২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বন্ধুত্বে স্বর্ণের ভাগাভাগি

-

নির্ধারিত নিয়মে খেলা শেষ না হলে খেলা গড়াবে টাইব্রেকারে, বিশ্বের প্রায় সব খেলাতেই তো নিয়মটা এমন। হাইজাম্পেও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কাতারের মুতাজ ঈসা বারসিম আর ইতালির জিয়ানমার্কো তামবেরি ব্যতিক্রম এক নজিরই স্থাপন করলেন। টাইব্রেকারের প্রস্তাব নাকচ করে স্বর্ণ নিলেন ভাগাভাগি করে। তাতেই দু’জনের বন্ধুত্বটা ঠাই করে নিলো ইতিহাসের পাতায়। অলিম্পিকের ১১৩ বছরের ইতিহাসে যে এমন কিছু দেখেনি কেউ। গত পরশু পুরুষদের হাইজাম্পের ঘটনা এটি।
মুতাজ, জিয়ানমার্কো তো বটেই, বেলারুশের ম্যাক্সিম নেদাসেকাউও ২.৩৭ মিটার পর্যন্ত লাফিয়েছিলেন সমান সমানই। তিনজনই আবার বিশ্বরেকর্ড ২.৩৯ মিটারে লাফাতে গিয়ে গেলেন আটকে। তবে শেষতক শীর্ষে থাকলেন দুজন, ম্যাক্সিম ছিটকে গেলেন আগের লড়াইয়ের মাপকাঠিতে।
ফলে জিয়ানমার্কো আর মুতাজের কাছে নিয়ে আসা হলো টাইব্রেকার ‘জাম্প অফ’-এর প্রস্তাব। সেখানেই ঘটল ঘটনাটা। মুতাজ জিজ্ঞেস করলেন, ‘দুটো স্বর্ণের ব্যবস্থা করলে কেমন হয়?’ অফিসিয়ালের উত্তর, সেটা সম্ভব। মুতাজ মাথা ওপর নিচ করলেন। জিয়ানমার্কো শুধু সায়ই দিলেন না, মুতাজের হাতে হাত মেলালেন, তাকে গিয়ে জড়িয়েই ধরলেন, দুবার গড়াগড়ি খেলেন, চিৎকারও করলেন। প্রতিক্রিয়ায় বললেন, ‘আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না কী হয়েছে এটা। বিশেষ করে স্বর্ণটা যখন একজন বন্ধুর সাথে ভাগাভাগি করছি, তখন বিষয়টার মাহাত্ম্য বেড়ে যায় আরো।’
প্রতিদ্বন্দ্বীর মতো অতটা আবেগ ঘিরে ধরেনি মুতাজকে। কিন্তু অলিম্পিক পদকের মাহাত্ম্যটা বোঝেন কাতারি এই অ্যাথলেট। বললেন, ‘আমার কাছে এখানে আসাটা, এখানের পারফরম্যান্সটার পর মনে হয়েছে আমি এই স্বর্ণ জেতার যোগ্য। সে-ও এমন কিছুই করেছে, আর তাই আমিও জানি, সে কম যোগ্য নয়।’
এমন ঘটনা ঢুকে গেছে অলিম্পিক ইতিহাসেরই সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী ঘটনার ছোট্ট তালিকাটায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগমাধ্যমেও বাহবা পাচ্ছে বেশ।
মুতাজ আর জিয়ানমার্কোর দু’জনের বন্ধুত্বটা অবশ্য টোকিওতে হয়নি। হয়েছে আরো আগে। আগের অলিম্পিকের জোগাড়যন্ত্র যখন শেষ করে ফেলেছেন, এরপরই গোড়ালি ভেঙে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন জিয়ানমার্কো। পরের ডায়মন্ড লিগে যখন ফিরলেন, তখনো ধুঁকছিলেন, ভাবছিলেন সরে যাওয়ার কথাও। তখন এই মুতাজের অনুপ্রেরণাই তো সাহস জুগিয়েছিল তার মনে। দেখিয়েছিল অলিম্পিকের আশা। ভাঙা পায়ে লাগানো সেই প্লাস্টারের গায়ে লিখে রেখেছিলেন টোকিও অলিম্পিকের কথা।
মুতাজ নিজেও তো কম ভোগেননি, নিজে চোটে পড়েছেন রিও অলিম্পিকের পর থেকে। এরপর কোনোক্রমে এসেছেন টোকিওতে। সেই মুতাজ আর সেই জিয়ানমার্কো, দু’জনের আক্ষেপই শেষ হলো এবার, বন্ধুর সাথে বিরল কীর্তি গড়ে। দু’জনের গল্পটা কি এর চেয়ে মধুর হতে পারত আদৌ?


আরো সংবাদ



premium cement