শুটাররা হতাশ করলেন
- কাঠমাণ্ডু থেকে জসিম উদ্দিন রানা
- ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
সাউথ এশিয়ান গেমসে এবার সোনালী হাসি হাসতে পারেননি বাংলাদেশের শুটাররা। লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি সোনালী নিশানায়। খুশি কিংবা বেদনার কান্নায় সিক্ত হননি পিস্তল কিংবা বন্দুক নিশানাবাজরা। আফসোসেও সিক্ত হননি। বরং ঘরের স্কোর থেকে একটু বেশি করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। স্বর্ণবিহীন এক গেমস পার করল শুটিং ডিসিপ্লিন।
বাংলাদেশ দলের কোচ সাইফুল আলম রিংকি বাংলাদেশের এই পারফরম্যান্সে একেবারেই খুশি নন। আশাহত রিংকির জানান, ‘২০০৬ আসরে পদকশূন্য। এবার ২০১৯ আসরেও বাংলাদেশ শুটিং থেকে কোনো স্বর্ণ জেতেনি। এই রেজাল্টে স্বাভাবিকভাবেই খুশি হতে পারছি না। কষ্টটা একটু বেশিই লাগছে, কেননা আমরা যতবার এসএ গেমস খেলেছি ততবারই সোনা ছাড়া ফেরত যাইনি। দুইবার ব্যতিক্রম হলো। একটা বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এবার আমরা ৬টা রৌপ্য পেয়েছি। এগুলোর যদি ৫০ শতাংশও ওভারকাম করতে পারতাম, তাহলে আমাদের তিনটি স্বর্ণ হতে পারত। এরকম করতে হলে অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। সারা বছরই শুটারদের অনুশীলনের ভেতরে রাখতে হবে এবং বেশি করে আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে খেলাতে হবে। নইলে শুটিং এগোবে না।’
এসএ গেমস ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হলেও ১৯৯১ সাল থেকে অন্তুর্ভুক্ত হয় শুটিং ডিসিপ্লিন। তখন থেকে প্রতি আসরেই স্বর্ণ জিতে আসছিলেন বাংলাদেশী শুটাররা। ১৯৯৩ ঢাকা আসরে শুটাররা সর্বোচ্চ সাতটি স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। ২০০৬ কলম্বো আসরে ব্যত্যয় ঘটে। ওই আসরে কোনো স্বর্ণ জেতেননি বাংলাদেশী শুটাররা। এবারো ২০০৬ সালের পুনরাবৃত্তি করেছেন শুটাররা। একটি সোনাও জেতেননি। এবারের অর্জন ৬ রূপা ও ৪ ব্রোঞ্জপদক।
তারকা শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকী ভারতসহ সার্বিক বিষয়ে বলেন, ‘এবার আমি স্বর্ণ না জিতলেও আমার ইভেন্টে ক্যারিয়ার সেরা স্কোর করেছি। ফাইনালটা অনেক কিছুর ওপরই নির্ভর করে। সামগ্রিকভাবে আমাদের পারফরম্যান্স স্কোরের দিক দিয়ে যতটা প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক ভালো করেছে সবাই। আসলে ভাগ্য বলে একটা ব্যাপার আছে। আরচারিতে বাংলাদেশ ১০ সোনা জিতেছে, খুবই ভালো কথা। কিন্তু এটিও সত্যি ওই ইভেন্টে ভারত নেই। আর শুটিংয়ে আমাদের লড়তে হচ্ছে ভারতের সাথে, যাদের আবার অনেকেই অলিম্পিকে খেলেছে বা খেলবে। কাজেই আমাদের ৬ রৌপ্যপদকের গুরুত্ব অবশ্যই আছে।’
কাঠমান্ডুর সাতদোবাতোর শুটিং কমপ্লেক্সে ১০ মিটার এয়ার পিস্তল মিক্সড টিমের ফাইনাল দিয়ে শেষ হয় বাংলাদেশের শুটিং ডিসিপ্লিনের খেলা। তাতে ছিলেন বাংলাদেশের শাকিল আহমেদ এবং আরদিনা ফেরদৌস আঁখি। এই জুটি ভারতের শ্রাবণ কুমার এবং আন্নুরাজ সিং জুটিকে পেছনে ফেলে ১৭ পয়েন্টে জেতেন ব্রোঞ্জপদক।
ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের শুটাররা পিছিয়ে থাকলেও মেধা মননে লাল-সবুজরা এগিয়ে রয়েছে বলে মনে কারেন রিংকি, ‘আসলে শুটিংয়ে ভারত সবার চেয়ে এগিয়ে। তাদের অনুসরণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই আসরে বেশির ভাগ ইভেন্টেই আমাদের শুটাররা অল্পের জন্য গোল্ড মেডেল মিস করেছে। ভারতের শুটাররা যে পরিমাণ প্র্যাকটিস করেন এবং যে হারে আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নেন, সে তুলনায় আমাদের প্র্যাকটিস ও অংশ নেয়ার হার খুবই কম। এখন তাদের সমকক্ষতা অর্জন করতে না পারলেও তাদের অর্জনের ৫০ শতাংশও যদি আমরা অর্জন করি, তাহলে আমাদের শুটিং অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আমাদের শুটাররা অনেক মেধাবী ও পরিশ্রমী। যোগ্যতা আছে সেই পর্যায়ে যাওয়ার।’
বাংলাদেশী শুটাররা কি চাপের কারণেই স্বর্ণ জিততে পারছেন না? এ প্রসঙ্গে রিংকি বলেন, ‘খেলতে গেলে চাপ থাকবেই। বড় শুটাররাও চাপে থাকেন। তারাও শেষ দিকে গিয়ে অনেক সময় খারাপ খেলেন। তারা যেমন মনোবল বাড়াতে মেডিটেশন করেন, আমাদের শুটাররাও তা করেন। ভালো খেললেই হবে না, ভাগ্যের সহায়তাও থাকতে হয়, যেটি আমাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে না। এবার আমরা যে ধাক্কাটা খেয়েছি, আগামী আসরে সেটি যেন না হয়, সে জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
খেলার নিয়ম পাল্টানো প্রসঙ্গে শুটার আরদিনা ফেরদৌস আঁখি বলেন, ‘এবার মিক্সড টিমে খেলার নিয়ম পাল্টে গেছে। আগে সবাই একসাথে ফাইনাল খেলত। এখন ব্রোঞ্জ মেডেলের জন্য আলাদা লড়াই হয় আর গোল্ড আর সিলভারের জন্য আলাদা লড়াই হয়। প্রথম রাউন্ডে একটু খারাপ করার কারণে গোল্ড মেডেলের জন্য ওই রাউন্ডে খেলতে পারিনি। শুটিংয়ে শুধু ভারতই আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, শ্রীলঙ্কাও কিন্তু উঠে আসছে। শ্রীলঙ্কা কিন্তু আমাদের টপকে রূপা জিতছে। ওরা অনেক অভিজ্ঞ। আমাদের রূপাগুলো যদি সোনা হতো... এটা ভেবে অবশ্যই হতাশ।’
শুটার শাকিল বলেন, ‘ভারতের শুটারদের মতো যদি আমাদেরও কোনো গ্যাপ না দিয়ে সরকার সারা বছরই ট্রেনিং করায় এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলায়, তাহলে অবশ্যই আমরা এখনকার চেয়েও ভালো রেজাল্ট করব।’
সৈয়দা আতকিয়া হাসান দিশার ভাষ্য, ‘টিম ইভেন্টে আমরা অল্পের জন্য সোনা জিতিনি বলে বেশ হতাশ। তবে আমাদের পারফরম্যান্স সেরা ছিল। আসলে কোথায় আমাদের সমস্যা সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা