২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উচ্ছল ক্রীড়াঙ্গনে বিষাদের ছায়া

-

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস ঘিরে যত ব্যস্ততা ছিল, জিম্বাবুয়েকে হারানোর পর পাকিস্তান সফরের জন্য যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, স্কুল হকির পর জুনিয়র এশিয়া কাপ আয়োজনের যে মানসিকতা ছিল, আনন্দমুখর পরিবেশে ফুটবল প্রিমিয়ার লিগ, মহিলা লিগ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্কুল ফুটবল যেভাবে চলছিল, অলিম্পিককে ঘিরে আরচার রোমান সানাদের যে একাগ্রতা ছিলÑ এক করোনা থামিয়ে দিয়েছে ক্রীড়াবিদ-কোচ-কর্মকর্তা-সংগঠকদের। হঠাৎ করেই উচ্ছল ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া। বেদনায় নীল হয়েছে ক’দিন আগের মুখর ক্রীড়াঙ্গন।
মুখর ক্রীড়াঙ্গন আজ নীরব। নেই ক্রীড়াবিদ, সংগঠক, ক্রীড়া প্রতিবেদকদের ব্যস্ততা। নেই পারফরম্যান্স, টুর্নামেন্ট কিংবা সংবাদ প্রচার-প্রকাশের তাড়া। করোনায় থমকে আছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন, থমকে আছে দেশের খেলাধুলা। জাতীয় দৈনিকের ক্রীড়া সাংবাদিকরা দিন কাটাতেন খেলাধুলা-খেলোয়াড়দের খবর সংগ্রহ করে, এক স্টেডিয়াম থেকে আরেক স্টেডিয়ামে, এক ফেডারেশন থেকে আরেক ফেডারেশনে দৌড়ঝাঁপ করে। বর্তমানে মোবাইল কিংবা ফোনেই কাজ সারতে হয় সবার। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের খেলোয়াড়, বিভিন্ন ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে খবর সংগ্রহ করার কোনো উপায় নেই। উপায় থাকলেও সচেতনতার কারণে এড়িয়ে চলা। সংবাদ সংগ্রহের ফোনই একমাত্র ভরসা।
ক্রিকেট, ফুটবল ছাড়া বেশির ভাগ ক্রীড়া ফেডারেশনের কার্যালয় এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে কিংবা আশপাশে। এখানে আছে হ্যান্ডবল, সাইক্লি¬ং, বক্সিং, রাগবি, অ্যাথলেটিকস, উশু, রোইং, জিমন্যাস্টিক্স, হকি, আরচারি, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, ভলিবল, কাবাডি, দাবা, ক্যারম, কিকবক্সিং, কারাতে, তায়কোয়ানদো ফেডারেশন। যাদের বেশির ভাগের কার্যক্রম এখন স্থগিত। স্বল্প পরিসরে যারা চালু রেখেছেন সরকারি ছুটি ঘোষণায় সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।
মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানাদি হয়েছে সংক্ষিপ্ত পরিসরে। ১ এপ্রিল শুরুর কথা ছিল বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস। আগেই যা স্থগিত হয়েছে করোনার কারণে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে দেশের ক্রিকেট। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পর বন্ধ হয়েছে পাকিস্তান সফর। আগামী মে মাসে আয়ারল্যান্ড সফরও হয়েছে স্থগিত। বিসিবির কার্যক্রমও হয়েছে সীমিত। ফুটবল প্রিমিয়ার লিগ, মহিলা লিগও অনির্দিষ্টকালের জন্য হয়েছে স্থগিত। এএফসি কাপ, ইউরো, লা লিগাসহ ইউরোপিয়ান লিগ, ইলিংশ লিগ সব কিছুই স্থগিত হয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে। গত মঙ্গলবার বন্ধ হয়ে গেল পৃথিবীর সেরা ক্রীড়া আসর টোকিও অলিম্পিক। শঙ্কার মুখে অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবরে হতে যাওয়া টি-২০ বিশ্বকাপ।
বাংলাদেশে শুধু যে নিকটবর্তী খেলাধুলার আসর বাদ হয়েছে এমনটি নয়। বাদ হয়েছে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাগুলোও। ২০২৩ সালে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা থাকলেও, নির্ধারিত সময়ে আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা নেই বিসিবির মেগা প্রকল্প শেখ হাসিনা ক্রিকেট কমপ্লেক্সের। নেপথ্যে করোনার প্রভাব। এমনটাই জানিয়েছেন বিসিবি টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য জালাল ইউনুস। ২৫টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কমপ্লেক্স নির্মাণে আগ্রহ দেখালেও, এখনো চূড়ান্ত হয়নি নির্মাণকারী। এ দিকে জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক সূচি নিয়ে চিন্তিত বোর্ড। জালাল ইউনুস বলেন, যেহেতু দেশে দেশে এখন লকডাউন কর্মসূচির চালু রয়েছে সেই অনুযায়ী আমাদের কাজটা আরো পিছিয়ে যাচ্ছে। আমাদের টার্গেট ২০২৩ সাল থাকলেও এই পরিস্থিতে আমরা মনে হয় ভালোই পিছিয়ে যাবো। পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। তাই স্টেডিয়াম নির্মাণের অগ্রগতিতে আপাতত কোনো সুখবর নেই। অন্তত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মাঠে গড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই ঢাকা লিগের। ঘরোয়ার সাথে আন্তর্জাতিক সূচি বিপর্যয়ে বিসিবি শঙ্কিত।
অচিরেই কাটবে অচলাবস্থা, কাটবে অনিশ্চয়তা। দূর থেকে দাঁড়িয়ে বা মোবাইলে খোঁজখবর নেয়া নয়; একদিন মাঠে ফিরবে খেলা, ফিরবে উল্লাস-উচ্ছ্বাস। কষ্টের নয়, ক্রীড়াঙ্গন হবে মধুর এবং উৎসবের। এটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সবার।

 


আরো সংবাদ



premium cement