২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পাকিস্তানের নতুন তারকা রিজওয়ান

-

এ বিশ্বকাপে পাকিস্তান কার ওপর বেশি নির্ভরশীল? কেউ বললেন বাবর আজমের নাম। কারো মুখে আসবে শাহিন শাহ আফ্রিদির কথাও। তবে যারা পাকিস্তানের ক্রিকেট যারা নিয়মিত অনুসরণ করেন তারা মোহাম্মদ রিজওয়ানকেই ভোট দেবেন। চলমান টি-২০ বিশ্বকাপে রিজওয়ান প্রথম ম্যাচ থেকেই যেমন ফর্মে আছেন, তাতে শুধু পাকিস্তানের ক্রিকেট অনুসরণকারীই নন, যে কেউ-ই পাকিস্তানের অন্যতম শক্তির জায়গা হিসেবে বাবর-শাহিনদের পাশাপাশি রিজওয়ানের নামটাও তুলবেন। এই টি-২০ বিশ্বকাপে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। প্রথম ম্যাচে ভারতকে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে। ব্যাট হাতে এবারো উজ্জ্বল রিজওয়ান, ৫৫ বলে খেলেছেন ৭৯ রানের দারুণ একটি ইনিংস। আর পরশু রাতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৪ বলে ৩৩।
২০০৫ সালে যখন টি-২০ ক্রিকেটের সূচনা। ২০০৯ সালে এই ফরমেটের ক্রিকেটে ইউনিস খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান বিশ্বকাপই জিতে নিলো। এবারো সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান বিশ্বকাপের শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলোর একটি পাকিস্তান। বাবর আজম শোয়েব-মালিকদের পাশাপাশি পাকিস্তানিদের আশা দিচ্ছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
রিজওয়ানের উত্থানের কথা তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গল্পই বলা যায়। টি-২০তে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের অভিষেক হয় বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০১৫ সালে। খাইবার পাখতুনখাওয়া থেকে উঠে আসা এই খেলোয়াড় পরবর্তী ১০টি টি-২০ ম্যাচে ১০০ স্ট্রাইক রেটে করেন মাত্র ১০৬ রান, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। অনেকেই রিজওয়ানের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে নিয়েছিলেন তখন।
যেহেতু ওই সময় পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ছিলেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান সরফরাজ খান, ফলে ক্যারিয়ারের প্রথম চার বছর তেমন ম্যাচ খেলা হয়নি রিজওয়ানের। ২০১৯ সালে পাকিস্তান ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে গেল, পিসিবি সরফরাজকে দল থেকে সরিয়ে দিলে দরজা খুলে যায় রিজওয়ানের।
তবে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে তিনটি টি-২০ ম্যাচ খেলে মাত্র ৪৫ রান করেন তিনি। সিরিজ হারে পাকিস্তান। সেই মৌসুমে রিজওয়ান পাকিস্তান সুপার লিগেও (পিএসএল) করাচি কিংসের হয়ে তেমন সুযোগ পাননি। এরপর আসে জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টি। এই টুর্নামেন্টে রিজওয়ান ছিলেন খাইবার পাখতুনখাওয়ার অধিনায়ক। এবার দলীয় কোচ আবদুল রাজ্জাক লিগের শুরুতে তার ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনেন, তাকে টপ অর্ডারে ব্যাট করতে পাঠিয়ে দেন। টুর্নামেন্টে ১২৯ স্ট্রাইক রেটে রান করার পাশাপাশি তিনটি ফিফটি করেন তিনি।
জাতীয় লিগের পরপরই নিউজিল্যান্ড সফরে যায় পাকিস্তান। এই সিরিজই মূলত রিজওয়ানের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আঙুলে চোট পাওয়ার কারণে টি-২০ সিরিজ থেকে ছিটকে যান নিয়মিত অধিনায়ক বাবর আজম এবং অধিনায়কের দায়িত্ব রিজওয়ানের ঘাড়ে এসে বর্তায়। এই অবস্থায় হুট করে নিউজিল্যান্ডের মতো কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দলকে নেতৃত্ব দেয়া রিজওয়ানের জন্য বিশাল এক চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু রিজওয়ান এই সুযোগ লুফে নেন, নিজেকে ওপেনিংয়ে নিয়ে আসেন। প্রথম দুই ম্যাচে খুব ভালো শুরু করেন। আলো ছড়ান তৃতীয় টি-২০তে ৫৯ বলে ৮৯ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন। রিজওয়ানের অবিশ্বাস্য যাত্রার শুরুটা এখানেই। এরপর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম পাকিস্তানি উইকেটকিপার হিসেবে কোনো টি-২০ ম্যাচে সেঞ্চুরির মালিক তিনি। রিজওয়ানের খেলা দেখে সেই মৌসুমের পিএসএলে তাকে দলে ভেড়ায় মুলতান সুলতানস ফ্র্যাঞ্চাইজি। ব্যাট হাতে রিজওয়ান এবার চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স করে সংগ্রহ করেন ৫০০ রান, টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। মুলতানও তার অধিনায়কত্বে প্রথমবারের মতো পিএসএলের শিরোপা ঘরে তোলে। এভাবেই পাকিস্তান ক্রিকেট পেয়ে যায় তাদের নতুন পোস্টার বয় মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। পাকিস্তানের পরবর্তী চারটি সফরে তিনি অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স দেখান, চারটি টি-২০ সিরিজে ১৩৭ স্ট্রাইক রেটে করেন ৫৫৫ রান। যার মাধ্যমে তিনি টি-২০ এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙে দেন।
পাকিস্তানের এবারের টি-২০ বিশ্বকাপ জয় শুধু বাবর আজম বা শাহিন শাহ আফ্রিদি নয়, নির্ভর করবে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওপরেও।

 


আরো সংবাদ



premium cement