাস করেন রেফারিং কোর্সে। নাহিদা আহমেদ ইতু সেই তালিকার একজন। পরে মহিলা ফুটবলের পাশাপাশি পুরুষ ফুটবলেও রেফারিং করেন তিনি। কখনো সহকারী রেফারি, কখনো মাঠের বাঁশিওয়ালা। তবে প্রথম শ্রেণীর এই এই রেফারির আর এ কাজে বেশি দিন দেখা যায়নি সন্তান পেটে আসার পর। বর্তমানে এক মেয়ে সন্তানের জননী তিনি। মা হওয়ার পরও ছিলেন খেলাধুলার সাথে। এরই সূত্র ধরে ২০১৭ সালে দেশের প্রথম মহিলা ম্যাচ কমিশনার হিসেবে অভিষেক তার। এবারের মহিলা লিগের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেও এই ভূমিকায় ছিলেন ইতু। এখন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে তাকে পাওয়া যাচ্ছে পুরনো পেশায়। দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ এবং সিনিয়র ডিভিশন লিগেও তিনি সক্রিয় থাকেন। ২০০৭ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ তারকা জিনেদিন জিদান ঢাকায় যে ম্যাচটি খেলেছিলেন সেই ম্যাচে চতুর্থ রেফারি ছিলেন ইতু। পুরান ঢাকার মেয়ে ইতুরা ৯ বোন। তার এক বোনও ছিলেন ভারোত্তোলক।
কারাতে জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছিলেন ইতু। ২০০৫ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত আমন্ত্রনমূলক আন্তর্জাতিক কারাতে থেকে দু’টি স্বর্ণ এবং পরের বছর নেপালে গিয়ে একটি রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদক গলায় তোলেন তিনি। ২০০৮ সালে বিয়ের পর স্বামীর নিষেধাজ্ঞায় কারাতে ত্যাগ করে পুরোদমে রেফারিংয়ে মনযোগ। এখন ঢাকার বিএসআইসিএস স্কুলের ফিজিক্যাল অ্যাডুকেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে শিক্ষকতার করছেন। সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন ম্যাচ কমিশনারের দায়িত্ব। উল্লেখ্য একটি ফুটবল ম্যাচে ম্যাচ কমিশনারই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। ইতু অবশ্য এই পর্যায়ে আসার জন্য মরহুম স্বামী মনিরুল ইসলামকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন। জানান, ‘বিয়ে হওয়ার পর আমার ইচ্ছে ছিল সব ছেড়ে একেবারেই সংসারী হওয়া। কিন্তু মনিরুল আমাকে ক্রীড়াঙ্গনেই থাকতে উৎসাহিত করেন। তার অনুপ্রেরণাতেই আমি বিপিএড ও এমডিএড সম্পন্ন করি। অবশ্য তিনি মারা যাওয়ার পর ম্যাচ কমিশনার হওয়া।’ ২০২০ সালে পুনরায় বিবাহ করেন ইতু। দ্বিতীয় স্বামীকেও তিনি পাশে পাচ্ছেন ক্রীড়াঙ্গনে থাকার ক্ষেত্রে।
মনিরুল শুধু দেশেই ম্যাচ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করতেন না। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের নামকরা ম্যাচ কমিশনার ছিলেন। খেলার দায়িত্ব পালনে পুরো এশিয়াই দাবড়ে বেড়িয়েছেন। সাবেক স্বামীর এভাবে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোটা খুব ভালো লাগতো ইতুর। জানান, ‘আমি যখন দেখতাম ম্যাচ কমিশনার হিসেবে আমার স্বামীকে বিভিন্নজন বিশেষভাবে সম্মান করছে, নানা দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এটা আমাকে গর্বিত করত। যা আমাকে আন্তর্জাতিক ম্যাচেও ম্যাচে কমিশনার হতে অনুপ্রাণিত করছে।’ তবে এ জন্য আরো সময় দেয়া ও প্রচুর লেখাপড়া করতে হবে। জানান দীর্ঘদেহী এই মহিলা।


আরো সংবাদ



premium cement