১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চ্যালেঞ্জে জিতেই রেকর্ড কন্যা

-

হালকাপাতলা গড়নের দীর্ঘদেহী। শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেন। মনে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাসই অভিষেকে বাজিমাত করতে সাহায্য করেছে রিতু আক্তারকে। গতকাল থেকে শুরু হওয়া ৪৪তম জাতীয় অ্যাথলেটিক্স ছিল গাইবান্ধার এই মেয়ের প্রথম কোনো বড় আসরে প্রতিনিধিত্ব। এসেই নতুন রেকর্ডের মালিক হয়ে গেলেন । হাইজাম্পে ১.৭০ মিটার লাফিয়ে তিনি ভেঙে দিয়েছেন ২০১৯ সালে গড়া উম্মে হাফসা রুমকির (১.৬৮ মিটার) রেকর্ডকে। নৌবাহিনীর রুমকি এবার হয়েছেন দ্বিতীয়।
অথচ সেনাবাহিনীর অ্যাথলেট রিতুর হারিয়ে যাওয়ারই শঙ্কা ছিল অ্যাথলেট থেকে। ২০১৭ সালে বিকেএসপিতে ক্রিকেট এবং অ্যাথলেটিক্সে ট্রায়াল দিয়ে চান্স পান অ্যাথলেটিক্সে। কিন্তু এই ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে যে ২০ হাজার টাকা লাগে তা জোগাড় হয়নি বলে ভর্তিও হতে পারেননি। এরপরও বিভিন্ন দলের হয়ে অ্যাথলেট চালিয়ে যান। এরই ফলে রিতু এখন রেকর্ড কন্যা।
সাবেক সিএনজি চালক বাবার তিন মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় রিতু। সেনাবাহিনীর এই জাম্পার জানান, ‘২০১৭ সালে আমার বড় বোনের বিয়ের সময় আমি বিকেএসপিতে চান্স পাই। কিন্তু বাবার পক্ষে বোনের বিয়ের খরচের টাকা জোগাড়ের পাশাপাশি আমার বিকেএসপিতে ভর্তির টাকা আর দিতে পারেননি।’ উল্লেখ করেন, ‘বিকেএসপিতে ভর্তি হতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়লেও ভেঙে পড়িনি। চালিয়ে যাই খেলা। আর এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে অংশ নিয়েই রেকর্ড গড়ে স্বর্ণ জয়।’
রিতু হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। ছিলেন পেস বোলার। ২০১৭ সালে মিরপুর বয়েজের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে ৬ ম্যাচে ৯ উইকেট নেন তিনি। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থার কারণে ক্রিকেট খেলা হয়নি তার। জানান, ‘পরিবারে খরচ দিতে আমার একটা চাকরি দরকার ছিল। দেখলাম ক্রিকেট খেলে চাকরি পাওয়া যাবে না। তাই কর্মসংস্থানের জন্য অ্যাথলেট হওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিই। এরপর ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি হয় আমার।’ আরো বলেন , এখন আমি পরিবারকে সাহায্য করতে পারছি। প্রথমে বাবা-মা আমাকে খেলতে দিতে না চাইলেও এখন তারা খুব খুশি।
২০১৮ সালে খুলনার হয়ে জুনিয়র মিটে অংশ নিয়ে হাইজাম্পে স্বর্ণ জয়। সে বছরই সামার মিটে আনসারের হয়ে ব্রোঞ্জপদক গলায় তোলা। এই রেজাল্টের পর সেনাবাহিনীতে চাকরি হয় এসএসসি পাস করা রিতুর।
কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে রিতু যে উচ্চতায় লাফিয়েছেন তা এসএ গেমসে রৌপ্য জয়ীর চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স। সর্বশেষ এসএ গেমসে মহিলাদের হাইজাম্পে ১.৬৯ মিটার ছিল রৌপ্য জয়ীর পারফরম্যান্স। আর স্বর্ণ জয়ী ১.৭২ মিটার লাফান। রিতু জানান, এখন আমার লক্ষ্য এসএ গেমসে স্বর্ণ জেতা।
রিতুরা যে তা পারবেন সেই আশাবাদ বিকেএসপির কোচ মেহেদী হাসানের। ৪ মাসের জন্য সেনাবাহিনীর জাম্প ইভেন্টের কোচের দায়িত্ব নেয়া মেহেদী বলেন, যদি সঠিক নিয়মে হাইজাম্পের তিন মেয়েকে উন্নত ট্রেনিং করানো যায় তাহলে আগামী এসএ গেমসে এই ইভেন্টে বাংলাদেশের স্বর্ণ বা রৌপ্য পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা।


আরো সংবাদ



premium cement