১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি স্বর্ণে বদলে যাওয়া জীবন

যুব বাংলাদেশ গেমসে স্বর্ণ জয়ের পর নাইমা -

স্বর্ণ জিততেই হবে। না হলে বিয়ে দিয়ে দেবে আমাকে। খেলাধুলাও বন্ধ হয়ে যাবে। ২০১৮ সালের প্রথম বাংলাদেশ যুব গেমসে অংশ নেয়ার আগে এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই ঢাকায় আসেন রাজশাহীর মেয়ে নাইমা খাতুন। ১৩ মার্চ কুস্তির ইভেন্ট নাইমার। মেয়ে যেন স্বর্ণ জয় করতে পারে এ জন্য সে দিন রোজা রাখেন এই কুস্তিগীরের মা ও দুই বোন। শেষ পর্যন্ত বিফলে যায়নি সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের এই দোয়া। ৪০ কেজি ওজন শ্রেণীতে খুলনার প্রতিপক্ষকে হারিয়ে স্বর্ণ পদক জয় নাইমার। এরপর আর বিয়ের চাপ বাড়েনি উঠতি এই কুস্তিগীরের ওপর। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। সেই খেলোয়াড়টি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও পদক জয়ী। কুস্তি ছেড়ে তিনি এখন কারাতেকা। গত ডিসেম্বরে নেপালের কাঠামান্ডু-পোখরাতে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে কাতারের দলগত কুমিতে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন রৌপ্যপদক। এখন নাইমার লক্ষ্য এস এ গেমসে স্বর্ণ জয় এবং এশিয়ান গেমসে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব।
নাইমাদের গরিবের সংসার। বাবা হামিদ আলী আরেক বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। কোনো খোঁজ নিতেন না নাইমাদের। ফলে তিন মেয়েকে নিয়ে মা মঞ্জুয়ারা বেগমের কষ্টের জীবন। মঞ্জুয়ারার আমিন জুট মিলে শ্রমিকের চাকরিটাও চলে গেছে। এ পরিস্থিতিতে একটি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়া মানে তো একটু বোঝা কমে যাওয়া। তা ছাড়া খেলাধুলা করে সাফল্য না পেলে চাকরিও হবে না কোনো সার্ভিসেস দলে। অযথা খেলে কী লাভ? এ জন্যই নাইমাকে হুঁশিয়ারি নিকটাত্মীয়দের। কিন্তু চ্যালেঞ্জে জয়ী নাইমা। যুব বাংলাদেশ গেমসে কুস্তিতে স্বর্ণ জয়ের পর পাল্টে গেছে জীবন। মেয়ের সাফল্যে অভিভূত বাবা আবার তাদের খোঁজ নেয়া শুরু করেছেন। কেউ আর তার মাকে মেয়ের বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করে না। স্বাবলম্বী হওয়ার উপলক্ষ পেয়ে গেছেন নাইমা। এর পরই এসএ গেমসে পদক জয়। নাইমা জানান, ‘যুব গেমসে স্বর্ণ পাওয়ার পর আর আমার বিয়ের জন্য চাপ আসেনি। সেই সূত্র ধরে এসএ গেমসে রৌপ্য জয়। আমি স্বর্ণ পদক জিতেছি এ খবর শুনে আব্বু আবার আমাদের কাছে এসেছেন। এরপর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজ নেন। এখন আমি আনসারে চাকরি পাওয়ার অপেক্ষায়।’
একই সাথে কুস্তি ও কারাতে খেলতেন নাইমা। কারাতেতেও তার ঘরোয়া আসরে বড় সাফল্য আছে। ২০১৭ সালে স্বাধীনতা দিবস কারাতেতে ৪৫ কেজিতে স্বর্ণ, ২০১৮ সালের ২৫তম জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পান। এই রৌপ্যই নাইমাকে জায়গা করে দেয় এসএ গেমসের ক্যাম্পে। এসএ গেমসের ক্যাম্পে থাকার সময়েই যুব গেমসে কুস্তিতে অংশ নেয়া নাইমার। কারাতে ক্যাম্পে ভালো পারফরম্যান্সের পর এই ডিসিপ্লিনেই মনোযোগ তার। কুস্তি আর খেলা হয়নি। তবে এখন নাইমার পরিকল্পনা একই সাথে কুস্তি ও কারাতেতে লড়ার।
গত বছর নেপালের কাঠমান্ডুতে ৪৫ কেজিতে নাইমাদের রৌপ্য পদক নিশ্চিত হয় দলগত কুমিতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। অবশ্য পরে স্বর্ণ জয়ের স্বপ্ন বিসর্জন দেয়া ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে। পদক জয়ের পর দেশে ফিরে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ৭৫ হাজার টাকা। করোনার চলমান দুঃসময়ে এই টাকা বিশাল উপকারে লেগেছে নাইমার পরিবারের। জানান তিনি। দেশকে পদক এনে দেয়ায় নাইমার এখন চাকরি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ আনসারে। এই ক্রীড়াবিদ জানান, ‘আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি আনসারের চাকরির জন্য। ক্রীড়াঙ্গনে আরো প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। এরপর বিয়ের চিন্তা।’ নাইমার মা মঞ্জুয়ারা বেগম বললেন, আপাতত পরিকল্পনা নেই মেয়েকে বিয়ে দেয়ার।
খেলাধুলায় সাফল্য পেলেও লেখাপড়া নিয়ে টেনশনে নাইমা। ডিপ্লোমা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তিনি। কিন্তু অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছেন না বিএসসিতে। তার বক্তব্য, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিএসসিতে ভর্তি হতে ৬-৭ লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা কোথায় পাবো?


আরো সংবাদ



premium cement
সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’

সকল