২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জন্মদিনে এর চেয়ে সুন্দর উপহার আর হয় না : ফাতেমা

-

গতকাল কাঠমান্ডুর নয়াবাজার কীর্তিপুরে ফেন্সিংয়ে মহিলা এককে স্বর্ণ জয়ের পর মায়ের কথা উঠতেই নীরব হয়ে যান তিনি। আস্তে আস্তে বেয়ে পড়ে চোখের পানি। কথাও বন্ধ হয়ে যায়। তারপর নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়ে বললেন মায়ের কথা, ‘খেলার আগেও মায়ের কথা মনে ছিল না। তখন শুধুই খেলা নিয়ে ভেবেছিলাম যে আজকে দেশের জন্য লড়ব। দেশকে স্বর্ণ এনে দেবো; কিন্তু সোনা জয়ের পরই মায়ের কথা বারবার মনে পড়ছিল। আজকে মা থাকলে অনেক খুশি হতেন।’ এ কথা বলেই আবার কাঁদতে লাগলেন ফেন্সিংয়ে বাংলাদেশকে প্রথম আন্তর্জাতিক পদক এনে দেয়া ১৯ বছর বয়সী ফাতেমা।
শুধু ফাতেমারই নয়, দিনটি বাংলাদেশের ফেন্সিংয়ের জন্যও মাইলফলক। এবারই প্রথম সাউথ এশিয়ান গেমসে যুক্ত হয় এই ইভেন্টটি। তাতেই বাজিমাত করেছেন হবিগঞ্জ চুনারুঘাটের এ মেয়ে। অনেকটা অপরিচিত এই খেলাটি থেকে স্বর্ণ জিতে ফাতেমা ভাসছেন আনন্দে। স্বর্ণের লড়াইয়ে নেপালের রবিন থাপাকে ১৫-১০ পয়েন্টে হারিযেছেন। বিশেষ এই দিনটি তার জন্য স্পেশাল। এ দিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন ফাতেমা। শনিবার ছিল তার জন্মদিন। অথচ স্বর্ণ জয়ের আগ পর্যন্ত কাউকে জন্মদিনের কথা বলেননি। ‘জন্মদিনের কথাটি আমি গোপন রেখেছিলাম। মনে মনে একটা পরিকল্পনা করেছিলাম যে, যদি জিতি তাহলে সবাইকে বলব আর হারলে কাউকে জানাব না। সেরা হওয়ার পরই জানিয়ে দিই আজ আমার জন্মদিন। তার মুখ থেকে এ কথা শোনার পরই পুরো দলের সবাই ‘হ্যাপি বার্থডে ফাতেমা’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে ফাতেমা আবেগাপ্লুত,‘স্বর্ণ জয়ের ব্যাপারে আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। শ্রীলঙ্কা, ভারত ও নেপালকে হারানোর পর স্বর্ণ জিতে প্রথম বিদেশে এসে সোনা জিতলাম। এটা আমার জন্য বিশেষ কিছু।’
বয়স মাত্র ২ মাস। আপন বলতে তখন শুধুই মা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না এই বয়সী শিশুর। জন্ম নেয়ার মাত্র ৬০ দিনের মধ্যেই গর্ভধারিণী মা হাসিনা বেগমকে হারিয়েছিলেন ফাতেমা মুজিব। তখনো বুঝতে পারেননি কাকে হারিয়েছিলেন। ২০০১ সালে হঠাৎ স্ট্রোক করে মা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ফাতেমার আশ্রয় বলতে ছিলেন বড় বোন খাদিজা মুজিব। অনেকটা মায়ের মতো করেই লালন পালন করেছেন বোন খাদিজা। উনিশ বছর পার করেছেন মাকে ছাড়া। ভাই-বোনেরা কখনোই মায়ের অভাব বুঝতে দেননি।
এর আগে কখনোই বিদেশে যাননি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চুক্তিবদ্ধ চাকরি করা ফাতেমা। বড় ভাই সাদ্দাম মুজিবও নৌবাহিনীতে চাকরি করেন। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা এ ফেন্সার মুভিও খুব একটা দেখেন না। তবে যোধা আকবর মুভি দেখার পর থেকেই নিজেকে যোদ্ধা হিসেবে ভাবেন ফাতেমা। ‘ফেন্সিং রাজকীয় খেলা। খুব ড্রেস পরা থাকে। এটা দেখে খুব ভালো লাগে। আমি নৌবাহিনীর খেলোয়াড়। যেখানেই খেলি দেশের জন্য খেলব।’
স্যাবারের খেলায় কোমরের ওপরে যেকোনো স্থানেই স্পর্শ করা যায়। যে খেলোয়াড় স্যাবার নিয়ে খেলে তাকে অনেক দ্রুত মুভ ও অ্যাটাক করতে হয়। স্যাবারে দুই ধরনের আলো দেখতে পাওয়া যায়, লাল ও সবুজ আলো। কোমরের ওপরে যেকোনো স্থানে স্যাবারের স্পর্শ হলে এই লাল বা সবুজ আলো জ্বলে ওঠে। অন্য অনেক খেলার মতো ফেন্সিং খেলায়ও খেলোয়াড়রা নির্দিষ্ট পোশাক পরে থাকেন। আত্মরক্ষার জন্য ফেন্সিং খেলোয়াড়রা হাতে গ্লাভস, শরীরে জ্যাকেট, মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট পরে থাকেন। ম্যাচের ফল নির্ধারণ হয় পয়েন্টের হিসাবে। যে ৯ মিনিটের মধ্যে সবার আগে ১৫ পয়েন্ট অর্জন করবে সেই জিতবে। ফেন্সিংয়ে আরো দু’টি ইভেন্ট হলো ইপি ও ফয়েল।


আরো সংবাদ



premium cement