১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আগডুম বাগডুম : কবিতা

-

নানার হাসি
ফেরদৌস সালাম

আমার নানা হাসতে জানেন রঙবে রঙের হাসি
একটি-দু’টি তরতাজা অনেকগুলোই বাসি।
নাশতা খেয়ে হাসেন যখন সেই হাসিটা তাজা
টেবিলজুড়ে থাকে যদি খিচুড়ি ডিমভাজা।

চালের রুটি মাংস হাঁসের থাকেন মহাখুশি
উড়লে মাছি দেখে মারেন মুষ্টি আলীর ঘুষি।
পত্রিকাতে গরম খবর চুমুক চায়ের কাপে
হাসেন তিনি মুচকি হাসি হালকা গরম তাপে!

দেখেন যদি দিচ্ছে নেতা মিথ্যা ভাষণ এক
নানু তখন খেই হারিয়ে হাসেন ফ্যাকা ফ্যাক।

বাতাস এসে উড়িয়ে নিলে নানুর মাথার ক্যাপ
সেই হাসিটা দেখতে লাগে টাকলু টাকলু শেপ!

আমরা যখন দুষ্টুমিতে মাথায় তুলি বাড়ি
নানার হাসি হয়ে ওঠে পোড়াবাড়ির হাঁড়ি।
নানার কাঁধে উঠেই যখন চাঁদটা ধরতে চাই
নানা তখন হাসেন এমন তাইরে নাইরে নাই!

দুপুর বেলায় নানুর পাতে থাকলে ইলিশ ভাজি
হাসেন তিনি খোশমেজাজে ভোজন রসিক কাজী!
খেলার মাঠে জিতে যখন বাংলাদেশের টিম
নানুর হাসির জোয়ার দেখে অশ্ব পাড়ে ডিম।

বন্ধুজনে আড্ডা মেলায় জবাই যখন খাসি
নানুও তখন খুশির চোটে হাসেন অট্টহাসি।
কষ্ট পেয়েও হাসেন যদি সেই হাসিটা বাসি
কাব্য লেখেন তাই তো নানু শব্দ ক্ষেতের চাষি।

 

পাখনা যদি পাই
রোকেয়া ইউসুফ

বৃষ্টি পড়ে মুশলধারে দৃষ্টি মদির ঝাঁপসা
গন্ধসোঁদা ভেজা মাটি উধাও গরম ভ্যাপসা।
নরম শরম ভাবের পেখম কাব্য কাজল মাখা
এমন দিনে উতল হৃদয় যায় কি ঘরে রাখা।

ঝুমুর ঝুমুর ছন্দ তুলে ছিটিয়ে গোলাপ-পানি
ইচ্ছে করে জাপটে ধরি মেঘের শরীর খানি।
ইচ্ছে করে হতে আমার আজকে গানের পাখি
বৃষ্টি মেঘের ইষ্টিকুটুম জড়িয়ে বুকে রাখি।

না হয় উড়ে মেঘ বালিকা মেঘের দেশে যাই
অমল ধবল স্বপন পরীর পাখনা যদি পাই।


সাহসী খোকা
নাহিদ সরদার

হঠাৎ করে কালো মেঘে
আকাশ গেছে ছেয়ে,
ঝড় উঠেছে মাঝ দরিয়ায়
আসছে বাতাস ধেয়ে।

ছুটছে মানুষ উড়ছে ধুলো
সবার চোখে ভয়,
নদীর পানি উপচে পড়ে
বন্য যদি হয়।

খোকার সেসব থোড়ায় কেয়ার
আম কুড়াতে যায়,
ঝড় উঠেছে যাসনে খোকা
ডাকছে খোকার মায়।

 

পাখির সংসার
নূরজাহান নীরা

ছোট্ট একটি ভেন্টিলেটর
তারই ছোট্ট ফাঁকে
দু’টি চড়ুই ঘুরে ঘুরে
কত স্বপ্ন আঁকে।

ছোট খোপে খড়কুটোতে
বাঁধে ছোট বাসা
এই বাসাকে ঘিরে তাদের
আগামীর সব আশা।

ক্ষুধা পেলে ছানা দু’টি
কিচিমিচি ডাকে
সব প্রয়োজন ব্যাকুলতায়
জানান দেয় যে মাকে।

মা-বাবা তার খাবার খুঁজে
তুলছে ছানার মুখে
এমনি করেই পাখি দু’টির
দিন কাটে বেশ সুখে।

হোক না পাখি, ছোট্ট বাসা
তবুও কত মায়া
ইট-পাথরের দেয়াল ঘেঁষেও
যেন বৃক্ষ ছায়া।

 

কুসুমের ভোর
গোলাম আযম খান

রোজ প্রভাতে পেতে হলে
কুসুমেরই ভোর,
মুয়াজ্জিনের আজান শোনে
খোলে খোকা দোর!

স্নিগ্ধ আলোয় দেহ ও মন
প্রফুল্লিত হয়,
ফুল কলিরা গাছের ডালে
রবের কথা কয়।

নতশীরে করতে থাকে
রবের গুণগান,
ইথার থেকে ভেসে আসে
মধুর কলতান।


আমার গাঁয়ের সন্ধ্যা
এম শরিফুল ইসলাম

শেষ বিকেলের নীল আকাশে নীল চলে যায় ধীরে
নীলের পরে হলুদ মাখা কিংবা ধূসর ঘিরে
শস্যক্ষেতে কৃষক চাচার কাজগুলো যায় থেমে
আমার গাঁয়ে এমন করে সন্ধ্যা আসে নেমে।

সব শিশুরা বাড়ি ফেরে, দিনের খেলা শেষে
ধুলোয় কিংবা কাদামাখা দুরন্তময় বেশে
এ কারণে মায়ের মুখে বকা যে হয় খেতে
পিটুনিও খেতে যে হয় দুষ্টু দু-হাত পেতে।

পাখিরাও দলবেঁধে সব ডানা মেলে ফিরে
ছানা বাবুর খাবার নিয়ে, মায়ার আপন নীড়ে
খেলাধুলা শেষ হয়ে যায় গোমতী নদীর তীরে
সন্ধ্যা হবার আগেই রাখাল বাছুর নিয়ে ফিরে।

ভালোবাসায় ভরা আমার মায়ের আঁচলখানা
মমতাময় আঁচল যেন সুখেরই আস্তানা
পাখির গানে ঘুম ভেঙে যায় ভোর ফজরে রোজই
ফুলের মায়ায় মুগ্ধ থাকি, ফুল-পাখিকে খুঁজি।

মন ভরে যায় শেষ বিকেলে শিউলি ফুলের গন্ধে
ধূসর আলো আঁধার করে নেমে আসে সন্ধ্যে।


আরো সংবাদ



premium cement