২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে লড়াইয়ের সেঞ্চুরি

-

মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকাল শনিবার টস করতে নেমেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাঝারি গড়নের মুমিনুল হক ও জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়ক সুঠাম ও দীর্ঘদেহের অধিকারী ক্রেইগ আরভিন। সাদা পোশাকের ওপরে টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্যের ব্লেজার ও মাথায় টেস্ট ক্যাপ পরেছিলেন উভয়েই। স্বাগতিক হওয়ায় কয়েন ছুড়লেন মুমিনুল। ডাক দিলেন আরভিন। জিতলেন অতিথি অধিনায়ক। টস জিতে বাংলাদেশকে পাঠালেন বোলিংয়ে। সেই সাথে হয়ে গেল সব ফরম্যাটে (টি-২০, ওয়ানডে, টেস্ট) বালাদেশ ও জিম্বাবুয়ের শততম ম্যাচের আনুষ্ঠানিকতা।
গত ২২ বছরে দুই দল তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৯৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। গতকাল মিরপুরে পূর্ণ হলো সেঞ্চুরি। ৯৯ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে ৫৭টিতে, জিম্বাবুয়ের জয় ৩৯টি আর ড্র হয়েছে তিনটি ম্যাচ। দুই দল বাংলাদেশের মাটিতে ম্যাচ খেলেছে ৫৯টি ম্যাচ।
যার ৪১টিতে জয় টাইগারদের, হার ১৬টি, ড্র দু’টি। জিম্বাবুয়ের মাটিতে খেলেছে ৩৭ ম্যাচ। ১৫টি জয় বাংলাদেশের, জিম্বাবুয়ের ২১টি ও ড্র একটি।
ভারতের মাটিতে দুই দল একটি ম্যাচ খেলেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ওই ম্যাচে জিতেছিল বাংলাদেশ। কেনিয়াতে দু’টি ম্যাচের দু’টিতেই জিতেছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে দুই দলই এর বাইরে আর কোনো দলের বিপক্ষে এত ম্যাচ খেলেনি। বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৯ ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ে ৮৭ ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
বাংলাদেশ বর্তমান পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকলেও মুখোমুখি লড়াইয়ের শুরুতে আধিপত্য ছিল জিম্বাবুয়ের। ১৯৯৭ সালের ১১ অক্টোবর দুই দল প্রথম মুখোমুখি হয় নাইরোবিতে। প্রথম দিকের কয়েক বছর শক্তিমত্তায় এগিয়ে ছিল জিম্বাবুয়ে। ফ্লাওয়ার ব্রাদার্স তখন যেকোনো বোলিং আক্রমণের জন্য রীতিমতো হুমকি। অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন দলটির কাছে মুখোমুখি লড়াইয়ের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হার ৪৮ রানে। ওই ম্যাচের পর আরো ছয় ওয়ানডেতে হার বাংলাদেশের। ২০০১ সালের ১১ এপ্রিল বুলাওয়েতে দুই দল প্রথম টেস্ট খেলে। হার মানতে হয় সাদা পোশাকেও। পরপর চার টেস্টে হারের বেদনায় নীল হয় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম জয় পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ১৬তম ম্যাচ পর্যন্ত। এর মধ্যে টেস্ট ছিল পাঁচটি, ওয়ানডে ১০টি।
জিম্বাবুয়ের মাটিতে ২০০৪ সালের ১০ মার্চ বিজয়ের কেতন ওড়ায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জয় পায় ৮ রানে। হাবিবুল বাশারের দল হারায় হিথ স্ট্রিক, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, তাতেন্ডা তাইবুদের নিয়ে গড়া জিম্বাবুয়েকে। আশরাফুলের ৩২ বলে ৫১ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ পেয়েছিল জয়। এরপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অন্য দিকে বিশৃঙ্খলা আর খেলোয়াড়দের বিদ্রোহে উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট। ২০০৫ সালের ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানে হারিয়ে প্রথম টেস্ট জেতে বাংলাদেশ। স্পিনার এনামুল হক জুনিয়রের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশ টেস্ট জয়ের খাতা খুলে। সিরিজের পরের টেস্ট ড্র করে প্রথমবারের মতো জেতে টেস্ট সিরিজ।
ওয়ানডে ও টেস্টে হারলেও টি-২০ তে প্রথম সাক্ষাতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর খুলনায় ৪৩ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। উভয় দলের সেটি ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক টি-২০।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থান শক্ত করার পাশাপাশি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও সাফল্যের সূচক বাড়তে থাকে। অন্য দিকে আধিপত্য হারানোর পাশাপাশি জিম্বাবুয়ের সূচক ধারাবাহিক নিচে নেমেছে। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বিপক্ষে টানা ৯ ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ। আবার ২০১৩ সালের ১২ মে থেকে ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ১৩ ম্যাচে বাংলাদেশ হারেনি। পারফরম্যান্সের এমন ধারাবাহিকতায় মুখোমুখি লড়াইয়ে বাংলাদেশ একটা সময় টপকে যায় জিম্বাবুয়েকে। পাশাপাশি তিন ফরম্যাটেই র্যাঙ্কিংয়ে জিম্বাবুয়েকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ।
২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবচেয়ে সফল বাংলাদেশ। ওই বছর ১৪ ম্যাচে ১০ জয় বাংলাদেশের, চারটি জিম্বাবুয়ের। বিপরীতে ২০০১ সালে বাংলাদেশের সবথেকে খারাপ সময় যায়। ১০ ম্যাচের ৯টিতেই হার, ড্র করে একটিতে।


আরো সংবাদ



premium cement