২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্রিকেটারদের আস্থা চান ডমিঙ্গো

ক্রিকেটারদের সাথে আলাপ করছেন নতুন হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো হ নয়া দিগন্ত -

সখ্য গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্রিকেটারদের আস্থা অর্জন করতে চান বাংলাদেশের নতুন হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। আগামী দুই বছর বাংলাদেশ দলকে দেখভাল করবেন ৪৪ বছর বয়সী এ প্রোটিয়া। গতকাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে টাইগার কোচ জানান, সামনের কয়েক দিন তার প্রথম কাজ হবে খেলোয়াড়দের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য ক্রিকেটারদের কাছাকাছি যাওয়া এবং সামনের এক বা দুই সপ্তাহে তাদের সম্পর্কে জানা, সম্পর্ক তৈরি করা। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করব তাদের আস্থা অর্জনের। প্রথমত তাদের দেখব, কিভাবে তারা তাদের কাজ করে এবং সেখান থেকেও কিছু জানার থাকবে।’
সাউথ আফ্রিকার সাবেক কোচ ডমিঙ্গো নতুন অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ঢাকায় এসেছেন গত মঙ্গলবার বিকেলে। গতকাল সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। এরপর চলে আসেন নতুন কর্মসংস্থান মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। সাথে ছিলেন স্বদেশী চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ও ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজ সামনে রেখে মিরপুরে চলছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্প। গতকাল প্রথম প্রহরেই ক্যাম্পে যোগ দেন দুই নতুন কোচ। সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ছিল ক্রিকেটারদের রানিং সেশন। পুরোটা সময় শিষ্যদের সাথে কাটান ডমিঙ্গো-ল্যাঙ্গাভেল্ট। কথা বলেন শিষ্যদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। আলোচনা করেন ক্যাম্প ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়নের সাথেও।
এরপর ডমিঙ্গো সরাসরি চলে আসেন সংবাদ সম্মেলনে। প্রথম দিনে শিষ্যদের প্রতি তার পরামর্শ, ‘ছেলেদের জন্য প্রথম বার্তা থাকবে নিজেদের সেরা ছন্দে থাকার পথটা বের করা। ফিটনেসের প্রতি বাড়তি তাগিদ দেয়া। লাইনলেন্থ অবশ্যই যে কোনো বোলারের জন্য প্রথম বিষয়। একই সাথে পরিশ্রম এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। উপভোগ করতে হবে ব্যাটিংটাকেও। বুঝতে হবে প্রয়োজন।’
এর আগে বাংলাদেশে ছয়বার এসেছেন ডমিঙ্গো। এবার নতুন দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ দলকে গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এসেছেন। কিন্তু বাস্তবতা যে সহজ নয়, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন সাউথ আফ্রিকান এই কোচ। বাস্তবতা মেনেই এ দেশের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে কোচ বলেন, ‘এখানে সব বদলে দিতে আসিনি। উপমহাদেশে সব সময়ই ক্রিকেট খেলা হয়। আমরা আশা করি না, বাংলাদেশ ক্রিকেট আমাদের সাথে মানিয়ে নেবে বরং বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে আমরা মানিয়ে নেব।’
বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের সামর্থ্য কিংবা প্রতিভা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সামর্থ্যরে প্রকাশটা ধারাবাহিক নয়। সব মিলিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো দুই প্রোটিয়া কোচ ডমিঙ্গো-ল্যাঙ্গাভেল্টের বাংলাদেশ অধ্যায়। দুই কোচের প্রথম পরীক্ষা আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর একমাত্র টেস্টে আফগানদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। এরপর আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজ খেলবে টাইগাররা। আট ম্যাচের সেই সিরিজ শুরু হবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর। কোচিং প্যানেলে ডমিঙ্গো পাচ্ছেন নিজ দেশের আরো তিন কোচকে। তার সাথেই গতকাল কাজে যোগ দিয়েছেন টাইগারদের নতুন পেস বোলিং কোচ চার্লস ল্যাঙ্গাভেল্ট। ব্যাটিং বিভাগের দায়িত্বে আগে থেকেই আছেন নিল ম্যাকেঞ্জি, ফিল্ডিংয়ে রায়ান কুক। তারা যোগ দেবেন স্কিল ক্যাম্প শুরুর আগে। ক্রিকেটারদের কন্ডিশনিং ক্যাম্প চলবে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত। একমাত্র টেস্ট খেলতে আফগানরা বাংলাদেশে আসবে ৩০ আগস্ট।
কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি কেন এত আগ্রহ ডমিঙ্গোর? গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় পা রাখা কোচ পরদিনই সকালে সংবাদ সম্মেলনে এসেই জানালেন সে কারণ। মূলত ক্রিকেটের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের এত আগ্রহই টেনেছে প্রোটিয়া এই কোচকে। নতুন দায়িত্ব নিয়ে ভীষণ খুশি ডমিঙ্গো। ‘বাংলাদেশে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কোচ হিসেবে যদি আপনি জানেন আপনার দায়িত্ব কী, তবে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। আমিও এটা উপভোগ করি। এ দেশের ক্রিকেট নিয়ে সমর্থকদের প্রত্যাশা বেশি। বাংলাদেশ কিন্তু খারাপ দল নয়। বিশ্বকাপে ভালো করেছে। ফলাফল যা-ই হোক না কেন, বাংলাদেশ কিন্তু ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেছে। সব সময় ফল দিয়ে সবকিছু বিচার করা যায় না।’
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা ১৯ বছরের। এই দীর্ঘ সময়েও আশানুরূপ কোনো সাফল্য নেই তাদের। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ যতটা সমীহ আদায় করে নিয়েছে টেস্টে ঠিক সে রকম নেই। টেস্ট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে উল্টো জিজ্ঞেস করে বসেন সবশেষ কবে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে, উত্তর পেলেন ছয় মাস আগে। টেস্টে এমনিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, তারপরও যদি বেশি ম্যাচ না খেলে তাহলে দ্রুত উন্নতি সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। ‘যদি আপনি বেশি ম্যাচ না খেলেন তাহলে টেস্টে ছন্দ ধরে রাখা কঠিন। তবে এখন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কারণে অনেক বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ এক ম্যাচ ও দুই ম্যাচের সিরিজ খেলে থাকে। এখন তিন বা চার ম্যাচের সিরিজ খেলতে হবে, যা তাদের আরো সহায়তা করবে। যত বেশি খেলবেন, তত বেশি এই ফরম্যাটের সাথে আরো মানিয়ে নেয়া সম্ভব। কম খেলার কারণে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত বা যার টেস্টের ওপরের সারিতে আছে তারা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি ম্যাচ খেলে।’
তিনি আরো বলেন, ‘৫০ ওভারের ক্রিকেট ও বিশ্বকাপ থেকে টেস্টের যে আলাদা বৈশিষ্ট্য আবহ রয়েছে, সে দিকে নজর দিতে হবে এখন। আগামী দুই মাসের মধ্যে চেষ্টা করব কিভাবে লাল বলে আরো দক্ষতা বাড়ানো যায়।’

 


আরো সংবাদ



premium cement