২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কম্পাউন্ড রিকার্ভে একক আধিপত্য

-

শুরুটা আরচারি ডিসিপ্লিনে রিকার্ভ পুরুষ দলগত ইভেন্ট দিয়ে। প্র্যাকটিসের সময় একটু যেন চুপচাপই ছিলেন অলিম্পিকে সরাসরি নাম লিখানো রোমান সানা। কি যেন চিন্তা করছিলেন। দিনের প্রথম ইভেন্ট তাকে দিয়ে শুরু। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন তামিমুল ইসলাম, হাকিম আহমেদ রুবেল। ঘোষণার পর ফাইনালের লাইন আপে দাঁড়ালেন। তখনো ছিলেন স্থির। তিনজনে মিলে শুরুটা করেছিলেন দুর্দান্ত। ৫৫-৫১ পয়েন্টে শ্রীলঙ্কাকে হারালেন প্রথম ধাপে। দ্বিতীয় ধাপে পরাজয়, তৃতীয় ধাপে জয়। চতুর্থ ধাপে পয়েন্ট সমান হলেও অ্যাডভান্টেজে বাংলাদেশকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। সোনালি হাসি সবার মুখে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় আরচারদের। রিকার্ভে তিন স্বর্ণ জয়ের পর কম্পাউন্ড বিভাগেও একই চিত্র। ছয় ইভেন্টের প্রতিটিতেই স্বর্ণ জিতে দিন শেষ করেন ছয়জন পুরুষ ও ছয়জন মহিলা আরচার।
এসএ গেমসে এবারই প্রথম আরচারিতে স্বর্ণ জিতল বাংলাদেশ। জয়ের পর রোমান সানা বলেন, ‘ভালো লাগছে। স্বর্ণ জিতে দিন শুরু হলো। প্রথমটা জেতায় বাকিগুলোতেও আত্মবিশ্বাস পাবো। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আমরা ১০ ইভেন্টেরই ফাইনালে উঠেছি। একটাতে স্বর্ণ জিতলাম। আরো দু’টি আছে। আশা করছি ভালো করতে পারব।’ হয়েছেও তাই। দুই স্বর্ণ জেতার পর বললেন, ‘বুঝতেই পারছেন অনুভূতি কেমন। শুধু আমি কেন দলের সবাই খুশি। বাংলাদেশ তিনটি করে ছয়টি ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছে। এমন দিন কি কখনো ভুলা যায়।’
গত এসএ গেমসে চোটের কারণে খেলতে পারেননি রোমান সানা। এবার সুযোগ দারুণভাবে কাজ লাগিয়েছেন, ‘আমাদের দেশে এই আসরকে ধরা হয় অলিম্পিকের মতো। আমরা অন্য বড় আসরে পদক জিততাম না। আমাদের জন্য এটাই সবকিছু। আমাদের এই রেজাল্টের মূল কারিগর হলেন কোচ ফ্রেডরিক।’
রোমান স্বীকার করেন এই আসরে ভারত থাকলে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো, ‘তবে তারা থাকলেও আমাদের যে লক্ষ্যটা ছিল, সেটাও পূরণ করতে পারতাম। তাদের চেয়ে আমরা কিন্তু পিছিয়ে নেই। তারা আসেননি বলে আমাদের পথটা একটু সহজ হলেও আমি মনে করি প্রতিপক্ষ যেই হোক তাকে শক্ত ভাবাই উচিত। আমি অলিম্পিকে সুযোগ পেয়েছি সেরাদের হারিয়ে। তারাওতো আমার কাছে হেরেছে। তারা ভেবেছে বাংলাদেশের প্রতিযোগী আর কি ফলাফল করবে। আমাদের ক্ষেত্রের এটি হতে পারত।’
কম্পাউন্ড বিভাগে খেলে স্বর্ণজেতা বিউটি বলেন, ‘আসলে এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সাফল্য। এর আগে আমরা এসএ গেমসে খেলেছি কিন্তু কোনো স্বর্ণ আসেনি। আমাদের এই খেলাটা এমন একটা খেলা যে তিন দিন কিংবা এক সপ্তাহ বিশ্রাম করলে ফর্ম খারাপ হয়ে যায়। এ জন্যই আমাদের দীর্ঘদিন অনুশীলনের মধ্যে থাকতে হয়।’
তামিমুল বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে। ২০১৬ আসরেও খেলেছিলাম, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে স্বর্ণ আসেনি। এবারই আমার প্রথম স্বর্ণ। কাজের ফল পেয়ে আমরা খুশি।’
হাকিম আহমেদ রুবেল বলেন, ‘আমার আন্তর্জাতিক বেশকিছু পদক রয়েছে। তবে এসএ গেমসে এবারই প্রথম গোল্ড জিতলাম। ভালো লাগাটা অন্য রকম। এর আগে ২০১৬ সালে রাশিয়ায় গোল্ড জিতেছিলাম। ইসলামিক সলিডারিটি গেমে রুপা জিতেছি। ফিলিপাইনে একটা গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম।’
অসীম কুমার ও আশিকুজ্জামান জানান, ‘ কোনো প্রতিযোগীই ছোট না। কাউকে খাটো করে দেখা ঠিক না। আমরা যথেষ্ট পরিশ্রম করেছি। ভারত এলেও একতরফা কিছু করতে পারত না। আমাদের কনফিডেন্ট লেভেল আগের চেয়ে অনেক ভালো। ভারত যে খেলবে না সেটা অনেক পরে জানতে পেরেছি।‘
এবারের এসএ গেমসে যে কয়টি ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশ শক্তিশালী ছিল, তার মধ্যে আরচারি একটি। এই ডিসিপ্লিন থেকে পাঁচের অধিক স্বর্ণপ্রত্যাশা করেছিল বাংলাদেশ। সেই প্রত্যাশা পূরণের পথে দারুণ শুরু করলেন দেশীয় আরচাররা। পোখারার রঙ্গশালায় রিকার্ভ পুরুষ দলগত ইভেন্টের পর মহিলা (ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার মুনিরা, বিউটি রায়) দলগত এবং মিশ্র দ্বৈতে ( রোমান, ইতি খাতুন) স্বর্ণ জিতেন আরচাররা। বিকেলে কম্পাউন্ড বিভাগের তিনটি ইভেন্টে একই ঘটনার জন্ম দেন আরচাররা। কম্পাউন্ড পুরুষ দলগত ইভেন্টে সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস ও আশিকুজ্জামান ২২৫-২১৪ স্কোরে ভুটানকে, মহিলা দলগতে সুস্মিতা বণিক, সুমা বিশ্বাস ও শ্যামলী রায় শ্রীফঙ্ককে এবং মিশ্র দ্বৈতে সোহেল রানা ও সুস্মিতা বণিক ১৪৮-১৪০ স্কোরের ব্যবধানে নেপালকে পরাজিত করে স্বর্ণ জয় করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement