২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জীবনটা কত ভঙ্গুর মনে করাল করোনা : চয়ন

-

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস, আতঙ্কিত করে রেখেছে শত কোটি মানুষকে। থমকে গেছে মানুষের জীবন, জীবনযাত্রা। বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। কেড়ে নিয়েছে শত সহ¯্র প্রাণ। করোনাভাইরাসের পরের পৃথিবী নিশ্চিতভাবেই পাল্টে যাবে। তবে এর মধ্যেও একটা শিক্ষা খুঁজে পেয়েছেন জাতীয় হকি দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুর রহমান চয়ন। চয়ন মনে করছেন করোনা একটা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীকে। যে জীবনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সে জীবনটা কত ভঙ্গুর। তা আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছে করোনা। তার মতে এই সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকতে হবে।
মামুনুর রহমান চয়ন, যার খ্যাতি ছিল পিসি (পেনাল্টি কর্নার) স্পেশালিস্ট হিসেবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশীদের মধ্যে যার সবচেয়ে বেশি গোল রয়েছে। বাংলাদেশে চয়নই একমাত্র হকি খেলোয়াড় যিনি ২০০০ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে কোনো লিগে বা ক্লাবের হয়ে খেলার আগেই ২০০৪ সালে সরাসরি সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় দলে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে মাত্র দু’জনের চারবার করে এশিয়ান গেমস খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছেÑ তন্মধ্যে চয়ন একজন। তার আগে মুসা মিয়াও খেলেছেন চারটি এশিয়ান গেমস। গত এশিয়ান গেমসে (২০১৮ ইন্দোনেশিয়া) হঠাৎ করেই অবসরের ঘোষণা দেন চয়ন। কারণ হিসেবে জানান, সন্তানকে সময় দেয়া। করোনাভাইরাসের প্রকোপে সেটি যেন আরো ভালো করেই উপভোগ করছেন তিনি। পরিবারকে সময় দিতে পারছেন, বাবা-মায়ের খেদমত করতে পারছেন।
মালয়েশিয়া, জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডসের লিগে খেলা চয়ন জানালেন, ‘আমার সাথের খেলোয়াড়রা এখনো হকি খেলছেন। অবশ্য আমিও নৌবাহিনী দলের নিয়মিত খেলোয়াড়। জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছি সন্তান ও পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য। করোনায় সবাই ঘরবন্দী। সরকারি চাকরি করি বিধায় অফিসে যেতে হয়। বাকি সময়টায় আমি ছেলের সাথে খেলাধুলা করে এবং বাবা-মায়ের খেদমত করে পার করছি। স্ত্রীর কাজে টুকটাক সাহায্য করতে পারছি। এই সুযোগে কিছু রান্না-বান্নার কাজও শেখা হয়ে গেছে। শরীর ঠিক রাখতে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো পড়তে পারছি এবং প্রতিবারই নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, দেশ ও দশের জন্য আল্লাহর দরবারে পাঁচবার হাত উঠিয়ে মুনাজাত করতে পারছি। আমরা যেন সবাই সবাইকে ক্ষমা করে দেই।’
খেলার জগতেও এখন খবর বলতে ঘরে বন্দী থাকার দিনগুলোতে কে কী করছেন, করোনা ঠেকাতে কে কী ভূমিকা রাখছেন ইত্যাদি। জয়-পরাজয়ের খতিয়ান নেই, নেই রানরেটের হিসাব, নেই স্কোরারের খবর, নেই অ্যাসিস্টের খবর, নেই কে কত কম সময়ে পানিতে কিংবা স্থলে দূরত্ব অতিক্রম করার খবর। চয়ন জানালেন, ‘এখন শুধু একটাই হিসাব, করোনার বিপক্ষে কিভাবে জেতা যায়, কী করলে জেতা যায়। কঠিন এই সময়ে রোগের উৎপত্তিস্থল না খুঁজে, কোন দেশে কতজন মারা গিয়েছে, কোন দেশ কী করেছে সেটি না খুঁজে সমাধান খোঁজা উচিত। ভয়ঙ্কর এই বিপদের মাঝে একটাই মেসেজ হওয়া উচিতÑ আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হই, নিয়ম মেনে চলি। সাধ্যমতো প্রতিবেশীকে, আত্মীয়স্বজনকে ফোনের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করি। ভালো উদাহরণগুলোকেই আমরা যেন সামনে নিয়ে আসি।’
করোনার মাঝে ক্রীড়াবিদরা কিভাবে নিজেদের ফিটনেসকে ধরে রাখবে জানতে চাইলে চয়ন বলেন, ‘আমরাই একমাত্র প্রাণী যারা প্রকৃতির নিয়মের বিপক্ষে যাই। অথচ আমরা সৃষ্টির সেরা জীব এবং নিজেদের বুদ্ধিমান দাবি করি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি আর ধৈর্য ধরি। আমরা যারা খেলোয়াড় আছি তারা ইউটিউবে কিংবা টিভির কোনো চ্যানেলে সাবেক সেরাদের খেলা দেখে সময়টা পার করতে পারি। তিনি মনে করিয়ে দেন, মনে রাখতে হবে সরকার ছুটি দিয়ছে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নয়। আনন্দ করার জন্য ছুটি দেয়নি বরং নিজেকে সাবধান রাখার জন্য ছুটি দিয়েছে। খেলোয়াড়দের আগে ফিট থাকতে হবে। হকিতে তো এমনিতেই কোনো খেলা নেই। সব খেলোয়াড়ের জন্য উপদেশ হলো, বাড়িতে অলস সময় পার করলে মেদ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে আধাঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত। কারো ট্রেডমিল থাকলে (দৌড়ানোর মেশিন) তো আরো ভালো। মনে রাখতে হবে এই সময়টা সবাই কিন্তু যার যার ঘরের অধিনায়ক। দলকে (পরিবারকে) কিভাবে পরিচালনা করে সফল হওয়া যায় সেটি মাথায় রাখতে হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement