১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খামখেয়ালিতে বিপর্যয় : শাপলা

-

‘করোনা আতঙ্কে কাঁপছে পুরো দেশ। অঘোষিত লকডাউনে থেমে আছে সবকিছু। কোয়ারেন্টিনের দিনগুলো পরিবারকে নিয়ে বেশ আনন্দেই কাটাচ্ছেন সমাজের অবস্থাশালী মানুষেরা। কিন্তু সমস্যাটা সমাজের নি¤œ আয়ের মানুষের। তাদের না আছে মাথা গোঁজার ঠাঁই, না আছে দুমুঠো খাওয়ার সামর্থ্য। এসব মানুষের জন্য তাই লকডাউনটা বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা। যে কারণে তারা কোনো নিয়মকানুন না মেনেই বের হয়ে যাচ্ছেন কাজের কিংবা খাবারের সন্ধানে। কিন্তু যাদের এসবের প্রয়োজন নেই তাদেরও বারবার সতর্ক করার পরও মানছেন না কোনো কিছু। একটা কথা মনে রাখতে হবে খামখেয়ালিতে হবে বিপর্যয়। বিপরীতে সচেতনতায় মিলবে মুক্তি। আইন বা নিয়মকে তোয়াক্কা না করলে বাংলাদেশে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে হাজার হাজার মানুষ।’ এভাবেই কথাগুলো বললেন বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টনে সাতবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন শাপলা আক্তার।
বর্তমানে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত শাপলা আক্তার জানান, ‘প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম বাংলাদেশ গেমসের জন্য। আগেরবারও বাংলাদেশ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি তাই এবার সেটিকে ধরে রাখার মিশনে নেমেছিলাম। কিন্তু করোনায় সব স্থগিত হয়ে গেল। সাথে নিজের স্বপ্নও। ঘরে বসে শুয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে। ননদের মেয়ে রুবতিকে নিয়েই সারাদিন কাটে। সে যেন আমার অনুশীলনের সঙ্গী।’
করোনা বিষয়ে শাপলা জানান, ‘সরকার যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করছে। একদিনেই তো সবার হাতে কিংবা বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া সম্ভব নয়। অপেক্ষা করতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে। কিন্তু সে ধৈর্য্যটাই যেন নেই। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কিন্তু আমরা মানছি কোথায়। পুলিশ প্রথমে একটু অ্যাকশনেই ছিল। পরে মিডিয়ায় নানা লেখালেখির পর পুলিশ বাহিনীকে একটু শিথিল হতে বলেছে সরকার। ব্যস্, সে সুযোগটায় সবাই ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। মানছে না কোনো নিয়মকানুন। তারা যেন ভেবে বসেছে কারোনা পালিয়েছে। সড়কে-মহাসড়কে একটু কড়াকড়ি থাকলেও মহল্লার অলিগলি চিত্র ভিন্ন। অকারণেই সব রাস্তাঘাটে ভিড় করছে। আল্লাহ আমাদের কবে বুঝ দিবেন।’
সাকিবের কথা উল্লেখ করে শাপলা বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উদ্যোগে দুস্থ মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। ক্রিকেটার-ফুটবলাররাও বাদ যাননি। সে কাতারে আছেন সাকিব আল হাসানও। নিউ ইয়র্কে স্ব-ইচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে থাকছেন। তার ফাউন্ডেশন সাহায্যও করছে। আমাদের দেশে অনেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ আছেন। এ মুহূর্তে তাদের সাহায্য খুবই প্রয়োজন। আমি সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাব।’
কোয়ারেন্টিনের এই সময়টাতে খেলোয়াড়দের খাদ্যাভাসের দিকে নজর দিতে বললেন বাংলাদেশের সেরা এই শাটলার, ‘এই ছুটিতে যেন কোনো খেলোয়াড় ভোজন রসিক না হয়ে পড়েন। খেলাতো নেই এমনকি নিরাপদ থাকতে জিমে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। এতে বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই বিষণœতায় ভুগতে পারেন। দেখা যায় বাসায় থেকে পরিবারের সাথে সময় দিতে গিয়ে বাড়িয়ে দিতে পারেন খাওয়া-দাওয়া। মোটেও এমন করা যাবে না। যদি শরীর ঠিক থাকে তাহলে স্কিল ও ফিটনেস দ্রুত ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে। আমি প্রতিদিন কমপক্ষে আধঘণ্টা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছি।’
করোনার প্রভাবে জুন মাসের আগ পর্যন্ত মনে হয় না কোনো টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াবে। এতটা লম্বা সময় মাঠে না যাওয়াটা সব খেলোয়াড়ের জন্যই কষ্টকর। তবে, খেলার চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি বলে মন্তব্য করেছেন শাপলা। এখন পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর সবচেয়ে বড় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হলো ঘরে থাকা। জমায়েত তথা মেলামেশা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু লম্বা সময় ঘরে থাকাটাও চ্যালেঞ্জিং। এমন অবস্থায় দেশের সবাইকে ঘরে থাকতে আর মানসিক প্রেরণা অক্ষুণœœ রাখার আহ্বান জানান শাপলা। ‘আমি মনে করি যারা জাতীয় দলে খেলেন তাদের অনেক সমর্থক রয়েছে। সুতরাং সেই সব খেলোয়াড়ের দায়িত্ব রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে সচেতনতামূলক বার্তা দেয়ার। আশা করছি সবাই নিয়ম মানলে ম্যাটে ফিরবে ব্যাডমিন্টন। তবে তার আগে জিততে হবে করোনা যুদ্ধে।’


আরো সংবাদ



premium cement