১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘শুট করে তো মারা সম্ভব নয়’

-

করোনাভাইরাসের ভয়াল গ্রাসে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সব খেলাধুলা স্থগিত। সাধারণ মানুষের মতো বন্দী সময় কাটছে খেলোয়াড়দেরও। খেলাধুলার মাঝে নিশানা ভেদে আছে আরচারি ও শুটিং। অদেখা করোনাকে তো শুট করে মারা সম্ভব নয়। তাই শুটারদের চাওয়া ঘরে থাকার। করোনা নিয়ে এমন মন্তব্যই শুটারদের।
আব্দুল্লাহ হেল বাকী
গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজ বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমি এবং আমার পরিবার নিরাপদ। বাকিটা আল্লাহর মর্জি। আর প্রাকটিসের কথা যদি বলেন তাহলে এখানে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। ফিজিক্যালিও কিছুই করা হচ্ছে না। শুটিং রেঞ্জের বাইরে থেকে মূলত শুটিংয়ের প্রস্তুতি সম্ভব নয়। একজন ক্রিকেটার কিংবা ফুটবলার হালকা জিম করতে পারে, রানিং করতে পারে। আমাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। যেটাই করেন, শুটিংয়ের মধ্যে থাকতে হবে। শুটিং যেহেতু করতে পারছি না, তাই সেভাবে কোনো উপকার হবে বলে মনে হয় না।
তবে আমার শিডিউলের মধ্যে অনুশীলনের আগে বা পরে, কম্পিটিশনের আগে বা পরে যে মানসিক চর্চাগুলো থাকা প্রয়োজন সেগুলো করছি। আর শারীরিকভাবে হালকা কিছু করা। প্রত্যহ সকালে ১০ মিনিট রানিং। একটু ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি। এই আর কি। ঘরে এর চেয়ে বেশি কিছু করা হয় না। সারা পৃথিবীর পরিস্থিতিই একরকম হয়ে গেছে। স্পোর্টস তো একটা বিনোদন। করোনার যে অবস্থা, পুরো পৃথিবী যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে বিনোদনের তো কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রথম চাওয়া হলো পৃথিবী এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হোক। খেলার সঙ্গে রুটি-রুজির বিষয়টিও জরুরি। বিনোদন যদি বিনোদনের জায়গায় না থাকে, তখন রুটি-রুজির ব্যাপারটা আর থাকবে না।
ইতোমধ্যে অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে গেছে। এটা অবশ্য সুবিধাই হলো। কারণ অলিম্পিক এমন একটা খেলা, পৃথিবীর প্রায় সবগুলো দেশ এখানে অংশ নেয়। সর্বজনীন অংশগ্রহণ যদি না হয়, তখন অলিম্পিক আর অলিম্পিকের মতো থাকে না। যেহেতু আসরটা এক বছর পিছিয়েছে তখন সবার অংশ গ্রহণও নিশ্চিত হবে। কঠিন এই সময়ে সাধারণ মানুষের জন্য দোয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। অনুরোধ থাকবে, সরকার, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, সেগুলো যেন সবাই মেনে চলেন। এটা তো এমন নয় যে শুট করে করোনা মারা সম্ভব। যেহেতু মারা সম্ভব নয় তাই আসুন ঘরে থাকি।
শাকিল আহমেদ
সব কিছুই কেমন যেন থমকে গেছে। কোন এক দ্বৈত্য এসে যেন রাজ্যকে তছনছ করে দিয়ে যাচ্ছে। এই দ্বৈত্যকে বধ করার কোআে মেডিসিন আবিষ্কৃত হয়নি। হয়তো হয়েও যাবে। তার আগে চলে যাচ্ছে লাখ লাখ প্রাণ। কোথায় গিয়ে নিষ্পত্তি হবে সেটি অজানা। আমাদের বন্দুক আছে, গুলি আছে তারপরও নিশানা ভেদ করতে পারছি না। কারণ করোনা অদৃশ্য। সুতরাং থাকতে হবে সাবধান।
আমাদের খেলোয়াড়দের সময়টা শঙ্কার মধ্যেই সময় কাটছে। অবশ্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিরাপদেই আছি। তবে কিছু দিন আগে এখানকার প্রাকটিসও বন্ধ হয়ে গেছে। বলতে গেলে রুমের ভেতরেই কাটছে অলস সময়। তবে নিয়মিত ঘরোয়া ব্যায়ামগুলো করছি। পিস্তল নিয়ে প্রাকটিসের সুযোগ নেই। হাতে ওয়েট নিয়ে সকাল-বিকেল প্রাকটিসটা করছি। দীর্ঘদিন গ্যাপে যাতে শরীরটা মুটিয়ে না যায় সে জন্যই এ ব্যবস্থা।
অলিম্পিক গেমসটা পিছিয়ে গেল। বাংলাদেশ গেমসে খেলার জন্য আমরা দেশের সব অ্যাতলেটরাই অপেক্ষায় ছিলাম। বেশ কিছু শুটিং বিশ্বকাপ ছিল এ বছর। সেগুলো পিছিয়ে গেছে। সব মিলে আসলে আমরা অনেক পিছিয়ে গেলাম। এটা কাটিয়ে উঠতে গেলে অবশ্যই সময় লাগবে। সব দিক থেকে মিলিয়ে খারাপ সময়ই পার করছি। তবে আশা করছি দ্রুত সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই আবার ফিরবো ইনশাআল্লাহ।
শারমিন আক্তার রতœা
বাসায় মেয়েকে নিয়ে সময় কেটে যাচ্ছে। আসলে এই মুহূর্তে পরিবেশ তো মোটেও খেলাধুলার জন্য উপযোগী নয়। যেহেতু বৈশ্বিক মহামারী, অবস্থাটা আমাদের মেনে নিতেই হবে। সব কিছু বন্ধ থাকায় হালকা ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করছি। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের মাধ্যমে যতটুকু নিজেকে ফিট রাখা যায়। আমাদের মূল অনুশীলন যেটা, সেটা তো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ রাইফেল তো কেউ ক্যারি করে বাসায় নিয়ে যায়নি। সবারটা জমা রাখতে হয়েছে। একজন অ্যাতলেট হিসেবে ফিজিক্যালি হয়তো ফিট থাকতে পারবেন। কিন্তু শুটিং উন্নতি করার জন্য যা প্রয়োজন সেটি সম্ভব নয়। এটা অবশ্যই ক্ষতির। কিন্তু কিছু বলারও নেই, করারও নেই। যেহেতু এটা অনেক ব্যয়বহুল গেম, অনেক কিছুরই স্বল্পতা আছে। বাইরের দেশের শুটাররা হয়তো ঘরে বসেই অনুশীলন করতে পারছে। কিন্তু আমরা ইকুইপমেন্ট স্বল্পতায় সেটা করতে পারছি না। আশার কথা হলো অলিম্পিক বা অন্যান্য অনেক গেমসই পিছিয়ে গেছে। এখন ফিজিক্যাল ও মেন্টাল ফিটনেস ধরে রাখা জরুরি।
সাধারণ মানুষের প্রতি একটাই বার্তা, তারা যেন ঘরে থাকেন। আর যে সব নিয়ম ফলো করতে বলা হয়েছে, সেগুলো যেন তারা করতে থাকেন। বিপদ-আপদ কেটে গেলেই সবার বাইরে বের হওয়া উচিত।
উম্মে জাকিয়া সুলতানা টুম্পা
সত্যি কথা বলতে খুবই বোরিং সময় কাটছে। একটা ভালো দিক যে ১৩ বছর পর এই প্রথম পরিবারকে সময় দিতে পারছি। বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর তো শুধু দুই ঈদে বাসায় আসা হতো। এবার সবার মধ্যেই আতঙ্ক। বাইরে বের হওয়ার সুযোগ নেই। কখন কী হবে এটা কেউ বলতে পারছে না। অসহায়ের মতো সময় কাটছে। এত দিন ক্যাম্পে অলিম্পিকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সেটিও পিছিয়ে গেছে। সব মিলে এক ধরনের হতাশাই কাজ করছে।
সব খেলার মতো আমাদের শুটারদের জন্যও ফিটনেস খুব গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করছি মানসিকভাবে ফিট থাকার জন্য। এ জন্য মেডিটেশন করছি প্রতিদিনই। তবে সব কিছুর আগে প্রার্থনা করছি সব যেন ঠিক হয়ে যায়। আমরা নিয়ম মেনে চললে দ্রুত এই বিপদ কাটিয়ে ওঠা যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement